রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘তােমার এই অসামান্য সাহস দেখে উপাধ্যায়মশায়ের মুখে আর কথা নেই ।’ এখানে কার সাহসের কথা বলা হয়েছে ? সে কীভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল ? উপাধ্যায়ের মুখে কথা নেই কেন ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer তােমার এই অসামান্য সাহস দেখে উপাধ্যায়মশায়ের মুখে আর কথা নেই এখানে কার সাহসের কথা বলা হয়েছে সে কীভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল উপাধ্যায়ের মুখে কথা নেই কেন tomar ai asamanno sahosh dekhe upadhyaymoshaiyer mukhe ar kotha nei akhane kar sahoser kotha bola hoyeche se kivabe sahosikotar porichoy diyechilo


উত্তর : এখানে যার সাহসের কথা বলা হয়েছে , সে হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের ‘ অচলায়তন ’- এর অন্যতম শিক্ষার্থী সুভদ্র । 

[        ] সুভদ্র কৌতূহলবশে অচলায়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখে ।অচলায়তনের বিধান অনুযায়ী এ এক ভয়ানক পাপ কাজ । আচলায়তনের উত্তরদিক একজটা দেবীর । জানালা খােলার ফলে উত্তরদিকের প্রবেশ করা বাতাস নাকি ওদিকের সমস্ত যজ্ঞপাত্রকে কলুষিত করেছে । এজন্য সুভদ্র নাকি মহাপাপী । তাকে কঠোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে । কিন্তু পঞকের অভিমত হল ওই কাজ সুভদ্রের পাপকাজ নয়, বরং তার সাহসিকতার পরিচয় । সে ওই কাজের দ্বারা তিনশাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল দিয়েছে ঘুচিয়ে । অচলায়তনে গুরুর আসার পথ করেছে প্রশস্ত ।  

[        ] উপাধ্যায় কিন্তু পঞকের মতাে উদার ও খােলা মনের মানুষ নন । তিনি নানাবিধ সংস্কারের জালে আবদ্ধ । কাজেই সুভদ্রের অত বড়াে পাপ কাজের কথা শুনে তিনি স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ । তিনি ভেবে পাচ্ছেন না ওই মহাপাপের কী প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে ! অচলায়তনই বা কতখানি অশুচি হয়েছে ? অশুচিতা দূর করে কীভাবে শুচিতা ফিরে আসবে ।
 


শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মহাপঞকের সঙ্গে আচার্য অদীনপুণ্যের বিরােধ বাধল কেন ? কে , কোথায় অদীনপুণ্যের নির্বাসন দিলেন ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer মহাপঞকের সঙ্গে আচার্য অদীনপুণ্যের বিরােধ বাধল কেন কে কোথায় অদীনপুণ্যের নির্বাসন দিলেন mohaponchoker songe adinpunner birodh badhlo keno ke kothay adinpunner nirbashon dilen


উত্তর : একটি সমস্যাই নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু' নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রবহমান ঘটনাবলিকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরােক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে । ঘটনাটি হল অচলায়তনের বালক সুভদ্র খানিকটা কৌতহূলের বশে আয়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখে ফেলেছে । ওদিকটা হল একজটা দেবীর । খােলা জানালা ওদিকের আলাে -বাতাস অচলায়তনের মন্ত্রপূত বাতাসকে নাকি কলুষিত করেছে । অশুচি হয়েছে অচলায়তন ও আয়তনিকরা । কাজেই এই মহাপাপের জন্য বালক পুরােপুরি দায়ী । মহাপাপী সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্ত করে পাপক্ষালন করতে হবে । প্রায়শ্চিত্তের বিধান উপাধ্যায়, উপাচার্য কারও জানা নেই বা স্মৃতিতে নেই । মহাপঞক একমাত্র ভগবান জ্বলনানন্তকৃত আধিকর্মিক বর্ষায়ণে পেয়েছেন ওই পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিধান । পাপীকে ছ -মাস ধরে মহাতামস সাধন করতে হবে । এই প্রায়শ্চিত্তের সমস্যা নাটকের উল্লিখিত সমস্যা , যার কথা প্রথমেই বলা হয়েছে । 

[         ] মহাতামস সাধন প্রায়শ্চিত্ত বড়ােই কঠিন । ছ- মাস অন্ধকার বন্ধ ঘরে থাকতে হবে বন্দি হয়ে । আলাের এক কণা রশ্মিও যেন সেখানে ঢুকতে না পারে । কারণ আলাে দিয়ে যে পাপ কাজ করা হয়েছে অন্ধকার দিয়ে তার ক্ষালন হবে । প্রায়শ্চিত্ত নিঃসন্দেহে প্রাণঘাতী । পঞ্চক প্রথম থেকেই সুভদ্রকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । আয়তনের কর্তৃত্বে থাকা আচার্যও হয়েছেন প্রায়শ্চিত্তের বিরােধী । কারণ আচার্য জানেন অচলায়তনে অনেক ভুল - ত্রুটিও অন্যায় কাজ হচ্ছে । কিন্তু তা সংশােধনের মতাে সাহসী পদক্ষেপ নিতে তিনি পারেননি । সে- পরিতাপ ও অনুশােচনা তাঁকে মনের দিক থেকে বিদ্ধ করেছে । এবার আর সমর্থন করে অন্যায়ের বােঝা  বাড়াতে চান না । তিনি সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারে সম্মতি দিলেন না । 
[          ] তাতেই বিরােধ বাধল উপাধ্যায়, উপাচার্য ও মহাপঞকের সঙ্গে । উপাধ্যায় বললেন , ‘তুচ্ছ  মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই , কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তাে চিরকালের ।’ মহাপঞ্চক প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মন্তব্য করলেন যে ,সুভদ্রকে বাঁচাতে গিয়ে আচার্য সনাতন ধর্মকে বিনাশ করবেন । আচার্যের এরকম বুদ্ধিবিকার বিস্ময়কর । তাঁকে আচার্য বলে আর গণ্য করাই চলে না । আচার্য বুঝতে পারলেন আয়তনিকদের সামনে তাঁর বিচারের দিন এসেছে । তিনি তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করতে প্রস্তুত বলে জানালেন । তবে তিনি সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্তের আদেশ দিলেন না । 

[        ] স্থবিরপত্তনের রাজার কাছে আচার্যের শাস্ত্রবিরােধী কাজের অভিযােগ উঠল । রাজা আচার্যকে দর্ভকপল্লিতে নির্বাসিত করলেন । অচলায়তনের আচার্যের পদ পেলেন মহাপঞ্চক । শেষাবধি মহাপঞক ও আচার্যের বিরােধের ফল দাঁড়াল এই । 

 




বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

“একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি ”—কে বলেছে ? কোন্ উৎপাত ? সে উৎপাত চায় কেন ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি কে বলেছে কোন্ উৎপাত সে উৎপাত চায় কেন aktu utpat hole je bachi ke boleche kon utpat se utpat chai keno

উত্তর : এ কথা বলেছে পঞ্চক ।
[       ] ‘উৎপাত’ বলতে গুরুর উপস্থিতিতে প্রবল আলােড়ন । পঞক উৎপাত চায়, কারণ পুথিসর্বস্ব শিক্ষার  চায় জগদ্দল পাথর শিক্ষার্থীদের মনের ওপর চেপে বসেছে । পুথিনির্ভর শুষ্ক নীরস শিক্ষা জীবনের আনন্দ - উল্লাস, সরসতা ও সজীবতাকে গ্রাস করে জীবনকে জড়বৎ নিষ্প্রাণ করে তুলেছে । পদে পদে নানা বিধান ও নিয়মকানুনের শিকল আঁটোসাঁটো করে চেপে ধরে প্রাণ ওষ্ঠাগত করেছে । তাই অচলায়তনের ভিত ধরে প্রচণ্ড কম্পন বা উৎপাতের প্রয়ােজন । এই প্রচণ্ড নাড়া বা কম্পনই স্থবিরত্ব দূর করে প্রাণের স্পন্দন ফিরিয়ে আনবে । গুরুই পারেন ওই কাক্ষিত বাসনা পূর্ণ করতে । 




বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

“উনি গেলে তােমাদের অচলায়তনের পাথরগুলাে সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে , পুঁথিগুলাের মধ্যে বাঁশি বাজবে । ” — বক্তা কে ? ‘উনি’ বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer উনি গেলে তােমাদের অচলায়তনের পাথরগুলাে সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে পুঁথিগুলাের মধ্যে বাঁশি বাজবে বক্তা কে উনি বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে uni gele tomader acholaitoner pathorgulo sudho nachte aromvo korbe puthigulor modhey banshi bajbe


উত্তর : এই উক্তির বক্তা হল প্রথম যুনক । 

‘ উনি ’ বলতে দাদাঠাকুরকে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
[        ] দাদাঠাকুর উদার ও মুক্তপ্রাণের প্রতীক । তিনি সবরকম আচার অনুষ্ঠান , মন্ত্রতন্ত্র, বিধিবিধানের আগল বা বাধা ভেঙে প্রাণের প্রবাহ বইয়ে দেন । প্রথম যুনকের কথা হল দাদাঠাকুর অচলায়তনে গেলে তাঁর স্পর্শে পাথরগুলি নাচতে শুরু করবে । পুথিগুলিতে বাঁশির সুর ধ্বনিত হবে । অর্থাৎ, তাঁর ছোঁয়ায় অচলায়তনের নিষ্প্রাণ পাথর ও পুথিগুলি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে । আচার - অনুষ্ঠানের আধিক্য , জপতপ , মন্ত্রতন্ত্রের পেষণ ও শুষ্ক পুথিসর্বস্বতার যে নিষ্প্রাণতা তা নতুন প্রাণের স্পর্শে ও শিহরণে সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে । 



মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২

‘গুরু’ নাটকে মােট কটি গান আছে ? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer গুরু নাটকে মােট কটি গান আছে নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে guru natoke mot koti gan ache natoktite songeeter bhumika alochona koro

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু’ নাটকে সাতটি গান আছে । 

[          ] রবীন্দ্রনাথের ‘ অচলায়তন ’ নাটকে তেরােটি গান আছে । অচলায়তনের রূপান্তরিত ‘ গুরু’ নাটকে অচলায়তনের ছটি গান নেওয়া হয়েছে । একটি নতুন গান সংযােজিত হয়েছে ‘গুরু’নাটকের শেষে । ‘গুরু’ নাটকে নাট্যকার গানের সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন সম্ভবত নাটককে সংক্ষিপ্ত, গতিময় ও নাট্যদ্বন্দ্বকে তীক্ষ্ণতর করার উদ্দেশ্যে । 


[        ] ‘গুরু’ নাটকের প্রথম গানটি পঞকের । গান গাইতে গাইতে পঞকের প্রবেশ । গানটি আট চরণের । চারভাগে গানটি গাওয়া 1হয়েছে সংলাপের মাঝে মাঝে । দীর্ঘদিন পরে গুরু যে অচলায়তনে আসছেন , পঞকের গানের মধ্যে তা আভাসিত । গুরুর জন্য, ব্যাকুলতা , তা প্রকাশিত আকাশে । তাঁর আগমনের বার্তা বাতাসে । এভাবে গুরুর আগমনবার্তা অচলায়তনের সর্বত্র প্রচারিত । 

[        ] প্রথম গানের মতাে দ্বিতীয় গানটিও পঞকের একক কণ্ঠে । অপূর্ব এক নাটকীয় পরিস্থিতিতে গানটি গেয়েছে পঞ্চক , অবশ্য আরও অন্যান্য আয়তনিকদের সঙ্গে নৃত্য সহযােগে । অচলায়তনের জীর্ণ পুথিসর্বস্ব নীরস নিষ্প্রাণ জীবন থেকে মুক্তির জন্যে আচার্য গুরুর কাছে কামনা করেছেন হৃদয়ের বাণী ,প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে তােলার শক্তি । পঞকেরও একই কামনা । তাই তার নৃত্যসহ উদাত্ত কণ্ঠে গান : ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে ......’  তৃতীয় গানও পঞকের একক কণ্ঠে, অবশ্য তার পিছনে যুনকরা দলবদ্ধ হয়ে নৃত্য করেছে । পাহাড়- মাঠের মুক্ত পরিবেশে মুক্তির সন্ধানে পঞক । পরের গান যুনকের । তারা মনের আনন্দে চাষ করে । চাষ করাই তাদের কর্ম ও ধর্ম । পরের গানও তাদের । যার মর্মার্থ হল তাদের কাজের বাছবিচার নেই । তারা সব কাজেই হাত লাগায় ।কর্মমার্গই হল তাদের সাধন পথ । দর্ভকদের গান পরের গান । তারা শাস্ত্র জানে না, তারা নামগান করে । সেই নামগানই তারা শােনায় । নাটকের শেষ গান একেবারে সমাপ্তি লগ্নে । যুনক ও দর্ভকেরা গুরুকে প্রদক্ষিণ করে গুরুর জয়গান গেয়েছে — ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়/তােমার হউক জয় ।’

 





সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২

‘গুরু’ নাটকের ঘটনাস্থলগুলি উল্লেখ করে কোন্ ঘটনাটিকে তােমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে তা লেখাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer গুরু নাটকের ঘটনাস্থলগুলি উল্লেখ করে কোন্ ঘটনাটিকে তােমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে তা লেখাে guru natoker ghotonastholguli ullekh kore kon ghotonatike tomar sobcheye akorshonio bole mone hoyeche ta lekho


উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু’ নাটকের প্রথম ঘটনাস্থল অচলায়তন । এটি নাটকের প্রথম দৃশ্য। এই দৃশ্যে অনেক ঘটনা ঘটে । গুরু আসছেন সে বার্তা যেমন প্রচারিত , তেমনি তাঁর শুভ আগমন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে । সুভদ্র আয়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখায় সে নাকি মহাপাপ নাকি করেছে , তার প্রায়শ্চিত্তের বিধান বড়ােই ভয়ানক ও প্রাণঘাতী । ওই ঘটনাকে ঘিরে আচার্যের অন্তরের পরিবর্তনের পরিচয় , পঞকের মুক্ত ও উদার প্রাণের প্রকাশ , মহাপক ও উপাধ্যায়ের আচার্য -বিরােধিতা , পরিশেষে পঞক ও আচার্যের দর্ভকপল্লিতে নির্বাসন , মহাপঞকের আচার্যের আসনে উপবেশন ইত্যাদি ঘটনার সন্নিবেশ । দ্বিতীয় ঘটনার স্থল পাহাড় মাঠ । যুনকদের মাঝে পঞ্চক , দাদাঠাকুরের উপস্থিতি , যুনকদের নিয়ে দাদাঠাকুরের স্থবিরপত্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা । তৃতীয় ঘটনার স্থল দর্ভকপল্লি । দৰ্ভকদের মাঝে আচার্য ও পঞ্চক । দাদাঠাকুর দর্ভকদের গোঁসাই হয়ে হাজির । অচলায়তন ভাঙার জন্য যুদ্ধযাত্রা । চতুর্থ ঘটনা স্থল অচলায়তন । অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ধূলিসাৎ । গুরুরূপী দাদাঠাকুর , যুনক ও দর্ভকদের উপস্থিতি । মহাপঞক বাদে আর সকলের তাঁকে গুরু বলে মেনে নেওয়া ।

[          ] এই ঘটনাগুলির মধ্যে শেষ দৃশ্যে যুনক ও দর্ভকদের নিয়ে যােদ্ধার বেশে দাদাঠাকুরের অচলায়তনে প্রবেশ ও ওই ঘটনাক্রমে নাটকের সমাপ্তির ঘটনা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় । অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়ায় ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অচলায়তনের স্থবিরতার অবসান , অন্ধত্ব-গোঁড়ামি- আচার অনুষ্ঠানসর্বস্ব জীবনাচরণের সমাপ্তি, অপরদিকে নবীন প্রাণের নতুন ভাবনা - চেতনার প্রতিষ্ঠা, সরস মুক্তপ্রাণের জয়যাত্রা — যা নাটকের মর্মার্থ , তার প্রকাশ অপূর্ব নাটকীয়ভাবে অর্থবহ হয়েছে । এই কারণে ঘটনাটি আমার কাছে আকর্ষণীয় ।
 


রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২

“অন্ধ গোঁড়ামির বিরােধিতা ও নতুন ভাবনাকে স্বাগত জানানাে তার লেখা বৈশিষ্ট্য ।” উদ্ধৃতিটির আলােকে ‘গুরু’ নাটকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer অন্ধ গোঁড়ামির বিরােধিতা ও নতুন ভাবনাকে স্বাগত জানানাে তার লেখা বৈশিষ্ট্য উদ্ধৃতিটির  আলােকে গুরু নাটকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলােচনা করাে guru natoker bishoyabostu songkhepe alochona koro

উত্তর : রবীন্দ্র-ভাবনার বৈশিষ্ট্যই হল অন্ধ গোঁড়ামির বিরােধিতা এবং নবতন চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানানাে । একাধিক রবীন্দ্র - নাটকের কেন্দ্রীয় ভাববস্তু হল তাই । ‘ গুরু ’ নাটকে রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনা আরও স্পষ্টাকারে প্রকাশিত । তাঁর ‘গুরু’ নাটকের বিষয়বস্তু পর্যালােচনা করলে এই সত্যতা পরিস্ফুট হয়ে উঠবে । 

[          ] স্থবিরপত্তনের শিক্ষায়তনটি অচলায়তন । অচল বা স্থবিরতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটিতে আলাে ও বাতাস ঢােকার সব পথ বন্ধ । বৃহত্তর জগৎ ও জীবন থেকে পুরােপুরি বিচ্ছিন্ন । আয়তনিকরা যুক্তিহীন, প্রাণহীন অভ্যাস ও গোঁড়ামির দাস । তন্ত্রমন্ত্রের অন্ধ অনুগত । নানা বিধিনিষেধের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ । অন্ধতা , অজ্ঞানতা ও সংকীর্ণতার ঘেরাটোপে ঢাকা । নানা আচার - অনুষ্ঠান, প্রথা ও পুথির চাপে তারা পিষ্ট । নিয়ম ও রীতির সামান্যতম লঙ্ন হলেই প্রায়শ্চিত্তের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয় । এভাবে রক্ষণশীলতার গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে প্রাণহীন স্থবিরে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি । 




[         ] ‘ গুরু ’ নাটকে এরই বিরুদ্ধে নবীন প্রাণের নব চেতনা ও নতুন ভাবনার অভিঘাতে নাটকে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি–অন্ধ গোঁড়ামির বিরুদ্ধে নতুন ভাবনার ঘােরতর সংঘাত । পঞ্চক হল নবীন প্রাণের প্রতীক , নতুনের অগ্রদূত । সে যেন মূর্তিমান বিদ্রোহ । সে যেন মুক্তপ্রাণের স্পন্দন । ‘গুরু’- র উপস্থিতিতে অচলায়তনের আচার - অনুষ্ঠান সর্বস্ব অন্ধত্ব ও গোঁড়ামির প্রাচীর যে ভেঙে পড়বে , পঞকই যেন তার প্রস্তুতিপর্ব সেরে রাখে তার নতুন প্রাণের নবতন ভাবনা ও চেতনার প্রবাহে । অন্ধত্ব গোঁড়ামির ধ্বংসস্তুপের ওপর নতুন ভাবনা ও চেতনার যে মন্দির গড়ে উঠবে , পঞ্চকই হবে তার ঋত্বিক ।
 


শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২

“ আমি তার মাথায় চড়ি ” —কে , কার মাথায় চড়ে ? পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer আমি তার মাথায় চড়ি কে কার মাথায় চড়ে পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে ami tar mathay chori ke kar mathay chore ponktitir tatporjo bankha koro


উত্তর : ক্ষুধার্ত হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষটি তার রাগের মাথায় চড়ে । 

[        ] ‘আমার’ মানুষটি একটি হতদরিদ্র শ্রমজীবী লোক । ‘দিন খাটে দিন খায়’ এমনি আর্থিক অবস্থা সংসারের । সংসারের এই দুঃখকষ্ট , অভাব -অনটন মুখ বুজে সয়ে নেয় । ফলাও করে বলে না । প্রতিবাদে সােচ্চার হয় না । কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তার ধারণা এভাবে দুঃখকষ্টের কথা বলে দুঃখের প্রতিকার হয় না । তার বক্তব্য ‘কী হবে দুঃখ করে ?’ আর সেজন্য যেটুকু উপায় করে তাতেই খুশি থাকে । সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন চললে তাতেই সন্তুষ্ট । ধারদেনা করে অসুখ -বিসুখ সামাল দেয় । অবশ্য গঞ্জিকার কলকেতে টান দেয় রাত্রিতে ।কখনাে -সখনাে বাড়ি ফেরে মাঝরাতে । তখন ব্যঞ্জনহীন ঠান্ডা ভাতে নুনের সংস্থান না থাকায় ভাত বিস্বাদ হয় । একদিকে ভয়াবহ দারিদ্র্যের কশাঘাত । তার ওপর ক্ষুধার্ত পেটে বিস্বাদ ভাত গলা দিয়ে না নামায় রাগ মাথায় চড়ে । রাগ চড়ার কারণ হল এই ।


[        ] রাগ যখন সংযমের সীমা টপকে যায়, তখন দিকবিদিক জ্ঞান থাকে না । তখন মানুষের জ্ঞান, বােধবুদ্ধি, ন্যায় - অন্যায়ের বিচারবিবেচনা সব লােপ পায় । মনুষ্যত্ব লােপ পেয়ে পশুত্ব প্রাধান্য পায় । হিতাহিত বােধের অস্তিত্বটুকুও থাকে না । রাগের থেকে বড়াে হয়ে দাঁড়ায় ক্রোধােন্মত্ত মানুষটির মনুষ্যত্বহীন পশুত্ব । হিতাহিত জ্ঞানহীন অন্ধ ক্রোধােন্মত্ততা । তা যেন রাগের মাথার ওপর ক্রোধােন্মত্ত মানুষটির চড়ে বসা । তার ফলও হাতে হাতে মেলে । বাপব্যাটায় বচসা হয়, ভাইয়ে ভাইয়ে কলহ বাধে । তাতে পাড়ার লােকের ঘুম ছুটিয়ে সারা পাড়া যেন মাথায় করে ।




শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২

কবি জয় গােস্বামী ‘নুন’ কবিতায় সমাজের শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার যে ছবি এঁকেছেন , তা বর্ণনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer কবি জয় গােস্বামী নুন কবিতায় সমাজের শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার যে ছবি এঁকেছেন তা বর্ণনা করাে kobi joy goswami nun kobitai somajer shromjibi nimnobitto manusher jibonjatrar je chobi akechen ta bornona koro


উত্তর : কবি জয় গােস্বামী ‘নুন' কবিতায় সমাজের অতিসাধারণ শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার ছবি এঁকেছেন । তারা শ্রমজীবী , ‘দিন আনে দিন খায়’ এমনি হতদরিদ্র বটে , কিন্তু তারা  অল্পে খুশি । তারা জানে দুঃখ করে দুঃখকষ্টের সুরাহা হয় না । দুঃখ কার কাছেই বা করবে ? দুঃখ জানিয়ে দুঃখের সুরাহা হবে এমন দরদি সমাজ -সংসার এদেশে নেই । কাজেই সাধারণ ভাতকাপড়ে তাদের দিন চলে । তাদের দিন চলে অসুখেবিসুখে ধারদেনা করে । কিন্তু দুঃখদারিদ্র, অসুখবিসুখ , দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা সবকিছু ভুলে থাকার জন্য রাতে দু-ভাই মিলে গাঁজার কলকেতে টান দেয় । অভাবের সংসারে সবদিন বাজার করা হয় না । যেদিন হয় সেদিন বেহিসেবিপনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় । কারণ গরিবের সংসারে অপ্রয়ােজনীয় গােলাপের চারা কিনে বাড়ি ফেরে  গােলাপচারা পুঁতে বাগান বানাবে , তেমন জায়গাটুকু তাে নেই । কষ্ট ভােলার জন্য তারা যথারীতি গাঁজাতে টান দেয় । নেশাভাঙেই তাদের আনন্দ তাতেই তারা খুশি । এভাবে হেসেখেলে কষ্ট করে তাদের দিন চলে যায় । মাঝে মাঝে অভাব - অনটনে সংসার অচল হয়ে যায় । সেদিন মাঝরাতে তারা বাড়ি ফেরে । ভাত তখন ঠান্ডা । সামান্য নুনের জোগাড়টুকুও হয়নি । ফলে খেতে বসে মাথায় রাগ চড়ে । রাগ চড়ে গিয়ে এমন হয় যেন রাগের চড়ে বসে । ফলে বাপব্যাটায় কিংবা দু-ভাইয়ে মিলে মারামারি ও চেঁচামেচি  করে সারাপাড়া মাথায় করে । অবশ্য তাদের রাগারাগি ও আত্মকলহে কাদের কী এসে যায় ? তারা খেটে -খাওয়া অতি নগণ্য মানুষ । তাদের চাওয়া বলতে ‘আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক ।’ সমাজের কাছে , রাষ্ট্ৰচালকদের কাছে এটুকুই তাদের আর্জি ।






বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২

দর্শক টানার দিক থেকে পল্লাইওদের মুরগির খাঁচায় বন্দি দেবদূতের চেয়ে শহরে আসা একটি মেয়ের ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর আকর্ষণ বেশি কেন , তুলনামূলক আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer দর্শক টানার দিক থেকে পল্লাইওদের মুরগির খাঁচায় বন্দি দেবদূতের চেয়ে শহরে আসা একটি মেয়ের ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর আকর্ষণ বেশি কেন  তুলনামূলক আলােচনা করাে dorshok tanar dik theke pollaioder murgir khanchai bondi debduter cheye shohore asa akti meyer bhraman prodoshonir akorshon beshi keno tulonamulok alochona koro

উত্তর : পেলাইওদের মুরগির খাঁচায় বন্দি দেবদূত আর শহরে আসা ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর ভাগ্যবিড়ম্বিত মেয়েটির মাকড়সা -আকৃতি দুই-ই অস্বাভাবিক ও কৌতূহল - উদ্দীপক ঘটনা ,যা দর্শক আকর্ষণের সহায়ক । দুই- ই দর্শক আকর্ষণ করেছে , কিন্তু শেষাবধি দেবদূত হয়ে পড়েছে দর্শকশূন্য । কারণ —


              এক । দেবদূত দর্শনির চেয়ে মাকড়সারূপী মেয়েটির দশনি বাবদ পয়সা কম । 

              

              দুই । দেবদূত নিয়ে দর্শকের প্রশ্ন করার অবকাশ নেই , কিন্তু মেয়েটিকে নিয়ে দর্শক তার খুশিমতাে প্রশ্ন করার সুযােগ পেয়েছে । 

              

              তিন । মুরগির খাঁচার তারের জালের বাইরে থেকে দর্শক দেবদূতকে দেখে তার কৌতূহল মিটিয়েছে , কিন্তু মাকড়সারূপী মেয়েটিকে খুঁটিয়ে দেখার সুযােগ পেয়েছে । 

              

              চার । দেবদূত প্রাসঙ্গিক সত্য -মিথ্যা যাচাইয়ের আদৌ সুযােগ নেই , কিন্তু তা আছে মেয়েটির ব্যাপারে । 

              

              পাঁচ । করুণ কণ্ঠে মেয়েটি তার বিড়ম্বিত মাকড়সায় পরিণত হওয়ার কাহিনি প্রকাশ করে দর্শককে বিমােহিত করে । অনেকে তার প্রতি দয়ায়,করুণায় তার মুখে মাংসের বড়া ছুড়ে দেয় । দেবদূতের ক্ষেত্রে সে সুযােগ আদৌ নেই । সে কেবল দর্শকের দিকে প্রাচীন চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে নীরবে । 

              

              ছয় । মেয়েটির মাকড়সায় বদলে যাওয়া দৃশ্যে এতই মানবিক সত্য আর এমন ভয়ংকর শিক্ষা আছে যা সহজে দেবদূতের প্রদর্শনীকে নস্যাৎ করে দিতে পারে , যে দেবদূত মর্তবাসীর দিকে নাক সিঁটকে তাকায় । তা ছাড়া দেবদূতের ওপর আরােপিত আলৌকিকত্ব এমন কিছু জম্পেশ ছিল না , যা ভক্তিনভ্রো দর্শক ধরে রাখতে পারে । ফলে মাকড়সা মেয়েটির জনপ্রিয়তা ও দর্শকটানার ক্ষেত্রে দেবদূত পিছু হটে পড়ে । দেবদূতের মানসম্ভ্রমের খ্যাতি ধুলােয় লুটিয়ে যায় ।