বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে abhigatbad kake bole gganer utsoho somporke abhigottabader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত মতবাদের উল্লেখ করা যায়, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদ হল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ । অভিজ্ঞতাবাদ মূলত বুদ্ধিবাদের একটি বিরােধী মতবাদরূপেই গণ্য । অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য হল ,আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অভিজ্ঞতা বাদ বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে বর্জন করে শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে দাবি করে । অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থকদের বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদী । 

[         ] চরমপন্থী বা নরমপন্থী যাই হােক না কেন , সমস্ত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের বক্তব্যের মধ্যেই কয়েকটি মূল সুর ধ্বনিত হয় ৷ সেগুলিকেই অভিজ্ঞতাবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়রূপে গণ্য করা হয় । অভিজ্ঞতাবাদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি নীচে উল্লেখ করা হল । 



[         ] জ্ঞানের মুখ্য উৎস হিসেবে অভিজ্ঞতা : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের মুখ্য উৎস । এই ইন্দ্রিয়ানুভবকে বাদ দিয়ে কখনােই জ্ঞান লাভ করা যায় না । অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে , বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা বা বুদ্ধি বলে স্বতন্ত্র কোনাে বিষয় নেই । বাস্তবের সমস্ত জ্ঞানই অভিজ্ঞতানির্ভর । 


[          ] জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে আরােহাত্মক পদ্ধতি : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হল আরােহাত্মক পদ্ধতি , কখনােই অবরােহাত্মক পদ্ধতি নয় । কারণ , আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে একটি সাধারণ সূত্র বা ধারণায় উপনীত হই । সুতরাং , সমস্তপ্রকার সামান্য ধারণাকেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ।



[        ] সহজাত ধারণার বিষয়টিকে বর্জন : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ বুদ্ধিবাদের মূলভিত্তি অর্থাৎ সহজাত ধারণার বিষয়টিকে নস্যাৎ করেছেন । তাদের মতে , সহজাত ধারণা বলে কোনাে কিছুই থাকতে পারে না । কারণ , সহজাত ধারণার বিষয়কে কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না । তাদের মতে, আমাদের সমস্ত ধারনাই প্রাপ্ত হয় ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে । তারা আরও দাবি করেন যে, জন্মাবার সময় আমাদের মন থাকে সাদা কাগজের মতাে । অভিজ্ঞতার দ্বারাই সেখানে সমস্ত ধারণা মুদ্রিত হয় , অন্য কোনাে উপায়ে নয় । সুতরাং সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার বিষয়টি অবশ্যই পরিত্যাজ্য । 

[         ] অভিজ্ঞতাবাদীদের স্বীকার্য বাক্য : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ দু-ধরনের বাক্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন— [i] বিশ্লেষক এবং [ii] সংশ্লেষক । যে সমস্ত বাক্য বিশ্লেষকরূপে গণ্য,তা অবশ্যই পূর্বতঃসিদ্ধ হবে । আবার যে সমস্ত বাক্য সংশ্লেষকরূপে গ্রাহ্য, তা অবশ্যই পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য হবে । এ দুটি ছাড়া তৃতীয় কোনাে প্রকার বাক্যকে অভিজ্ঞতাবাদীরা স্বীকার করেন না । বুদ্ধিবাদীরা যে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের উল্লেখ করেছেন , তাকে অভিজ্ঞতাবাদীরা বর্জন করেছেন ।



[          ] মূল্যের বাস্তব সত্তাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদীরা দাবি করেন যে, মূল্যের কোনাে বাস্তব সত্তা নেই । তারা সত্য , শিব ও সুন্দর রূপ মূল্যকে অস্বীকার করেছেন এবং পরমমূল্যের বিষয়কে নিছক কল্পনারূপে অভিহিত করেছেন । কারণ , ইন্দ্রিয় সংবেদন দ্বারা এই সমস্ত মূল্যের মূল্যায়ন কখনােই সম্ভব নয় ।

[           ] অধিবিদ্যাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ অধিবিদ্যাকে অর্থহীনরূপে উল্লেখ করেছেন । তাঁদের মতে , অধিবিদ্যার জ্ঞান কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে লভ্য নয় । সেকারণেই তারা অধিবিদ্যাকে অসম্ভব , উদ্ভট ও আজগুবিরূপে উল্লেখ করেছেন এবং অধিবিদ্যক বাক্যসমূহকে অর্থহীনরূপে গণ্য করেছেন । 



[         ] জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে অভিজ্ঞতাবাদ শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতার ওপরই গুরুত্ব আরােপ করেছে । বুদ্ধিবাদের বিরােধী মতবাদরূপে গণ্য হওয়ায় তা বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে । এর ফলে তা একদেশদর্শিতার দোষে দুষ্ট হয়েছে । কিন্তু জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া বুদ্ধিরও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে , তা আদৌ অস্বীকার করা যায় না । বরং এই দাবি করা সংগত যে , জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার যতটা ভূমিকা আছে , বুদ্ধিরও ঠিক ততটাই ভূমিকা রয়েছে ।সুতরাং জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদ কখনােই একটি পূর্ণাঙ্গ মতবাদরূপে গণ্য হয় না ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন