উত্তর : শ্রী যতীন্দ্রবিমল চৌধুরী বিরচিত ‘ভারতবিবেকম ’ নাট্যাংশে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমসাধক , শ্রীশ্রীভবতারিণীর একনিষ্ঠ পূজারি । তিনি মৃন্ময়ী মাকে চিন্ময়ীরূপে প্রত্যক্ষ করেছেন । অতএব , গৃহে মায়েদের কাছে যেমন আবদার , শ্রীশ্রীমায়ের কাছেও শ্রীরামকৃষ্ণের সতত সেই শিশুসুলভ আবদার । কিন্তু । আমাদের পাঠ্যাংশে শ্রীশ্রীমায়ের কাছে তাঁর (রামকৃষ্ণদেবের ) সেরূপ শিশুসুলভ আবদার নাই , আছে মনের ব্যাকুলতা ।
ব্যাকুলতা — কারণ তিনি এখন একজন সুযােগ্য সর্বশক্তিমান শিবতুল্য উত্তরসাধক পেতে চান । মা ভবতারিণী অনুগ্রহপূর্বক তাঁকে বহু সাধনমার্গের পথনির্দেশ দিয়েছেন , কিন্তু কোনাে উত্তরসাধকের সন্ধান এখনও দেননি । রামকৃষ্ণদেব মানুষ হয়েও দেবতা , গৃহী হয়েও ত্যাগী । তাঁর কামনা -বাসনা আত্মকেন্দ্রিক নয় , বিশ্বজনীন । জগদ্ধিতায় তাঁর আবির্ভাব । তাঁর ভাবধারা , তাঁর আদর্শকে জগতে ঘােষিত করার জন্য প্রয়ােজন একজন মন্ত্রশিষ্য তথা উত্তরসাধক । সুরেন্দ্রের মুখে নরেন্দ্রের নাম শােনামাত্র তিনি হর্ষোৎফুল্ল হয়ে উঠলেন এবং দেবী ভবতারিণীর কাছে পুনরায় আকুল আবেদন জানালেন ওই নরেন্দ্র যেন তাঁর উত্তরসাধক হন । কারণ তিনি নরেন্দ্র অর্থাৎ নরশ্রেষ্ঠ । এরূপ শ্রেষ্ঠ মানুষকেই তাে তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন । অতএব কৃপাময়ী , মায়ের কাছে তাঁর আবেদন— “সত্বরং ব্রুহি,মাতঃ ! এষ নরেন্দ্র এব মম শ্রেষ্ঠ উত্তরসাধকঃ স্যাৎ ।”
শ্রীশ্রীঠাকুর তরুণ শিষ্যই তাে চাইছেন । তরুণদের মন কোমল । যা শেখানাে হবে তাঁদের মনে তাই অঙ্কিত হয়ে , যাবে । তিনি চান জটাজুটধারী , সর্বভারবাহী কল্যাণকারী স্বয়ং শিবকে তাঁর উত্তরসাধকরূপে । মা ভবতারিণী তাঁর কাছে সেরূপ এক উত্তরসাধক প্রেরণ করুন এটিই তাঁর হৃদয়ের একমাত্র ব্যাকুলতা , আর এই ব্যাকুলতা তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে স্বতঃপ্রবাহিত । তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস নরেন্দ্রই হবে তাঁর উত্তরসাধক । তাই তাে দৃশ্যের উপসংহারে শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে বলতে শুনি— “ দেবি ভবতারিণি ! ত্বং ভূশং কৃপাপরায়ণা যথৈষ এব বরেণ্যসন্তানাে দেশস্য সর্বকালিমানং দূরীকর্তৃং শকুয়াৎ । ”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন