রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২
শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২
শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২
বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২
শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: মগধরাজ রাজহংসের চরিত্রাচিত্রন করো ?
উত্তর:- মগধরাজ রাজহংস ছিলেন এক অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব । তিনি একজন সুদর্শন , সুপুরুষ ও বিক্রমশালী রাজা ছিলেন । তাঁর বাহুদ্বয় ছিল মন্দার পর্বতের ন্যায় সুদৃঢ় যা সমুদ্রের জল রাশির ন্যায় আগত শত্রুদের দমন করতে পারত । দিগন্ত বিস্তৃত খ্যাতি ছিল তাঁর । তার যশ কেবলমাত্র মর্ত্যলোকেই সীমাবদ্ধ ছিল না । অতি মনোরম ইন্দ্রলোকেও তরুণী অপ্সরা গণ দেবভাষায় তাঁর যশোগান করতেন ।
মগধরাজ সমুদ্র মেখলা রত্নময় রাজ্য ভোগ করে ভাগ্যবান হয়েছেন । তিনি ব্রাহ্মণদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্টানে শ্রেষ্ট , শাস্ত্রজ্ঞ , দীপ্তিমান ব্রাহ্মণদের তিনি যজ্ঞ দক্ষিণা দান করতেন । পরাক্রমের দ্বারা তিনি শত্রুনাস করতেন এবং তিনি ছিলেন মধ্যাহ্ন সূর্যতুল্য তেজস্বী । অহংকার করার মতো রূপ ছিল তার । কবি তাকে কামদেবের রূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন । তাঁর মহিষী বসুমতীও ছিলেন অতীব সুন্দরী , ধিমতি , লীলাময়ী ও নারীকূলে শ্রেষ্ঠা । তিনি যেমন পরাক্রমী বীর ও সুশাসক ছিলেন , তেমনই ছিলেন ক্ষমাবান । যুদ্ধে তিনি বলদর্পী রাজা মানসারের দর্প চুর্ন করে তাকে পরাস্ত ও বন্দি করেন । কিন্তু আবার তার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে পুনরায় তাকে তাঁর নিজ রাজ্য প্রতিষ্ঠত করেন । ক্ষমা প্রদর্শন বীরের ধর্ম । মানসারের থেকে মহত্তর , কারণ শক্তানাং ভুষনং ক্ষমা ।
বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: পরশুরাম কে ? তিনি ক্ষত্রিয়দের হত্যা করেছিলেন কেন ? ক্ষত্রিয় রক্ত দিয়ে তিনি কি করেছিলেন ?
উত্তর:- পরশুরাম ছিলেন ভৃখন্ডবংশীয় ব্রাহ্মণ জমদগ্নি ও রেণুকার পঞ্চম পুত্র । তাঁর জেষ্ঠ্য ভাইয়েরা ছিলেন বসু , বিশ্ববসু , বৃহদভানু ও বৃহৎকর্ণ ।
একটি নৃশংস ঘটনার প্রেক্ষিতে পরশুরাম চরম ক্ষত্রিয়বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন । একবার জমদগ্নির পুত্রগণ অন্যত্র গমন করলে সহস্যবাহু ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্য আশ্রমে জিনিসপত্র বিপর্যস্ত করে প্রস্থান করেন । পরশুরাম আশ্রমে ফিরে সবকিছু অবগত হয়ে তীক্ষ্ণ ভল্লের আঘাতে কার্তবীযের বাহুছেদন করে তাকে হত্যা করেন । এরপর কার্তবীর্যের পুত্ররা আশ্রমে এসে তপোনীরত জমদগ্নিকে অতকিত আক্রমণে হত্যা করেন ।
অতঃপর আশ্রমে ফিরে নিহত পিতাকে দেখে শোকতপ্ত পরশুর প্রতিজ্ঞা করেন যে কার্তবীর্যের ক্ষতিয়জাতিকে তিনি বিনাশ করবেন । তিনি কার্তবীর্যের পুত্র গণকে হত্যা করেন এবং পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়হীন করেন ।
তারপর সমস্ত পঞ্চক প্রদেশে তিনি পাঁচটি রুধিরময় হ্রদ সৃষ্টি করে পিতৃগণের তর্পণ করেন । অবশেষে পিতামহ ঋচিকের অনুরোধে তিনি ক্ষত্রিয় নিধন থেকে নীরত হন ।
রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: সুরেন্দ্রনাথ কে ? তাঁর সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সম্পর্ক ও আচরণ বিবৃত করো ?
উত্তর:- সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন কলকাতার সিমুলিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা । তিনি ছিলেন একজন সাধারণ গৃহস্থ ও শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম ভক্তশিষ্য ।
সুরেন্দ্রনাথ একজন গৃহী হয়েও শ্রীরামকৃষ্ণের একজন গুনমগ্ধ ভক্ত ছিলেন । তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ কে দেবতার ন্যায় পূজা করতেন । তাঁর একান্ত বাধ্য ছিলেন । শ্রীরামকৃষ্ণকে নিজের বাড়িতে আনতে পেরে তিনি ধন্য । যে সন্ধায় শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর গৃহে উপস্থিত ছিলেন , সে ছিল এক মধুময় সন্ধ্যা । গুরুদেবের অপূর্ব মহিমা সম্পর্কে তিনি বলেন যে যেখানেই তিনি থাকেন সেই স্থানটি তৎক্ষণাৎ দেব মন্দিরে পরিণত হয় , তার শরীর থেকে নিরন্তর জ্যোতিধারা নির্গত হয় , তাঁর বাক্য থেকে সুধা প্রবাহিত ও তাঁর হাসি থেকে সূর্যকিরণ রাশি নিঃসরিত হয় ।
শ্রীরামকৃষ্ণ কোন তরুণ গায়কের কণ্ঠে মাতৃকাস্তুতি শুনতে চাইলেন । তখন সুরেন্দ্রনাথ নরেন্দ্রনাথকে তাঁর নিকট উপস্থিত করলেন । এই নরেন্দ্র কে দেখে ও তাঁর গান শুনে শ্রীরামকৃষ্ণ অত্যন্ত তৃপ্ত হলেন এবং তাঁর উত্তর সাধক অন্বেষণের পিপাসা নিবারিত হল । নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে ছিলেন সম্পূর্ন অপরিচিত । অথচ দুজনের প্রথম সাক্ষাৎকারে মনে হল যে তাঁরা যেন জন্মজন্মান্তরের অতি পরিচিত । একনিষ্ট ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের গহন চিত্তবৃত্তি উপলব্ধি করে অত্যন্ত অভিভূত । তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের সেবায় সম্পূর্ন আত্মনিয়োজিত ছিলেন । " গুরো: কৃপাহি কেবলম " এটাই ছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য ।
শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: কবি জয়দেব উল্লিখিত ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের বিবরণ দাও ।
উত্তর:- যখন যখন ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের অভ্যুত্থান হয় তখন তখন সাধুদের পরিত্রাণ ও ধর্ম স্থাপনের জন্য জগতে বিভিন্ন রূপে ভগবানের আবির্ভাব ঘটে । মহাপ্রলয়কালে ভগবান বিষ্ণু প্রথম মৎস্য রূপ ধারণ করে সৃষ্টিকে রক্ষা করেন । মহা প্রলয়ে ভাসমান পৃথিবীকে নৌকায় আরুঢ ভগবান মনু , সপ্তশী গণ , বেদ প্রভৃতি কে তিনি অক্ষত রাখেন ।
দ্বিতীয় অবতারে কুর্মরূপ ধারণ করে নিজ পৃষ্টে কুর্মকে ধারণ করে রাখেন এবং পৃথিবী সুরক্ষিত থাকে । তৃতীয় অবতারে ভগবান বিষ্ণু বরাহরুপ ধারণ করেন । এই অবতারে প্রলয় জলে প্রবেশ করে তিনি হিরন্যক্ষকে হত্যা করেন এবং দর্শন শিখরে পৃথিবী ধারণ করে উঠে আসেন ।
চতুর্থ অবতারে তিনি নৃসিংহ রূপ ধারণ করে অত্যাচারী হিরন্যশিপুকে হত্যা করেন এবং পঞ্চম অবতারে বামনরূপ ধারণ করে তিনি দানদর্পী দৈত্যরাজ বলিকে পাতালে বন্দি করেন । ষষ্ট অবতারে তিনি পরশুরাম রূপে পৃথিবী কে নি:ক্ষত্রিয় করেন এবং সপ্তম বা রাম অবতারে তিনি অত্যাচারী রাক্ষস রাজ রাবণকে সবংশে হত্যা করে সীতাকে উদ্ধার করেন এবং রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । অষ্টম অবতারে তিনি হলধর বলরাম রূপে যমুমনাকে আকর্ষণ করেন এবং নবম অবতারে বুদ্ধরূপে তিনি বেদবিহিত যজ্ঞে জীবহত্যার নিন্দা করেন । দশম অবতারে তিনি কল্কি রূপ ধারণ করে অন্যায় , অধর্ম ও ম্লেচ্ছদের বিনাশ করেন এবং জগতে আবার সত্য যুগের প্রতিষ্ঠা করবেন ।
মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: " অহমস্য ব্রহ্মানস্য গোযুগমপহরিরস্যমি " একথা কে কখন বলেছিল ? সে কেন গোযুগম অপহরণ করতে চেয়েছিল ? সে কি তাঁর কাজে সফল হয়েছিল ?
উত্তর:- ক্রুরকর্মা নামে এ চোর একথা বলেছিল ।
কোনো এক যজমান প্রদত্ত দুটি গোবৎস দ্রোণ নামে এক ব্রহ্মান যাচিত ঘি তেল ঘাস প্রভৃতি খাই হৃষ্টপৃষ্ট করেছিলেন । তার সেই গোবৎস দুটি ছিল খুবই লোভনীয় । ক্রুরকর্মা গোবৎস দুটি দেখে খুবই প্রলুদ্ধ হয় এবং চুরি করার চিন্তা করে ।
এক রাতে সে গোরুবাঁধার দড়ি হাতে নিয়ে ব্রহ্মানের সেই গোরু জোড়া চুরি করার উদ্দেশ্য রওনা হল । কিন্তু মাঝপথে ভয়ংকর দর্শন এক পিশাচকে দেখে চোর ভীষন ভীত হয়ে পড়ল । সে ভয়ে ভয়ে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে সে বলল আমি সত্যবচন নামে ব্রহ্মরাক্ষস । সে সষ্ঠান্নকালিক এবং সে সেদিন ব্রহ্মনকে ভক্ষণ করে উপবাস ভঙ্গ করতে চায় । দুজনের উদ্দেশ্য এক । তাই তারা সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকল ।
কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হল । ব্রাহ্মণ নিদ্রা গেলে চোর ও ব্রহ্মরাক্ষসের মধ্যে কে আগে তাঁর কাজটি করবে এই নিয়ে তুমুল বিবাদ শুরু হল । তাদের বিবাদের শব্দে ব্রাহ্মণের ঘুম ভেঙে গেল । তখন ব্রাহ্মণের নিকটে গিয়ে তারা তাদের চক্রান্তের কথা স্বীকার করলো । তারপর ব্রাহ্মণ ঈস্টদেবতার মন্ত্র জপ করে ব্রহ্মরাক্ষস থেকে নিজেকে রক্ষা করলেন এবং উদ্যত লঙুর দেখিয়ে চোরের কাছ থেকে তাঁর গোরুজোড়া রক্ষা করলেন ।
সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব আলোচনা করো ।
উত্তর:- ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব সর্বত্র । যুগ যুগ ব্যাপী ভারতের সমস্ত শ্রেণীর মানুষ গভীর শ্রদ্ধা ও আগ্রহের সঙ্গে এই গ্রন্থটি সংস্কৃত বা প্রাদেশিক ভাষায় পাঠ বা শ্রবণ করে আসছে । ভারতীয় নৈতিকতা , জীবনাদর্শ ও সাহিত্যকে রামায়ণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে আসছে । রামায়ণের নায়ক রামচন্দ্র ভারতের চিরকালীন মহানায়ক ও ভক্ত হৃদয়ের দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত । রামচন্দ্র , সীতা , ভরত , লক্ষণ প্রভৃতি চরিত্রের গুণাবলী ভারতের জনজীবনে আজও নীতি ও আদর্শের প্রেরণা দিয়ে থাকে ।
অসাধারণ জনপ্রিয়তা হেতু রামায়ণের কাহিনী মহাভারতে এবং বহু পুরাণে স্থান লাভ করেছে । রামায়ণ এই নামটি যুক্ত করেও আধ্যাত্ম রামায়ণ , সপ্তর্ষি রামায়ণ প্রভৃতি বহু স্বতন্ত্র গ্রন্থ বাল্মিকীয় রামায়ণের প্রভাব বহন করে ।
অশ্বঘোষ , ভাস , কালীদাস , ভবভৃতির মহাবীর চরিত ও উত্তর রামচরিত প্রভৃতি ছাড়া আরো অনেক সংস্কৃত কবি সাহিত্যিক তাঁদের কাব্যের বিষয়বস্তু রামায়ণ থেকে সংগ্রহ করেছেন । ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক সাহিত্যেসমূহেও রামায়ণের বিপুল প্রভাব লক্ষ করা যায় । হিন্দি ভাষায় তুলসী দাসের রামচরিতমানস , বাংলা ভাষায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ , ভানু ভক্তের নেপালী রামায়ণ । তাছাড়া রামায়ণ কাহিনী অবলম্বনে মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য তামিল ভাষায় কিম্বা রামায়ণ প্রভৃতি ।
রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
প্রশ্ন: পন্ডিত নারায়ণ শর্মা রচিত হিতোপদেশ সমন্ধে যা জানো লেখো ।
উত্তর:- নারায়ণ শর্মার হিতোপদেশ নীতিমূলক গল্প সাহিত্যের একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ । পঞ্চতন্ত্রের মতো এটি একটি উপভোগ্য গল্প সংগ্রহ । ৪৩ টি কথার মধ্যে পঞ্চতন্ত্র থেকে ২৫ টি ও অন্যান্য স্থান থেকে ১৮ টি গল্প গৃহীত হয়েছে । নারায়ন শর্মা ছিলেন রাজা ধবলচন্দ্রের সভাকবি । পাটলি পুত্রের রাজা সুদর্শনের পুত্রগণকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য এই নীতি গ্রন্থ রচিত হয় ।
এটি মিত্রলাভ , সুহৃদভেদ , বিগ্রহ ও সন্ধি এই চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত । অধ্যায় বিভাগ , ঘটনা বিন্যাস , রচনারীতি প্রভৃতি বিষয়ে পঞ্চতন্ত্রের অনুকরণ চিহ্ন স্পষ্ট হলেও নারায়ণ শর্মার নিজস্ব বৈচিত্র্য এতে যোজনা করেছেন । বেশ দক্ষতার সঙ্গে তিনি গল্পের আকর্ষনীয়তা ও গতিবেগ বাড়িয়ে তুলেছেন । এতে নীতিশ্লোকের বাহুল্য লক্ষণীয় । বহু শ্লোক নীতিসার থেকে নেওয়া ।
এর গল্প গুলি বালক বালিকার কল্পনা রাজ্য এক মায়ার আবেশ সৃষ্টি করে । গোদাবরী তীরের বিশাল শালম্মলি তরু , মন্দার পর্বতের দুর্দান্ত নামক সিংহ , কল্যাণকটকের ভৈরব ব্যাধ , চম্পকবতী অরণ্যানীর মৃগকাকশৃগাল এমন অনেক গল্পই শিশু মনে পুলক জাগায় । নানা গুনে সমৃদ্ধি হেতু হিতোপদেশের খ্যাতিও বহুদূর বিস্তৃত । এটির রচনাকাল খ্রিষ্টীয় ১০ম শতক থেকে ১৪শ শতকের মধ্যবর্তী কোনো এক সময় , গল্পের উপদেশ গুলি বালক বালিকার জীবনে চলার পথে নিত্য কাজে লাগে ।