বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

মেহেরগড় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer মেহেরগড় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলােচনা করাে mehergor sobhotar boishistoguli somporke alochona koro


উত্তর : উল্লিখিত খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত ৭ টি পর্যায় থেকে এই সভ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় । যেমন— 

[        ] প্রাচীনত্ব : মেহেরগড় সভ্যতার সূচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দ । কার্বন -১৪ পরীক্ষায় জানা গেছে যে , এই সভ্যতা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল । সভ্যতাটি ৭ টি পর্যায়ে বিকশিত হয় এবং চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায়ে এই চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করে ।


[        ] প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতা : মেহেরগড় সভ্যতায় খননকার্য চালিয়ে বিভিন্ন হাতিয়ার , ইট , পাথর , মৃৎপাত্র সিলমােহর প্রভৃতি পাওয়া গেছে । কিন্তু এই সভ্যতায় কোনাে লিপি বা লিখিত উপাদান পাওয়া যায়নি । তাই মেহেরগড় সভ্যতাকে ‘প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতা’ বলে চিহ্নিত করা হয় । 

[         ] তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা : মেহেরগড় সভ্যতা নব্যপ্রস্তর যুগের সভ্যতা হলেও পাথরের হাতিয়ারের পাশাপাশি এই সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে একটি তামার পূতি এবং তৃতীয় পর্যায়ে তামার সিলমােহর, পােড়ামাটির পাত্রে তামার অংশ পাওয়া গেছে । তাই এই  সভ্যতার তৃতীয় পর্যায় তাম্র -প্রস্তর যুগের অন্তর্গত বলে মনে করা যায় । 


[         ] বিস্তার : মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র ছিল মেহেরগড় । মেহেরগড় ছাড়াও কুল্লি, রানা ঘূনডাই , পেরিয়ানাে ঘূনডাই , কিলেগুল মহম্মদ , নুরা , তরকাইকেল্লা , গাজিশাহ , কোটদিজি প্রভৃতি কেন্দ্রে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে । বালুচিস্তানের ঝােব নদীর দক্ষিণ উপত্যকা থেকে সিন্ধুন দের সমগ্র পশ্চিম অংশ পর্যন্ত এই সভ্যতা বিস্তৃত ছিল ।

[         ] নদীমাতৃক সভ্যতা : পৃথিবীর অন্যান্য নদীমাতৃক সভ্যতাগুলির মতােই মেহেরগড় সভ্যতাও নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল । এই সভ্যতার উত্তরে ছিল ঝোব নদী এবং পূর্ব দিকে ছিল সিন্ধু নদ ।তাই মেহেরগড় সভ্যতাকে ‘নদীমাতৃক সভ্যতা’ বলা হয় । 



[         ] সামাজিক বৈষম্য : মেহেরগড় সমাজ ছিল বৈষম্যমূলক ।

 i) সমাধিতে পার্থক্য : এখানকার কোনাে কোনাে সমাধিতে মৃতদেহের সঙ্গে প্রচুর মূল্যবান সামগ্রির উপস্থিতি এবং কোনাে কোনাে সমাধিতে সেগুলির অনুপস্থিতি মেহেরগড়ের সামাজিক বৈষম্যকে তুলে ধরে । 
 
ii) অন্যান্য পার্থক্য : আবার শস্য মজুত রাখার পদ্ধতি , ব্যবহৃত হস্তশিল্পের সামগ্রী প্রভৃতির পার্থক্যও সমাজে শ্রেণিবৈষম্য ও শ্রেণিবিভাজনের ইঙ্গিত দেয় । 

[         ] হাতিয়ার নির্মাণ : মেহেরগড়বাসী মূলত পাথরের হাতিয়ার নির্মাণ করত । এখানকার হাতিয়ারগুলির মধ্যে ছিল বিটুমিনজাতীয় পাথর খণ্ডে নির্মিত কাস্তে, নিড়ানি , জাঁতা , হামানদিস্তা প্রভৃতি। এই সভ্যতার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকর্মে নিযুক্ত থাকায় কৃষিকাজের উপযুক্ত হাতিয়ারই বেশি সংখ্যায় পাওয়া গিয়েছে ।


[         ] পশুপালন : প্রথমদিকে মেহেরগড়বাসী শিকারের কাজে নিযুক্ত থাকলেও পরবর্তীকালে পশুপালনে মন দেয় । ছাগল , কুঁজওলা ষাঁড়, ভেড়া , মােষ প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানিয়েছিল । 

[        ] কৃষিকাজ : পরবর্তীকালে মেহেরগড় বাসিন্দারা যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তােলে এবং কৃষিকাজ শুরু করে । যব ,গম , কার্পাস, প্রভৃতি ছিল তাদের প্রধান কৃষিজ ফসল ।তারা কৃষির প্রয়ােজনে বাঁধ নির্মাণ করে জলসেচের ব্যবস্থা রপ্ত করেছিল ।

[        ] কারিগরি উৎপাদন : মেহেরগড় সভ্যতায় মৃৎশিল্প, ধাতু শিল্প, অলঙ্কার শিল্প ,বস্ত্রবয়নশিল্প প্রভৃতির বিকাশ ঘটেছিল । মাটির জিনিসপত্র তৈরির পাশাপাশি তারা গলানাে ধাতু, শঙ্খ, নীলকান্তমণি ,চুনি ,লাপিস লাজুলি প্রভৃতি পাথর দিয়ে অলঙ্কার নির্মাণ করত । কার্পাসের তুলো দিয়ে সুতাে তৈরি করে কাপড় বােনার কাজও তারা রপ্ত করেছিল । 

[         ] বৈদেশিক সম্পর্ক : মেহেরগড় সভ্যতায় মৃৎপাত্রের ধরন ,নির্মাণ প্রণালী, নীলকান্তমণির ব্যবহার প্রভৃতি দেখে পণ্ডিতরা অনুমান করেন যে মধ্য এশিয়া , আফগানিস্তান , পারস্য প্রভৃতির সঙ্গে মেহেরগড় সভ্যতার যােগাযােগ ছিল । অধ্যাপক ড . রণবীর চক্রবর্তী মনে করেন যে শঙ্খ ও লাপিস লাজুলি বাইরে থেকে এখানে এসেছে । তার মতে , মেহেরগড়ে প্রাপ্ত তামার সিলমােহরগুলি তাদের ব্যাবসাবাণিজ্যের কাজে যুক্ত থাকার প্রমাণ দেয় । 


উপসংহার : মেহেরগড় সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে বেশিরভাগ গ্রামীণ চিত্র উঠে এলেও এই সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশকাল অর্থাৎ চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যায়ে সভ্যতাটি ক্রমে নগরজীবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে । অধ্যাপক ড . ব্রতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় মনে করেন যে , মেহেরগড়ের নগরায়ণ পরবর্তী সিন্দু সভ্যতায় পরিণত রূপ লাভ করেছিল ।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন