শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘দুর্লক্ষণ’ শব্দের অর্থ কী ? কে , কাকে তাদের ‘দুর্লক্ষণ’ বলে মনে করেছেন ও কেন ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer দুর্লক্ষণ শব্দের অর্থ কী কে কাকে তাদের দুর্লক্ষণ বলে মনে করেছেন ও কেন ke kake tader durlokhon bole mone korechen o keno

উত্তর : ‘দুর্লক্ষণ’ শব্দের অর্থ হল ‘অশুভ চিহ্ন',‘দুগ্রহ’ । 

[         ] বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ গুরু ' নাটকের অন্যতম চরিত্র উপাচার্য সূতসােম অচলায়তনের শিক্ষার্থী পঞককে তাঁদের অচলায়তন প্রতিষ্ঠানের ‘অশুভ লক্ষণ‘ ‘দুর্লক্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন । 


[         ] পঞককে অচলায়তনের ‘ দুর্লক্ষণ ’ বলার কারণ হল পঞক অচলায়তনের আয়তনিকদের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র । অচলায়তনের রুদ্ধ ও দম বন্ধ করা নিষ্প্রাণ পরিবেশে সে যেন মূর্তিমান বিদ্রোহ । আচার - অনুষ্ঠানসর্বস্ব অন্ধ সংস্কারের মায়াজালে তার যুক্তিবাদী মন বাঁধা থাকতে নারাজ । শুষ্ক কঠিন জ্ঞানচর্চার পরিবেশে , নিস্প্রান যান্ত্রিকতার গতানুগতিক জীবনাচরণে সে যেন প্রাণের বন্যা । সে যেন এক দুরন্ত ঝােড়াে হাওয়া । সে যেন মুক্ত প্রাণের স্পন্দন । সত্যের সন্ধানী । সুদূরের পিয়াসী । অচলায়তনের কঠিন পাষাণ প্রাচীর তাকে বেঁধে রাখতে অক্ষম । বাইরের পরিবেশ ও মানুষজনের সঙ্গে তার অবাধ মেলামেশা । মন্ত্রতন্ত্র জপতপ তার কাছে অর্থহীন রসহীন কঠিন পীড়নের শামিল । এমন একটি স্বভাবচরিত্র ও মানসিক গঠনের আয়তনিক অচলায়তনের নিয়মনিষ্ঠা , বিধিনিষেধের বিরুদ্ধবাদী হবে , সরল উদার মনের হবে , সহানুভূতি ও মমত্বপরায়ণ হবে —এটাই স্বাভাবিক । 


[           ]  সেজন্য পদে পদে নিয়মনিষ্ঠা লঙ্ঘনের কারণে তাকে প্রায়শ প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে সে গতানুগতিকতার বৈচিত্র্যের আস্বাদন পায় । সুভদ্র উত্তরের জানালা খুলে আয়তনের চিরাচরিত সংস্কারের বশে নিজেকে পাপী বলে কান্নাকাটি করলে তাকে পঞ্চক সান্ত্বনা দেয় । তাকে উপাধ্যায় , উপাচার্য ও মহাপঞকদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বুক দিয়ে আগলে রাখে । তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য মহাতামস সাধনের ব্যবস্থা হলে আচার্যের পরামর্শক্রমে পঞক তাকে কোলে তুলে নিয়ে প্রস্থান করে । পঞকের এসব কাজ অচলায়তনের বিরােধী কাজ বলে মনে করেন আয়তনের উপাচার্য । সেজন্য তাঁর চোখে পঞক আয়তনের দুর্লক্ষণ বা অশুভ চিহ্ন । 





বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের রচিত ‘গুরু’ নাটকের ‘গুরু’ নামকরণ সংগত ও যথাযথ কি না আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer রবীন্দ্রনাথের রচিত গুরু নাটকের গুরু নামকরণ সংগত ও যথাযথ কি না আলােচনা করাে guru namkoron songoto o jothartho kina alochona koro

উত্তর :  বিষয়বস্তু অনুসরণে নয়, রচনার অন্তর্নিহিত ভাবসত্যের ওপর দৃষ্টি রেখে নামকরণের পক্ষপাতী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । রবিরশ্মির ২ য় খণ্ডে নাটকটির নামকরণ প্রসঙ্গে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন , “প্রথমে যেদিন অচলায়তন নাটকটি পাঠ করেন , সেদিনই উহার ‘গুরু’ নাম রাখিবার ইচ্ছা কবি প্রকাশ করিয়াছিলেন , কিন্তু আমরা অচলায়তন নামটিতেই অধিক সমর্থন করাতে তাহাই বহাল থাকিয়াছিল ।” পরে ‘ অচলায়তন ’ নাটকটিকে ‘সহজে অভিনয়যােগ্য করিবার অভিপ্রায়ে’  নাটকটি ‘গুরু' নামে এবং ‘কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত এবং লঘুতর আকারে প্রকাশ করার’ সময়ে কবি তাঁর পূর্ণ ইচ্ছাকে বহাল রাখেন । এখন আলােচ্য বিষয় হল নাটকটির ‘গুরু’ নামকরণ সংগত ও যথাযথ কি না । 

[         ] নাটকের শুরুতেই প্রথম বালক জানিয়েছে , উপাধ্যায়মশায় নিজে তাকে জানিয়েছেন অচলায়তনে গুরু আসছেন । সেজন্য অচলায়তনে সাজসজ্জার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গুরু আসছেন বলে পঞক তাে সব পুথিপত্র সরিয়ে খােলসা হওয়ার চেষ্টায় আছে । গুরু কেন আসছেন তার কারণ অনুসন্ধানের আলােচনায় উপাচার্য বলেছেন যে, আয়তনের নিষ্ঠায় ও কার্যকলাপে তিনি প্রসন্ন হয়েছেন বলেই আসছেন । আচার্য কিন্তু মনে করেন , অপরাধের মাত্রা পূর্ণ হয়েছে বলেই তিনি আসছেন । কারণ , আচার - অনুষ্ঠান ও মন্ত্রতন্ত্রের আধিক্য, পদে পদে বিধিনিষেধের নির্দয় শিকল , পাপ খণ্ডনের নামে প্রাণঘাতী প্রায়শ্চিত্তের বিধান , বাইরের প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে নীরস জীবনযাপন আয়তনিক জীবনকে করেছে শুষ্ক ও প্রাণহীন । অচলায়তনের আয়তনিকরা জ্ঞানমার্গের সাধক হয়েও চারিদিকে পাষাণপ্রাচীর গড়ে প্রাণহীন স্থবির হয়ে পড়েছে । যুনকরা কর্মমার্গে ও দর্ভকরা ভক্তিমার্গে আটকা পড়ে চারিদিকে অচলায়তন গড়েছে । এই তিন ধরনের আয়তনিকদের রসময়পূর্ণ প্রাণে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ দেখাতেই গুরু আসছেন । কাজেই নাটকের ‘গুরু’ নামকরণ সংগত ও যথাযথ , সার্থকও বটে ।

 



বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘গুরু’ নাটকের উৎস নির্ণয় করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer রবীন্দ্রনাথের লেখা গুরু নাটকের উৎস নির্ণয় করাে robindronather lekha guru natoker utsoho nirnay koro


উত্তর : ‘অচলায়তন ’ নাটকটিকে অভিনয়ের উপযােগী সহজ করার উদ্দেশ্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ নাটকটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে , কিছুটা লঘুতর করে নতুন রূপ দেন । নাটকটির নাম দেন ‘ গুরু'। ‘গুরু’ নাটকের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ছােট্ট একটি বাক্যে লিখেছেন , “সহজে অভিনয় করিবার অভিপ্রায়ে অচলায়তন নাটকটি ‘ গুরু ' নামে এবং কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত এবং লঘুতর আকারে প্রকাশ করা হইল ।” ‘ অচলায়তন ' নাটকটি লেখা হয়েছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মে -জুন মাসে । ওই বছরই প্রবাসীর আশ্বিন সংখ্যায় ‘অচলায়তন’ প্রকাশিত হয় । গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ২ আগস্ট ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে । ‘ অচলায়তন ’ প্রকাশের প্রায় পাঁচ বছর পরে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট - সেপ্টেম্বর মাসে ‘ অচলায়তন ’- এর রূপান্তরিত ও নতুন নাট্যরূপ ‘গুরু’ রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ । ‘ অচলায়তন ’- এর ছাপা একখানা বইয়ের ওপর পরিমার্জন করে ও প্রয়ােজনে সাদা কাগজে লিখে নাট্যরূপটি গড়ে তােলা হয় । ‘ গুরু ' নাটকের সম্পূর্ণ অংশটি ‘পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ’ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ শ্রেণির পাঠ্য করা হয়েছে ।





মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়’ , / আমি তবু পরের । শ্রেণিতে যাব ।’ — পঙক্তি দুটি ব্যঞ্জনার্থ ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায় আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব পঙক্তি দুটি ব্যঞ্জনার্থ ব্যাখ্যা করাে jodi sob sreni sesh hoye jai ami tobu porer srenite jabo ponktoti banjonatho bakkha koro


উত্তর : আলােচ্য দুটি উদ্ধৃতি প্রখ্যাত মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা থেকে গৃহীত । 

[           ] এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে পরীক্ষা পাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে । একজন অপরজনকে টপকে ক্লাসের সিড়ির ধাপ ভেঙে ওপরে উঠতে থাকে পরীক্ষায় পাস করে । প্রথম জন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে , দ্বিতীয় জন দ্বিতীয় শ্রেণি পার হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে যায় । এভাবে পরীক্ষায় পাসের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালােই জমে ওঠে । তাতেই ‘এক , দুই , তিন ....চার’ গণনা চলে ক্লাস অতিক্রমের । চতুর্থ শ্রেণিতে এসে প্রাথমিকের পর্যায় শেষ হয়ে যায় । ধাপ -ভাঙা অঙ্কের মতাে শিক্ষার্থী পরের ধাপে ওঠার জন্য মনের দৃঢ়তা নিয়ে বলে , ‘ যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়,/ আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব । প্রাথমিকের পর মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় শিক্ষার কত স্তর কত শ্রেণি ! পরীক্ষায় পাসের পর পাস করতে করতে শিক্ষার্থীর চলমানতা অব্যাহত থাকে । কবি এভাবেই প্রশ্নের দুটি উদ্ধৃতির অর্থগত পরম্পরা চমৎকারভাবে রক্ষা করেছেন ।

   প্রশ্নের শেষ উদ্ধৃতির পরেই কবি বলেছেন
           ‘ সব শিক্ষা একটি সার্কাস 
       যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই ।’
       
[         ]  অর্থাৎ , কবি সব শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন । শিক্ষা হল ক্রীড়াচক্র । সার্কাসে চক্রাকার ক্রীড়াঙ্গনে ঘুরে ঘুরে খেলা দেখানাে হয় । ওভাবেই পরীক্ষার মাধ্যমে শ্রেণির পর শ্রেণি টপকে উত্তীর্ণ হয় শিক্ষার্থীরা । প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনােভাব নিয়ে  ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার যেন খেলা চলতে থাকে । প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক , মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক এভাবে বিভিন্ন শিক্ষাস্তর অতিক্রম করে বিদ্যার্থীরা । শিক্ষাস্তর অতিক্রম করাই হল তাদের ধ্যান - জ্ঞান । জ্ঞানার্জন হল কিনা তা তাদের লক্ষ্য নয় ।




সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

“ শিক্ষার সার্কাস ” কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে sikkhar sarkas kobitatir namkoroner sarthokota alochona koro


উত্তর : খ্যাতনামা মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকর কবিতার নাম দিয়েছেন ‘শিক্ষার সার্কাস’। কবিতার নামকরণটি কতখানি যথাযথ ও সার্থক,তা আমাদের আলােচ্য বিষয় । 

[       ] কবি সাম্প্রতিক ভারতীয় শিক্ষার চালচিত্র খানিকটা অপ্রত্যক্ষ প্রতিযােগিতার শর্তসাপেক্ষে ও হেঁয়ালির রহস্যঘন ভঙ্গিতে উপস্থাপিত করেছেন । প্রথম শিক্ষার্থীর প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তসাপেক্ষে দ্বিতীয় শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় শ্রেণিতে পৌছানাের ব্যাপারটা নির্ভর করছে । একইভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পাসের ব্যাপারটাও যেন পারস্পরিক শর্তনির্ভর । একটাই ভালাে লক্ষণ যে , একটা চোরা স্রোতের মতাে অপ্রত্যক্ষ প্রতিযােগিতা ভিতরে ভিতরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রিয়াশীল । অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সব শ্রেণি অতিক্রমের পরেও শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাপারে চলমানতা অব্যাহত । কারণ তারপরও শিক্ষার্থীর উক্তি :‘ আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব ।’ অবশ্যই যাবে । কারণ তারপরও মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় প্রভৃতি শিক্ষার কত স্তর, কত শ্রেণিই তখনও বাকি ।
[        ] কবি এদেশীয় সাম্প্রতিক শিক্ষা সম্পর্কে ব্যঙ্গ্যোক্তি করলেন : ‘সব শিক্ষা একটি সার্কাস ।’ সার্কাস হল ক্রীড়াচক্র । অর্থাৎ , চক্রাকার বা বৃত্তাকার ক্রীড়াক্ষেত্রে অশ্বাদি ক্রীড়া উপাদান নিয়ে ক্রীড়াবিদরা ক্রীড়া প্রদর্শন করে থাকেন । এদেশীয় শিক্ষার্থীরা যেন সার্কাসের মতাে বৃত্তাকার ক্ষেত্রে শ্রেণির পর শ্রেণি টপকে এগিয়ে চলেছে । শিক্ষার এই চক্রাকার বাঁধাধরা পথটাই হল নীরস , নিরানন্দ , সে অর্থে প্রাণহীন জ্ঞানহীন , পুথিসর্বস্ব । বৃত্তাকার ঘূর্ণায়মান চলমান শক্তি শিক্ষার স্তর ও শ্রেণি টপকাতে সাহায্য করছে ঠিকই । শিক্ষাও হচ্ছে , কিন্তু শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন, চেতনার বিকাশ — তা অর্জিত হচ্ছে না । শিক্ষার্থীর ব্যর্থতার এই যে ধোকাসর্বস্ব মহা ফাঁকি , সে -কথা কে মনে রাখে ? সবাই আপাতদৃষ্টিতে দেখছে , শিক্ষা এগিয়ে চলেছে চক্রাকার বাঁধাধরা যান্ত্রিক পথে সার্কাসের বৃত্তাকার ক্ষেত্রে ‘মা ফলেষু কদাচন’ ঔদাস্যে । কাজেই ব্যঙ্গার্থে হলেও কবিতার ‘শিক্ষার সার্কাস’ নামকরণ যথাযথ ও সার্থক ।




রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘ আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব । ’ — উদ্ধৃত চরণের মধ্যে কবি - ভাবনার প্রতিফলন বুঝিয়ে দাও ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব উদ্ধৃত চরণের মধ্যে কবি ভাবনার প্রতিফলন বুঝিয়ে দাও ami tobu porer sreenite jabo udhrito choroner modhey kobi vabnar protifolon bujhiye dao


উত্তর : উদ্ধৃত চরণটি প্রখ্যাত মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের লেখা ‘ শিক্ষার সার্কাস ' কবিতার অংশবিশেষ । কবি দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন । ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিলেন । শিক্ষাসংক্রান্ত তাঁর কবি -ভাবনা ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটিতে চমৎকার প্রকাশিত হয়েছে । আলােচ্য উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে তার প্রতিফলন লক্ষ্যণীয় । 

[         ] এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে পরীক্ষা পাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে । একজন অপরজনকে অতিক্রম করে ক্লাসের সিঁড়ির ধাপ ভেঙে ওপরে উঠতে থাকে পরীক্ষায় পাস করে । প্রথম জন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে , দ্বিতীয় জন দ্বিতীয় শ্রেণি পার হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে যায় । এভাবে পরীক্ষায় পাসের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালােই জমে ওঠে । তাতেই ‘এক , দুই, তিন ......চার’ গণনা চলে ক্লাস অতিক্রমের । চতুর্থ শ্রেণিতে এসে প্রাথমিক স্তর শেষ হয়ে যায় । ধাপ -ভাঙা অঙ্কের মতাে শিক্ষার্থী পরের ধাপে ওঠার জন্য মনের দৃঢ়তা নিয়ে বলে , ‘ যদি সব শ্রেণি শেষ হয়ে যায়,/আমি তবু পরের শ্রেণিতে যাব ।’ প্রাথমিকের পর মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিক , কলেজীয় শিক্ষার কত স্তর, কত শ্রেণি । পরীক্ষায় পাসের পর পাস করতে করতে শিক্ষার্থীর চলমানতা অব্যাহত থাকে ।




শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘গুরু’ নাটক অবলম্বনে ‘গুরু’ চরিত্রের স্বরুপ বিশ্লেষণ করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer গুরু নাটক অবলম্বনে গুরু চরিত্রের স্বরুপ বিশ্লেষণ করাে guru natok abolombone guru choritrer swarup bishleshon koro


উত্তর : ‘ গুরু ’ নাটকে গুরুর উপস্থিতি নেপথ্যে কিংবা স্বশরীরে নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি । তাঁরই নামে নাটকের নামকরণ । তিনি অসীম , অনন্ত  ও সর্বশক্তির আধার । অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে, জীর্ণ প্রাণহীন সমাজকে ধ্বংস করার কাজে তিনি খরগহস্ত রুদ্র । জ্ঞান-কর্ম ভক্তির সমন্বয়ে সাধনাকে সফল করে জগৎ ও জীবনকে গতিশীল করার কাজে তিনি শক্তিমান পরমসুন্দর । একাধিক রূপে তাঁর প্রকাশ । তিনি গুরু, তিনি দাদাঠাকুর , তিনিই গোঁসাই । অথচ তিনি একই । জ্ঞানমার্গের আয়তনিকদের কাছে তিনি গুরু, কর্মমার্গের যুনকদের কাছে তিনি দাদাঠাকুর , আর ভক্তিমার্গের দর্ভকদের কাছে তিনি গোঁসাই । প্রকৃতপক্ষে তিন মার্গের মানুষই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অচলায়তনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ । গুরু তিন রূপে হাজির হয়ে তিনেরই সাধনপথের বাধা সরিয়ে জ্ঞান-কর্ম- ভক্তির ত্রিবেণি সংগম ঘটিয়েছেন । তিনি জ্ঞানমার্গীদের অচলায়তনের পাষাণ প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যােদ্ধৃবেশে । দীর্ঘদিনের প্রথা ও সংস্কারের মূল উপড়ে ফেলেন তিনি । বাইরের জগৎ ও জীবনের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে শুষ্ক প্রাণহীন জ্ঞানচর্চায় তিনি এনেছেন সরসতা ও জীবনের প্রাণােচ্ছ্বাস। 



বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু ’ নাটক অনুসরণে পঞ্চক চরিত্র আলােচনা করাে ।

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গুরু নাটক অনুসরণে পঞ্চক চরিত্র আলােচনা করাে guru natok anusorone ponchok choritroti alochona koro


উত্তর :  অচলায়তনের মহানিষ্ঠ সাধক মহাপঞ্চকের ভাই । ভাই হলেও পঞক স্বভাবধর্মে মহাপঞকের বিপরীত । অচলায়তনের রুদ্ধ ও দম বন্ধ করা  নিস্প্রাণ পরিবেশের ব্যতিক্রমী চরিত্র । যেন মূর্তিমান বিদ্রোহ । আচার - অনুষ্ঠান  সর্বস্ব অন্ধ সংস্কারের মায়াজালে তার যুক্তিবাদী মন বাঁধা থাকতে নারাজ । শুষ্ক নীরস কঠিন জ্ঞানচর্চার পরিবেশে , নিষ্প্রাণ যান্ত্রিকতার গতানুগতিক জীবনাচরণে সে যেন প্রাণের বন্যা । সে যেন দুরন্ত এক ঝােড়াে হাওয়া । সে যেন মুক্ত প্রাণের স্পন্দন । সত্যের সন্ধানী । সুদূরের পিয়াসি । বাইরের পরিবেশ ও মানুষজনের সঙ্গে তার অবাধ মেলামেশা । যুনক ও দর্ভকপল্লির সঙ্গে তার আত্মিক যােগ । অন্তরের ভাবভাষায় জারিত গান তার কণ্ঠস্থ । সুরের শত ধারায় সে স্বচ্ছন্দে নিজেকে , নিজের অন্তরকে মেলে ধরতে পারে । তখন মনে হয়, সে যেন প্রাণের মূর্ত প্রতীক । প্রাণের রাজ্যে বুঝি তার অবাধ আনাগােনা । 

[        ] আবার এই পঞকই অচলায়তনে যেন শানিত ব্যঙ্গস্ত্র । দাদা মহাপঞকের কঠোর সংযম -নিষ্ঠা, অর্থহীন মন্ত্রাভ্যাস, নীরস জপতপ ও জ্ঞানচর্চার বিরােধী বলেই , ওই সংক্রান্ত প্রসঙ্গ উঠলেই পঞ্চকের ব্যঙ্গাস্ত্র ঝলসে ওঠে । 


[         ] পঞ্চকের ব্যঙ্গের মধ্যেও আছে হাস্যরসের ফল্গুধারা । যেমন— “তােমরা বােঝা বয়ে মর , আমি হালকা হয়ে বসে আছি ।” অথবা “তিনদিনের দিন যে সাপটা এসে আমাকে নিশ্চয় কামড়াবে কথা ছিল , সে আজ পর্যন্ত আমাকে খুঁজে বের করতে পারে নি ।” 


[       ] পঞ্চক স্নেহশীল , মমত্বপরায়ণ । মহাপাপের আশঙ্কায় কান্নায় ভেঙে পড়া সুভদ্রকে সে পরম স্নেহভরে সান্ত্বনা দিয়েছে । ‘চুপ চুপ ! ভয় নেই সুভদ্র, কাঁদছিস কেন ভাই ?’ তাকে আশ্বস্ত করে বলেছে ‘তােমার জয়জয়কার হবে সুভদ্র । তিন - শাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল তুমি ঘুচিয়েছ ।’


[       ] পঞক বিনম্র স্বভাবেরও । সে দাদাঠাকুরকে বিনীতভাবে বলেছে , “প্রভু,তুমি তাহলে আমার দুইই । আমাকে আমি চালাচ্ছি , আর আমাকে তুমিই চালাচ্ছ ..........।”

 রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘গুরু' নাটকে পঞক একটি অনন্য চরিত্র।


মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

“ আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি । ” —বক্তা কে ? কোন্ প্রসঙ্গে, কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা এ কথা বলেছেন ? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি বক্তা কে কোন্ প্রসঙ্গে কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা এ কথা বলেছেন এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ami tar kanna amar buker modhye kore anechi bokta ke kon prosonge kake uddeshya kore bokta akotha bolechen


উত্তর . : অচলায়তনের আচার্য অদীনপুণ্য এই উক্তির বক্তা । 

[         ] আচার্য অদীনপুণ্য দকপল্লীতে নির্বাসিত । সেখানে নির্বাসিত পঞকও হাজির । পঞক ও আচার্যের মধ্যে কথা হচ্ছে । আচার্য বলছেন , তাঁর যেন মনে হচ্ছে অচলায়তনে সুভদ্র কাঁদছে । পঞকের বক্তব্য হল অচলায়তন থেকে এতদূরে কান্না শুনতে পাওয়ার কথা নয় । আচার্য মশাই অন্য কিছু শুনছেন । আচার্য আদীনপুণ্য তা মেনে নিলেন , কিন্তু তিনি তাে সুভদ্রের কান্না বুকে করে এনেছেন । এই হল তাঁর উক্তির প্রসঙ্গ ।

[         ] আচার্য অদীনপুণ্যের বক্তব্যের মধ্যে তাঁর চরিত্রের এই দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে যে, বালক সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্তের জন্য । প্রাণহননকারী কঠিন মহাতামস ব্রতের মধ্যে আচার্য বসাতে চান না । কারণ অচলায়তনের পাষাণকারায় দমবন্ধ করা বন্ধন থেকে মুক্তির ডাক তিনি শুনেছেন । তাঁর হৃদয় এখন স্নেহ ও করুণায় কোমল ও দ্রবীভূত । সুভদ্রের অপরাধকে আচার্য নিজের অপরাধ বলে মনে করেছেন । তাই প্রায়শ্চিত্তের প্রতিবাদ করে তিনি বলেছেন , ‘যদি কোনাে অপরাধ ঘটে সে আমার ।’ তিনি নির্বিকার  চিত্তে সুভদ্রের কান্না বুকে নিয়ে দভকপল্লীতে নির্বাসিত হয়েছেন । 






সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘তাঁর রাগটা কীরকম সেইটা দেখার জন্যেই তো একাজ করেছি !’ - বক্তা কে ? এখানে কার রাগের কথা বলা হয়েছে ? তিনি রেগে গেলে কী হয় ? তাঁর রাগের ধরন দেখার জন্য বক্তা কী করেছিল ?

একাদশ শ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর xi class 11 Bengali Question answer তাঁর রাগটা কীরকম সেইটা দেখার জন্যেই তো একাজ করেছি বক্তা কে এখানে কার রাগের কথা বলা হয়েছে তিনি রেগে গেলে কী হয় তাঁর রাগের ধরন দেখার জন্য বক্তা কী করেছিল tar ragta kirokom seita dekhar jonnoi to akaj korechi bokta ke


উত্তর : এই উক্তির বক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের অন্যতম চরিত্র পঞ্চক । 

এখানে মহাময়ূরী দেবীর রাগের কথা বলা হয়েছে ।
 মহাময়ূরী দেবী রেগে গেলে যার ওপর রুষ্ট হন, তাকে তিন দিনের দিন সাপ এসে দংশন করে ।
 

[        ] মহাময়ূরী দেবীর রাগের ধরন দেখার জন্য পঞ্চক ইচ্ছা করে ও মাসে শনিবারে যেদিন মহাময়ূরী দেবীর পুজোর দিন ছিল, সেদিন সে কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে ,তার ওপর পাঁচটা শেয়ালকাঁটার পাতা আর তিনটে মাসকলাই সাজিয়ে নিজে আঠারাে বার ফু দিয়েছিল । পঞক মহাময়ূরী দেবীর রাগ দেখেনি । তিন দিনের দিন সাপ এসে কামড়ানাের কথা । সাপ এসে তাকে দংশনও করেনি ।