মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২

‘গুরু’ নাটক অবলম্বনে উপাধ্যায় ও উপাচার্য চরিত্র আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer গুরু নাটক অবলম্বনে উপাধ্যায় ও উপাচার্য চরিত্র আলােচনা করাে guru natok abolombone upadhyay o uparcharjo choritro alochona koro

উত্তর : ‘গুরু’ নাটকের একটি উল্লেখযােগ্য চরিত্র হল উপাধ্যায় । উপাধ্যায় উপাধি হতে পারে , উপাধ্যায় নাম হিসেবেও প্রযুক্তহতে পারে , আবার পাণ্ডিত্য অর্থে উপাধ্যায় পদের ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে । যাই হােক , উপাধ্যায়ের শাস্ত্রীয় বিধান কণ্ঠস্থ । কোথায় কোন শিক্ষার্থী বিধিবিধান ও নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে , কিংবা করে থাকলে তার পাপক্ষালনের প্রায়শ্চিত্তের বিধান আওড়ানাের জন্য তিনি সবসময় তৎপর । পঞক তাই বলেছে , “পাপের একটুকু গন্ধ পেলে একেবারে মাছির মতাে ছােটে ।”

[          ]  কুলদত্তের ক্রিয়াসংগ্রহ কিংবা ভরদ্বাজ মিশ্রের প্রয়ােগপ্রজ্ঞপ্তি তাঁর জিভের ডগায় । সুভদ্র ‘ উত্তরদিকের জানালা ’ শব্দ উচ্চারণ করতেই উপাধ্যায় জানতে চেয়েছেন জানালায় সে আঁক কেটেছে কিনা , কেটে থাকলে চৌকোণা না গােলাকার , আর যদি কনুই ঠেকিয়ে থাকে , তাহলে সেদিকে সব যজ্ঞপাত্র অশুচি হওয়ার জন্য ফেলা যাবে , সাত মাসের বাছুরকে দিয়ে জানালা চাটিয়ে শােধন করতে হবে । 



[          ] আয়তনের আচার্যও জানেন উপাধ্যায়  কোন বালক কী নিয়ম লঙ্ঘন করে কী পাপ কাজ করেছে তার খবরাদি রাখেন । তাই আচার্য জিজ্ঞেস করেন , ‘উপাধ্যায় , কোনাে সংবাদ আছে নাকি ?’ উপাধ্যায় পরছিদ্রান্বেষী । শুধু তাই নয়, প্রায়শ্চিত্ত যথাযথ হােক , সে -ব্যাপারে তৎপরও বটে । আবার এই মানুষই কৌতুকরসের ভিয়ান চড়াতে পারেন । প্রথম যুনক যখন বলে , “ অচলায়তনের দরজার কথা বলছ — সে আরাে আকাশের সঙ্গে দিব্যি সমান করে দিয়েছি ।” তখন উপাধ্যায় বলেন , “বেশ করেছ ভাই । আমাদের ভারি অসুবিধা হচ্ছিল । এত তালাচাবির ভাবনাও ভাবতে হত ।”

 [          ]  উপাচার্য আচার্যের সহকারী । তিনি শান্ত,সংযত ও প্রাজ্ঞ মানুষ । আয়তনের দায় - দায়িত্ব ছিল আচার্যের হাতে । তাঁকে এবং তাঁর কাজে সাহায্যকারী মানুষটি হলেন উপাচার্য । নাম সূতসােম । তিনি কিন্তু আয়তনের কর্মধারায় বড়ােই সন্তুষ্ট।তিনি মনে করেন , আয়তন চলছে বড়াে শান্তিতে ।তিনি মনে করেন , তার সার্থকতায় প্রসন্ন হয়ে গুরু দীর্ঘকাল পরে অচলায়তনে আসছেন । তিনি এ কথাও মনে করেন বজ্রশুদ্ধিব্রত এই আয়তনে এবার নিয়ে সাতাত্তর বার পূর্ণ হয়েছে , যা অন্য কোনাে আয়তনে সম্ভবপর হয়নি । এ কৃতিত্ব অচলায়তনের গর্ব । শুধু তাই নয় , উপাচার্য আয়তনে লেশমাত্র ত্রুটি বা বিচ্যুতি দেখতে পান না । তিনি মনে করেন , সমস্ত শিক্ষা এই আয়তনে সমাধা হয়ে গেছে । উপাচার্য এরকম স্বভাব - প্রকৃতির মানুষ ।





‘সকাল সাতটার আগেই পাদ্রে গােনসাগা এসে হাজির ।’ – পাদ্রে গােনসাগা কে ? তিনি কেন এসেছিলেন ? ‘বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে’ জড়াে হওয়া দর্শকরার কী ভেবেছিল ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer সকাল সাতটার আগেই পাদ্রে গােনসাগা এসে হাজির পাদ্রে গােনসাগা কে তিনি কেন এসেছিলেন বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জড়াে হওয়া দর্শকরার কী ভেবেছিল padre gonsaga ke tini keno asechilen bondir bhobishot niye joro haoya dorshokrar ki vebechilo


উত্তর : পাদ্রে গােনসাগা হলেন একজন যাজক ।যাজক হওয়ার আগে ছিলেন এক হট্টাকট্টা কাঠুরে । তিনি এসেছিলেন মুরগির খাঁচায় বন্দি বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ােকে দেখতে । পরীক্ষা করে বুঝে নিতে বিশাল ডানাওয়ালা বুড়াে সত্যিকারের মানুষ না দেবদূত । পাদ্রে গােনসাগা আসার আগে মুরগির খাচার কাছে নতুন দর্শকেরা ভিড় জমিয়েছে । তারা বন্দির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাকল্পনা করছে । তাদের মধ্যে সরলতম লােকটি ভেবে ফেলে যে বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে সারা জগতের পুরপিতা নাম দেওয়া হােক । অপেক্ষাকৃত কঠিন হৃদয়ের লােকদের মধ্যে একজন মনে করে বুড়ােকে এক পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করা হােক , যাতে সে সব যুদ্ধই জিতিয়ে দিতে পারে । কিছু কিছু দূরদর্শী মনে করে ওকে দিয়ে যদি পৃথিবীতে কোনাে ডানাওয়ালা জাতির জন্ম দেওয়া যায়,তাহলে সে জাতি জ্ঞানে গুণে সেরা হবে । তারাই নেবে বিশ্বব্ৰত্মাণ্ডের দায়িত্ব।




সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২

বুদ্ধিবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer বুদ্ধিবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে budhibad kake bole gganer utsho somporke budhibader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে সমস্ত দার্শনিক মতবাদ রয়েছে , তাদের মধ্যে বুদ্ধিবাদ হল অন্যতম ।বুদ্ধিবাদ অনুযায়ী বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অর্থাৎ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । জ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট্য হল সর্বজনীনতা । জ্ঞানের সর্বজনীনতা প্রকাশিত হয় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । তাই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা হয় ।

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য -

[        ] প্রাচীন বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পারমিনাইডিস , সক্রেটিস , প্লেটো প্রমুখ । তাদের মতে , যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায় হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা । আমরা সামান্য ধারণার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করি , আর এই সামান্য ধারণা আমরা প্রাপ্ত হই বুদ্ধির মাধ্যমেই । 


[        ] আধুনিক বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত , ব্রিটিশ দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনােজা,গটফ্রেড উইলহেম লাইবনিজ প্রমুখ । প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ভলফ এবং কান্টের নামও এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য । এই সমস্ত দার্শনিকদের সকলেই স্বীকার করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানলাভের প্রকৃষ্ট উপায় ।

 বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
 
প্রথম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , মানুষের মনই হল বুদ্ধির মূল উৎস এবং এর দ্বারাই লাভ করা যায় ধারণা । আর এই ধারণা থেকেই উৎসারিত হয় জ্ঞান । 


দ্বিতীয় বক্তব্য : বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা যায় বলে অভিজ্ঞতাবাদীরা যে দাবি করেন , তা যথার্থ নয় । কারণ , অভিজ্ঞতা দ্বারা কখনােই সার্বিক ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় । এরূপ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব শুধুমাত্র বুদ্ধির দ্বারাই । 


তৃতীয় বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান উৎসারিত হয় সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার মাধ্যমে । আর এই সহজাত ধারণার জ্ঞান লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধি তথা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । 

চতুর্থ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বলেন যে , জ্ঞানের বাস্তব মূল্য আছে , আর তা লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধির মাধ্যমেই । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা মূল্যের জ্ঞান লাভ করা যায় না ।


পঞ্চম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি হল অবরােহাত্মক পদ্ধতি । কারণ , প্রকৃত জ্ঞান বলতে গাণিতিক জ্ঞানকেই বােঝানাে হয় । গাণিতিক জ্ঞানে কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করেই অবরােহাত্মক পদ্ধতিতে সুনিশ্চিত ও সর্বজনীন জ্ঞান লাভ করা যায় । 


ষষ্ঠ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব । সাধারণত যে সমস্ত বচন পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য, তা বিশ্লেষক হয়, আর যে সমস্ত বচন পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য, তা সংশ্লেষক হয় । কিন্তু বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের মাধ্যমেও জ্ঞানের প্রকাশ সম্ভব । যেমন 7+ 5 = 12 একদিকে যেমন পূর্বতঃসিদ্ধ, অপরদিকে তেমনি সংশ্লেষকও । কারণ 7 এবং 5 যােগ করলে 12 সংখ্যাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় বলেই তা পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য হয় । আবার 12 সংখ্যাটি 7 এবং 5 ছাড়া আরও একটি নতুন সংখ্যারূপে গণ্য হওয়ায় তা সংশ্লেষকরূপে স্বীকৃত ।
সপ্তম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে স্পষ্টতা,প্রাঞ্জলতা ও বিবিক্ততা প্রভৃতি হল জ্ঞানের মাপকাঠি । অর্থাৎ জ্ঞানকে স্পষ্ট হতে হবে , প্রাঞ্জল তথা সরল হতে হবে , এবং বিবিক্ত তথা স্বচ্ছরূপে গণ্য হতে হবে । জ্ঞানের মধ্যে কোনােপ্রকার স্ববিরােধ থাকা চলবে না ।




শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২

সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কী ? বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কী বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন nishkam karmer modhey parthokko ki bibekanonda kivabe nishkam karmake bakha korechen


উত্তর :  ভারতীয় দর্শনে দুপ্রকার কর্মকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে — সকাম ধর্ম ও নিষ্কাম ধর্ম । সকাম কর্ম হল কামনা বাসনা যুক্ত কর্ম । অর্থাৎ , বলা যায় যে , যে সমস্ত কর্ম আমাদের কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য করা হয়, সেগুলিকেই বলা হয় সকাম কৰ্ম । এই সকাম কর্মের জন্যই আমাদের কর্মফল ভোগ করতে হয় । অপরদিকে , নিষ্কাম কর্ম হল এমনই কর্ম যা কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য কখনোই কৃত নয় । কামনা বাসনা ছাড়া শুধুমাত্র কর্ম করার জন্যই যে কর্ম করা হয় তাকে বলে নিষ্কাম কর্ম । নিঃ(নাই) + কাম ( কামনা ) = নিষ্কাম । অর্থাৎ, যে কর্মের পিছনে কোনাে কামনা থাকে না তাকে বলে নিষ্কাম কর্ম । এরূপ কর্মের কোনাে কর্মফল থাকে না এবং সে কারণেই মানুষকে এর জন্য কোনাে কর্মফল ভোগ করতে হয় না ।নিষ্কাম কর্ম এক আদর্শমূলক কর্ম যা গীতায় স্বীকৃত হয়েছে এবং বিবেকানন্দ তার কর্মযােগের মূল ভিত্তি রূপে উল্লেখ করেছেন এই নিষ্কাম কর্মকে ।

[          ] বিবেকানন্দের মতে নিষ্কাম কার্য : স্বামী বিবেকানন্দ তার কর্মযােগ এ কর্মের আদর্শগত ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে শ্রীমদভাগবত গীতায় যে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে , তার উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেন যে ,প্রকৃত কর্মযােগীকে নিষ্কামভাবে কর্ম সম্পাদন করতে হয় । কারণ , যিনি কর্মযােগী রূপে গণ্য, তিনি কখনােই ফলাকাঙ্ক্ষা নিয়ে কর্ম সম্পাদন করেন না । তিনি শুধুমাত্র কর্মের জন্যই কর্ম সম্পাদন করেন । কর্মযোগীর কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাই কখনোই কামনা বাসনা থাকা উচিত নয় । কর্মযােগীর শুধুমাত্র নিরন্তর নিষ্কামভাবে কর্ম করে যাওয়াই উচিত , আর কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পন করা উচিত । ঈশ্বরই হলেন আমাদের সমস্ত প্রকার কর্মের নিয়ন্ত্রা । এরূপ বিশ্বাসই কর্মযােগীর থাকা উচিত । গীতায় উল্লেখিত কর্মের এরুপ আদর্শকেই স্বামী বিবেকানন্দ তার কর্মযােগের মূল ভিত্তিরূপে উল্লেখ করেছেন ।


[          ] অনাসক্তির শক্তিতে নিষ্কাম কর্ম : কর্মযােগের ষষ্ঠ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে , অনাসক্তিই হল পরিপূর্ণ আত্মত্যাগ । বাহ্যবিষয়ে অনাসক্তি অর্জন করতে হলে নিরন্তরভাবে নিষ্কাম কর্ম করতে হবে । নিষ্কামভাবে কর্ম করার ক্ষমতা মানুষ কখনােই একদিনে আয়ও করতে পারে না । ক্রমিক ও নিরন্তর কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ ধীরে ধীরে এরূপ শক্তি অর্জন করতে পারে । মানুষ ক্রমে ক্রমে বুঝতে সমর্থ হয় যে , প্রকৃত সুখ হল স্বার্থপরতার বিনাশে । সে কারণেই মানুষের সকাম ও স্বার্থ যুক্ত কর্ম করা কখনােই উচিত নয় । অনাসক্তিকে আয়ত্ত করে ,দুর্বলতাকে পরিহার করে , মানসিক বলে বলীয়ান হয়ে তবেই কর্মযােগী নিষ্কামভবে কর্ম করতে সমর্থ হয় । 

[          ] মুক্তিতে নিষ্কাম কর্ম : স্বামীবিবেকানন্দ তার কর্মযােগ - এর সপ্তম অধ্যায়ে মুক্তির বিষয়টি আলােচনা করেছেন । বিবেকানন্দের মতে ,মানুষের চরম লক্ষ্য হল মুক্তি । মুক্তি লাভের জন্য মানুষ এই সসীমত্বের বাঁধন কেটে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠতে চায় । মুক্তির জন্য মানুষ সমস্তপ্রকার আসক্তিকে ত্যাগ করতে চায় । এই আসক্তি ত্যাগের উপায় হল দুটি নিবৃত্তি মার্গ এবং প্রবৃত্তি মার্গ । নিবৃত্তি মার্গে নেতি নেতি (এটি নয় এটি নয় ) করে সব কিছু ত্যাগ করতে হয় । আর প্রবৃত্তি মার্গে ইতি ইতি করে সবকিছুকে গ্রহণ করে তবে সেগুলিকে ত্যাগ করতে হয় । সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তি মার্গকে মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিলেও মহাপুরুষগণ কিন্তু নিবৃত্তি মার্গকেই মুক্তির পথ বলে মনে করেন । যে পথই অনুসরণ করা হােক না কেন , একথা ঠিক যে , মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে অবশ্যই নিষ্কামভাবে কর্মযােগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে । এরূপ বিষয়টিই বিবেকানন্দ তার কর্মযােগে তুলে ধরেছেন । 







শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে robindronather manobotabadi darshoner mul utsohoguli ullekh koro o bishleshon koro


উত্তর :  রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে মূলত মানবতাবাদী দর্শনরূপে উল্লেখ করা হয় । কারণ , তাঁর দর্শনে মানবতাবাদের বিষয়টিই দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । তাঁর দর্শনে এই মানবতাবাদের বিষয়টি বিভিন্ন উৎস থেকে হাজির হয়েছে । মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি এখানে উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করা হল –

[ 1 ] মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎস হিসেবে অদ্বৈত বেদান্ত : মানবতাবাদের মূল কথাই হল জীবরূপে সকল মানুষের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া , সকল মানুষকেই ভালবাসা । মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল চিন্তা তাই মানবতাবাদ থেকেই নিঃসৃত । রবীন্দ্রনাথ অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারায় এক ও অদ্বিতীয় ব্রত্মের প্রকাশ হিসেবে মানুষের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । মানুষের অস্তিত্ব ও মর্যাদা তাই তার কাছে সবার ঊর্বে । অদ্বৈত বেদান্তের মূলকথাই হল — জীব ব্রহ্মস্বরূপ । সেকারণেই তিনি যেখানেই মানুষ ও মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন , সেখানেই তিনি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন । 


[ 2 ] মানবতাবাদী দর্শনের ধর্মীয় ভিত্তি : মানুষের জীবন ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে ,ধর্মের বিষয়টি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে । এমন কোনাে মনুষ্যসমাজ সমাজ দেখা যায় না , যেখানে ধর্মের বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত । মানুষ এবং মানুষের সমাজকে জানতে গেলে তাই ধর্মের ইতিহাসটিও জানা দরকার । প্রখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিক ম্যাক্সমুলার-কে অনুসরণ করে বলা যায় —মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হল ধর্মের ইতিহাস । রবীন্দ্রনাথও মানুষের জীবন থেকে ধর্মের বিষয়টিকে বাদ দিতে চাননি । তবে তিনি ধর্ম বলতে চিরাচরিত বা প্রথাগত ধর্মকে না বুঝিয়ে ধর্ম হিসেবে মানবতাবাদের বিষয়টিকেই সূচিত করেছেন । সুতরাং বলা যায় যে , রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের ক্ষেত্রে এক ধর্মীয় ভিত্তিও উপস্থিত ।


[ 3 ] মানবতাবাদী দর্শনের ভিত্তি হিসেবে জীবভাব ও বিশ্বভাব : মানবতাকে মানুষের ধর্মরূপে উল্লেখ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে দুটি সত্তার উল্লেখ করেছেন । এই দুটি সত্তার একটি হল জীবসত্তা এবং অপরটি হল মানবসত্তা 
। জীবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় জীবভাব এবং মানবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় বিশ্বভাব । স্বার্থযুক্ত মানুষের চিন্তাই হল তার জীবভাব । কিন্তু স্বার্থযুক্ত চিন্তাকে অতিক্রম করে সামগ্রিকভাবে মানুষের চিন্তার মধ্যেই ফুটে ওঠে তার বিশ্বভাব । জীবভাবকে অতিক্রম করে বিশ্বভাবের মাধ্যমেই মানুষ মানবতাবাদের পূজারিরূপে গণ্য হতে পারে । 


[ 4 ] মানবতাবাদের ভিত্তিরূপে শ্রেষ্ঠমানব চেতনা : রবীন্দ্রনাথের মতে , মানুষই হল শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষের চেতনাই তাই সর্বশ্রেষ্ঠ চেতনারূপে গণ্য । এরূপ চেতনাই মানুষকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরতে পারে । মানবতাবাদের অর্থই হল তাই যা মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে । এরূপ বিকাশের ফলে মানুষ আর নিজের ক্ষুদ্র চেতনায় আবদ্ধ থাকতে পারে না । এরই ফলে ক্ষুদ্র চেতনার গন্ডি পেরিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে মানুষের জয়গান শােনা যায় । এ হল এমনই শ্রেষ্ঠতা যা ব্যক্তিমানুষকে তার ক্ষুদ্র সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়ে পরমসত্তার চেতনার দ্বারে হাজির করে ।






বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে abhigatbad kake bole gganer utsoho somporke abhigottabader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত মতবাদের উল্লেখ করা যায়, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদ হল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ । অভিজ্ঞতাবাদ মূলত বুদ্ধিবাদের একটি বিরােধী মতবাদরূপেই গণ্য । অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য হল ,আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অভিজ্ঞতা বাদ বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে বর্জন করে শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে দাবি করে । অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থকদের বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদী । 

[         ] চরমপন্থী বা নরমপন্থী যাই হােক না কেন , সমস্ত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের বক্তব্যের মধ্যেই কয়েকটি মূল সুর ধ্বনিত হয় ৷ সেগুলিকেই অভিজ্ঞতাবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়রূপে গণ্য করা হয় । অভিজ্ঞতাবাদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি নীচে উল্লেখ করা হল । 



[         ] জ্ঞানের মুখ্য উৎস হিসেবে অভিজ্ঞতা : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের মুখ্য উৎস । এই ইন্দ্রিয়ানুভবকে বাদ দিয়ে কখনােই জ্ঞান লাভ করা যায় না । অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে , বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা বা বুদ্ধি বলে স্বতন্ত্র কোনাে বিষয় নেই । বাস্তবের সমস্ত জ্ঞানই অভিজ্ঞতানির্ভর । 


[          ] জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে আরােহাত্মক পদ্ধতি : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হল আরােহাত্মক পদ্ধতি , কখনােই অবরােহাত্মক পদ্ধতি নয় । কারণ , আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে একটি সাধারণ সূত্র বা ধারণায় উপনীত হই । সুতরাং , সমস্তপ্রকার সামান্য ধারণাকেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ।



[        ] সহজাত ধারণার বিষয়টিকে বর্জন : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ বুদ্ধিবাদের মূলভিত্তি অর্থাৎ সহজাত ধারণার বিষয়টিকে নস্যাৎ করেছেন । তাদের মতে , সহজাত ধারণা বলে কোনাে কিছুই থাকতে পারে না । কারণ , সহজাত ধারণার বিষয়কে কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না । তাদের মতে, আমাদের সমস্ত ধারনাই প্রাপ্ত হয় ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে । তারা আরও দাবি করেন যে, জন্মাবার সময় আমাদের মন থাকে সাদা কাগজের মতাে । অভিজ্ঞতার দ্বারাই সেখানে সমস্ত ধারণা মুদ্রিত হয় , অন্য কোনাে উপায়ে নয় । সুতরাং সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার বিষয়টি অবশ্যই পরিত্যাজ্য । 

[         ] অভিজ্ঞতাবাদীদের স্বীকার্য বাক্য : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ দু-ধরনের বাক্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন— [i] বিশ্লেষক এবং [ii] সংশ্লেষক । যে সমস্ত বাক্য বিশ্লেষকরূপে গণ্য,তা অবশ্যই পূর্বতঃসিদ্ধ হবে । আবার যে সমস্ত বাক্য সংশ্লেষকরূপে গ্রাহ্য, তা অবশ্যই পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য হবে । এ দুটি ছাড়া তৃতীয় কোনাে প্রকার বাক্যকে অভিজ্ঞতাবাদীরা স্বীকার করেন না । বুদ্ধিবাদীরা যে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের উল্লেখ করেছেন , তাকে অভিজ্ঞতাবাদীরা বর্জন করেছেন ।



[          ] মূল্যের বাস্তব সত্তাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদীরা দাবি করেন যে, মূল্যের কোনাে বাস্তব সত্তা নেই । তারা সত্য , শিব ও সুন্দর রূপ মূল্যকে অস্বীকার করেছেন এবং পরমমূল্যের বিষয়কে নিছক কল্পনারূপে অভিহিত করেছেন । কারণ , ইন্দ্রিয় সংবেদন দ্বারা এই সমস্ত মূল্যের মূল্যায়ন কখনােই সম্ভব নয় ।

[           ] অধিবিদ্যাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ অধিবিদ্যাকে অর্থহীনরূপে উল্লেখ করেছেন । তাঁদের মতে , অধিবিদ্যার জ্ঞান কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে লভ্য নয় । সেকারণেই তারা অধিবিদ্যাকে অসম্ভব , উদ্ভট ও আজগুবিরূপে উল্লেখ করেছেন এবং অধিবিদ্যক বাক্যসমূহকে অর্থহীনরূপে গণ্য করেছেন । 



[         ] জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে অভিজ্ঞতাবাদ শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতার ওপরই গুরুত্ব আরােপ করেছে । বুদ্ধিবাদের বিরােধী মতবাদরূপে গণ্য হওয়ায় তা বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে । এর ফলে তা একদেশদর্শিতার দোষে দুষ্ট হয়েছে । কিন্তু জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া বুদ্ধিরও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে , তা আদৌ অস্বীকার করা যায় না । বরং এই দাবি করা সংগত যে , জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার যতটা ভূমিকা আছে , বুদ্ধিরও ঠিক ততটাই ভূমিকা রয়েছে ।সুতরাং জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদ কখনােই একটি পূর্ণাঙ্গ মতবাদরূপে গণ্য হয় না ।







বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২

‘ জানা ’ শব্দটি কী কী অর্থে ব্যবহার করা হয় ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer জানা শব্দটি কী কী অর্থে ব্যবহার করা হয় jana sobdoti ki ki arthe babohar kora hoi

উত্তর :  জ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে হলে ‘জানা’ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ ও প্রয়ােগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা উচিত । আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ‘জানা ’ ক্রিয়াপদটিকে বিভিন্ন অর্থে প্রয়ােগ করে থাকি । এই ‘ জানা’ বা ‘জ্ঞান’ শব্দটি যেসব অর্থে প্রযুক্ত হতে পারে , তা নীচের উদাহরণগুলি থেকে প্রমাণিত –

[ 1 ] আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাম রায়কে জানি ।

[ 2 ] আমি মােটরগাড়ি চালাতে জানি । 

[ 3 ] আমি জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘােরে ।

[         ] এই তিনটি উদাহরণে ‘জানা ’ শব্দটি প্রযুক্ত হলেও তিনটি ক্ষেত্রেই ‘জানা ’ শব্দটি কখনােই একই অর্থে প্রযুক্ত হয়নি । কারণ , প্রথম উদাহরণটির ক্ষেত্রে ‘ জানা’ শব্দটি ‘পরিচিতি অর্থে’ বােঝানাে হয়েছে । দ্বিতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে জানা পদটি ‘কর্মকুশলতার অর্থে’ প্রযুক্ত হয়েছে । আর তৃতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে জানা পদটি একটি সত্য ঘটনাকে ভাষায় উপস্থাপিত করার অর্থে তথা ‘ বাচনিক অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে । জানার এই ত্রিবিধ অর্থকে নীচে পর্যায়ক্রমিকভাবে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল – 

[ 1 ] পরিচিতি অর্থে জানা : আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, কোনাে প্রকারের পরিচিতি অর্থে ‘জানা ’ ক্রিয়াপদটি ব্যবহৃত হয় । এরূপ অর্থে ‘ জানা ’ শব্দটির অর্থ হল সাক্ষাৎ পরিচিতি । কোনাে ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে আমাদের যদি কোনাে সাক্ষাৎ পরিচিতি বা অভিজ্ঞতা থাকে , তাহলে আমরা ওই ব্যক্তি বা বস্তুকে চিনি বা জানি বলে দাবি করতে পারি । যেমন — ‘আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাম রায়কে চিনি বা জানি ’, ‘আমি মন্দিরা রায় কে চিনি বা জানি’ ইত্যাদি । এভাবে জানার মাধ্যমে কখনােই জানার সামগ্রিক অর্থটি পরিস্ফুট হয় না । শুধুমাত্র জানার একটি দিকই উন্মােচিত হয় । সুতরাং , এই অর্থে জানাই কিন্তু সব জানা নয় । 



[ 2 ]কর্মকুশলতার অর্থে জানা : ‘জানা’ শব্দটির অপর একটি অর্থ হল ‘কর্মকুশলতার অর্থ ’ । এই ধরনের জ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘ জানা’ শব্দটির মাধ্যমে কোনাে কর্মকুশলতা তথা কর্মনৈপুণ্যকেই বােঝানাে হয়ে থাকে । এরূপ জানার মাধ্যমে কোনাে কাজ করার ক্ষমতা তথা দক্ষতাকেই সূচিত করা হয় । যেমন —‘ আমি মােটরগাড়ি চালাতে জানি ’ ,‘ আমি সাঁতার কাটতে জানি ইত্যাদি । এই সমস্ত ক্ষেত্রে কীভাবে মােটরগাড়ি চালাতে হয় তার কৌশলটি আমার জানা আছে , অথবা কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় তার প্রক্রিয়াটি আমার জানা আছে — তা বােঝানাে হয়েছে । 

[ 3 ] বাচনিক অর্থে জানা : এক্ষেত্রে ‘ জানা ’ শব্দটিকে বাচনিক জ্ঞানের অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে । জ্ঞানের বা জানার যে তিনপ্রকার অর্থ বা ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে , তাদের মধ্যে এই বাচনিক জ্ঞানই হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । এরূপ অর্থে ‘ জানা ’ হল একটি বচনকে জানা এবং সেই বচনটিকে সত্য বলে জানা । আমরা যদি কোনাে নির্দিষ্ট ঘটনামূলক বৈশিষ্ট্যকে জানি এবং যদি এটাও জানি যে, ওই বৈশিষ্ট্যটি কোনাে -এক ঘটনার মধ্যে বর্তমান , তাহলে আমরা সেক্ষেত্রে জানার যে অর্থটিকে প্রয়ােগ করি , তা হল তার বাচনিক অর্থ । যেমন— ‘ আমি জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘােরে ’, ‘আমি জানি যে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নােবেল প্রাইজ পেয়েছেন’ ইত্যাদি । এই অর্থে জানার বিষয়টিকে সর্বদাই একটি বচনের আকারে উপস্থাপিত করা হয় । বাচনিক অর্থে জানার বিষয়টি সর্বদাই সত্য অথবা মিথ্যারূপে নির্ণীত হতে পারে । দর্শনের ক্ষেত্রে এই বাচনিক জ্ঞানের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে ।








ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌছায় না কার সম্পর্কে কে একথা বলেছেন এ বক্তব্যের তাৎপর্য কী

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌছায় না কার সম্পর্কে কে একথা বলেছেন এ বক্তব্যের তাৎপর্য কী o aaj jekhane boseche sekhane tomader toloyar pouchay na kar somporke ke akotha bolechen a boktboer tatporjo ki


উত্তর : রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটকের শেষ দৃশ্যে মহাপঞ্চক সম্পর্কে এ কথা বলেছেন দাদাঠাকুর ।

[        ] মহাপঞক নিষ্ঠাবান ও মহাজ্ঞানী অচলায়তনিক । তিনি শৃঙ্খলাপরায়ণ । সনাতন ধর্ম, আচার - অনুষ্ঠান, মন্ত্র ও জপতপের প্রতি তিনি গভীর বিশ্বাসী । অচল , অটল ও অনড় । কঠিন জ্ঞানচর্চায় নিষ্ঠাবান তাপস । ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাস এমন স্থির ও দৃঢ় যে , তাঁর মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই । সামান্যতম দোলাচল মনােভাব নেই । নিষ্ঠা,দৃঢ়তা, সংযম ও জিতেন্দ্রিয় শক্তি তাঁকে এমনই মনােবল দিয়েছে যে, তিনি বলেছেন , ‘আমি আমার ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রােধ করে এই যে বসলুম — যদি প্রায়ােপবেশনে মরি তবু তােমাদের হাওয়া তােমাদের আলাে লেশমাত্র আমাকে স্পর্শ করতে দেব না ।’ যূনকদের অস্ত্র যে তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না , সেই ব্যাপারে দাদাঠাকুর বলেছেন , ‘ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌছায় না ।’ এমনই মহাজ্ঞানী , মহাতাপস । 




মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২

বাচনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শর্ত কী ? বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শতগুলি উল্লেখ করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer বাচনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শর্ত কী বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শতগুলি উল্লেখ করো bachonik gganer bivinno shotto ki bachonik gganer aboshik o porjapto shottoguli ullekh koro


উত্তর : দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা জ্ঞান বলতে মূলত বাচনিক জ্ঞানকেই বুঝে থাকি । কিন্তু প্রশ্ন হল, কোন্ কোন্ শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা যায় ? অথবা বলা যেতে পারে যে, বাচনিক জ্ঞানের কোন্ কোন্ শর্তগুলির মধ্যে একটিও অনুপস্থিত থাকলে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হবে না ? অথবা বলা যায় যে , পর্যাপ্ত শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোন শর্ত উপস্থিত থাকলে বাচনিক জ্ঞান লাভ করা হবেই ? আরও সহজ করে বলা যায় , বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক  ও পর্যাপ্ত  শর্তগুলি কী ? 

[       ] ধরা যাক , P হল একটি বচন । এই P নামক বচনটিকে জানার পশ্চাতে কতকগুলি শর্ত থাকে । এই শর্তগুলির পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা P নামক বচনটিকে জেনেছি । এ প্রসঙ্গে জন হসপার্স উল্লেখ করেন যে ,কোনাে বচন যথা P- কে সত্য বলে জানতে গেলে তিনটি শর্তকে অবশ্যই পূরণ করতে হয় । এই তিনটি শর্ত হল যথাক্রমে –

[ 1 ] P নামক বচনটি অবশ্যই সত্য হবে । 

[ 2 ] P নামক বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাস থাকতে হবে । এবং 

[ 3 ] P নামক বচনটি যে সত্য, তার সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বা যুক্তি থাকতে হবে । 

[       ]  প্রথম শর্তটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন কোনাে বিষয় বা বচনকে জানি বলে দাবি করি , তখন সেই বচনটিকে অবশ্যই সত্য হতে হবে । কারণ , ওই বচনটি যদি বাস্তবে মিথ্যারূপে গণ্য হয়, তবে তাকে আমরা জেনেছি বলে কখনোই দাবি করতে পারি না । ‘এরূপ পর্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বাচনিক জ্ঞানের বিষয়টিকে নীচের উদাহরনের সাহায্যে উপস্থাপিত করা যায় –


            S জানে  P কে । 
          
            : P হয় সত্য । অথবা P নয় সত্য । 
           
            : S জানে না P কে ।
          
 [       ]  বাচনিক জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন কোনাে বচন (P) কে জানি বলে দাবি করি , তখন বচনটিকে শুধুমাত্র সত্য হলেই হবে না, বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাসও থাকতে হবে । এরূপ শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বাচনিক জ্ঞানের  বিষয়টিকে নীচের উদাহরণের সাহায্যে উপস্থাপিত করা যায় –
 
          S জানে যে P সত্য । 
          
          : S বিশ্বাস করে যে P সত্য ।
 
[ 3 ] বাচনিক জ্ঞানের তৃতীয় শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনাে একটি বচন হয়তাে সত্য হতে পারে , আবার ওই বচনটির সত্যতায় জ্ঞাতার বিশ্বাসও থাকতে পারে কিন্তু তা সত্বেও বচনটি কখনােই জ্ঞানের মর্যাদা লাভ করতে পারে না । কারণ , এরূপ বিশ্বাসের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য বা সাক্ষ্যপ্রমান চাই । উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া বচনটির ক্ষেত্রে কোনাে নিশ্চয়তা থাকে না । এভাবেই আমরা বলতে পারি যে , তথ্যনিষ্ঠ সত্যবিশ্বাসই হল জ্ঞান । সুতরাং জ্ঞানের বিষয়টিকে নীচের আকারে উপস্থাপিত করা যায় – জ্ঞান বা জানা = সত্যতা + বিশ্বাস + যথার্থ সাক্ষ্যপ্রমাণ বা তথ্যপ্রমাণ । 
[         ]  বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে ওপরের যে তিনটি শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে , তাদের প্রত্যেকটি শর্তই জানার ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্তরূপে গণ্য হয় । কারণ , এই তিনটি শর্তের একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে ,তাহলে কখনােই জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয় । আর যে শর্তের অনুপস্থিতির ফলে জ্ঞানটিরও অনুপস্থিতি ঘটে , তাকেই বলা হয় অবিশ্যিক শর্ত । অপরদিকে , বাচনিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে কেবল এই তিনটি শর্ত থাকলেই জ্ঞানলাভ হতে পারে বলে এদের একসঙ্গে বলা হয় জানার বা জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত ।



সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

কর্মযােগের আদর্শ কী ? আলোচনা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কর্মযােগের আদর্শ কী আলোচনা করো kormoyoger adorsho ki alochona koro


উত্তর : স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার কর্মযােগ গ্রন্থে কর্ম সম্বন্ধে বিশদে আলােচনা করেছেন । তিনি কর্মযোগের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তিলাভের কথা বলেছেন ।
[ 1 ] মুক্তিই জীবনের চরম লক্ষ্য : বেদান্ত ধর্মের মহানভাব এই যে , আমরা বিভিন্ন পথে সেই একই চরম লক্ষ্যে উপনীত হই । এই পথগুলি হল— কর্ম , ভক্তি,যােগ ও জ্ঞানের পথ । কিন্তু এ কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে , এই সমস্ত পথ কখনােই বাঁধাধরা কিছু নয় এবং অত্যন্ত পৃথকও নয় । একটি অন্যগুলির সঙ্গে অত্যন্ত সহজেই মিশে যেতে পারে ।এমন কোনাে লোকই দেখা যায় না, যার কর্ম করার শক্তি ব্যতীত আর অন্য কিছু নেই । এমন কোনাে ভক্ত নেই, যার ভক্তি ছাড়া আর কিছুই নেই । আবার এমন কোনাে ব্যক্তি নেই , যার জ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নেই । এই ধরনের বিভাগ কেবলমাত্র মানুষের গুণ বা প্রবণতার প্রাধান্য অনুযায়ীই করা হয় । কিন্তু শেষপর্যন্ত এই চারটি পথ একই ভাবের অভিমুখে মিলিত হয় । এই চরম ভবিটি হল মানুষের মােক্ষ বা মুক্তি । 

[ 2 ] কর্মযােগ মােক্ষলাভের এক নীতি ও প্রণালী : প্রত্যেকটি ধর্মেই মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টার বিষয়টি আমরা লক্ষ করি । এ হল সমুদয় নীতি ও নিঃস্বার্থপরতার ভিত্তি । নিঃস্বার্থপরতার অর্থ হল আমি কেবলই আমার এই শরীর — এই ভাব থেকে মুক্ত হওয়া । মানুষ তখন অনন্তস্বরূপ হয়ে যায় । এই অনন্ত বিস্তৃতিই হল সকল ধর্মের, সকল নীতি শিক্ষার এবং দর্শনের মূল লক্ষ্য । নিঃস্বার্থ কর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করাই হল কর্মযােগ । সুতরাং প্রত্যেক স্বার্থপূর্ণ কার্যই আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছােনাের পথে বাধাস্বরূপ । আর নিঃস্বার্থভাবে কর্মই আমাদেরকে সেই লক্ষ্যে টেনে নিয়ে যায় । সেকারণেই স্বামী বিবেকানন্দ নৈতিকতার সংজ্ঞায় বলেছেন , যা স্বার্থশূন্য তাই নীতিসংগত , আর যা স্বার্থযুক্ত তাই নীতিবিরুদ্ধ । সুতরাং , কর্মযােগ হল নিঃস্বার্থপরতা ও সৎকর্ম দ্বারা মুক্তি লাভ করার এক নীতি ও প্রণালী । 

[ 3 ] কর্মযােগের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে নিরন্তরভাবে নিষ্কাম কম : কর্মযােগীর কোনাে নির্দিষ্ট ধর্মমতে বিশ্বাস করার আবশ্যকতা নেই । তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী হন বা না-হন ,তাতে কিছুই যায় আসে না । তাকে কোনাে মতবাদের সাহায্য না নিয়েও , কেবলমাত্র কর্ম দ্বারা সমস্যার সমাধান করতে হয় । স্বামী বিবেকানন্দ তাই তার কর্মযােগে বলেছেন যে , জগৎযন্ত্রের চক্র থেকে পালিয়ে না গিয়ে , এর ভিতরে থেকেই কর্মের রহস্য সম্বন্ধে শিক্ষা নিতে হবে । জগৎযন্ত্ররূপ চক্রের মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে । এক্ষেত্রে তাই একমাত্র উপায় হল অনাসক্ত হয়ে , সমুদয় কর্মের ফল ত্যাগ করে ,নিষ্কামভাবে নিরন্তর কর্ম করা । আর এখানেই কর্মযােগের আদর্শটি নিহিত । 


[ 4 ] প্রকৃত কর্মযােগীরূপে বুদ্ধদেব : বিবেকানন্দ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধদেবের কথা , যিনি কর্মযােগের আদর্শকে কার্যে পরিণত করেছেন । বিবেকানন্দ বলেন যে , বুদ্ধ ব্যতীত জগতের অন্যান্য মহাপুরুষগণ বাহ্য প্রেরণার বশেই নিঃস্বার্থ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন । বহির্জগৎ থেকেই তারা পুরস্কার আশা করেছেন । কিন্তু একমাত্র বুদ্ধদেবই অন্তরের প্রেরণা থেকে নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করেছেন । তিনি ঈশ্বর বা আত্মতত্ত্বে মাথা ঘামাননি , তিনি শুধুমাত্র সকলকে সৎকর্ম করার পরামর্শ দিয়েছেন । তিনি আরও বলেছেন যে , মানুষের সৎকর্মই মানুষকে মুক্তি দেবে । বুদ্ধদেব একজন দার্শনিক হয়েও , তুচ্ছতম ও নিম্নতম প্রাণীর জন্যও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন । নিজের জন্য তিনি কিছুই দাবি করেননি । প্রকৃতপক্ষে তিনিই হলেন আদর্শ কর্মযােগী । বিবেকানন্দ তাই বলেন যে, অভিসন্ধি ছাড়া যিনি কর্ম করেন , তিনি একজন বুদ্ধদেবে পরিণত হন এবং কর্মযােগের প্রকৃত আদর্শকে বহন করেন । এরূপ ব্যক্তিই হলেন কর্মযােগের চরম আদর্শের দৃষ্টান্ত ।