সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২

বুদ্ধিবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer বুদ্ধিবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে budhibad kake bole gganer utsho somporke budhibader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে সমস্ত দার্শনিক মতবাদ রয়েছে , তাদের মধ্যে বুদ্ধিবাদ হল অন্যতম ।বুদ্ধিবাদ অনুযায়ী বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অর্থাৎ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । জ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট্য হল সর্বজনীনতা । জ্ঞানের সর্বজনীনতা প্রকাশিত হয় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । তাই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা হয় ।

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য -

[        ] প্রাচীন বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পারমিনাইডিস , সক্রেটিস , প্লেটো প্রমুখ । তাদের মতে , যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায় হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা । আমরা সামান্য ধারণার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করি , আর এই সামান্য ধারণা আমরা প্রাপ্ত হই বুদ্ধির মাধ্যমেই । 


[        ] আধুনিক বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত , ব্রিটিশ দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনােজা,গটফ্রেড উইলহেম লাইবনিজ প্রমুখ । প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ভলফ এবং কান্টের নামও এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য । এই সমস্ত দার্শনিকদের সকলেই স্বীকার করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানলাভের প্রকৃষ্ট উপায় ।

 বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
 
প্রথম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , মানুষের মনই হল বুদ্ধির মূল উৎস এবং এর দ্বারাই লাভ করা যায় ধারণা । আর এই ধারণা থেকেই উৎসারিত হয় জ্ঞান । 


দ্বিতীয় বক্তব্য : বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা যায় বলে অভিজ্ঞতাবাদীরা যে দাবি করেন , তা যথার্থ নয় । কারণ , অভিজ্ঞতা দ্বারা কখনােই সার্বিক ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় । এরূপ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব শুধুমাত্র বুদ্ধির দ্বারাই । 


তৃতীয় বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান উৎসারিত হয় সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার মাধ্যমে । আর এই সহজাত ধারণার জ্ঞান লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধি তথা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । 

চতুর্থ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বলেন যে , জ্ঞানের বাস্তব মূল্য আছে , আর তা লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধির মাধ্যমেই । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা মূল্যের জ্ঞান লাভ করা যায় না ।


পঞ্চম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি হল অবরােহাত্মক পদ্ধতি । কারণ , প্রকৃত জ্ঞান বলতে গাণিতিক জ্ঞানকেই বােঝানাে হয় । গাণিতিক জ্ঞানে কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করেই অবরােহাত্মক পদ্ধতিতে সুনিশ্চিত ও সর্বজনীন জ্ঞান লাভ করা যায় । 


ষষ্ঠ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব । সাধারণত যে সমস্ত বচন পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য, তা বিশ্লেষক হয়, আর যে সমস্ত বচন পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য, তা সংশ্লেষক হয় । কিন্তু বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের মাধ্যমেও জ্ঞানের প্রকাশ সম্ভব । যেমন 7+ 5 = 12 একদিকে যেমন পূর্বতঃসিদ্ধ, অপরদিকে তেমনি সংশ্লেষকও । কারণ 7 এবং 5 যােগ করলে 12 সংখ্যাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় বলেই তা পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য হয় । আবার 12 সংখ্যাটি 7 এবং 5 ছাড়া আরও একটি নতুন সংখ্যারূপে গণ্য হওয়ায় তা সংশ্লেষকরূপে স্বীকৃত ।
সপ্তম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে স্পষ্টতা,প্রাঞ্জলতা ও বিবিক্ততা প্রভৃতি হল জ্ঞানের মাপকাঠি । অর্থাৎ জ্ঞানকে স্পষ্ট হতে হবে , প্রাঞ্জল তথা সরল হতে হবে , এবং বিবিক্ত তথা স্বচ্ছরূপে গণ্য হতে হবে । জ্ঞানের মধ্যে কোনােপ্রকার স্ববিরােধ থাকা চলবে না ।




1 টি মন্তব্য: