শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে robindronather manobotabadi darshoner mul utsohoguli ullekh koro o bishleshon koro


উত্তর :  রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে মূলত মানবতাবাদী দর্শনরূপে উল্লেখ করা হয় । কারণ , তাঁর দর্শনে মানবতাবাদের বিষয়টিই দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । তাঁর দর্শনে এই মানবতাবাদের বিষয়টি বিভিন্ন উৎস থেকে হাজির হয়েছে । মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি এখানে উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করা হল –

[ 1 ] মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎস হিসেবে অদ্বৈত বেদান্ত : মানবতাবাদের মূল কথাই হল জীবরূপে সকল মানুষের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া , সকল মানুষকেই ভালবাসা । মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল চিন্তা তাই মানবতাবাদ থেকেই নিঃসৃত । রবীন্দ্রনাথ অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারায় এক ও অদ্বিতীয় ব্রত্মের প্রকাশ হিসেবে মানুষের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । মানুষের অস্তিত্ব ও মর্যাদা তাই তার কাছে সবার ঊর্বে । অদ্বৈত বেদান্তের মূলকথাই হল — জীব ব্রহ্মস্বরূপ । সেকারণেই তিনি যেখানেই মানুষ ও মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন , সেখানেই তিনি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন । 


[ 2 ] মানবতাবাদী দর্শনের ধর্মীয় ভিত্তি : মানুষের জীবন ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে ,ধর্মের বিষয়টি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে । এমন কোনাে মনুষ্যসমাজ সমাজ দেখা যায় না , যেখানে ধর্মের বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত । মানুষ এবং মানুষের সমাজকে জানতে গেলে তাই ধর্মের ইতিহাসটিও জানা দরকার । প্রখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিক ম্যাক্সমুলার-কে অনুসরণ করে বলা যায় —মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হল ধর্মের ইতিহাস । রবীন্দ্রনাথও মানুষের জীবন থেকে ধর্মের বিষয়টিকে বাদ দিতে চাননি । তবে তিনি ধর্ম বলতে চিরাচরিত বা প্রথাগত ধর্মকে না বুঝিয়ে ধর্ম হিসেবে মানবতাবাদের বিষয়টিকেই সূচিত করেছেন । সুতরাং বলা যায় যে , রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের ক্ষেত্রে এক ধর্মীয় ভিত্তিও উপস্থিত ।


[ 3 ] মানবতাবাদী দর্শনের ভিত্তি হিসেবে জীবভাব ও বিশ্বভাব : মানবতাকে মানুষের ধর্মরূপে উল্লেখ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে দুটি সত্তার উল্লেখ করেছেন । এই দুটি সত্তার একটি হল জীবসত্তা এবং অপরটি হল মানবসত্তা 
। জীবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় জীবভাব এবং মানবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় বিশ্বভাব । স্বার্থযুক্ত মানুষের চিন্তাই হল তার জীবভাব । কিন্তু স্বার্থযুক্ত চিন্তাকে অতিক্রম করে সামগ্রিকভাবে মানুষের চিন্তার মধ্যেই ফুটে ওঠে তার বিশ্বভাব । জীবভাবকে অতিক্রম করে বিশ্বভাবের মাধ্যমেই মানুষ মানবতাবাদের পূজারিরূপে গণ্য হতে পারে । 


[ 4 ] মানবতাবাদের ভিত্তিরূপে শ্রেষ্ঠমানব চেতনা : রবীন্দ্রনাথের মতে , মানুষই হল শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষের চেতনাই তাই সর্বশ্রেষ্ঠ চেতনারূপে গণ্য । এরূপ চেতনাই মানুষকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরতে পারে । মানবতাবাদের অর্থই হল তাই যা মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে । এরূপ বিকাশের ফলে মানুষ আর নিজের ক্ষুদ্র চেতনায় আবদ্ধ থাকতে পারে না । এরই ফলে ক্ষুদ্র চেতনার গন্ডি পেরিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে মানুষের জয়গান শােনা যায় । এ হল এমনই শ্রেষ্ঠতা যা ব্যক্তিমানুষকে তার ক্ষুদ্র সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়ে পরমসত্তার চেতনার দ্বারে হাজির করে ।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন