বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয় ? এই সভ্যতার মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের বর্ণনা দাও ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা কেন বলা হয় এই সভ্যতার মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের বর্ণনা দাও sindhu sobhotake horoppa sobhota keno bola hoi ai sobhotar manusher samajik o arthonoitik jiboner bornona dao


উত্তর : সিন্ধু সভ্যতাকে ‘ হরপ্পা সভ্যতা ’ নামেও অভিহিত করা হয় । কারণগুলি হল— 

[        ] প্রথম আবিষ্কার : সিন্ধু সভ্যতায় দীর্ঘকাল ধরে খননকার্য চালিয়ে এই সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে । হরপ্পায় সর্বপ্রথম খননকার্য চালিয়ে ( ১৯২১ খ্রি.)এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করা হয় বলে হরপ্পায় বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । 

[        ] সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র : বালুচিস্তান থেকে গুজরাটের সুবিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সিন্ধু সভ্যতার ব্যাপ্তি । হরপ্পা, মহেনজোদারাে , রােপার , লােথাল , কালিবঙ্গান , সুতকাজেনদোর , কোটডিজি , আলমগিরপুর সহ অসংখ্য কেন্দ্রে এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে । কিন্তু এসব কেন্দ্রগুলির মধ্যে হরপ্পাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র । 


[        ] সর্বাধিক বিস্তৃতি : হরপ্পা নগরীতে যে ধরনের সংস্কৃতি, কালানুক্রমিক ভৌগােলিক অগ্রগতি প্রভৃতির চিহ্ন প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে সেই ধরনের চিহ্নই পরবর্তীকালে এই সভ্যতার অন্যান্য কেন্দ্রগুলিতেও পাওয়া গেছে । 


[       ] সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে খননকার্য চালিয়ে যেসকল নিদর্শন পাওয়া গেছে সেগুলি থেকে এই সভ্যতার মানুষের সামাজিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় । যেমন –

[        ] সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস : অনেকে মনে করেন যে , সিন্ধু সভ্যতার সমাজ ছিল শ্রেণিবিভক্ত । ঐতিহাসিক কোশাম্বী মনে করেন যে— 

[ i ] প্রভাবশালী পুরােহিত ও শাসকগােষ্ঠী ।

[ii] বেতনভুক যােদ্ধ সম্প্রদায় । 

[iii] বণিক ,কারিগর ও ভূস্বামীদের দল এবং 

[iv] চাষি ,দরিদ্র শ্রমিক , ভৃত্য ও দাস — এই চার শ্রেণির মানুষ নিয়ে এই সভ্যতার সমাজ গড়ে উঠেছিল । 


[       ] মাতৃতান্ত্রিক সমাজ : সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত বিভিন্ন নারীমূর্তি দেখে অনুমান করা হয় যে , এখানকার সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক । অবশ্য  এবিষয়ে বিতর্ক আছে । 


[       ] খাদ্যাভ্যাস : সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা গম ও যবের তৈরি খাবার খেত । ভাতের প্রচলনও ছিল । এ ছাড়া পশুর মাংস , খেজুর , দুধ, মাছ প্রভৃতি খাদ্য তারা গ্রহণ করত । 


[        ] পােশাক : এখানকার অধিবাসীরা সুতি ও পশমের পােশাক পড়ত । তারা সাধারণত দুটি বস্ত্রখণ্ড পােশাক দেহের হিসেবে ব্যবহার করত । একটি খণ্ড দেহের উধ্বাংশের এবং অপর খণ্ডটি দেহের নিম্নাংশের জন্য ব্যবহার করত । 

[        ] অলংকার : সিন্ধুবাসীরা নারী -পুরুষ উভয়েই ধাতুর তৈরি অলংকার পড়ত । কানের দুল , চুরি, আংটি , মল , কোমরবন্ধ , মালা প্রভৃতি তারা অলংকার হিসেবে ব্যবহার করত । নারীরা বিভিন্নভাবে চুল বাঁধত । 


[       ] বিনােদন : পাশাজাতীয় খেলা , শিকার প্রভৃতি ছিল সিন্ধু বাসীদের অবসর বিনােদনের প্রধান মাধ্যম । এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাচ , গান , ষাঁড় ও পাখির লড়াইয়ের আয়ােজন করা হত । 


[       ] সিন্ধু সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি থেকে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার আভাসও পাওয়া যায় । 


i) পশুপালন : সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতিতে পশুপালনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । গােরু , মহিষ , ভেড়া , ছাগল , শূকর উট , প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শিখেছিল । সিন্ধুর অধিবাসীরা গৃহপালিত পশুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত । এ ছাড়া গােরু ও মহিষকে চাষে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করত ।


ii) কৃষি : এই সভ্যতার বাসিন্দাদের প্রধান কৃষিজাত ফসল ছিল গম , যব , তিল ,মটর ,রাই ,বাদাম প্রভৃতি । সিন্ধু নদীর জল তারা জমিতে সেচের কাজে লাগাত । এ ছাড়া বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করা হত । নিড়ানি , লাঙল , কাস্তে প্রভৃতি যন্ত্রপাতি তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করত । 


iii) শিল্প : সিন্ধু সভ্যতায় ধাতুশিল্প ,মৃৎশিল্প, অলংকার শিল্প ,বস্ত্রবয়ন শিল্প প্রভৃতির প্রচলন ছিল । তামা ও ব্রোঞ্জের সাহায্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, সােনা ও রুপাে দিয়ে অলংকার প্রভৃতি তৈরি হত । মৃৎপাত্র ও খেলনাগুলিতে বিভিন্ন নকশা করা হত । 


iv) বাণিজ্য : সিন্ধু সভ্যতার বাসিন্দারা অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল ।নিকটবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পশুটানা গাড়ি বা জলযানের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ স্থানীয় বাণিজ্যের পণ্যসামগ্রির লেনদেন চলত । বেলুচিস্তান ,আফগানিস্তান,ইরান ,মিশর,মেসােপটেমিয়া, প্রভৃতি দেশের সঙ্গে এই সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত ।

 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন