উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে সমস্ত দার্শনিক মতবাদ রয়েছে , তাদের মধ্যে বুদ্ধিবাদ হল অন্যতম ।বুদ্ধিবাদ অনুযায়ী বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অর্থাৎ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । জ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট্য হল সর্বজনীনতা । জ্ঞানের সর্বজনীনতা প্রকাশিত হয় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । তাই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা হয় ।
জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য -
[ ] প্রাচীন বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পারমিনাইডিস , সক্রেটিস , প্লেটো প্রমুখ । তাদের মতে , যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায় হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা । আমরা সামান্য ধারণার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করি , আর এই সামান্য ধারণা আমরা প্রাপ্ত হই বুদ্ধির মাধ্যমেই ।
[ ] আধুনিক বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত , ব্রিটিশ দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনােজা,গটফ্রেড উইলহেম লাইবনিজ প্রমুখ । প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ভলফ এবং কান্টের নামও এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য । এই সমস্ত দার্শনিকদের সকলেই স্বীকার করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানলাভের প্রকৃষ্ট উপায় ।
বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
প্রথম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , মানুষের মনই হল বুদ্ধির মূল উৎস এবং এর দ্বারাই লাভ করা যায় ধারণা । আর এই ধারণা থেকেই উৎসারিত হয় জ্ঞান ।
দ্বিতীয় বক্তব্য : বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা যায় বলে অভিজ্ঞতাবাদীরা যে দাবি করেন , তা যথার্থ নয় । কারণ , অভিজ্ঞতা দ্বারা কখনােই সার্বিক ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় । এরূপ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব শুধুমাত্র বুদ্ধির দ্বারাই ।
তৃতীয় বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান উৎসারিত হয় সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার মাধ্যমে । আর এই সহজাত ধারণার জ্ঞান লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধি তথা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই ।
চতুর্থ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বলেন যে , জ্ঞানের বাস্তব মূল্য আছে , আর তা লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধির মাধ্যমেই । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা মূল্যের জ্ঞান লাভ করা যায় না ।
পঞ্চম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি হল অবরােহাত্মক পদ্ধতি । কারণ , প্রকৃত জ্ঞান বলতে গাণিতিক জ্ঞানকেই বােঝানাে হয় । গাণিতিক জ্ঞানে কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করেই অবরােহাত্মক পদ্ধতিতে সুনিশ্চিত ও সর্বজনীন জ্ঞান লাভ করা যায় ।
ষষ্ঠ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব । সাধারণত যে সমস্ত বচন পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য, তা বিশ্লেষক হয়, আর যে সমস্ত বচন পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য, তা সংশ্লেষক হয় । কিন্তু বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের মাধ্যমেও জ্ঞানের প্রকাশ সম্ভব । যেমন 7+ 5 = 12 একদিকে যেমন পূর্বতঃসিদ্ধ, অপরদিকে তেমনি সংশ্লেষকও । কারণ 7 এবং 5 যােগ করলে 12 সংখ্যাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় বলেই তা পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য হয় । আবার 12 সংখ্যাটি 7 এবং 5 ছাড়া আরও একটি নতুন সংখ্যারূপে গণ্য হওয়ায় তা সংশ্লেষকরূপে স্বীকৃত ।
সপ্তম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে স্পষ্টতা,প্রাঞ্জলতা ও বিবিক্ততা প্রভৃতি হল জ্ঞানের মাপকাঠি । অর্থাৎ জ্ঞানকে স্পষ্ট হতে হবে , প্রাঞ্জল তথা সরল হতে হবে , এবং বিবিক্ত তথা স্বচ্ছরূপে গণ্য হতে হবে । জ্ঞানের মধ্যে কোনােপ্রকার স্ববিরােধ থাকা চলবে না ।
Very Nice Answer
উত্তরমুছুন