মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২

প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষার বর্ণনা দাও ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষার বর্ণনা দাও prachin bharote narisikkhar bornona dao


উত্তর : প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় বিভিন্ন যুগের সমাজে নারীর মর্যাদার উন্নতি বা অবনতি যাই ঘটুক না কেন , প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন যুগে ভারতীয় নারীর শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি মােটামুটিভাবে অব্যাহত ছিল । বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী দীর্ঘ সময়ের ভারতের নারীশিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় ।  

ঋগবৈদিক যুগ : ঋগবৈদিক যুগে নারীশিক্ষারও যথেষ্ট সুযােগ ছিল । ধর্মচর্চা, চরিত্রগঠন , ব্যক্তিত্বের বিকাশ প্রভৃতি ছিল এই যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্য । এযুগে মমতা , ঘােষা , লােপামুদ্রা , বিশ্ববারা , বিশাখা প্রমুখ বিদুষী নারীর কথা জানা যায় । এযুগের নারীরা বেদের অনেক স্তোত্রও রচনা করেছিলেন । 


পরবর্তী বৈদিক যুগ : সামগ্রিকভাবে পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও নারীশিক্ষা ভালােভাবেই চালু ছিল । এযুগে কোনাে কোনাে নারী উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ছিলেন । এযুগের যে সকল নারী বিবাহের আগে পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন ,তাদের ‘সদ্যোদ্বাহা’এবং যাঁরা আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শন চর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন, তাদের ‘ব্ৰহ্ববাদিনী’ বলা হত । এযুগের বিখ্যাত বিদুষী নারী ছিলেন গার্গী , মৈত্রেয়ী প্রমুখ । 


মহাকাব্য ও প্রতিবাদী ধর্মের যুগ : মহাকাব্যের যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও এযুগের বহু নারী বিদ্যাচর্চা করতেন । মহাভারতে দ্রৌপদীকে ‘পণ্ডিতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এযুগের অনেক নারী সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করতেন । বিনয়পিটকে বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের অক্ষর জ্ঞান অর্জনকে নিষিদ্ধ করা হয়নি । এযুগের নারীরা সংস্কৃত কাব্য ও নাটকও রচনা করেছেন । ভিক্ষুণীদের রচিত সংগীতগুলি ‘থেরীগাথা’ গ্রন্থে সংকলিত আছে । চন্দনা, জয়ন্তী প্রমুখ ছিলেন এযুগের উচ্চশিক্ষিতা নারী । 

মৌর্য যুগ : মৌর্য যুগে শিক্ষিত নারীরা রাজকার্যেও অংশ নিতেন । সমকালীন সংস্কৃত সাহিত্যে এমন বহু নারীর উল্লেখ আছে যারা লিখতে , পড়তে ও সংগীত রচনা করতে পারতেন । কোনাে কোনাে নারী চিত্রশিল্পেও দক্ষ ছিলেন । 


মৌর্য-পরবর্তী যুগ : মৌর্য পরবর্তী যুগে অনেক মহিলা উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন । পাণিনি বলেছেন যে , এই সময় নারীরা বেদ অধ্যয়ন করতেন । কাত্যায়ন তার ‘কার্তিক’ গ্রন্থে অধ্যাপিকা বােঝাতে ‘উপাধ্যায়া’ বা ‘উপাধ্যায়ী’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এই সময়ে অনেক অভিজাত মহিলা বৈদিক স্তোত্র, সংস্কৃত কাব্য ও নাটক রচনা করতেন । 


গুপ্তযুগ : বিভিন্ন সাহিত্য থেকে গুপ্তযুগের নারীরা , ইতিহাস ও কাব্যচর্চা করত বলে সমকালীন সাহিত্য থেকে জানা যায় । শাস্ত্রজ্ঞান এযুগের নারীর বােধবুদ্ধিকে তীক্ষ করত বলে ব্যাৎসায়ন উল্লেখ করেছেন । তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে ,আদর্শ পত্নীকে সুশিক্ষিত হতে হবে এবং তাকে সাংসারিক আয়ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে । গুপ্তযুগে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা প্রভাবতী গুপ্তার মতাে কাশ্মীর, উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করতেন । অবশ্য এযুগে সাধারণ দরিদ্র নারীদের শিক্ষার সুযােগ বিশেষ ছিল না ।

হর্ষবর্ধনের আমল : হর্ষবর্ধনের আমলে চিত্রকলা , নৃত্য,সংগীত প্রভৃতি শিক্ষার প্রচলন ছিল । হর্ষবর্ধনের ভগ্নি রাজ্যশ্রী নিয়মিত সংগীত , নৃত্য ও অন্যান্য কলার চর্চা করতেন বলে বানভট্ট উল্লেখ করেছেন । নারীরা সাধারণত পিতৃগৃহেই শিক্ষালাভ করত । 

উপসংহার : ঋগবৈদিক যুগে নারীরা যে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন , তা পরবর্তী বিভিন্ন যুগে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল । নারীসমাজে শিক্ষাগ্রহণের ধারা অব্যহত থাকলেও মর্যাদায় তারা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনি । তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ নারীরা বিশেষত দরিদ্র ঘরের নারীরা শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছিল ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন