বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

রানি দুর্গাবতীর পরিচয় ও কার্যাবলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer রানি দুর্গাবতীর পরিচয় ও কার্যাবলি আলােচনা করাে rani durgabotir porichoy o karjaboli alochona koro

উত্তর : দুর্গাবতী ছিলেন চান্দেল্ল বংশীয় রাজপুত অধিপতি মাহোবা র কন্যা । তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমতী ,সাহসী , দেশপ্রেমিক ও সংস্কৃতিমনস্ক । তিনি গন্ডােয়ানার শাসক দলপত শাহের সঙ্গে বিবাহ করেন । 

শাসনভার গ্রহণ : গন্ডােয়ানার রাজা দলপৎ শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র বীরনারায়ণ সেখানকার সিংহাসনে বসলে তার অভিভাবক হিসেবে বিধবা রানি দুর্গাবতী গন্ডােয়ানা শাসন করতে থাকেন ( ১৫৫০ - ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ ) । রানি দুর্গাবতী দ্রুত রাজ্যের সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন লাভ করেন । 

বাজ বাহাদুরের আক্রমণ রোধ : দুর্গাবতীর রাজত্বের প্রথম দিকে আফগান নেতা বাজ বাহাদুর গন্ডােয়ানা আক্রমণ করেন । কিন্তু দুর্গাবতী দক্ষতার সঙ্গে বাজ বাহাদুরের আক্রমণ প্রতিহত করেন । পরবর্তীকালেও বাজ বাহাদুর কয়েকবার গন্ডােয়ানা আক্রমণ করে রানি দুর্গাবতীর বাহিনীর কাছে পরাজিত হন ।   

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষতা : দুর্গাবতী প্রতিবার জয়লাভ করলেও যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যায়ের ফলে গন্ডােয়ানার রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে । দুর্গাবতী অভিযান চালিয়ে ক্ষুদ্র জমির মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি রাজস্ব ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেন । ফলে শীঘ্রই গন্ডােয়ানার রাজকোশ পূর্ণ হয়ে যায় । 
আকবরের আক্রমণের মােকাবিলা : গন্ডােয়ানার বিপুল অর্থসম্পদ ও ঐশ্বর্য মােগল সম্রাট আকবরকে প্রলুব্ধ করে । এজন্য সম্রাট আকবর ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি আসফ খাঁর নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী গন্ডােয়ানা অভিযানে পাঠান । যুদ্ধে দুর্গাবতীর পরাজয় হলেও তাঁর সংশয়াতীত স্বাধীনতাস্পৃহা , বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল । 

i) দুর্গাবতীর প্রতিরােধ : বিশাল মােগল বাহিনীর তুলনায় রানি দুর্গাবতীর সেনাবাহিনী ছিল নিতান্তই ক্ষুদ্র । তা সত্ত্বেও দুর্গাবতীর নেতৃত্বে এই বাহিনী অসীম সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে নররাই - এর যুদ্ধে ( ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে ) প্রথমদিকে কয়েকবার মােগল বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেন । 

ii) পরিণতি : যুদ্ধের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রানি দুর্গাবতী মােগল বাহিনীর তীরের আঘাতে দারুণভাবে আহত হন । শেষপর্যন্ত পরাজয় নিশ্চিত জেনে তিনি অপমানিত হয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় বলে গ্রহণ করে নিজের ছুরির আঘাতে আত্মহত্যা করেন । গন্ডােয়ানার একাংশ মােগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং অপর অংশে দুর্গাবতীর বংশধর চন্দ্র শাহকে দেওয়া হয় । চন্দ্র শাহ মােগলদের হাতের পুতুল হয়ে শাসন পরিচালনা করতে থাকেন । 

উপসংহার : রানি দুর্গাবতীর বিরুদ্ধে মােগল আক্রমণ ছিল মােগল বাহিনীর নগ্ন সাম্রাজ্যবাদ ও চূড়ান্ত অর্থলিপ্সার সুস্পষ্ট উদাহরণ । দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল শক্তিধর মােগল বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে লড়াই করেও রানি দুর্গাবতী যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা ইতিহাসে অত্যন্ত দুর্লভ ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন