শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে prachin bharotiyo somaje narir bibahoriti somporke alochona koro


উত্তর : এম . উইন্টারনিজ , আর . ফিক , রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ মনে করেন যে , প্রতিটি যুগের ধর্মব্যবস্থা নারীর তৎকালীন সামাজিক অবস্থানকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল । 
ঋগবৈদিক যুগ : ঋগবৈদিক যুগের সমাজে নারী যথেষ্ট মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল । সাধারণভাবে এযুগে নারীর বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল না । নারীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের পতি নির্বাচন করতে পারত । বিধবা নারীদের ক্ষেত্রে দেবরকে বিবাহ করার রীতিও প্রচলিত ছিল ।বহু নারী বিবাহ না করে বিদ্যাচর্চা এবং শাস্ত্রালােচনার মধ্য জীবন কাটাতেন । 

পরবর্তী বৈদিক যুগ : পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে বাল্যবিবাহ , বহুবিবাহ প্রভৃতির প্রচলন নারীর মর্যাদা হ্রাসের প্রমাণ দেয় । এযুগে নারীর বিবাহ পদ্ধতি ক্রমশ জটিল হয় এবং বিধবাবিবাহের প্রচলন ঘটে । এযুগে উচ্চ সম্প্রদায়ে বিশেষত রাজপরিবারে বহুবিবাহের রীতি ছিল । উচ্চবর্ণের সঙ্গে সঙ্গে নিম্নবর্ণের অথবা একই বর্ণ বা জাতির মধ্যে বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল । স্বগােত্রে বিবাহের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল । 


মৌর্য যুগ : মৌর্য যুগে চার ধরনের বৈধ বা শাস্ত্রীয় এবং চার ধরনের অশাস্ত্রীয় বিবাহরীতি প্রচলিত ছিল । মেগাস্থিনিসের লেখা থেকে জানা যায় , এসময়ে নিজ জাতি এবং নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের প্রচলন ছিল । ‘অর্থশাস্ত্র’ থেকে জানা যায় যে , এসময় আট ধরনের বিবাহরীতি এবং বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল । ‘পরাশর সংহিতা’য় উল্লেখ করা হয়েছে যে ,এযুগে স্বামী সন্ন্যাস নিলে বা নিরুদ্দিষ্ট হলে নারী পুনরায় বিবাহ করতে পারত ।  

মৌর্য পরবর্তী যুগে : মৌর্য পরবর্তী যুগের সমাজে নারীর বিবাহরীতি নিয়ে ‘মনুসংহিতাস্মৃতি’ তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে , নারী প্রথম জীবনে পিতার অধীনে , বিবাহের পর স্বামীর অধীনে এবং পরবর্তী   জীবনে পুত্রের অধীনে বার্ধক্য জীবন কাটাবে । ‘মনুসংহিতাস্মৃতি’ তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবাহিত নারী একান্তভাবেই স্বামীর ওপর নির্ভরশীল । মৌর্যোত্তর সমাজে ‘অনুলােম’ ও ‘প্রতিলােম’ —এই দুই বিবাহরীতিরই প্রচলন ছিল । 


গুপ্তযুগ : গুপ্তযুগে যৌবনপ্রাপ্তির আগে ও পরে , এই দুই অবস্থাতেই নারীদের বিবাহ দেওয়ার রীতি ছিল । পুরুষপ্রধান সমাজে পুরুষরা একাধিক পত্নী গ্রহণ করতে পারতেন । স্মৃতিশাস্ত্রের বিধান অমান্য করেও এযুগে অনুলােম ও প্রতিলােম বিবাহরীতি চালু ছিল । কন্যাদের বিবাহের সাক্ষ্য পাওয়া যায় । সাধারণত ব্রায়,প্রাজাপত্য আর্য ও দৈব এই চার ধরনের বিবাহরীতি অধিক প্রচলিত ছিল । তবে রাজপরিবার গুলির মধ্যে গান্ধর্ব মতে বিবাহ হত বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে । 


গুপ্ত পরবর্তী যুগ : এযুগে সাধারণত ১২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মেয়েদের বিবাহের আয়ােজন করা হত । উচ্চবিত্ত সমাজে বিধবাদের পুনরায় বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল । গুর্জর প্রতিহার সমাজে সাধারণত নারীদের বিবাহ হত স্ববর্ণে , কিন্তু ভিন্ন গােত্রে । পাল সেন যুগে বহুবিবাহ , বাল্যবিবাহ , স্ববর্ণ ও অস্বর্ণ বিবাহরীতি ( অনুলােম ও প্রতিলােম ) প্রচলিত ছিল । বিবাহে যৌতুক দানের প্রথা ছিল । কৌলিন্য প্রথার সুযােগ নিয়ে কুলীন ব্রাত্মণরা একাধিক বিবাহ করত । 

উপসংহার : পরবর্তী সময়ে বিশেষত সুলতানি আমলে হিন্দু মুসলমান সমাজে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হত । তুর্কি অভিজাতদের নানান গােষ্ঠীর মুসলমানরা হিন্দু নারীদের বিবাহ করেছিলেন ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন