শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে সুরেন্দ্রনাথের ধ্যানধারণার কী পরিচয় পাওয়া যায়
উত্তর : শ্রী যতীন্দ্রবিমল চৌধুরী বিরচিত ‘ভারতবিবেক ’ নাট্যাংশে সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের একজন একনিষ্ঠ গৃহীভক্ত । তিনি তদতপ্রাণ । পরমশ্রদ্ধাসহকারে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে আমন্ত্রণ করে এনেছেন আপন গৃহে সিমুলিয়ায় । শ্রীরামকৃয় ভক্তপরিবেষ্টিত । মুখে তার অমৃতমধুর মাতৃনাম । সময় ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের এক মধুর সন্ধ্যা । সুরেন্দ্রনাথ গুরুপ্রেমে গদগদ হয়ে গুরুদেবের অনির্বচনীয় মহিমার কথা ভাবছেন । সংসারের বাঁধন সুরেন্দ্রনাথকে যতখানি বন্ধন করেছে , তার সহস্রগুণ বন্ধন করেছে গুরুদেবের ভালােবাসা ।
তিনি গুরুদেবের স্নেহধন্য । তাঁর চোখে শ্রীরামকৃষ্ণু দেবতা । সেইজন্যই তাে তিনি যেখানে অবস্থান করেন , সেই স্থানকে সুরেন্দ্রনাথ দেবমন্দির বলে মনে করেন । তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এক জ্যোতির্ধারা, যা শ্রীরামকৃষ্ণের দেহ থেকে নিরন্তর বিচ্ছুরিত হচ্ছে। তিনি রামকৃষ্ণদেবকে সাধারণ মানুষরূপে দেখেননি , দেখেছেন দেবতারূপে । মধুরভাষী শ্রীরামকৃষ্ণের মুখ থেকে যেন সতত প্রবহমান সুরধুনির মতাে সুধাধারা প্রবাহিত হচ্ছে । তার হাসি থেকে অরুণ কিরণরাশি ঝরে পড়ছে — এরূপ এক অপরূপ অনুভূতি সুরেন্দ্রনাথকে আপ্লুত করে রেখেছে । ভক্তির মাহাত্ম্যই এরূপ । সুরেন্দ্রনাথ যখন এইভাবে ভক্তিসাগরে নিমজ্জিত , ঠিক সেই সময়ে ঠাকুর সুরেন্দ্রনাথের কাছে জানতে চাইলেন নিকটস্থ তেমন কোনাে তরুণ গায়ক আছে কি না, যে -মাতৃকাস্তুতির দ্বারা শ্রীরামকৃষ্ণের কর্ণকুহরকে পরিতৃপ্ত করতে পারে । সুরেন্দ্রনাথ সবিনয়ে নরেন্দ্রের কথা উত্থাপন করামাত্র শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবান্তর । তিনি নরেন্দ্রকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন । তাঁর এই ব্যাকুলতা দেখে সুরেন্দ্রনাথ বিস্মিত । নরেন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সম্পূর্ণ অপরিচিত ; তথাপি শ্রীরামকৃষ্ণের এত ব্যাকুলতা কেন ? সুরেন্দ্রনাথের বিশ্বাস শ্রীশ্রীঠাকুর এই নামের মধ্যেও এক অনাস্বাদিতপূর্ব গভীর
রসের সন্ধান পেয়েছেন । রামকৃষ্ণদেব অতিমানব । শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে সুরেন্দ্রনাথের সুউচ্চ ধারণা , প্রগাঢ় ভক্তি , অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা এবং অতিমানবীয় ধারণার পরিচয় পাই তাঁর এই বাক্যের মধ্যে— “ গহনা খলু মহতাং চিত্তবৃত্তিঃ ।”
কোন মন্তব্য নেই