রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

নব্য প্রস্তর বা নতুন পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer নব্য প্রস্তর বা নতুন পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করাে nobbo prostar ba notun pathorer juger manobjiboner nana dikguli ullekh koro


উত্তর : নব্য প্রস্তর যুগের মানবজীবনের বিভিন্ন দিক জীবিকা 
i) পশুপালন : এযুগের মানুষ পশুপালনের কৌশল আয়ত্ত করে । কুকুর , ভেড়া , গােরু, গাধা , হাতি প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শেখে । খাদ্যের জোগান ছাড়াও গৃহপালিত পশুকে তারা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে । 


ii) কৃষির সূচনা : নব্য প্রস্তর পর্বে আবাসস্থলের পাশে বীজ বা গাছের শিকড় পুঁতে দেওয়া শুরু হয় । এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে । 

[       ] সমাজ : এযুগে পরিবারগুলির সামাজিক কাঠামাে আরও সুসংঘবদ্ধ হয় । সমাজে একক বা দলগত বিবাহরীতি চালু হয় । সমাজে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং শ্রমবণ্টন ব্যবস্থাচালু হয় । 

[       ] আশ্রয়স্থল : নব্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ স্থায়ী আবাস নির্মাণ করতে শেখে । গাছের ডালপালা ও ঘাসপাতা দিয়ে তারা কুটির বানাতে শেখে । সুইটজারল্যান্ডের আদিম অধিবাসীরা হ্রদের মধ্যে খুঁটি পুঁতে তার ওপর মাচা বেঁধে বসবাস করত এমন নিদর্শন মিলেছে । 


[        ] হাতিয়ার : নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে । এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি , নিড়ানি, ছেনি, বাটালি , কাস্তে , বর্শার ফলা ,ছােরা ,উঁচ প্রভৃতি । কুঠার , কোদাল -সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয় । 
[        ] আগুনের ব্যবহার : নব্য প্রস্তরযুগে মানুষ পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল আবিষ্কার করে । আগুনের সাহায্যে তারা কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে বা সেদ্ধ করে খেতে শিখল ,গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে বুনাে জানােয়ারদের তাড়াতে শিখল এবং শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখল ।

[        ]  চাকার আবিষ্কার : নব্য প্রস্তর যুগে এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হল ‘চাকা’ । চাকার ব্যবহারের মাধ্যমে মৃৎপাত্র উৎপাদনে পরিবর্তন আসে , পাশাপাশি চাকাকে কাজে লাগিয়ে যানবাহন  তৈরির ধারণা সৃষ্টি হয় । 

[       ] ভাষার উন্নয়ন : নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার উন্নতি ঘটেছিল । এযুগে সমাজ কাঠামাে অনেক সংঘবদ্ধ হওয়ায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কিছু ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে । 
i) বস্ত্রবয়নশিল্প  : নব্য প্রস্তর যুগে বস্ত্রবয়ন শিল্পের সূচনা ঘটেছিল । শণের আঁশ থেকে তৈরি সুতাে দিয়ে এসময়ের কারিগররা লিনেন কাপড় বুনতে শেখে । মেসােপটেমিয়ার কারিগররা ভেড়ার লােম দিয়ে পশমি কাপড় বানাতে শেখে । 

ii) মৃৎশিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে মৃৎশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে । চাকাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে । মাটির তৈরি পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করার কৌশল আবিষ্কৃত হয় । পাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের নকশা এবং রং করার কৌশল চালু হয় । 


[       ] শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাস : নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ পাথর কেটে দেবীমূর্তি গড়তে শিখেছিল । মেসােপটেমিয়ার ইউবেইদ এবং ইজিয়ান সভ্যতার ক্রীটে এই ধরনের মূর্তি মিলেছে । 


উপসংহার : প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য পর্যায় ছিল নব্য প্রস্তর যুগ । এই সময় মানুষ কৃষিকাজ , স্থায়ী বসতি নির্মাণ, আগুনের ব্যবহার প্রভৃতি শেখে এবং তারা খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয় । সর্বোপরি , এই পরিবর্তনগুলি ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক দ্রুত। তাই কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ের এইসব ব্যাপক অগ্রগতিকে ঐতিহাসিক ভি .গর্ডন চাইল্ড ‘নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন ।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন