উত্তর : ষোড়শ মহাজনপদের রাজ্যগুলির অবস্থান ছিল আফগানিস্তানের কাবুল থেকে দক্ষিণ ভারতে গােদাবরী নদীর উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে । রাজ্যগুলি হল—
কাশী : এর অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তরপ্রদেশের পূর্বদিক ।
কৌশল : এর অবস্থান ছিল বর্তমান অযােধ্যা বা শ্রাবস্তী ।
অঙ্গ : এর অবস্থান ছিল বর্তমান পূর্ব বিহার । এই রাজ্যের রাজধানী ছিল চম্পা ।
মগধ : মগধের অবস্থান ছিল বর্তমান বিহারের গয়া ও পাটনা জেলা । এর প্রথম রাজধানী ছিল গিরিব্রজ বা রাজগৃহ । পরে পাটলিপুত্রে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় ।
অবন্তী : এর অবস্থান ছিল বর্তমান মালব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশে । এর উত্তরাংশের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী ও দক্ষিণাংশের রাজধানী ছিল মাহিস্মৃতি ।
বৎস : এর অবস্থান ছিল বর্তমান এলাহাবাদের নিকটবর্তী গঙ্গার দক্ষিণ তীরে । এর রাজধানী ছিল কৌশাম্বী ।
বৃজি : এর অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তর বিহারে । এর রাজধানী ছিল বৈশালী ।
মল্ল : এর অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তরপ্রদেশের গােরক্ষপুর জেলা । এর রাজধানী ছিল কুশীনগর বা পাবা ।
কুরু : এর অবস্থান ছিল বর্তমান দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল । এর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ ।
পাঞ্চাল : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রােহিলখণ্ড । উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র এবং দক্ষিণ পাঞ্চালের রাজধানী ছিল কাস্পিল্য ।
চেদি : এর অবস্থান ছিল বর্তমান বুন্দেলখণ্ড ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল । এর রাজধানী ছিল শুকতিমতী ।
মৎস্য : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রাজপুতানার জয়পুর । এর রাজধানী ছিল বিরাটনগর ।
শূরসেন : এর অবস্থান ছিল যমুনা নদীর তীরে মথুরা অঞ্চল । এর রাজধানী ছিল মথুরা ।
অম্মক : এর অবস্থান ছিল বর্তমান গােদাবরীর উপত্যকা অঞ্চল বা পাটলি । এর রাজধানী ছিল পােটালি বা পােটান ।
গান্ধার : এর অবস্থান ছিল বর্তমান রাওয়ালপিণ্ডি ও কাশ্মীর উপত্যকা । এর রাজধানী ছিল তক্ষশিলা ।
কম্বোজ :এর অবস্থান ছিল বর্তমান দক্ষিণ -পশ্চিম কাশ্মীর । এর রাজধানী ছিল রাজপুর ।
[ ] প্রথমদিকে ষোড়শ মহাজনপদের রাজ্যগুলির মধ্যে অবন্তী , বৎস , কোশল এবং মগধ — এই চারটি রাজ্য প্রাধান্য লাভ করেছিল । অবশেষে হর্ষঙ্ক , শৈশুনাগ , নন্দ ও মৌর্য —এই চারটি রাজবংশের আমলে মগধকে কেন্দ্র করে উত্তর ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় ।
সুযােগ্য নেতৃত্ব : হর্ষঙ্ক বংশের বিম্বিসার , অজাতশত্রু , শৈশুনাগ বংশের শিশুনাগ , নন্দ বংশের মহাপদ্মনন্দ , মৌর্য বংশের চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, অশােক প্রমুখ রাজন্যবর্গের দক্ষ নেতৃত্বে মগধের সাম্রাজ্য সফলভাবে পরিচালিত হয়েছিল । মগধের বাসসাকর , কৌটিল্য , রাধাগুপ্ত প্রমুখ মন্ত্রীবর্গের সুযােগ্য পরামর্শও এবিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল ।
বিদেশি আক্রমণ থেকে রক্ষা : মগধের অবস্থান ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তের উপদ্রুত অঞ্চল থেকে অনেক দূরে হওয়ায় বিদেশি আক্রমণকারীদের পক্ষে ভারতের অভ্যন্তরে এত দূরে আক্রমণ করা সহজ ছিল না ।
ভৌগােলিক অবস্থান : মগধ রাজ্য ও রাজধানী নদী ও পাহাড়ের দ্বারা বেষ্টিত ছিল । মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ ছিল পাহাড়বেষ্টিত । পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্র গঙ্গা, শোন ও গণ্ডক নদীবেষ্টিত হয়ে যেন এক ‘জলদুর্গে’ পরিণত হয়েছিল । এরুপ ভৌগােলিক নিরাপত্তা ভেদ করে শত্রুদের পক্ষে মগধ আক্রমণ করা সহজ কাজ ছিল না ।
উর্বর কৃষিজমি : গঙ্গা ও অন্যান্য নদী বিধৌত মগধের কৃষিজমি ছিল খুবই উর্বর । কৃষিতে প্রচুর উৎপাদনের ফলে প্রভূত পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হত । ফলে মগধে সৈন্যদের ভরণ পােষণে সুবিধা ও রাজকোশের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটেছিল ।
বৈদেশিক বাণিজ্য : বিভিন্ন দূর দেশের সঙ্গে মগধের রপ্তানি বাণিজ্য চলত । মগধের সমৃদ্ধ বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে সেখানকার অর্থনীতি মজবুত হয়েছিল । এই আর্থিক শক্তি মগধের সামরিক শক্তির ভিতও শক্ত করেছিল ।
অরণ্য সম্পদ : মগধের ঘন অরণ্য ছিল হিংস্র জীবজন্তু ও অসংখ্য বৃক্ষে পরিপূর্ণ । এইসব বৃক্ষের কাঠ যুদ্ধ প্রকরণে কাজে লাগত । এ ছাড়া এই অরণ্য থেকেই মগধের সৈন্যের যুদ্ধের জন্য প্রয়ােজনীয় রণহস্তী সংগ্রহ করা হত ।
খনিজ সম্পদ : মগধের তামা ও লােহার খনিগুলি সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ও কৃষির জন্য প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হত । ফলে মগধের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিরও উন্নতি হয়েছিল ।
মিশ্র সংস্কৃতি : মগধের সীমানার একদিকে আর্য ও অন্যদিকে অনার্য সংস্কৃতির অবস্থান থাকায় এখানে এক মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে ওঠে , যা মগধের অগ্রগতিকে সহজ করেছিল ।
উপসংহার : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ষােলােটি মহাজনপদ গড়ে উঠলেও সাম্রাজ্য গড়ে তােলার মতাে প্রয়ােজনীয় উপাদান সব মহাজনপদের ছিল না । তবে মগধ মহাজনপদটি ছিল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী । তাই নিরাপদ ভৌগােলিক অবস্থান ,সুযােগ্য নেতৃত্ব,প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য প্রভৃতি নানা উপাদানকে কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত মগধ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে নিজের উত্থানকে সুনিশ্চিত করে ।