নব্য প্রস্তর বা নতুন পাথরের যুগের মানবজীবনের নানা দিকগুলি উল্লেখ করাে ।
উত্তর : নব্য প্রস্তর যুগের মানবজীবনের বিভিন্ন দিক জীবিকা
i) পশুপালন : এযুগের মানুষ পশুপালনের কৌশল আয়ত্ত করে । কুকুর , ভেড়া , গােরু, গাধা , হাতি প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শেখে । খাদ্যের জোগান ছাড়াও গৃহপালিত পশুকে তারা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে ।
ii) কৃষির সূচনা : নব্য প্রস্তর পর্বে আবাসস্থলের পাশে বীজ বা গাছের শিকড় পুঁতে দেওয়া শুরু হয় । এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে ।
[ ] সমাজ : এযুগে পরিবারগুলির সামাজিক কাঠামাে আরও সুসংঘবদ্ধ হয় । সমাজে একক বা দলগত বিবাহরীতি চালু হয় । সমাজে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং শ্রমবণ্টন ব্যবস্থাচালু হয় ।
[ ] আশ্রয়স্থল : নব্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ স্থায়ী আবাস নির্মাণ করতে শেখে । গাছের ডালপালা ও ঘাসপাতা দিয়ে তারা কুটির বানাতে শেখে । সুইটজারল্যান্ডের আদিম অধিবাসীরা হ্রদের মধ্যে খুঁটি পুঁতে তার ওপর মাচা বেঁধে বসবাস করত এমন নিদর্শন মিলেছে ।
[ ] হাতিয়ার : নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে । এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি , নিড়ানি, ছেনি, বাটালি , কাস্তে , বর্শার ফলা ,ছােরা ,উঁচ প্রভৃতি । কুঠার , কোদাল -সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয় ।
[ ] আগুনের ব্যবহার : নব্য প্রস্তরযুগে মানুষ পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল আবিষ্কার করে । আগুনের সাহায্যে তারা কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে বা সেদ্ধ করে খেতে শিখল ,গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে বুনাে জানােয়ারদের তাড়াতে শিখল এবং শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখল ।
[ ] চাকার আবিষ্কার : নব্য প্রস্তর যুগে এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হল ‘চাকা’ । চাকার ব্যবহারের মাধ্যমে মৃৎপাত্র উৎপাদনে পরিবর্তন আসে , পাশাপাশি চাকাকে কাজে লাগিয়ে যানবাহন তৈরির ধারণা সৃষ্টি হয় ।
[ ] ভাষার উন্নয়ন : নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার উন্নতি ঘটেছিল । এযুগে সমাজ কাঠামাে অনেক সংঘবদ্ধ হওয়ায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কিছু ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
i) বস্ত্রবয়নশিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে বস্ত্রবয়ন শিল্পের সূচনা ঘটেছিল । শণের আঁশ থেকে তৈরি সুতাে দিয়ে এসময়ের কারিগররা লিনেন কাপড় বুনতে শেখে । মেসােপটেমিয়ার কারিগররা ভেড়ার লােম দিয়ে পশমি কাপড় বানাতে শেখে ।
ii) মৃৎশিল্প : নব্য প্রস্তর যুগে মৃৎশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে । চাকাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে । মাটির তৈরি পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করার কৌশল আবিষ্কৃত হয় । পাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের নকশা এবং রং করার কৌশল চালু হয় ।
[ ] শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাস : নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ পাথর কেটে দেবীমূর্তি গড়তে শিখেছিল । মেসােপটেমিয়ার ইউবেইদ এবং ইজিয়ান সভ্যতার ক্রীটে এই ধরনের মূর্তি মিলেছে ।
উপসংহার : প্রত্নতাত্ত্বিক যুগের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য পর্যায় ছিল নব্য প্রস্তর যুগ । এই সময় মানুষ কৃষিকাজ , স্থায়ী বসতি নির্মাণ, আগুনের ব্যবহার প্রভৃতি শেখে এবং তারা খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয় । সর্বোপরি , এই পরিবর্তনগুলি ছিল পূর্বের তুলনায় অনেক দ্রুত। তাই কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ের এইসব ব্যাপক অগ্রগতিকে ঐতিহাসিক ভি .গর্ডন চাইল্ড ‘নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন ।
কোন মন্তব্য নেই