কীভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আদিম মানুষ শিকারি খাদ সংগ্রাহক থেকে বসবাসকারীতে পরিণত হয় ।
উত্তর : আদিম মানুষ শিকারী খাদ্য সংগ্রাহক থেকে স্থায়ী বসবাসকারী
i) হাতিয়ার : হােমাে স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে অনুন্নত মানুষ পাথর ও লাঠির বেশি কোনাে হাতিয়ারের ব্যবহার জানত না । পরবর্তীকালে মানুষ পাথরের বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে । যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতিয়ার গুলিও উন্নত হতে থাকে ।
ii) শিকারে অংশগ্রহণ : এসময় পুরুষরা শিকারের কাজে অংশ নিত । তারা পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার বা অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পশু শিকার করত এবং শিকার করা পশুর মাংস সংগ্রহ করত ।
iii) দলবদ্ধতা : এ যুগের মানুষ একাকী শিকারে না গিয়ে দলবদ্ধভাবে শিকারে বের হত । এভাবে প্রাচীন কালে শিকারি মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল বা সংগঠনটিকে ‘ক্ল্যান’ নামে অভিহিত করা হয় । রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষদের নিয়ে মূলত ক্ল্যান গঠিত হত ।
iv) গােষ্ঠীর ভূমিকা : প্রতিটি মানবগােষ্ঠীই নির্দিষ্ট এলাকায় শিকার করত । সেখানে অন্য গােষ্ঠীর শিকারের অধিকার থাকত না । খুব বড়াে শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কখনাে -কখনাে কয়েকটি ক্ল্যান ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেত । এরূপ সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত সমাজকে বলা হত ‘ ট্রাইব ’ ।
v) মাংস বণ্টন : শিকার করে পাওয়া পশুর মাংস তারা সকলের মধ্যে ভাগ করে নিত । প্রথমদিকে তারা আগুনের ব্যবহার জানত না বলে কাঁচা মাংস খেত । পরবর্তীকালে আগুনের ব্যবহার শিখে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস করে ।
[ ] নারীর খাদ্য সংগ্রহ : পরিবারের নারীরা নিকটবর্তী বনজঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল , শাকসবজি , পাখির ডিম প্রভৃতি সংগ্রহ করত । তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার তৈরি করত এবং সন্তানের যত্নাদি করত । খাদ্য রাখার প্রয়ােজনীয় মৃৎপাত্রগুলিও মেয়েরাই তৈরি করত । এভাবে খাদ্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সুদূর অতীতে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে শ্রমবিভাজন গড়ে উঠেছিল ।
[ ] আদিম মানুষের সংস্কৃতি : প্রাগৈতিহাসিক যুগে দীর্ঘকাল ধরে শিকারি আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । শিকারি ও খাদ্যসংগ্রাহক আদিম মানুষের সংস্কৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল—
i) লােম ও হাড় সংগ্রহ : আদিম মানুষ পশুর মাংস বা দুধ ছাড়াও পশুর লােম ,চামড়া ও হাড় সংগ্রহ করত । চামড়া ও লোম দিয়ে তারা পরিধেয় বস্ত্র, শীতবস্ত্র এবং পশুর হাড় ও শিং দিয়ে তারা বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করল ।
ii) বাসগৃহ নির্মাণ : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধভাবে নদী বা জলাশয়ের ধারে বাসগৃহ নির্মাণ করতে শুরু করে । তাদের তৈরি বাসগৃহগুলি ছিল তিন ধরনের , যথা —স্থল বসতি , হ্রদ বসতি , গুহা বসতি ।
iii) খল বসতি : মাটির ওপর কৃষিজমির ধারে তৈরি হত স্থলবসতি । বড়াে বড়াে পাথরের চাই দিয়ে তৈরি হত ঘরের দেয়ালগুলি । পাথর ছাড়া মাটি, কাঠ, পাথর ,বাঁশ, চামড়া প্রভৃতি উপকরণকে কাজে লাগিয়ে স্থলবসতিগুলি নির্মিত হত ।
iv) হ্রদ বসতি : হ্রদের জলের মধ্যে এই ধরনের ঘর তৈরি করা হত । সুইটজারল্যান্ডের নিউচ্যাটেল হ্রদে এই ধরনের বসতি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা গেছে ।
v) গুহা বসতি : আদিমকাল থেকেই মানুষ ছিল গুহাবাসী । তাই নতুন পাথরের যুগে এসে মানুষ গুহায় বাস করার অভ্যাস একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি ।
[ ] স্থায়ী বসতির মানােন্নয়ন : নতুন পাথরের যুগের মানুষের যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি জীবনে প্রবেশ এই পর্বে আরও উন্নত রূপ লাভ করে । সময় এগােনাের সঙ্গে সঙ্গে বসতির সংখ্যা বেড়ে ছােটো ছোটো গ্রাম গড়ে উঠতে শুরু করে । এ যুগের শেষের দিকে রােদে শােকানাে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি শুরু হয় ।
উপসংহার : আদিম যাযাবর থেকে স্থায়ী বসবাসকারীতে পরিণত হতে মানুষের দীর্ঘ সময় লেগেছিল । বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ যাযাবর জীবনকে ফেলে এসে স্থায়ী জীবনের স্বাদ পায় । এর ফলে মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে ।
কোন মন্তব্য নেই