মহাপঞকের সঙ্গে আচার্য অদীনপুণ্যের বিরােধ বাধল কেন ? কে , কোথায় অদীনপুণ্যের নির্বাসন দিলেন ?
উত্তর : একটি সমস্যাই নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু' নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রবহমান ঘটনাবলিকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরােক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে । ঘটনাটি হল অচলায়তনের বালক সুভদ্র খানিকটা কৌতহূলের বশে আয়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখে ফেলেছে । ওদিকটা হল একজটা দেবীর । খােলা জানালা ওদিকের আলাে -বাতাস অচলায়তনের মন্ত্রপূত বাতাসকে নাকি কলুষিত করেছে । অশুচি হয়েছে অচলায়তন ও আয়তনিকরা । কাজেই এই মহাপাপের জন্য বালক পুরােপুরি দায়ী । মহাপাপী সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্ত করে পাপক্ষালন করতে হবে । প্রায়শ্চিত্তের বিধান উপাধ্যায়, উপাচার্য কারও জানা নেই বা স্মৃতিতে নেই । মহাপঞক একমাত্র ভগবান জ্বলনানন্তকৃত আধিকর্মিক বর্ষায়ণে পেয়েছেন ওই পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিধান । পাপীকে ছ -মাস ধরে মহাতামস সাধন করতে হবে । এই প্রায়শ্চিত্তের সমস্যা নাটকের উল্লিখিত সমস্যা , যার কথা প্রথমেই বলা হয়েছে ।
[ ] মহাতামস সাধন প্রায়শ্চিত্ত বড়ােই কঠিন । ছ- মাস অন্ধকার বন্ধ ঘরে থাকতে হবে বন্দি হয়ে । আলাের এক কণা রশ্মিও যেন সেখানে ঢুকতে না পারে । কারণ আলাে দিয়ে যে পাপ কাজ করা হয়েছে অন্ধকার দিয়ে তার ক্ষালন হবে । প্রায়শ্চিত্ত নিঃসন্দেহে প্রাণঘাতী । পঞ্চক প্রথম থেকেই সুভদ্রকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । আয়তনের কর্তৃত্বে থাকা আচার্যও হয়েছেন প্রায়শ্চিত্তের বিরােধী । কারণ আচার্য জানেন অচলায়তনে অনেক ভুল - ত্রুটিও অন্যায় কাজ হচ্ছে । কিন্তু তা সংশােধনের মতাে সাহসী পদক্ষেপ নিতে তিনি পারেননি । সে- পরিতাপ ও অনুশােচনা তাঁকে মনের দিক থেকে বিদ্ধ করেছে । এবার আর সমর্থন করে অন্যায়ের বােঝা বাড়াতে চান না । তিনি সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারে সম্মতি দিলেন না ।
[ ] তাতেই বিরােধ বাধল উপাধ্যায়, উপাচার্য ও মহাপঞকের সঙ্গে । উপাধ্যায় বললেন , ‘তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই , কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তাে চিরকালের ।’ মহাপঞ্চক প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মন্তব্য করলেন যে ,সুভদ্রকে বাঁচাতে গিয়ে আচার্য সনাতন ধর্মকে বিনাশ করবেন । আচার্যের এরকম বুদ্ধিবিকার বিস্ময়কর । তাঁকে আচার্য বলে আর গণ্য করাই চলে না । আচার্য বুঝতে পারলেন আয়তনিকদের সামনে তাঁর বিচারের দিন এসেছে । তিনি তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করতে প্রস্তুত বলে জানালেন । তবে তিনি সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্তের আদেশ দিলেন না ।
[ ] স্থবিরপত্তনের রাজার কাছে আচার্যের শাস্ত্রবিরােধী কাজের অভিযােগ উঠল । রাজা আচার্যকে দর্ভকপল্লিতে নির্বাসিত করলেন । অচলায়তনের আচার্যের পদ পেলেন মহাপঞ্চক । শেষাবধি মহাপঞক ও আচার্যের বিরােধের ফল দাঁড়াল এই ।
কোন মন্তব্য নেই