দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২

একাদশ শ্রেণী দর্শন সাজেশন

একাদশ শ্রেণী  দর্শন সাজেশন eleven class 11 xi philosophy suggestions


[ জ্ঞানের স্বরূপ ও জ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ ] 

                ( প্রশ্নের মান - ৮ ) 

১। ‘জনা’ বা ‘জ্ঞান’ বলতে কি বোঝায় ? ‘জানার’ সঙ্গে বিশ্বাসের পার্থক্য কি ?

২। বাচনিক জ্ঞানের বিভিন্ন শর্ত কি ? বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শর্তগুলি উল্লেখ করো ।

৩। বুদ্ধিবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলোচনা করো ।

৪। জ্ঞানের স্বরূপ বিষয়ে বুদ্ধিবাদের মূলতত্ত্বগুলি আলোচনা করো ।

৫। চরমপন্থী ও নরমপন্থী বুদ্ধিবাদের বিষয়টি আলোচনা করো ।

৬। অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলোচনা করো ।

৭। কান্টের বিচারবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।





                    [ কারণ সম্বন্ধ ] 

                  ( প্রশ্নের মান - ৮ ) 

১। কার্যকারণ সম্বন্ধে পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বা লৌকিক মত কি ? 

২। প্রশক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে ? কারণ ও কার্য বিষয়ে প্রশক্তি তত্ত্ব সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো ।

৩। কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ বিষয়ে হিউমের বক্তব্য উল্লেখ করো । তাঁর বক্তব্য কি সন্তোষজনক ? 




                  [ বস্তুবাদ ও ভাববাদ ] 

                     ( প্রশ্নের মান - ৮ ) 

১। সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্যগুলি কি কি ? লক কীভাবে সরল বস্তুবাদের সমালোচনা করে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনা করেছেন ? 

২। আত্মগত ভাববাদের পরিপ্রেক্ষিতে বার্কলের মূল বক্তব্যটি কি ? 

৩। ভাববাদ ও বস্তুবাদের মৌল পার্থক্যগুলি কি ? 





                       [ ন্যায় দর্শন ] 

                    ( প্রশ্নের মান - ৮ ) 

১। সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? ন্যায়দর্শন স্বীকৃত লৌকিক সন্নিকর্ষ গুলি দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা করো ।

২। লৌকিক সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? দৃষ্টান্তসহ বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষের আলোচনা করো ।

৩। সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? ন্যায়দর্শনে স্বীকৃত বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক সন্নিকর্ষ আলোচনা করো ।

৪। ন্যায়মতে ব্যাপ্তি কাকে বলে ? ব্যাপ্তি জ্ঞানের উপায়গুলি কি কি ? 

৫। অনুমিতি কি ? অনুমিতির উপাদানরুপে সাধ্য , পক্ষ এবং হেতুর ধারণা ব্যাখ্যা করো ।





              [ সমসাময়িক ভারতীয় দর্শন ] 

                      ( প্রশ্নের মান - ৮ ) 

১। কর্মযোগের আদর্শ কী ? আলোচনা করো ।

২। কর্মযোগের অর্থ ও উদ্দেশ্য কি ? বিবেকানন্দের বক্তব্যের আলোকে আলোচনা করো ।

৩। সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কি ? বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন ? 

৪। রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করো ও বিশ্লেষণ করো ।

 



সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২

বুদ্ধিবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer বুদ্ধিবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে budhibad kake bole gganer utsho somporke budhibader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে সমস্ত দার্শনিক মতবাদ রয়েছে , তাদের মধ্যে বুদ্ধিবাদ হল অন্যতম ।বুদ্ধিবাদ অনুযায়ী বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অর্থাৎ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । জ্ঞানের মূল বৈশিষ্ট্য হল সর্বজনীনতা । জ্ঞানের সর্বজনীনতা প্রকাশিত হয় বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । তাই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা হয় ।

জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য -

[        ] প্রাচীন বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক পারমিনাইডিস , সক্রেটিস , প্লেটো প্রমুখ । তাদের মতে , যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায় হল বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা । আমরা সামান্য ধারণার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করি , আর এই সামান্য ধারণা আমরা প্রাপ্ত হই বুদ্ধির মাধ্যমেই । 


[        ] আধুনিক বুদ্ধিবাদীদের অন্যতম হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত , ব্রিটিশ দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনােজা,গটফ্রেড উইলহেম লাইবনিজ প্রমুখ । প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ভলফ এবং কান্টের নামও এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য । এই সমস্ত দার্শনিকদের সকলেই স্বীকার করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানলাভের প্রকৃষ্ট উপায় ।

 বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
 
প্রথম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , মানুষের মনই হল বুদ্ধির মূল উৎস এবং এর দ্বারাই লাভ করা যায় ধারণা । আর এই ধারণা থেকেই উৎসারিত হয় জ্ঞান । 


দ্বিতীয় বক্তব্য : বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা যায় বলে অভিজ্ঞতাবাদীরা যে দাবি করেন , তা যথার্থ নয় । কারণ , অভিজ্ঞতা দ্বারা কখনােই সার্বিক ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় । এরূপ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব শুধুমাত্র বুদ্ধির দ্বারাই । 


তৃতীয় বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে আমাদের সমস্তপ্রকার জ্ঞান উৎসারিত হয় সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার মাধ্যমে । আর এই সহজাত ধারণার জ্ঞান লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধি তথা প্রজ্ঞার মাধ্যমেই । 

চতুর্থ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগণ বলেন যে , জ্ঞানের বাস্তব মূল্য আছে , আর তা লাভ করা যায় শুধুমাত্র বুদ্ধির মাধ্যমেই । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার দ্বারা মূল্যের জ্ঞান লাভ করা যায় না ।


পঞ্চম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে দর্শনের যথার্থ পদ্ধতি হল অবরােহাত্মক পদ্ধতি । কারণ , প্রকৃত জ্ঞান বলতে গাণিতিক জ্ঞানকেই বােঝানাে হয় । গাণিতিক জ্ঞানে কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করেই অবরােহাত্মক পদ্ধতিতে সুনিশ্চিত ও সর্বজনীন জ্ঞান লাভ করা যায় । 


ষষ্ঠ বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচন সম্ভব । সাধারণত যে সমস্ত বচন পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য, তা বিশ্লেষক হয়, আর যে সমস্ত বচন পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য, তা সংশ্লেষক হয় । কিন্তু বুদ্ধিবাদীরা দাবি করেন যে , পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের মাধ্যমেও জ্ঞানের প্রকাশ সম্ভব । যেমন 7+ 5 = 12 একদিকে যেমন পূর্বতঃসিদ্ধ, অপরদিকে তেমনি সংশ্লেষকও । কারণ 7 এবং 5 যােগ করলে 12 সংখ্যাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় বলেই তা পূর্বতঃসিদ্ধরূপে গণ্য হয় । আবার 12 সংখ্যাটি 7 এবং 5 ছাড়া আরও একটি নতুন সংখ্যারূপে গণ্য হওয়ায় তা সংশ্লেষকরূপে স্বীকৃত ।
সপ্তম বক্তব্য : বুদ্ধিবাদ অনুসারে স্পষ্টতা,প্রাঞ্জলতা ও বিবিক্ততা প্রভৃতি হল জ্ঞানের মাপকাঠি । অর্থাৎ জ্ঞানকে স্পষ্ট হতে হবে , প্রাঞ্জল তথা সরল হতে হবে , এবং বিবিক্ত তথা স্বচ্ছরূপে গণ্য হতে হবে । জ্ঞানের মধ্যে কোনােপ্রকার স্ববিরােধ থাকা চলবে না ।




শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২

সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কী ? বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer সকাম ও নিষ্কাম কর্মের মধ্যে পার্থক্য কী বিবেকানন্দ কীভাবে নিষ্কাম কর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন nishkam karmer modhey parthokko ki bibekanonda kivabe nishkam karmake bakha korechen


উত্তর :  ভারতীয় দর্শনে দুপ্রকার কর্মকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে — সকাম ধর্ম ও নিষ্কাম ধর্ম । সকাম কর্ম হল কামনা বাসনা যুক্ত কর্ম । অর্থাৎ , বলা যায় যে , যে সমস্ত কর্ম আমাদের কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য করা হয়, সেগুলিকেই বলা হয় সকাম কৰ্ম । এই সকাম কর্মের জন্যই আমাদের কর্মফল ভোগ করতে হয় । অপরদিকে , নিষ্কাম কর্ম হল এমনই কর্ম যা কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য কখনোই কৃত নয় । কামনা বাসনা ছাড়া শুধুমাত্র কর্ম করার জন্যই যে কর্ম করা হয় তাকে বলে নিষ্কাম কর্ম । নিঃ(নাই) + কাম ( কামনা ) = নিষ্কাম । অর্থাৎ, যে কর্মের পিছনে কোনাে কামনা থাকে না তাকে বলে নিষ্কাম কর্ম । এরূপ কর্মের কোনাে কর্মফল থাকে না এবং সে কারণেই মানুষকে এর জন্য কোনাে কর্মফল ভোগ করতে হয় না ।নিষ্কাম কর্ম এক আদর্শমূলক কর্ম যা গীতায় স্বীকৃত হয়েছে এবং বিবেকানন্দ তার কর্মযােগের মূল ভিত্তি রূপে উল্লেখ করেছেন এই নিষ্কাম কর্মকে ।

[          ] বিবেকানন্দের মতে নিষ্কাম কার্য : স্বামী বিবেকানন্দ তার কর্মযােগ এ কর্মের আদর্শগত ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে শ্রীমদভাগবত গীতায় যে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে , তার উল্লেখ করেছেন । তিনি বলেন যে ,প্রকৃত কর্মযােগীকে নিষ্কামভাবে কর্ম সম্পাদন করতে হয় । কারণ , যিনি কর্মযােগী রূপে গণ্য, তিনি কখনােই ফলাকাঙ্ক্ষা নিয়ে কর্ম সম্পাদন করেন না । তিনি শুধুমাত্র কর্মের জন্যই কর্ম সম্পাদন করেন । কর্মযোগীর কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাই কখনোই কামনা বাসনা থাকা উচিত নয় । কর্মযােগীর শুধুমাত্র নিরন্তর নিষ্কামভাবে কর্ম করে যাওয়াই উচিত , আর কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পন করা উচিত । ঈশ্বরই হলেন আমাদের সমস্ত প্রকার কর্মের নিয়ন্ত্রা । এরূপ বিশ্বাসই কর্মযােগীর থাকা উচিত । গীতায় উল্লেখিত কর্মের এরুপ আদর্শকেই স্বামী বিবেকানন্দ তার কর্মযােগের মূল ভিত্তিরূপে উল্লেখ করেছেন ।


[          ] অনাসক্তির শক্তিতে নিষ্কাম কর্ম : কর্মযােগের ষষ্ঠ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে , অনাসক্তিই হল পরিপূর্ণ আত্মত্যাগ । বাহ্যবিষয়ে অনাসক্তি অর্জন করতে হলে নিরন্তরভাবে নিষ্কাম কর্ম করতে হবে । নিষ্কামভাবে কর্ম করার ক্ষমতা মানুষ কখনােই একদিনে আয়ও করতে পারে না । ক্রমিক ও নিরন্তর কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ ধীরে ধীরে এরূপ শক্তি অর্জন করতে পারে । মানুষ ক্রমে ক্রমে বুঝতে সমর্থ হয় যে , প্রকৃত সুখ হল স্বার্থপরতার বিনাশে । সে কারণেই মানুষের সকাম ও স্বার্থ যুক্ত কর্ম করা কখনােই উচিত নয় । অনাসক্তিকে আয়ত্ত করে ,দুর্বলতাকে পরিহার করে , মানসিক বলে বলীয়ান হয়ে তবেই কর্মযােগী নিষ্কামভবে কর্ম করতে সমর্থ হয় । 

[          ] মুক্তিতে নিষ্কাম কর্ম : স্বামীবিবেকানন্দ তার কর্মযােগ - এর সপ্তম অধ্যায়ে মুক্তির বিষয়টি আলােচনা করেছেন । বিবেকানন্দের মতে ,মানুষের চরম লক্ষ্য হল মুক্তি । মুক্তি লাভের জন্য মানুষ এই সসীমত্বের বাঁধন কেটে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠতে চায় । মুক্তির জন্য মানুষ সমস্তপ্রকার আসক্তিকে ত্যাগ করতে চায় । এই আসক্তি ত্যাগের উপায় হল দুটি নিবৃত্তি মার্গ এবং প্রবৃত্তি মার্গ । নিবৃত্তি মার্গে নেতি নেতি (এটি নয় এটি নয় ) করে সব কিছু ত্যাগ করতে হয় । আর প্রবৃত্তি মার্গে ইতি ইতি করে সবকিছুকে গ্রহণ করে তবে সেগুলিকে ত্যাগ করতে হয় । সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তি মার্গকে মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিলেও মহাপুরুষগণ কিন্তু নিবৃত্তি মার্গকেই মুক্তির পথ বলে মনে করেন । যে পথই অনুসরণ করা হােক না কেন , একথা ঠিক যে , মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে অবশ্যই নিষ্কামভাবে কর্মযােগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে । এরূপ বিষয়টিই বিবেকানন্দ তার কর্মযােগে তুলে ধরেছেন । 







শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি উল্লেখ করাে ও বিশ্লেষণ করাে robindronather manobotabadi darshoner mul utsohoguli ullekh koro o bishleshon koro


উত্তর :  রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে মূলত মানবতাবাদী দর্শনরূপে উল্লেখ করা হয় । কারণ , তাঁর দর্শনে মানবতাবাদের বিষয়টিই দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । তাঁর দর্শনে এই মানবতাবাদের বিষয়টি বিভিন্ন উৎস থেকে হাজির হয়েছে । মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎসগুলি এখানে উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করা হল –

[ 1 ] মানবতাবাদী দর্শনের মূল উৎস হিসেবে অদ্বৈত বেদান্ত : মানবতাবাদের মূল কথাই হল জীবরূপে সকল মানুষের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া , সকল মানুষকেই ভালবাসা । মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল চিন্তা তাই মানবতাবাদ থেকেই নিঃসৃত । রবীন্দ্রনাথ অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারায় এক ও অদ্বিতীয় ব্রত্মের প্রকাশ হিসেবে মানুষের ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । মানুষের অস্তিত্ব ও মর্যাদা তাই তার কাছে সবার ঊর্বে । অদ্বৈত বেদান্তের মূলকথাই হল — জীব ব্রহ্মস্বরূপ । সেকারণেই তিনি যেখানেই মানুষ ও মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন , সেখানেই তিনি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন । 


[ 2 ] মানবতাবাদী দর্শনের ধর্মীয় ভিত্তি : মানুষের জীবন ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে ,ধর্মের বিষয়টি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে । এমন কোনাে মনুষ্যসমাজ সমাজ দেখা যায় না , যেখানে ধর্মের বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত । মানুষ এবং মানুষের সমাজকে জানতে গেলে তাই ধর্মের ইতিহাসটিও জানা দরকার । প্রখ্যাত পাশ্চাত্য দার্শনিক ম্যাক্সমুলার-কে অনুসরণ করে বলা যায় —মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হল ধর্মের ইতিহাস । রবীন্দ্রনাথও মানুষের জীবন থেকে ধর্মের বিষয়টিকে বাদ দিতে চাননি । তবে তিনি ধর্ম বলতে চিরাচরিত বা প্রথাগত ধর্মকে না বুঝিয়ে ধর্ম হিসেবে মানবতাবাদের বিষয়টিকেই সূচিত করেছেন । সুতরাং বলা যায় যে , রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শনের ক্ষেত্রে এক ধর্মীয় ভিত্তিও উপস্থিত ।


[ 3 ] মানবতাবাদী দর্শনের ভিত্তি হিসেবে জীবভাব ও বিশ্বভাব : মানবতাকে মানুষের ধর্মরূপে উল্লেখ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে দুটি সত্তার উল্লেখ করেছেন । এই দুটি সত্তার একটি হল জীবসত্তা এবং অপরটি হল মানবসত্তা 
। জীবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় জীবভাব এবং মানবসত্তা থেকে উৎসারিত হয় বিশ্বভাব । স্বার্থযুক্ত মানুষের চিন্তাই হল তার জীবভাব । কিন্তু স্বার্থযুক্ত চিন্তাকে অতিক্রম করে সামগ্রিকভাবে মানুষের চিন্তার মধ্যেই ফুটে ওঠে তার বিশ্বভাব । জীবভাবকে অতিক্রম করে বিশ্বভাবের মাধ্যমেই মানুষ মানবতাবাদের পূজারিরূপে গণ্য হতে পারে । 


[ 4 ] মানবতাবাদের ভিত্তিরূপে শ্রেষ্ঠমানব চেতনা : রবীন্দ্রনাথের মতে , মানুষই হল শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষের চেতনাই তাই সর্বশ্রেষ্ঠ চেতনারূপে গণ্য । এরূপ চেতনাই মানুষকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরতে পারে । মানবতাবাদের অর্থই হল তাই যা মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে । এরূপ বিকাশের ফলে মানুষ আর নিজের ক্ষুদ্র চেতনায় আবদ্ধ থাকতে পারে না । এরই ফলে ক্ষুদ্র চেতনার গন্ডি পেরিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে মানুষের জয়গান শােনা যায় । এ হল এমনই শ্রেষ্ঠতা যা ব্যক্তিমানুষকে তার ক্ষুদ্র সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়ে পরমসত্তার চেতনার দ্বারে হাজির করে ।






বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে ? জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলােচনা করাে abhigatbad kake bole gganer utsoho somporke abhigottabader mul boktboguli alochona koro


উত্তর : জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত মতবাদের উল্লেখ করা যায়, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবাদ হল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ । অভিজ্ঞতাবাদ মূলত বুদ্ধিবাদের একটি বিরােধী মতবাদরূপেই গণ্য । অভিজ্ঞতাবাদের মূল বক্তব্য হল ,আমাদের ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । অভিজ্ঞতা বাদ বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাকে বর্জন করে শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে দাবি করে । অভিজ্ঞতাবাদের সমর্থকদের বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদী । 

[         ] চরমপন্থী বা নরমপন্থী যাই হােক না কেন , সমস্ত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের বক্তব্যের মধ্যেই কয়েকটি মূল সুর ধ্বনিত হয় ৷ সেগুলিকেই অভিজ্ঞতাবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়রূপে গণ্য করা হয় । অভিজ্ঞতাবাদের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি নীচে উল্লেখ করা হল । 



[         ] জ্ঞানের মুখ্য উৎস হিসেবে অভিজ্ঞতা : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের মুখ্য উৎস । এই ইন্দ্রিয়ানুভবকে বাদ দিয়ে কখনােই জ্ঞান লাভ করা যায় না । অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে , বিশুদ্ধ প্রজ্ঞা বা বুদ্ধি বলে স্বতন্ত্র কোনাে বিষয় নেই । বাস্তবের সমস্ত জ্ঞানই অভিজ্ঞতানির্ভর । 


[          ] জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে আরােহাত্মক পদ্ধতি : অভিজ্ঞতাবাদ অনুযায়ী জ্ঞানের একমাত্র পদ্ধতি হল আরােহাত্মক পদ্ধতি , কখনােই অবরােহাত্মক পদ্ধতি নয় । কারণ , আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে একটি সাধারণ সূত্র বা ধারণায় উপনীত হই । সুতরাং , সমস্তপ্রকার সামান্য ধারণাকেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ।



[        ] সহজাত ধারণার বিষয়টিকে বর্জন : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ বুদ্ধিবাদের মূলভিত্তি অর্থাৎ সহজাত ধারণার বিষয়টিকে নস্যাৎ করেছেন । তাদের মতে , সহজাত ধারণা বলে কোনাে কিছুই থাকতে পারে না । কারণ , সহজাত ধারণার বিষয়কে কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না । তাদের মতে, আমাদের সমস্ত ধারনাই প্রাপ্ত হয় ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে । তারা আরও দাবি করেন যে, জন্মাবার সময় আমাদের মন থাকে সাদা কাগজের মতাে । অভিজ্ঞতার দ্বারাই সেখানে সমস্ত ধারণা মুদ্রিত হয় , অন্য কোনাে উপায়ে নয় । সুতরাং সহজাত ধারণা তথা আন্তর ধারণার বিষয়টি অবশ্যই পরিত্যাজ্য । 

[         ] অভিজ্ঞতাবাদীদের স্বীকার্য বাক্য : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ দু-ধরনের বাক্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন— [i] বিশ্লেষক এবং [ii] সংশ্লেষক । যে সমস্ত বাক্য বিশ্লেষকরূপে গণ্য,তা অবশ্যই পূর্বতঃসিদ্ধ হবে । আবার যে সমস্ত বাক্য সংশ্লেষকরূপে গ্রাহ্য, তা অবশ্যই পরতঃসাধ্যরূপে গণ্য হবে । এ দুটি ছাড়া তৃতীয় কোনাে প্রকার বাক্যকে অভিজ্ঞতাবাদীরা স্বীকার করেন না । বুদ্ধিবাদীরা যে পূর্বতঃসিদ্ধ সংশ্লেষক বচনের উল্লেখ করেছেন , তাকে অভিজ্ঞতাবাদীরা বর্জন করেছেন ।



[          ] মূল্যের বাস্তব সত্তাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদীরা দাবি করেন যে, মূল্যের কোনাে বাস্তব সত্তা নেই । তারা সত্য , শিব ও সুন্দর রূপ মূল্যকে অস্বীকার করেছেন এবং পরমমূল্যের বিষয়কে নিছক কল্পনারূপে অভিহিত করেছেন । কারণ , ইন্দ্রিয় সংবেদন দ্বারা এই সমস্ত মূল্যের মূল্যায়ন কখনােই সম্ভব নয় ।

[           ] অধিবিদ্যাকে অস্বীকার : অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকগণ অধিবিদ্যাকে অর্থহীনরূপে উল্লেখ করেছেন । তাঁদের মতে , অধিবিদ্যার জ্ঞান কখনােই ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে লভ্য নয় । সেকারণেই তারা অধিবিদ্যাকে অসম্ভব , উদ্ভট ও আজগুবিরূপে উল্লেখ করেছেন এবং অধিবিদ্যক বাক্যসমূহকে অর্থহীনরূপে গণ্য করেছেন । 



[         ] জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে অভিজ্ঞতাবাদ শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় সংবেদন তথা অভিজ্ঞতার ওপরই গুরুত্ব আরােপ করেছে । বুদ্ধিবাদের বিরােধী মতবাদরূপে গণ্য হওয়ায় তা বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে । এর ফলে তা একদেশদর্শিতার দোষে দুষ্ট হয়েছে । কিন্তু জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া বুদ্ধিরও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে , তা আদৌ অস্বীকার করা যায় না । বরং এই দাবি করা সংগত যে , জ্ঞানােৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার যতটা ভূমিকা আছে , বুদ্ধিরও ঠিক ততটাই ভূমিকা রয়েছে ।সুতরাং জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাবাদ কখনােই একটি পূর্ণাঙ্গ মতবাদরূপে গণ্য হয় না ।