মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে horoppa sobhotar boishistoguli lekho


উত্তর :  সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় । যেমন— 

[      ] প্রাচীনত্ব : হরপ্পা সভ্যতা কতটা প্রাচীন, অর্থাৎ কবে এই সভ্যতার সূচনা ও অবলুপ্তি ঘটেছিল তা নিয়ে পণ্ডিতরা একমত নন ।

 i) সূচনাকাল : স্যার জন মার্শালের মতে , হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল ৩,২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২,৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে । ঐতিহাসিক ড .সি . জে .গ্যাড ও ড .ফ্যারি খ্রিস্টপূর্ব ২,৩৫০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১,৭৭০ অব্দকে এই সভ্যতার বিকাশকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । হুইলার হরপ্পা সভ্যতার সূচনাকাল হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ২,৫০০ অব্দকে চিহ্নিত করেছেন ।

ii) অবলুপ্তির কাল : মাটিমার হুইলার মনে করেন যে , বহিরাগত আর্য জাতির আক্রমণ হরপ্পা সভ্যতার পতনের একটি প্রধান কারণ ছিল । তাই ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আর্যদের ভারতে আগমনের কালকেই তিনি হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তির কাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । অধিকাংশ পণ্ডিত এই অভিমত মেনে   নিয়েছেন । 

[        ] প্ৰায় - ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা : হরপ্পা সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে লিপির অস্তিত্ব মিলেছে যা ‘সিন্ধুলিপি’ নামে পরিচিত । কিন্তু এই লিপির পাঠোদ্ধার আজও সম্ভব হয়নি । তাই হরপ্পা সভ্যতা হল ‘প্রায় - ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা’ । লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় এই সভ্যতার ইতিহাস রচনার কাজে খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রীর ওপর নির্ভর করতে হয় । 


[        ] তাম্র -প্রস্তর যুগের সভ্যতা : হরপ্পা সভ্যতার মানুষ লােহার ব্যবহার জানত না । এখানকার বাসিন্দারা পাথর এবং তামা দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করত । এজন্য হরপ্পা সভ্যতাকে ‘তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা’ বলা হয় । পরবর্তীকালে এখানে তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে তৈরি ব্রোঞ্জের ব্যবহারও শুরু হয় । 


[         ] বিস্তার : পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে হরপ্পা সভ্যতা ছিল সর্ববৃহৎ । এই সভ্যতা সিন্ধু নদের অববাহিকা অঞ্চল ছাড়াও বহুদুর বিস্তৃত ছিল । উত্তরে জম্মুর নিকটবর্তী মান্ডা থেকে দক্ষিণে দাইমাবাদ এবং পূর্বে দিল্লির নিকটবর্তী আলমগিরপুর থেকে পশ্চিমে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত এই সভ্যতার আয়তন ছিল প্রায় সাড়ে বারাে লক্ষ বর্গকিলােমিটার । ছােটো বড়াে মিলিয়ে অন্তত ১৫০০ টি কেন্দ্রে এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে । 

[        ] নদী মাতৃক সভ্যতা : পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলির মতাে হরপ্পা সভ্যতাও নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে । সিন্ধু-সহ পার্শ্ববর্তী রাভি বা ইরাবতী , ঘর্ঘরা, শতদ্রু, ভােগাবর প্রভৃতি নদী এবং বেশকিছু শাখানদী ও উপনদীর বিস্তীর্ণ অববাহিকা অঞ্চলে এই সভ্যতার প্রসার ঘটে । এজন্য হরপ্পা সভ্যতাকে ‘ নদীমাতৃক সভ্যতা ’ বলা হয় । 


[         ] নগর পরিকল্পনা : হরপ্পা সভ্যতা ছিল সুপ্রাচীন নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা । এখানে সুবিন্যস্ত রাস্তাঘাট, রাস্তার পাশে ম্যানহােলযুক্ত ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী, পরিকল্পিত ঘরবাড়ি , স্নানাগার , শস্যাগার প্রভৃতি বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবার অস্তিত্ব ছিল । নগরের সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, নাগরিকদের রুচিবােধ , কর্মপ্রচেষ্টা,স্বাস্থ্যসচেতনতা ও দক্ষতা এই সবগুলি এক উন্নত নগর সভ্যতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে । 



[        ] পৌরব্যবস্থা : রাস্তাঘাট , ঘরবাড়ি , ওজন ও মাপব্যবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে এই সভ্যতার বিভিন্ন নগরগুলিতে সাদৃশ্য লক্ষ করে বিভিন্ন পণ্ডিত অনুমান করেছেন যে , এই সভ্যতায় একটি সুপরিকল্পিত কেন্দ্রীভূত পৌরব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল । ঐতিহাসিক এস , কে , সরস্বতী বলেছেন যে ,“এই সাদৃশ্য থেকে বােঝা যায় যে , এখানে একটি শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব ছিল যারা বিস্তৃত এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত ।”
[         ] আধুনিকতা : হরপ্পা সভ্যতা অন্তত পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন হলেও এই সভ্যতায় বহু আধুনিক বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব ছিল । যেমন –

i) রাস্তায় গ্যাসের আলাে ।

ii)  আধুনিক যুগের মতাে মেয়েদের লিপস্টিক , নেলপলিশ , ভ্যানিটি ব্যাগের ব্যবহার । 

iii) নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রভৃতি বিষয়গুলি এযুগের মানুষের আধুনিকতার পরিচয় দেয় ।



[      ] উপসংহার : হরপ্পা সভ্যতা প্রাচীন ভারত তথা বিশ্ব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায় । এখানকার উন্নত রাস্তাঘাট , ঘরবাড়ি , পয়ঃপ্রণালী , স্নানাগার , শস্যাগার , উন্নত পৌরব্যবস্থা , বিভিন্ন আধুনিক সামগ্রির ব্যবহার , স্বাস্থ্য-সচেতনতা প্রভৃতি এই সভ্যতাকে শুধু ভারতে নয় , সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসে বিশিষ্টতা দান করেছে । 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন