ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২

প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষার বর্ণনা দাও ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষার বর্ণনা দাও prachin bharote narisikkhar bornona dao


উত্তর : প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় বিভিন্ন যুগের সমাজে নারীর মর্যাদার উন্নতি বা অবনতি যাই ঘটুক না কেন , প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন যুগে ভারতীয় নারীর শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি মােটামুটিভাবে অব্যাহত ছিল । বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী দীর্ঘ সময়ের ভারতের নারীশিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় ।  

ঋগবৈদিক যুগ : ঋগবৈদিক যুগে নারীশিক্ষারও যথেষ্ট সুযােগ ছিল । ধর্মচর্চা, চরিত্রগঠন , ব্যক্তিত্বের বিকাশ প্রভৃতি ছিল এই যুগের শিক্ষার উদ্দেশ্য । এযুগে মমতা , ঘােষা , লােপামুদ্রা , বিশ্ববারা , বিশাখা প্রমুখ বিদুষী নারীর কথা জানা যায় । এযুগের নারীরা বেদের অনেক স্তোত্রও রচনা করেছিলেন । 


পরবর্তী বৈদিক যুগ : সামগ্রিকভাবে পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও নারীশিক্ষা ভালােভাবেই চালু ছিল । এযুগে কোনাে কোনাে নারী উচ্চশিক্ষায় অগ্রণী ছিলেন । এযুগের যে সকল নারী বিবাহের আগে পর্যন্ত বিদ্যাচর্চা করতেন ,তাদের ‘সদ্যোদ্বাহা’এবং যাঁরা আজীবন অবিবাহিত থেকে ধর্ম ও দর্শন চর্চা করে জীবন কাটিয়ে দিতেন, তাদের ‘ব্ৰহ্ববাদিনী’ বলা হত । এযুগের বিখ্যাত বিদুষী নারী ছিলেন গার্গী , মৈত্রেয়ী প্রমুখ । 


মহাকাব্য ও প্রতিবাদী ধর্মের যুগ : মহাকাব্যের যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও এযুগের বহু নারী বিদ্যাচর্চা করতেন । মহাভারতে দ্রৌপদীকে ‘পণ্ডিতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এযুগের অনেক নারী সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করতেন । বিনয়পিটকে বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের অক্ষর জ্ঞান অর্জনকে নিষিদ্ধ করা হয়নি । এযুগের নারীরা সংস্কৃত কাব্য ও নাটকও রচনা করেছেন । ভিক্ষুণীদের রচিত সংগীতগুলি ‘থেরীগাথা’ গ্রন্থে সংকলিত আছে । চন্দনা, জয়ন্তী প্রমুখ ছিলেন এযুগের উচ্চশিক্ষিতা নারী । 

মৌর্য যুগ : মৌর্য যুগে শিক্ষিত নারীরা রাজকার্যেও অংশ নিতেন । সমকালীন সংস্কৃত সাহিত্যে এমন বহু নারীর উল্লেখ আছে যারা লিখতে , পড়তে ও সংগীত রচনা করতে পারতেন । কোনাে কোনাে নারী চিত্রশিল্পেও দক্ষ ছিলেন । 


মৌর্য-পরবর্তী যুগ : মৌর্য পরবর্তী যুগে অনেক মহিলা উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন । পাণিনি বলেছেন যে , এই সময় নারীরা বেদ অধ্যয়ন করতেন । কাত্যায়ন তার ‘কার্তিক’ গ্রন্থে অধ্যাপিকা বােঝাতে ‘উপাধ্যায়া’ বা ‘উপাধ্যায়ী’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এই সময়ে অনেক অভিজাত মহিলা বৈদিক স্তোত্র, সংস্কৃত কাব্য ও নাটক রচনা করতেন । 


গুপ্তযুগ : বিভিন্ন সাহিত্য থেকে গুপ্তযুগের নারীরা , ইতিহাস ও কাব্যচর্চা করত বলে সমকালীন সাহিত্য থেকে জানা যায় । শাস্ত্রজ্ঞান এযুগের নারীর বােধবুদ্ধিকে তীক্ষ করত বলে ব্যাৎসায়ন উল্লেখ করেছেন । তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে ,আদর্শ পত্নীকে সুশিক্ষিত হতে হবে এবং তাকে সাংসারিক আয়ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে । গুপ্তযুগে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা প্রভাবতী গুপ্তার মতাে কাশ্মীর, উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করতেন । অবশ্য এযুগে সাধারণ দরিদ্র নারীদের শিক্ষার সুযােগ বিশেষ ছিল না ।

হর্ষবর্ধনের আমল : হর্ষবর্ধনের আমলে চিত্রকলা , নৃত্য,সংগীত প্রভৃতি শিক্ষার প্রচলন ছিল । হর্ষবর্ধনের ভগ্নি রাজ্যশ্রী নিয়মিত সংগীত , নৃত্য ও অন্যান্য কলার চর্চা করতেন বলে বানভট্ট উল্লেখ করেছেন । নারীরা সাধারণত পিতৃগৃহেই শিক্ষালাভ করত । 

উপসংহার : ঋগবৈদিক যুগে নারীরা যে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন , তা পরবর্তী বিভিন্ন যুগে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছিল । নারীসমাজে শিক্ষাগ্রহণের ধারা অব্যহত থাকলেও মর্যাদায় তারা পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনি । তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ নারীরা বিশেষত দরিদ্র ঘরের নারীরা শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছিল ।



সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

প্রাচীন ভারতে ‘ বর্ণ ’ ও ‘ জাতি ' প্রথা সম্পর্কে বিশদভাবে আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন ভারতে বর্ণ ও জাতি প্রথা সম্পর্কে বিশদভাবে আলােচনা করাে prachin bharote borno o jati protha bishodvabe alochona koro


উত্তর : বিতর্ক : আর্যরা ভারতে আসার পূর্বে তাদের সমাজে বর্ণ ও জাতিব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । অনেকেই মনে করেন যে , আর্যদের ভারতে আগমনকালে বৈদিক সমাজে বর্ণব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল না।  পরবর্তীকালে আর্যরা ভারতের অভ্যন্তরে সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে বসবাস শুরু করলে স্থানীয় কৃষ্ণকায় অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক রাখার উদ্দেশ্যে আর্য সমাজে বর্ণব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে । অন্যদিকে অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের মতে , “ভারতে বর্ণ বৈষম্যের সূচনা , ঋগবৈদিক যুগের পূর্বে, আর্য ইতিহাসের ইন্দো ইরানীয় পর্বে হয়েছিল ।” 
বর্ণপ্রথার সূচনা : বৈদিক আর্যরা বৈবাহিক সম্পর্ক, সামাজিক আচার আচরণ প্রভৃতি বিষয়গুলি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নেয় । আর্য সমাজে বিভিন্ন সামাজিক বিধিনিষেধ চালু হয় এবং পেশাগত ভিত্তিতে আর্যদের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয় । এইভাবে আর্য সমাজে বংশানুক্রমিক বর্ণপ্রথার উদ্ভব ঘটে । তবে বৈদিক যুগে বর্ণভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটলেও তখন জাতিভেদপ্রথার অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে । 

বর্ণভেদের কারণ : বৈদিক সমাজে বর্ণপ্রথা চালু হওয়ার বিভিন্ন কারণ ছিল— 

[i] গৌরবর্ণ ও দীর্ঘকায় আর্যরা ভারতের কৃষ্ণবর্ণ ও খর্বকায় অনার্যদের কাছ থেকে নিজেদের পৃথক করার উদ্দেশ্যে আর্য সমাজে বর্ণভেদের প্রয়ােজন অনুভব করে । ঐতিহাসিক রাপসন বলেছেন যে,আর্য সমাজে ‘বর্ণ’ শব্দটি ‘গায়ের রং’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । আর্যদের গৌরবর্ণ ও অনার্যদের কৃষ্ণবর্ণের পার্থক্য বজায় রাখতে আর্যরা তাদের সমাজে বর্ণভেদ প্রথাচালু করে । 

[ii] অনার্যদের বিরুদ্ধে অবিরাম সংঘর্ষের মাধ্যমে আর্যরা ভারতে বসতির প্রসার ঘটায় । ফলে দীর্ঘ যুদ্ধে লিপ্ত থাকা একজন আর্য পুরুষের পক্ষে কৃষি , শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত থাকা সম্ভব ছিল না । এই জন্য সমাজে বিভিন্ন পেশা ও পেশার ভিত্তিতে বর্ণপ্রথার সূচনা হয় । 

চতুর্বর্ণ প্রথা : আর্যদের পেশার ভিত্তিতে বৈদিক সমাজে চারটি পৃথক বর্ণের সূচনা হয় । ঋগবেদের দশম মণ্ডলের পুরুষসুক্তের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে যে ,আদি পুরুষ ব্ৰত্মার মুখমণ্ডল থেকে ব্রাত্মণ,বাহুদ্বয় থেকে ক্ষত্রিয় , উরুদেশ থেকে বৈশ্য ও চরণযুগল থেকে শূদ্রের উৎপত্তি হয়েছে । এইভাবে আর্য সমাজে ব্রাত্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র — এই চারটি পৃথক বর্ণের সৃষ্টির কথা জানা যায় । আর্যরা ব্রাত্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য — এই তিনটি বর্ণে বিভক্ত হয় এবং অনার্যরা শূদ্রবলে পরিচিত হয় । উৎপত্তি অনুসারে ব্রাত্মণদের স্থান সবার ওপরে এবং শূদ্রদের স্থান সবার নীচে ছিল । 

চতুর্বর্ণের পেশা : আর্যদের চতুর্বর্ণব্যবস্থায় প্রতিটি বর্ণের জন্য পৃথক পৃথক পেশা সুনির্দিষ্ট করা হয় । 
[i] বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাত্মণদের কাজ ছিল যাগযজ্ঞ , পূজার্চনা ও অধ্যয়ন -অধ্যাপনা করা ।

[ii] ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল দেশ রক্ষা করা ।

[iii] বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যাবসাবাণিজ্য , কৃষি ও পশুপালন করা । 

[iv] শূদ্রদের কাজ ছিল উপরােক্ত তিন শ্রেণির সেবা করা । ভৃত্য , কায়িক শ্রমজীবী ও কৃষকরা ছিল শূদ্র বর্ণের অন্তর্ভুক্ত । 

ঋবৈদিক যুগে জাতি প্রথা : পরবর্তীকালে বৈদিক সমাজে মানুষ আরও নতুন নতুন পেশার সঙ্গে যুক্ত হলে পূর্বতন চতুর্বর্ণ প্রথায় নানা সংমিশ্রণের মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন মিশ্রবর্ণের সৃষ্টি হয় । এই সময় থেকে বর্ণপ্রথা ক্রমে জাতিপ্রথার দিকে অগ্রসর হতে থাকে । কেউ কেউ মনে করেন যে , ঋবৈদিক যুগেই আর্য সমাজে জাতিভেদপ্রথার সূচনা হয় । কেননা , কোনাে বর্ণের সন্তান জন্মগতভাবে তার পূর্বপুরুষের বর্ণই গ্রহণ করত । এইভাবে চারটি বর্ণ ক্রমে চারটি জাতিতে পরিণত হয় । 

যজুর্বেদের যুগে জাতি প্রথা : ড .এ এল বাসাম মনে করেন যে , ঋবৈদিক যুগের সমাজে শ্রেণিবৈষম্য থাকলেও জাতিবৈষম্য ছিল না । তবে বর্ণ ও জাতিভেদপ্রথার মধ্যে যােগসূত্র বর্তমান এবং জাতিভেদপ্রথার উদ্ভবে বর্ণ প্রথার যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল । পরবর্তী বৈদিক যুগে পূর্ব ভারতে আর্য বসতির প্রসার ঘটতে থাকলে সমাজে নানা জটিলতা দেখা দেয় । তখনই , অর্থাৎ পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে জাতি প্রথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন । 


জাতি প্রথার উপাদান : পণ্ডিতগণ মনে করেন যে,ঋবৈদিক সমাজে পেশাগত ভিত্তিতে যে বর্ণ প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল , পরবর্তীকালে তা থেকেই জাতিভেদপ্রথার উদ্ভব ঘটে । ঐতিহাসিক ড. ডি ডি কোশাম্বী মনে করেন যে ,ঋগ্‌বৈদিক যুগের পরবর্তীকালে আর্য সমাজের বিভিন্ন উপজাতি প্রথা ভেঙে পড়তে থাকে এবং তখনই জাতিপ্রথার আত্মপ্রকাশ ঘটে । 


উপসংহার : উৎপত্তির পর থেকে ভারতের জাতিপ্রথায় নানা বিবর্তন ঘটে । বৈদিক যুগে চারটি বর্ণ চারটি জাতিতে পরিণত হয় । বৈদিক সমাজের বাইরে ‘ব্রাত্য’ ও ‘নিষাদ’ নামে দুটি জাতির অস্তিত্বের  কথা জানা যায় । প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের যুগে জাতি প্রথা সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করে এবং বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে । মেগাস্থিনিস মৌর্য যুগে ভারতে সাতটি জাতির উল্লেখ করেছেন । এগুলি হল—
[i] দার্শনিক ।

[ii] কৃষক ।

[iii] পশুপালক ও শিকারি ।

[iv] কারিগর ও শিল্পী ।

[v] সৈনিক ।

[vi] গুপ্তচর বা পরিদর্শক ।

[vi] মন্ত্রণাদাতা । 

পরবর্তীকালে আরও নতুন নতুন জাতির উদ্ভব ঘটে ।



রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতে নব্য ধর্মীয় আন্দোলনের উত্থানের প্রেক্ষাপট আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতে নব্য ধর্মীয় আন্দোলনের উত্থানের প্রেক্ষাপট আলােচনা করাে khrishtopurbo shoshto shotoke uttor bharote nobbo dhormiyo andoloner uthaner prekhapot alochona koro

উত্তর : আধ্যাত্মিক অনুসন্ধিৎসা : বৈদিক যুগের শেষ দিকে মানুষের মনে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধিপায় । ‘শ্রমণ’ ও ‘পরিব্রাজক’ নামে দুই সন্ন্যাসী গােষ্ঠীর প্রভাবে মানুষ কুসংস্কারপূর্ণ বৈদিক ধর্মের শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে । 
যাগযজ্ঞে জটিলতা বৃদ্ধি : বৈদিক যুগের শেষ দিকে ব্রাত্মণ্যধর্ম যাগযজ্ঞ ও আচারসর্বস্ব হয়ে পড়ায় ধর্মাচরণের পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে । উপরন্তু এই ব্যয়বহুল ধর্মাচরণ পদ্ধতির ব্যয় বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে । 

ধর্মাচরণের অধিকার হ্রাস : পরবর্তী বৈদিক যুগে প্রচলিত ব্রাত্মণ্যধর্মে বৈশ্য ও শূদ্র শ্রেণির ধর্মাচরণের অধিকার বিশেষভাবে হ্রাস পায় । নারীরাও বেদ পাঠের অধিকার হারিয়ে ক্ষুদ্ধ হয় । 


কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কৃষি উৎপাদন অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পায় । কিন্তু বৈদিক যাগযজ্ঞে প্রচুর পরিমাণ গাে-বলি শুরু হলে নতুন কৃষি অর্থনীতি সমস্যার সম্মুখীন হয় । এই সময় গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীর ‘জীবে দয়া’ এবং ‘অহিংসা’র বাণী প্রচার করলে কৃষকশ্রেণি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং আচার সর্বস্ব ব্রাত্মণ্য ধর্মব্যবস্থার পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে ওঠে ।

ব্যবসায়ী শ্রেণির উচ্চাকাকাঙ্খা : এই সময় নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বহু নতুন নগর প্রতিষ্ঠিত হয় । ফলে ব্যাবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় । বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে বৈশ্য শ্রেণির আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটে এবং তারা সামাজিক মর্যাদালাভের জন্য ব্রাত্মণ্যবাদের অবসান কামনা করে । 


ব্যয়বহুল আচার অনুষ্ঠান : বৈদিক ব্রাত্মণ্য ধর্ম ছিল আড়ম্বর সর্বস্ব এবং ব্যয়বহুল । ধর্মের প্রধান অঙ্গ ছিল যজ্ঞ। যত্ত পরিচালনার জন্য সাধারণ মানুষকে প্রচুর অর্থ ব্যয়করতে বাধ্য করা হত । তাই তারা নতুন ধর্মে আকৃষ্ট হয় । 


গণরাজ্য প্রতিষ্ঠা : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু গণরাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় । সেই গণরাজ্যগুলিতে মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার সুযােগ এবং উপজাতীয় রীতিনীতির অনুসরণে বর্ণাশ্রমবিহীন সমাজের প্রতিষ্ঠা নব্য ধর্ম আন্দোলনের রাজনৈতিক পটভূমি তৈরি করেছিল । 

নতুন সমাজ স্থাপন : ব্রাত্মণ্যধর্মের রক্ষণশীলতার পরিবর্তে নবগঠিত গণরাজ্যগুলিতে উপজাতীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বর্ণাশ্রম বিহীন নতুন সমাজ স্থাপিত হয় । সেখানে ব্রাত্মণদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন বা বৈদিক রীতি মান্য করা বাধ্যতামূলক ছিল না । 
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা : গণরাজ্যগুলিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশের অবাধ সুযােগ ছিল । এই উদার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মহাবীর বা গৌতম বুদ্ধ ব্রাত্মণ্যবাদের অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে সমাজসংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন ।  


ব্রাত্মণ সম্প্রদায়ের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ : বর্ণবিভক্ত বৈদিক সমাজে ব্রাত্মণের স্থান ছিল সবার ওপরে — সমাজ ও রাষ্ট্রে তারা বহু সুযােগসুবিধার একচেটিয়া অধিকারী ছিল । অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে ব্রাক্ষ্মণদের এই একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিল । 

ব্রাহ্রণ ক্ষত্রিয় দ্বন্দ্ব : যুদ্ধে অংশগ্রহণ , রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা ও প্রশাসন পরিচালনার মতাে গুরুদায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্রাত্মণদের তুলনায় ক্ষত্রিয়দের মর্যাদা ও অধিকার ছিল কম । এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ক্ষত্রিয়দের কাছে ক্রমেই অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে নব্য ধর্ম আন্দোলনে । 
বৈশ্য ও শূদ্রদের ক্ষোভ : সম্পদ সৃষ্টি ও রাষ্ট্রে আর্থসামাজিক দায়দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও বৈদিক সমাজ বা রাষ্ট্র বৈশ্য ও শূদ্রদের কোনােরকম মর্যাদা দেয়নি । এই শ্রেণিবৈষম্য তাদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল । বৌদ্ধ ও জৈন , এই দুই নব্য ধর্মে বর্ণভেদহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থাকায় , বৈশ্য ও শূদ্ররা এই দুই ধর্মের  প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল ।


ব্রাক্ষ্মণ্য সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীজাতির ক্ষোভ : ব্রাত্মণ সমাজে নারীজাতিকে সম্মানের চোখে দেখা হত না । বুদ্ধ ও মহবীর নারীজাতি , এমনকি সমাজচ্যুতা নারীদের মর্যাদা দেওয়ায় তারাও এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় । 

[          ]  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মানুষের মনে বুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটে । এর ফলস্বরূপ এই সময় জন্মান্তরবাদ, কর্মফল প্রভৃতি ধর্মাচরণকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, সব মানুষকেই কর্মফল ভােগ করতে হবে । 

[       ] বৈদিক আর্যদের ভাষা সংস্কৃত হওয়ার জন্য তা সাধারণ মানুষের বােধগম্যের বাইরে ছিল । অন্যদিকে বুদ্ধদেব আঞ্চলিক পালি ভাষায় ধর্মপ্রচার করায় তা সর্বসাধারণের সহজবােধ্য হয় । 


মূল্যায়ণ : ধর্মকে মানুষের জীবনে সহজসরল রূপ দেওয়ার জন্য নব্য ধর্মের উত্থান ঘটে । নব্য ধর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ এক মানবতাবাদী জীবনমুখী ধর্মের অনুসন্ধানে উগ্রীব হয়ে ওঠে । অধ্যাপক এ. এল . ব্যাসামের মতে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে , ‘বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক আলােড়নের মাধ্যমে ভারতের এক মহান ঐতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে ।’







শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

ইউরােপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer ইউরােপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি বা প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করাে europe dhormosongskar andoloner potobhumi ba prekhapot bishleshon koro


উত্তর :  চার্চগুলির দুর্নীতি : মধ্যযুগের ইউরােপে চার্চগুলি ছিল যাবতীয় দুর্নীতির কেন্দ্রস্থল । প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও চার্চগুলিকে কোনােরকম কর দিতে হত না । চার্চের এই বিপুল সম্পদের কারণে যাজকসহ বিভিন্ন পদ ছিল লােভনীয় । অনেকসময় যাজকরা ‘ইনডালজেন্স’ নামে মুক্তিপত্র বিক্রির মাধ্যমেও অর্থ আদায় করতেন । চার্চের এই সমস্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জন্মায় । 
পােপতন্ত্রের ক্ষমতা লিপ্সা : মধ্যযুগে সমগ্র খ্রিস্টান জগতের ধর্মগুরু হওয়ায় ধর্মযাজকরা ধীরে ধীরে রাজার অভিষেক থেকে শুরু করে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন । অনেকসময় যাজক,রাজা নির্মাতার ভূমিকা নিতেন । পােপ ও উচ্চপদস্থ যাজকদের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে রাজা এবং অভিজাত সামন্তরা ক্ষুব্ধ হয় । 

পেপতন্ত্রের অর্থলিপ্সা : পােপরা ধীরে ধীরে অর্থলােভী হয়ে উঠেছিলেন । বিলাসবহুল জীবনযাপন , সুদৃশ্য অট্টালিকা নির্মাণ প্রভৃতির জন্য তাদের প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন হয়ে পড়ে । যাজকদের ওপর ধার্য দুই কর ‘অ্যানেটস’ এবং ‘টেথস’ ছাড়া ‘ফাস্টফ্রুট’,‘টাইথ’ , ‘ইনডালজেন্স’ থেকে পােপদের প্রচুর অর্থ আয় হত । 

জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান : দ্বাদশ শতকে সামন্ততন্ত্রের পতনের পথ প্রস্তুত হলে জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে ।ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ ইউরােপের বেশ কিছু দেশের রাজারা ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন । এইসব জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থান ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করে । 

মুদ্রণযন্ত্রের প্রভাব : মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে নিউ টেস্টামেন্ট , ওল্ড টেস্টামেন্টের সহজ ব্যাখ্যা ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত আছে আর হয় । শিক্ষিত শ্রেণি বুঝতে শুরু করে ধর্মশাস্ত্রে আসলে কী বলা আছে, চার্চ তা থেকে সরে গিয়ে কী বলছে । জি . আর . এলটন তাই বলেছেন, “সাধারণ মানুষের বাইবেলপাঠ নবজাগরণের একটি কারণ ।”


যুক্তিবাদের প্রভাব : নবজাগরণপ্রসূত যুক্তিবাদী ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ পােপ ,যাজকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয় । মানুষ যুক্তিবাদের আলােকে চিন্তা করতে শেখে । প্রচলিত ধ্যানধারণার প্রতি বিশ্বাস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি মানুষের আনুগত কমতে থাকে । 

ক্যাথলিক ও প্রােটেস্ট্যান্ট দ্বন্দ্ব : ক্যাথলিক ধর্মমতের নানা সংস্কার বা রীতিনীতিগুলি বিতর্কের জন্ম দেয় । মেরি ও খ্রিস্টের মূর্তিপূজা , সন্তদের মূর্তি নিয়ে মাতামাতি ,ক্রুশকেন্দ্রিক সংস্কার , দেহ ও রক্ত পরিবর্তন তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় যুক্তিবাদী মানুষেরা মেনে নিতে পারেননি । প্রােটেস্ট্যান্টদের মুক্তিতত্ত্ব সাধারণের মনে চার্চবিরােধী মনােভাব গড়ে তুলেছিল । প্রােটেস্ট্যান্টদের মতে , সৎকর্ম ও আরাধনার মাধ্যমে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । পােপ মানুষকে মুক্তি দিতে পারেন না । 

পণ্ডিত ও মানবতাবাদীদের সমালােচনামূলক ভূমিকা : ইংল্যান্ডের জন ওয়াইক্লিফ , বােহেমিয়ার জন হাস , ফ্রান্সের পিটার ওয়ালভাে , ইটালির জিওলামাে সাভােনারােলা ,হল্যান্ডের ডেসিডােরিয়াস এরাসমাস প্রমুখ মানবতাবাদীগণ চার্চ ও পােপতন্ত্রের বিভিন্ন দুর্নীতির সমালােচনা করে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন ।







শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

ইউরােপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer ইউরােপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলােচনা করাে europer dhormosongskar andolone martin lutharer abodan alochona koro


উত্তর : ইনডালজেন্সের বিরােধিতা : ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে যাজক টেটজেল সেন্ট পিটার্স চার্চ সংস্কারের অজুহাতে জার্মানির স্যাক্সনিতে যান । সেখানে তিনি পাপমুক্তির ছাড়পত্র হিসেবে ইনডালজেন্স বা মার্জনাপত্র বিক্রি করতে শুরু করেন । মার্টিন লুথার এই মার্জনাপত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । 

লুথারের ৯৫ থিসিস : লুথার ইনডালজেন্স বা মার্জনাপত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে উইটেনবার্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় তার লিখিত প্রতিবাদপত্র ‘পঁচানব্বই থিসিস’ আটকে দেন । তার এই লিখিত প্রতিবাদের মধ্যে দিয়েই কলুষিত পােপতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জেহাদ ঘােষিত হয় । 

খ্রিস্টধর্যের আদর্শের পুনরুজ্জীবনে প্রচেষ্টা : মার্টিন লুথার খ্রিস্টধর্মাদর্শের পুনরুজ্জীবন ঘটান । লুথার বলেন যে ,ভগবান হলেন সর্বশক্তিমান এবং তার ইচ্ছাতেই পৃথিবীতে সবকিছু ঘটে চলেছে । লুথারের মতে , সমস্ত মানুষের ভাগ্যই পূর্বনির্ধারিত এবং যে কোনাে মানুষ মঙ্গলময় ঈশ্বরের করুণা বা ‘Gratia’ লাভের অধিকারী । 


অপ্রয়ােজনীয় আচার অনুষ্ঠানের বিরােধিতা : লুথার ক্যাথলিকধর্মের অধিকাংশ আচার অনুষ্ঠানকেই অপ্রয়ােজনীয় বলে মনে করতেন । খ্রিস্টের শেষ নৈশভােজের স্মরণে খাদ্যরূপে রুটি ও মদ গ্রহণ রীতি , খ্রিস্টধর্মের আনুষ্ঠানিক দীক্ষাগ্রহণ , দোষী ব্যক্তিকে পাদরি কর্তৃক শাস্তি প্রদান  এবং অর্থের বিনিময়ে পাপমুক্তি ক্রয় প্রভৃতি অপ্রয়োজনীয় আচার অনুষ্ঠানের বিরােধিতা করেন লুথার ।  

প্রতিবাদী খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠা : লুথারের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে খ্রিস্টানগণ দুটি সম্প্রদায়ে ভাগ হয়ে যান । পােপতন্ত্রের অনুগামী বা সমর্থকগণ ক্যাথলিক এবং পােপ বিরুদ্ধকারী তথা লুথারের সমর্থনকারীগণ প্রােটেস্ট্যান্ট বা প্রতিবাদী নামে পরিচিতি পান । 


রাষ্ট্রশক্তির সুদৃঢ়করণ : লুথার বলেন যে, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায়ের প্রতিকার করার দায়িত্ব শাসকের । তাই পােপ বা যাজক নয় , শাসক ও তাঁর কর্মচারীরাই হলেন পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি । লুথারের এই মত ইউরােপে রাজতন্ত্র ও জাতীয় রাষ্ট্রগুলিকে শক্তিশালী করে ।


পােপের কাছে প্রতিবাদ : খ্রিস্টধর্মের এবং চার্চের বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে লুথার বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু প্রতিবাদী বক্তৃতা করেন এবং রােমে গিয়ে পােপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । যাবতীয় ধর্মীয় অনাচার ও দুর্নীতি দূর করার জন্য তিনি পােপকে অনুরােধ জানান । কিন্তু পােপ তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি । 

বাইবেলের অনুবাদে উৎসাহদান : লুথারবাদীরা মনে করতেন যে ,জ্ঞান ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য শাস্ত্র পড়া প্রয়ােজন । এই লক্ষেই নিজ নিজ ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ প্রয়ােজন । লুথার এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়ে বাইবেলের অনুবাদে উৎসাহ জোগান ।  


লিখিত প্রতিবাদ : লুথার অজস্র গ্রন্থ ও পুস্তিকা রচনার মধ্য দিয়ে চার্চতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন । তিনি তার ‘বন্ডেজ অব দ্য উইল’ প্রবন্ধে লেখেন , ‘মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছার দাস ,শুধু কাজের দ্বারা সে তার নিজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে না ।’ ‘বাবিলনিয়ান ক্যাপটিভিটি’ গ্রন্থে লুথার বলেন যে, জার্মান জাতির চার্চ পোপতন্ত্রের অধীনতা থেকে মুক্ত হতে চায় । ‘রেজোলিউশান’ গ্রন্থে লুথার পােপের ক্ষমতাকে অস্বীকার করেন । 


ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রসার : মার্টিন লুথার সর্বপ্রথম জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা ঘটান । পরবর্তীকালে এই ধর্মসংস্কার আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়ে মধ্য,পূর্ব এবং পশ্চিমা  ইউরােপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ।
মূল্যায়ন : একজন দুঃসাহসী ধর্মসংস্কারক হিসেবে মার্টিন লুথার চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন । তিনিই প্রথম ষোড়শ শতকে পােপতন্ত্র এবং চার্চতন্ত্রের যাবতীয় অনাচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন । গেরহার্ড তাই বলেছেন যে, “এই ধর্মবিপ্লবের সাফল্যের জন্য লুথারের প্রচারশক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।”



বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

ক্রুসেডের কারণগুলি আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer ক্রুসেডের কারণগুলি আলােচনা করাে cruseder karonguli alochona koro

উত্তর : i) রােমান চার্চের হৃতগৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠা : ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক ( বা পূর্ব ইউরােপীয় ) চার্চের সঙ্গে রােমান চার্চেরসম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল । ঐক্য পােপ দ্বিতীয় আরবান রােমান চার্চের হৃত গৌরব ও ক্ষমতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন । তিনি ভেবেছিলেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড আন্দোলনে জয়ী হলে খ্রিস্টানদের ওপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হবে ।   
ii) খ্রিস্টানদের প্রচেষ্ট : জিশুখ্রিস্টের জন্মভূমি প্যালেস্টাইনের অন্তর্গত জেরুজালেম ছিল খ্রিস্টানদের পবিত্র তীর্থস্থান । ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেমের দখল নেয় ।খ্রিস্টান যাজক , অভিজাত এবং রাজাগণ সংঘবদ্ধ হন ও খ্রিস । সেলজুক তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেন ।


iii) মুসলিমদের প্রচেষ্টা : আবার মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম হজরত মহম্মদ ( সাঃ), হজরত মুসা ও হজরত দাউদের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্রভূমি । তাই মুসলিমরাও জেরুজালেমের পবিত্রতা রক্ষায় উদ্যত হলে ক্রুসেডের  প্রেক্ষাপট রচিত হয় ।  



[        ] রাজনৈতিক কারণ –

i) ইসলামের অগ্রগতি রােধ : হজরত ওমরের আমল থেকে, রাজ্যবিজয় ও ধর্মপ্রচারের মধ্য দিয়ে ইসলামের সম্প্রসারণ শুরু হয় । রােমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত মিশর , সিরিয়া, স্পেন , উত্তর আফ্রিকা , দক্ষিণ ইটালি , সিসিলিসহ সমগ্র পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞল মুসলমানদের অধিকারে আসে । খ্রিস্টানরা ইসলামের এই অগ্রগতি রােধে সচেষ্ট হয় । 

ii) দক্ষতা প্রদর্শনের আকাক্ষা : অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়কালে ফ্রাঙ্করাজ চালর্স মার্টেল আরবদের আক্রমণ রােধের লক্ষ্যে এক সুনিপুণ যােদ্ধাবাহিনী গড়ে তােলেন । খ্রিস্টধর্মের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একটা সুযােগ পাওয়ার জন্য তারা ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করে । 
[         ] অর্থনৈতিক কারণ –

i) সামন্তপ্রথার বিস্তার : একাদশ শতকে ইউরােপের সামন্তপ্রভুরা প্রাচ্যে ভূখণ্ড দখল করে সামন্তপ্রথার বিস্তারে উদ্যোগী হন । তারা সেখানে সামন্তপ্রথা প্রবর্তন ও পরাজিতদের শােষণের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্রুসেডে যােগ দেন । 


ii) অভিজাতদের লােভ : যে সমস্ত অভিজাতের ম্যানরের আয় কমে গিয়েছিল ,তারা এবং লােভী অভিজাতরা লুঠতরাজের মাধ্যমে ধন উপার্জনের লক্ষ্যে ধর্মযুদ্ধে যােগ দিয়েছিল । 

  

বাণিজ্যিক স্বার্থ : পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ব্যাবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান বণিকগণ কোণঠাসা হয়ে পড়ে । একাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পরিস্থিতি বদলায় । নর্মানরা মুসলমানদের কাছ থেকে সিসিলি কেড়ে নেয় এবং খ্রিস্টান শক্তি স্পেন অধিকার করে । ইটালির বণিকরা প্রাচ্য দেশগুলির সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তােলে । এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের টানাপােড়েনে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট রচিত হয় । 

[         ] সামাজিক কারণ –


i) ভূমিদাসদের মুক্তির আকাক্ষা : ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করলে ভূমিদাসদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার ও ঋণগ্রহণকারীদের সুদের হার কমানাের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় । তাই ক্রুসেডে যােগ দিয়ে ভূমিদাসত্ব থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল হাজার হাজার সার্ফ বা ভূমিদাস । 

ii) জনসংখ্যার আধিক্য : মধ্যযুগে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুপাতে জমির পরিমাণ বাড়েনি । ফলে জমির ওপর নির্ভরশীলদের একাংশ নতুন ভূখণ্ডে শান্তিতে বসবাসের লক্ষ্যে ক্রুসেডের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করে । 

iii) তীর্থযাত্রীদের ক্ষোভ : একাদশ শতকে জেরুজালেম সেলজুক তুর্কিদের অধিকৃত হওয়ার পরও বহু খ্রিস্টান তীর্থযাত্রী জেরুজালেম ভ্রমণে আসতে থাকেন । তীর্থযাত্রাকালীন তাদের অনেকেই দস্যুদের কবলে পড়েন ও আক্রান্ত হন । ফলে খ্রিস্টানগণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে দারুণ ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে । 

উপসংহার : বিভিন্ন কারণে ক্রুসেড সংঘটিত হলেও ধর্মীয় প্রসার ছিল এর প্রধান লক্ষ্য । এর চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবেই সুদীর্ঘকাল ইউরােপে অশান্তি চলে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও সম্পদহানি ঘটে ।





বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২

মধ্য প্রস্তর যুগের উপর একটি বিবরণ দাও ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer মধ্য প্রস্তর যুগের উপর একটি বিবরণ দাও modhey prostor juger upor akti biborno dao

উত্তর : মধ্য প্রস্তর যুগের সময়সীমা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম । তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে , খ্রিস্টপূর্ব ১৫,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ অব্দ পর্যন্ত ছিল এই যুগের সময়সীমা । 

[       ] হাতিয়ার : এ যুগের হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ারের চেয়ে উন্নত । 

i) আকার : পাথরের ‘ফ্লেক ’ থেকে নির্মিত এই পর্যায়ের হাতিয়ারগুলি ছিল আকারে ক্ষুদ্র ।বেশিরভাগ হাতিয়ারের দৈর্ঘ্য ৫ সেন্টিমিটারের বেশি হত না । 

ii) বিশেষত্ব : হাতিয়ারগুলির সাথে কোনাে দন্ড জাতীয় বস্তুকে জুড়ে বা গেঁথে নিতে হত । অর্থাৎ এযুগের হাতিয়ারগুলির বেশিরভাগই ছিল মিশ্র আয়ুধ । 

iii) উপাদান : হাতিয়ারগুলি তৈরি হত মূলত কোয়ার্টজ , চার্ট,অ্যাজেট , ক্যালসেডনি জাতীয় পাথর , জীবজন্তুর হাড় প্রভৃতি দিয়ে 


iv) উল্লেখযােগ্য হাতিয়ার : এ যুগের উল্লেখযােগ্য হাতিয়ারগুলির  মধ্যে ছিল ধারালাে ছুরি, ব্লেড, তিরের ফলা , বর্শা,হারপুন প্রভৃতি।

[      ] যাতায়াত ব্যবস্থা : এ যুগের মানুষ স্থলপথে বরফের ওপর দিয়ে চলার জন্য কুকুরে টানা স্লেজগাড়ি ব্যবহার করত । জলপথে যাতায়াতের জন্য তারা ব্যবহার করত গাছের গুঁড়ি থেকে বানানাে নৌকা । 


[        ] জীবিকা ও অর্থনীতি : পশুপাখি শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ ছিল এ যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা । তারা কুঁজওয়ালা ষাঁড়, মহিষ , ভেড়া , ছাগল ,লাল হরিণ , বনবিড়াল শূকর , , গণ্ডার, হাতি ,কচ্ছপ , নেউল , বিভিন্ন পাখি প্রভৃতি শিকার করত । এছাড়া তারা নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ ও শামুক সংগ্রহ করত এবং পশুপালন করত । এ যুগে কুকুর , গবাদিপশু , শূকর , মহিষ , ভেড়াকে পালন করা শুরু হয় । এ যুগের শেষের দিকে কৃষিকাজের সূত্রপাতও ঘটেছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন ।মধ্য প্রস্তর যুগে শিকার ও পশুপালন নির্ভর এক মিশ্র আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ।  
[          ] মানবদেহের গড়ন : এ যুগের মানুষের দেহের গড়ন ছিল বেশ বলিষ্ঠ । নারী ও পুরুষ লম্বায় ছিল যথাক্রমে ১৭০ ও ১৮০ সেমি । তবে পশুর আক্রমণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের অল্প বয়সে প্রাণ হারাতে হত ।  



[         ] ধর্মবিশ্বাস : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ বিশ্বাস করত যে , মৃত্যুর পরেও জীবন থাকে । তাই তারা ধর্মীয় আচার -অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃত মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করত । 


[        ] শিল্পকর্ম : মধ্য প্রস্তরযুগের মানুষের শিল্পের মধ্যে ছিল মৃৎশিল্প এবং চিত্রকলা । 
i) মৃৎশিল্প : এই সময় কুমােরের চাকা আবিষ্কৃত না হওয়ায় হাতে করেই টিপে টিপে মাটির জিনিসপত্র তৈরি হত । 

ii) চিত্রশিল্প : এই সময়ে গুহাচিত্রের প্রসার ঘটে । গুহার গায়ে নানা ধরনের জ্যামিতিক চিত্র আঁকা হত । সুইডেন , রাশিয়া, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশের গুহায় মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের আঁকা পশুর চিত্র পাওয়া গেছে । 


উপসংহার : প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্তর্ভুক্ত মধ্য প্রস্তর যুগ ছিল এমন একটি পর্যায় যখন মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগ পেরিয়ে এসে নব্য প্রস্তর যুগের দিকে যাত্রা করেছে । এই সময়কার মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে সেই যুগলক্ষণই ফুটে ওঠে । 






মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১

রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ পর্যালোচনা করো প্রশ্নোত্তর

 

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস history class xi 11 eleven রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ পর্যালোচনা করো প্রশ্নোত্তর rajput jatir utpotti songkranto motobad porjalochona koro questions answer


সূচনা : রাজপুত জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক গবেষকদের মধ্যে তীব্র মত পার্থক্য আছে যেমন 

১। রাজপুতদের দাবি : রাজপুতরা দাবী করেন যে , তাঁরা বৈদিক যুগের উচ্চবংশীয় ক্ষত্রিয়দের বংশধর । হর্ষবধনের সভাকবি বান ভট্টের মতে, রাজপুতরা ছিলেন সূর্য বা চন্দ্রের বংশ জাত ।


২। অগ্নিকুল তত্ত্ব : কবি চাঁদ বরদাই তাঁর বিখ্যাত কাব্য ‘ পৃথ্বীরাজ রাসো ’ গ্রন্থে বলেছেন যে বলিষ্ঠ মুনি মাউন্ট আবু পাহাড়ে ২৪ দিন ধরে যজ্ঞ করে বীরের প্রাথনা করেছিলেন । বলিষ্ঠ মুনির এই যজ্ঞের আগুন থেকেই রাজপুত জাতির উৎপত্তি হয়েছে বলে চাঁদ বরদাই উল্লেখ করেছেন ।


৩। জায়গীদারদের অবৈধ সন্তান : ড: ভিনসেন্ট স্মিথ এর মতে , রাজস্থানের অভিজাত ক্ষত্রিয় জায়গীদারদের অবৈধ সন্তান বলে উল্লেখ করেছেন । 

৪। কর্নেল টডের মত : ব্রিটিশ ঐতিহাসিক কর্নেল টর্ড তাঁর ‘ Annals and Antiquities of Rajasthan ’গ্রন্থে বলেছেন যে , শক , হুন , কুষাণ , গুজর প্রভৃতি বৈদেশিক জাতি ভারতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে , এদের সন্তান সন্ততিদের রাজপুত বলা হয় ।


৫। উইলিয়াম কুকের মত : রাজপুত গণ নিজেদের বৈদিক যুগের ক্ষত্রিয়দের বংশধর রূপে প্রমাণ করার জন্য রাজপুতদের মধ্যে দুটি বিখ্যাত পরিবারের সঙ্গে সূর্য ও চন্দ্রকে যুক্ত করেছিল ।


৬। বৈদেশিক জাতি নয় : ঐতিহাসিক গৌরীশঙ্কর হীরাচাঁদ ওঝা তাঁর ‘ ’ গ্রন্থে বলেছেন যে , রাজপুতরা কোনো বৈদেশিক জাতির অংশ নয় । রাজপুতরা হল খাঁটি আর্য জাতির সন্তান ।

৭। মিশ্র জাতি : ড: ভিনসেন্ট স্মিথের মতে , রাজপুত গণ একটি মিশ্র জাতি । তিনি রাজপুতদের আর্য জাতির বংশধর বলে মনে করেন না । কিন্তু সংখ্যক রাজপুত বিদেশী হুন , শক ও কুষানদের বংশধর আর ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ।


৮। বৃত্তিভিত্তিক গোষ্ঠী : ক্ষত্রিয় বা রাজপুত গণ ছিল একই বৃত্তিতে নিযুক্ত একটি গোষ্ঠী যারা শাসন ব্যাবস্থা ও যুদ্ধ পরিচালনা করত । ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও লোকদের নিয়ে রাজপুত জাতির উদ্ভব হয় ।

[        ] সামগ্রিক ভাবে বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে , ভারতের শাসক ও যোদ্ধা গোষ্ঠী সম্মিলিত ভাবে ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত ছিল কোথাও তাদের রাজপুত বলা হয়নি । উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও বর্ন থেকে উদ্ভুত রাজপুত গণ বৃত্তি হিসাবে যুদ্ধ কে গ্রহণ করার ফলে ক্ষত্রিয় বর্ণের মধ্যে স্থান লাভ করেছে । যদিও তা বিতর্কের উল্লেখ নয় ।


 

সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলী পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর

 

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস history class xi 11 eleven প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলী পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর prachin mishore nefartiti cliopetrar karjaboli porichoy dao questions answer

উত্তর :-

নেফারতিতি : নেফারতিতি প্রাচীণ মিশরের অন্যতম খ্যাতনামা মহিলা ছিলেন । তিনি ছিলেন খিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের মিশরীয় ফ্যারাও আখেনাটেন বা চতুর্থ আমেন হোটেপের অন্যতম প্রধান পত্নী । তিনি মিশরের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছিলেন ।


              নেফারতিতির কার্যাবলী 


প্রশাসনে অংশগ্রহণ : মিশরের প্রশাসন , রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেফারতিতি তাঁর স্বামীর সহকারী হিসাবে যথেষ্ঠ দায়িত্ববান ছিলেন । যা সমকালীন মিশরের রাজনীতিতে যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলেছিল । তিনি ১৩৫৩ খিষ্টপূর্ব থেকে ১৩৩৬ খ্রি: পূর্ব্বাদ পর্যন্ত ফ্যারাও আখেনাটেনের সহকারী হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন ।

শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : ধর্মীয় ক্ষেত্রে একেশ্বর বাদী ধর্মীয় ভাবনার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে মিশরে প্রাচীনকালে ফ্যারাও আখেনাটেনের সময় যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল নেফারতিতি সেই অবস্থা থেকে মিশরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন ।


রাষ্ট্রীয় নীতি নিধারণ : প্রশাসনে নেফারতিতি স্বামীর সঙ্গে সহাবস্থান করে মিশরের ধর্মীয় জীবন , রীতিনীতি , রাজকীয় পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন । প্রাচীন মিশরে রাষ্ট্রীয় নীতি নিধারন ছাড়াও তিনি আখেন , থিবসসহ বিভিন্ন নগরে বহু মন্দির নির্মাণ করেন । এছাড়া নেফারতিতির একটি অনন্য কৃতিত্ব ছিল আখেণ নগরীতে রাজধানী স্থানান্তরে তিনি অন্যতম দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।

রহস্যময় অন্তধান : স্বামী আখেনাটেনের সঙ্গে সহকারী হিসাবে শাসন করলেও আখেনাটেনের রাজত্বের দ্বাদশ বর্ষে ইতিহাস থেকে নেফারতিতির নাম অদৃশ্য হয়ে যায় । এই সময় তাঁর মৃত্যু হয় নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটে , তা সঠিকভাবে জানা যায় না । অনেকে মনে করেন যে , ১৩৩৬ খ্রীষ্ট পূর্বাবদে স্বামীর মৃত্যুর পর নেফারতিতি স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করেছিলেন ।


উপসংহার : নেফারতিতি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী । তিনি ফ্যারাও আখেনাটেনকে সর্বদা তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতেন , মিশরের ঐতিহাসিক উপাদানে নেফারতিতির মূর্তি এবং চিত্র তাঁর স্বামী আখেনাটেনের চেয়ে বেশী সংখ্যায় পাওয়া যায় । এ থেকেই মিশরীয় প্রশাসনে তাঁর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে । 


ক্লিওপেট্রা: মিশরের ইতিহাসে যে ক্লিওপেট্রার নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ । তিনি হলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা । ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে গ্রিসে জন্ম গ্রহণ করেন , দ্বাদশ টলেমির কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমতী এবং উচ্চশিক্ষিতা নারী ।



সিংহাসন লাভ : সুন্দরী অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথম দিকে তাঁর পিতার সহ্য শাসন হিসাবে শাসন করলেও পিতার মৃত্যুর পর তাঁর চেয়ে বয়সে আট বছরের ছোটো ভাই এয়োদশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন । এর কারণ হল , মিশরের প্রচলিত রীতি ছিল কোনো সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে দেশ শাসন করতে হবে ।

শাসন ক্ষমতা দখল :  ৪৩ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে  ক্লিওপেট্রা নিজ ভাই ও তাঁর স্বামী চতুর্দশ টলেমি কে হত্যা করে জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত সন্তান সীজারিয়ানকে সিংহাসনে বসিয়ে মিশরে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন । 


অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে সম্পূর্ন পারাজয় : ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনির মিলিত বাহিনী শীঘ্রই অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে রোমান শাসক অক্টাভিয়াস সিজারের মুখোমুখি হয় । ক্লিওপেট্রা অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে সৈন্যদল নিয়ে পিছনে এলে অ্যান্টনি ও সেনাদলকে ফেলে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেন । ফলে রোমান শাসক অক্টাভিয়াসের বাহিনী যুদ্ধে চূড়ান্ত ভাবে জয়লাভ করে এর ফলে মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হয় এবং মিশর সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় ।

উপসংহার : এরপর অক্টাভিয়াস সিজার রানী ক্লিওপেট্রার দুই সন্তান কে হত্যা করেন এবং ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করতে চান । কিন্তু ক্লিওপেট্রা এই বিবাহে অসম্মত হন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন । তিনি ৩০ খ্রি:পুর্বাব্দের ১২ আগস্ট স্বেচ্ছায় অ্যাম্প বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মাত্র ৩১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন ।

রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

রাজনৈতিক বিবর্তন MCQ প্রশ্ন উত্তর [ তৃতীয় অধ্যায় ]

একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস রাজনৈতিক বিবর্তন MCQ প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্নোত্তর class xi 11 eleven history rajnoitik biborton mcq questions answer


১। " রিপাবলিক " গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ?


ক) হেসিয়ড


খ) হোমার


গ) এরিস্টটল


ঘ) প্লেটো


উত্তর:- ঘ) প্লেটো

২। স্পাটার সমাজে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত ছিল ?


ক) হেলট


খ) পেরিওসি


গ) স্পাটান


ঘ) মেটিক


উত্তর:- গ) স্পাটান


৩। অ্যাথেন্সের শাসন কাঠামো ছিল ?


ক) রাজতান্ত্রিক


খ) প্রজাতান্ত্রিক


গ) অভিজ্ঞাত তান্ত্রিক


ঘ) গণতান্ত্রিক


উত্তর:- ঘ) গণতান্ত্রিক



৪। প্লেটোর মতে , একটি আদর্শ পলিশের জন সংখ্যা হওয়া উচিত ?


ক) ৮ হাজার 


খ) ৫ হাজার 


গ) ১০ হাজার


ঘ) ২০ হাজার


উত্তর:- খ) ৫ হাজার


৫। পলিশের মূল কেন্দ্র ছিল ?


ক) আক্রপলিস


খ) আগোরা


গ) কাউন্সিল


ঘ) বুলে


উত্তর:- ক) আক্রপলিস

৬। প্রাচীন অ্যাথেন্সের আদালত কে বলা হত ?


ক) ইফোর


খ) গেরুসিয়া


গ) হেলাইয়া


ঘ) আরকন


উত্তর:- গ) হেলাইয়া


৭। রামায়ণে কয়টি জন পদের উল্লেখ আছে ?


ক) ১৬ টি


খ) ১৮ টি


গ) ২৫ টি


ঘ) ২৭ টি


উত্তর:- ঘ) ২৭ টি


৮। আর্যাবর্তের ১৬ টি মহাজন পদের নাম পাওয়া যায় ?


ক) অঙ্গুও রণিকায়


খ) মহাভারতে


গ) চারিতাভিযানে 


ঘ) বেদে


উত্তর:- ক) অঙ্গুও রণিকায়


৯। মহাজন পদ গুলির মধ্যে অধিকাংশই ছিল ?


ক) গণতান্ত্রিক


খ) প্রজাতান্ত্রিক


গ) সৈরতান্ত্রিক


ঘ) রাজতান্ত্রিক


উত্তর:-ঘ) রাজতান্ত্রিক


১০। ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট হলেন ?


ক) বিম্বিসার


খ) অজাতশত্রু


গ) চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য


ঘ) অশোক


উত্তর:-গ) চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য

১১। প্রাচীন যুগে ভারতে সর্ব প্রথম যে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় তা হল ?


ক) মৌর্য সাম্রাজ্যে


খ) কুষাণ সাম্রাজ্যে


গ) গুপ্ত সাম্রাজ্যে


ঘ) পাল সাম্রাজ্যে


উত্তর:-ক) মৌর্য সাম্রাজ্যে


১২। উত্তর ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক রাজা হলেন ?


ক) বিম্বিসার


খ) অজাতশত্রু


গ) মহাপদ্ম নন্দ 


ঘ) চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য


উত্তর:-গ) মহাপদ্ম নন্দ



১৩। সুপ্রাচীন রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিলেন ?


ক) ৭৫৩ খ্রিস্ট : পূর :


খ) ৩২৩ খ্রিস্ট : পূর :


গ) ২৪৩ খ্রিস্ট : পূর :


ঘ) ১৪৫ খ্রিস্ট : পূর :


উত্তর:-ক) ৭৫৩ খ্রিস্ট : পূর :


১৪। অশোক যেসব ধর্ম দূত পাঠিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ?


ক) সংঘমিতা


খ) রক্ষিত


গ) ধর্মরক্ষিত


ঘ) মহারক্ষিত


উত্তর:-ক) সংঘমিতা


১৫। মেঘাস্থিনিস ছিলেন ?


ক) আলেকজান্ডারের দূত


খ) পুরুর  দূত


গ) সিজারের দূত


ঘ) সেলুকাসের দূত


উত্তর:-ঘ) সেলুকাসের দূত

১৬। " ভারতের নেপোলিয়ন " নামে কে পরিচিত ছিলেন ?


ক) চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য


খ) অশোক


গ) স্কন্দ গুপ্ত


ঘ) সমুদ্র গুপ্ত


উত্তর:-ঘ) সমুদ্র গুপ্ত


১৭। এলাহাবাদ প্রশস্তি রচনা করেন ?


ক) সমুদ্র গুপ্ত


খ) বিরসেন


গ) হরিষেন


ঘ) রুদ্র দমন 


উত্তর:-গ) হরিষেন


১৮। রোমান সাম্রাজ্য প্রথম দাস বিদ্রোহ ঘটে ?


ক) সিসিলিতে


খ) রোমে


গ) গ্রিসে


ঘ) পারস্য


উত্তর:-ক) সিসিলিতে


১৯। আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছিলেন ?


ক) বৈদিক যুগের বিজ্ঞানী 


খ) মৌর্য যুগের বিজ্ঞানী 


গ) গুপ্ত যুগের বিজ্ঞানী 


ঘ) কুষাণ যুগের বিজ্ঞানী 


উত্তর:-গ) গুপ্ত যুগের বিজ্ঞানী 


২০। অটোমান শাসকদের বলা হত ?


ক) সুলতান 


খ) খলিফা 


গ) জার


ঘ) নিজাম 


উত্তর:-ক) সুলতান 

২১। হিন্ধুস্থানের তোতাপাখি নামে পরিচিত ?


ক) আবুল ফজল


খ) আমির খসরু


গ) জিয়াউদ্দিন বারণি


ঘ) তানসেন


উত্তর:-খ) আমির খসরু


২২। পানি পথের প্রথম যুদ্ধ হয় ?


ক) ১৫২৬ খ্রিস্ট :


খ) ১৫৫৬ খ্রিস্ট :


গ) ১৭৬১ খ্রিস্ট :


ঘ) ১৮৭৬ খ্রিস্ট :


উত্তর:-ক) ১৫২৬ খ্রিস্ট :