সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলী পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর

 

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস history class xi 11 eleven প্রাচীন মিশরে নেফারতিতি ও ক্লিওপেট্রার কার্যাবলী পরিচয় দাও প্রশ্নোত্তর prachin mishore nefartiti cliopetrar karjaboli porichoy dao questions answer

উত্তর :-

নেফারতিতি : নেফারতিতি প্রাচীণ মিশরের অন্যতম খ্যাতনামা মহিলা ছিলেন । তিনি ছিলেন খিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের মিশরীয় ফ্যারাও আখেনাটেন বা চতুর্থ আমেন হোটেপের অন্যতম প্রধান পত্নী । তিনি মিশরের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছিলেন ।


              নেফারতিতির কার্যাবলী 


প্রশাসনে অংশগ্রহণ : মিশরের প্রশাসন , রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেফারতিতি তাঁর স্বামীর সহকারী হিসাবে যথেষ্ঠ দায়িত্ববান ছিলেন । যা সমকালীন মিশরের রাজনীতিতে যথেষ্ঠ প্রভাব ফেলেছিল । তিনি ১৩৫৩ খিষ্টপূর্ব থেকে ১৩৩৬ খ্রি: পূর্ব্বাদ পর্যন্ত ফ্যারাও আখেনাটেনের সহকারী হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন ।

শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : ধর্মীয় ক্ষেত্রে একেশ্বর বাদী ধর্মীয় ভাবনার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে মিশরে প্রাচীনকালে ফ্যারাও আখেনাটেনের সময় যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল নেফারতিতি সেই অবস্থা থেকে মিশরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন ।


রাষ্ট্রীয় নীতি নিধারণ : প্রশাসনে নেফারতিতি স্বামীর সঙ্গে সহাবস্থান করে মিশরের ধর্মীয় জীবন , রীতিনীতি , রাজকীয় পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন । প্রাচীন মিশরে রাষ্ট্রীয় নীতি নিধারন ছাড়াও তিনি আখেন , থিবসসহ বিভিন্ন নগরে বহু মন্দির নির্মাণ করেন । এছাড়া নেফারতিতির একটি অনন্য কৃতিত্ব ছিল আখেণ নগরীতে রাজধানী স্থানান্তরে তিনি অন্যতম দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।

রহস্যময় অন্তধান : স্বামী আখেনাটেনের সঙ্গে সহকারী হিসাবে শাসন করলেও আখেনাটেনের রাজত্বের দ্বাদশ বর্ষে ইতিহাস থেকে নেফারতিতির নাম অদৃশ্য হয়ে যায় । এই সময় তাঁর মৃত্যু হয় নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটে , তা সঠিকভাবে জানা যায় না । অনেকে মনে করেন যে , ১৩৩৬ খ্রীষ্ট পূর্বাবদে স্বামীর মৃত্যুর পর নেফারতিতি স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালনা করেছিলেন ।


উপসংহার : নেফারতিতি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী । তিনি ফ্যারাও আখেনাটেনকে সর্বদা তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতেন , মিশরের ঐতিহাসিক উপাদানে নেফারতিতির মূর্তি এবং চিত্র তাঁর স্বামী আখেনাটেনের চেয়ে বেশী সংখ্যায় পাওয়া যায় । এ থেকেই মিশরীয় প্রশাসনে তাঁর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে । 


ক্লিওপেট্রা: মিশরের ইতিহাসে যে ক্লিওপেট্রার নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ । তিনি হলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা । ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে গ্রিসে জন্ম গ্রহণ করেন , দ্বাদশ টলেমির কন্যা ক্লিওপেট্রা ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমতী এবং উচ্চশিক্ষিতা নারী ।



সিংহাসন লাভ : সুন্দরী অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথম দিকে তাঁর পিতার সহ্য শাসন হিসাবে শাসন করলেও পিতার মৃত্যুর পর তাঁর চেয়ে বয়সে আট বছরের ছোটো ভাই এয়োদশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন । এর কারণ হল , মিশরের প্রচলিত রীতি ছিল কোনো সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে দেশ শাসন করতে হবে ।

শাসন ক্ষমতা দখল :  ৪৩ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে  ক্লিওপেট্রা নিজ ভাই ও তাঁর স্বামী চতুর্দশ টলেমি কে হত্যা করে জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত সন্তান সীজারিয়ানকে সিংহাসনে বসিয়ে মিশরে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন । 


অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে সম্পূর্ন পারাজয় : ক্লিওপেট্রা ও অ্যান্টনির মিলিত বাহিনী শীঘ্রই অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে রোমান শাসক অক্টাভিয়াস সিজারের মুখোমুখি হয় । ক্লিওপেট্রা অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে সৈন্যদল নিয়ে পিছনে এলে অ্যান্টনি ও সেনাদলকে ফেলে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেন । ফলে রোমান শাসক অক্টাভিয়াসের বাহিনী যুদ্ধে চূড়ান্ত ভাবে জয়লাভ করে এর ফলে মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হয় এবং মিশর সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় ।

উপসংহার : এরপর অক্টাভিয়াস সিজার রানী ক্লিওপেট্রার দুই সন্তান কে হত্যা করেন এবং ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করতে চান । কিন্তু ক্লিওপেট্রা এই বিবাহে অসম্মত হন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন । তিনি ৩০ খ্রি:পুর্বাব্দের ১২ আগস্ট স্বেচ্ছায় অ্যাম্প বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মাত্র ৩১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন