দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২

সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্যগুলি কী কী ? লক কীভাবে সরল বস্তুবাদের সমালােচনা করে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন ?


একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্যগুলি কী কী লক কীভাবে সরল বস্তুবাদের সমালােচনা করে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন sorol bostubader mul boktboguli ki ki lok kivabe sorol bostubader somalochona kore tar boktbo uposthapn korechen


উত্তর :  যে বস্তুবাদে গুনবিশিষ্ট বস্তুর জ্ঞাতার জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয় — তাকে বলে সরল বস্তুবাদ । এই বস্তুবাদকে লৌকিক বস্তুবাদ রূপেও অভিহিত করা হয় । সরল বস্তুবাদ হল বস্তুবাদের একটি অত্যন্ত সহজ সরল রূপ । সরল বস্তুবাদ অনুসারে দাবী করা হয় যে, বৈচিত্রপূর্ণ বাহ্যজগতের ভৌতবস্তু সমূহকে আমরা সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ করি এবং সেগুলি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি । সরল বস্তুবাদের মূল বক্তব্যগুলিকে এভাবেই উল্লেখ করা যায়—

[1 ]বাহ্যজগতে বৈচিত্রপূর্ণ অসংখ্য বস্তুর অস্তিত্ব আছে ।

[2 ] বস্তুগুলির সঙ্গে বস্তুর ধর্ম ওতােপ্রােতভাবে জড়িত ।

[3] বাহ্যবস্তু মাত্রেই হল জ্ঞাতার সম -নিরপেক্ষ । এবং 

[4] বাহ্যবস্তুর জ্ঞান সরাসরিভাবে লন্ধ । 

[      ] প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক্ এই সরল বস্তুবাদের সমালােচনা করেছেন । তিনি বলেন যে, সরলবস্তুবাদ হলাে সাধারণ মানুষের স্থূল বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি নির্বিচারমূলক মতবাদ । এরূপ মতবাদটি নিম্নের অভিযােগগুলির ভিত্তিতে কখনােই গ্রহণীয় নয় । 
[ 1 ] ভ্রান্তপ্রত্যক্ষের ব্যখ্যিাহীনতা : সরল বস্তুবাদ কখনােই ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের ব্যাখ্যা দিতে পারে না ।কারণ , আমরা যদি বস্তুকে সরাসরিভাবেই জানতে পারি তাহলে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের বিষয়টি আসে কি করে ? 

[ 2 ]স্বপ্নজ্ঞানের ব্যাখ্যাহীনতা : বিষয়ের অস্তিত্ব না থাকলে তার জ্ঞান কখনােই সম্ভব নয় । কিন্তু স্বপ্নে দৃষ্ট বিষয়ের কোনাে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকে না , তাহলে স্বপ্নের বিষয়টি কীভাবে উঠে আসতে পারে ? এর কোনাে সদুত্তর সরল বস্তুবাদীরা দিতে পারেন না । 


[ 3 ] প্রত্যক্ষের সার্বিক মাপকাঠিহীনতা : সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে আমাদের সার্বিক কোনাে মাপকাঠি নেই । কারণ আমাদের একই বস্তু ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রত্যক্ষিত হতে পারে । এর ফলে বস্তুর সরাসরি প্রত্যক্ষে কোনাে সার্বিক মাপকাঠি থাকতে পারে না এবং বাহ্যবস্তুর সার্বিক জ্ঞান  অসম্ভব হয়ে পড়ে । 

[       ]  সরল বস্তুবাদের সমালােচনা করে লক দেখিয়েছেন যে , সরল বস্তুবাদ কখনােই যথার্থ ও অযথার্থ জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না । কারণ , সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান যদি সরাসরিভাবে পাওয়া যায় তাহলে সব জ্ঞানই যথার্থ হতে বাধ্য । অযথার্থ জ্ঞান বলে তাই কোনাে কিছুই থাকতে পারে না । কিন্তু একথা সত্য যে, আমাদের সমস্ত জ্ঞান কখনােই যথার্থ হতে পারে না । অযথার্থ জ্ঞানও কিছু থেকেই যায় । সেকারণেই লক্ সরলবস্তুবাদের  সমালােচনা করে তার প্রতিনিধিত্বমূলক বস্তুবাদের উপস্থাপনা করেছেন । যে মতবাদ বস্তুর মন -নিরপেক্ষ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয় এবং বস্তুর জ্ঞানকে সরাসরিভাবে পাওয়া যায় না বলে , বস্তুর ধারণা বা প্রতিরূপের মাধ্যমে পাওয়া যায় বলে দাবী করা হয় , তাকে বলে প্রতিরূপী বস্তুবাদ । 


[         ] লকের মতে , আমাদের মন হল একটি স্বচ্ছ পর্দার মতাে । মনের এই স্বচ্ছ পর্দার উপর অভিজ্ঞতার ফলে বস্তুর ছাপ বা ধারণা প্রতিফলিত হয় । এই সমস্ত ধারণাগুলির মাধ্যমেই আমরা বস্তুকে পরােক্ষভাবে জানতে পারি । অর্থাৎ অভিজ্ঞতার ফলে বস্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণগুলি ধারণার সৃষ্টি করে এবং এই সমস্ত ধারণাগুলি মনের স্বচ্ছ পর্দায় ভেসে ওঠে এবং বস্তু সম্পর্কে পরােক্ষ জ্ঞান দান করে ।





বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

কর্মযােগ বলতে কী বােঝ ? কর্মযােগ সম্পর্কিত বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনা ব্যাখ্যা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কর্মযােগ বলতে কী বােঝ কর্মযােগ সম্পর্কিত বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনা ব্যাখ্যা করো karmayog bolte ki bojho karmayog somporkito bibekanonder darshonik vabna bakkha koro


উত্তর :  কর্মযােগ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ — কর্ম+যােগ = কর্মযােগ । কর্ম শব্দটি সংস্কৃত কৃ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন —যার অর্থ হল কোনাে কিছু করা । আর যােগ শব্দের অর্থ হল সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিতও বিধিবদ্ধ বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে কর্ম করা । সুতরাং কর্মযােগ শব্দটির সামগ্রিক অর্থ হল সুনিয়ন্ত্রিত , সুচিন্তিত ও বিধিবদ্ধভাবে কোনাে কিছু করা । সহজ করে বলা যায় যে , কর্মের কৌশল তথা কর্মনৈপুণ্যই হল কর্মযােগ । প্রকৃতপক্ষে সমত্ব চেতনাই হল যােগ শব্দটির প্রকৃত অর্থ । লাভ -অলাভ ,জয় -পরাজয় প্রভৃতি সমস্ত কিছুকেই যদি সমান জ্ঞান করে কর্ম করা হয় তাকেই কর্মযােগ বলা হয় । গীতা , উপনিষদ , বেদান্ত দর্শনে কর্মযােগের এরূপ ধারণাটিই প্রতিফলিত হয়েছে । বেদান্তের অনুগামী হয়ে বিবেকানন্দও কর্মযােগের এই অর্থ বা ধারণাটিকেই গ্রহণ করেছেন । 

[ 1 ] কর্মে আত্মনিয়ােগ : বিবেকানন্দের মতে , প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই সত্ত্ব,রজঃ ও তমঃগুণ পরিলক্ষিত হয় । আর এই গুণের তারতম্যের জন্যও তাদের কর্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হয় । যখন আমাদের মধ্যে তমােগুণ প্রবল হয়ে ওঠে , তখন আমরা আলস্যপরায়ণ ও নিষ্কর্মা হয়ে পড়ি । আবার আমাদের মধ্যে যখন রজঃগুণের প্রাবল্য লক্ষিত হয় , তখন আমরা দারুণভাবে কর্মশীল হয়ে উঠি । আর আমাদের মধ্যে যখন সত্ত্বগুণের আধিক্য লক্ষিত হয়, তখন আমরা সমত্ববুদ্ধিসম্পন্নহয়ে ক্রিয়া করি এবং এর ফলে আমাদের মধ্যে একপ্রকার শান্তভাব বিরাজ করে । বিবেকানন্দ দাবি করেন যে ,সম্পূর্ণভাবে প্রশান্তি (শান্তভাব) লাভ করতে হলে মানুষকে কর্ম করতেই হবে । আলস্য ত্যাগ করে মানুষকে প্রকৃত অর্থেই কর্মবীর হতে হয় ।


 [ 2 ] শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির জাগরণ : বিবেকানন্দের মতে , সাধারণ লােক তাদের জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন প্রকার কর্ম সম্পাদন করে থাকে । এগুলি মূলত ঐহিক উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করে । এই সমস্ত কর্ম যে তুচ্ছ বা ছােটো তা নয় ।কিন্তু তিনি বলেছেন যে, পারত্রিক উদ্দেশ্যে কৃত  কর্মই হল শ্রেষ্ঠ । আধ্যাত্মিকতাই আমাদের জীবনে সকল প্রকার কর্ম প্রচেষ্টার মূলভিত্তি । আধ্যাত্মিক দিক থেকে যিনি সুস্থ ও সবল থাকেন তিনি ইচ্ছা করলে অন্যান্য দিকেও প্রভূত দক্ষ হতে পারেন ।   
 

[ 3 ] আত্মজ্ঞান লাভ : কর্মযােগে বিবেকানন্দ উল্লেখ করেছেন , কর্মের দ্বারাই মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় । মনুষ্যকৃত কর্মের ভালাে -মন্দ, পাপ পুণ্য এই উভয় দিকই বিদ্যমান । অর্থাৎ, কর্মের ক্ষেত্রে পরস্পর বিরুদ্ধ দিক পরিলক্ষিত হয় । কর্মনির্ধারিত - মানবজীবনে কখনােই কর্মকে এড়িয়ে চলা যায় না ।এই কর্মের জন্যই কর্মফলের বিষয়টি উত্থিত হয় । কর্মফল এক জীবনে সম্ভব না হলেও পরজন্মে সেই ফলভােগ বর্তায় । সেকারণেই মনুষ্যকর্মের সহযােগীর ভূমিকা গ্রহণ করে জন্মান্তরবাদ । জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যায় দুটি উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় —প্রথমত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব খর্ব হয় এবং দ্বিতীয়ত আত্মতত্ত্বের সঞ্জীবন হয় । আত্মতত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মা চিরন্তন , অমর ও জন্মমৃত্যুরহিত । জন্ম হল আত্মার শরীরধারণ আর মৃত্যু হল আত্মার শরীরমুক্তি । আমাদের সকল প্রকার কর্মের উৎসই হল শরীর , আবার কর্ম শরীরের মন্ত্র বা ধারকরূপে গণ্য । 

[ 4 ] কমই হল আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠশালা : বিবেকানন্দ বলেন যে, আমাদের সংসার জীবনের কর্মই হল আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠশালা । যদি কেবলমাত্র সাংসারিক লাভের জন্যই কাজ করা হয় , তবে তা আত্মার বন্ধনকেই বাড়িয়ে তােলে । কিন্তু যদি যথাযথ আত্মজ্ঞানের জন্য কর্ম করা হয় , তাহলে তা অদ্বৈত বেদান্তের মূল কথা — ‘অহং ব্রহ্লাস্মি’ বা ‘তত্ত্বমসি’ রূপ উপলব্ধির চরম উৎকর্ষতাকেই সূচিত করে । এখানেই স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযােগের উদ্দেশ্যটি নিহিত ।



বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

সন্নিকর্ষ কাকে বলে ? ন্যায়দর্শন স্বীকৃত লৌকিক সন্নিকর্ষগুলি দৃষ্টান্ত-সহ ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer সন্নিকর্ষ কাকে বলে ন্যায়দর্শন স্বীকৃত লৌকিক সন্নিকর্ষগুলি দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা করাে sonnikorsho kake bole sonnikorshoguli drishtantosoho bakkha koro


উত্তর : ন্যায়দর্শনে সন্নিকর্ষ শব্দটির অর্থ হল সংযােগ । সংযােগ হল ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয় বা অর্থের সংযােগ । যখন আমরা কোনাে ঘট প্রত্যক্ষ করি , তখন সেই ঘট নামক বিষয়ের সঙ্গে চক্ষু নামক ইন্দ্রিয়ের সংযােগ হয় । এর ফলেই আমাদের ঘট - প্রত্যক্ষ সম্ভব হয় । 
সন্নিকর্ষের প্রকারভেদ : ন্যায়দর্শনে সন্নিকর্ষ হল দুপ্রকার [ 1 ]লৌকিক এবং [2] অলৌকিক । ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যদি সরাসরিভাবে সংযােগ হয় , তবে তাকেই বলা হয় লৌকিক সন্নিকর্ষ । যেমন — ঘট এবং চক্ষুর সংযােগ বা সন্নিকর্ষ । অপরদিকে , ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের যদি পরােক্ষ সংযােগ হয় , তবে তাকেই বলা হয় অলৌকিক সন্নিকর্ষ । যেমন —মানুষ প্রত্যক্ষ করে , মনুষ্যত্বের সঙ্গে সংযােগ বা সন্নিকর্ষ পরােক্ষভাবে সম্পন্ন করা যায় । 


 ন্যায়মতে , লৌকিক সন্নিকর্ষহল ছয় প্রকার । এগুলি হল— 
 
[ 1 ] সংযােগ সন্নিকর্ষ : একটি দ্রব্যের সঙ্গে আর একটি দ্রব্যের সংযােগকেই বলা হয় সংযােগ সন্নিকর্ষ । চক্ষুর দ্বারা ঘট দ্রব্যের প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে সংযােগ সন্নিকর্ষ হয় । কারণ , ঘটও একটি দ্রব্য, আর চক্ষুও একটি দ্রব্যরূপে গণ্য । সুতরাং , চক্ষু দ্রব্য + ঘট দ্রব্য = সংযােগ সন্নিকর্ষ । 

[ 2 ] সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ : ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে দ্রব্যের গুণের যে সংযােগ , তাকেই বলা হয় সংযুক্ত -সমবায় সন্নিকর্ষ । চক্ষুর সঙ্গে ঘটের সম্বন্ধ হল সংযােগ সম্বন্ধ। আবার ঘটের সঙ্গে ঘটরূপের সম্বন্ধ হল সমবায় সম্বন্ধ । সুতরাং যৌথভাবে চক্ষুর সঙ্গে ঘটরূপের সম্বন্ধ হল সংযুক্ত সমবায় সম্বন্ধ ।

[ 3 ] সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ : ইন্দ্রিয়ের দ্বারা কোনাে দ্রব্যের গুণ প্রত্যক্ষকালে সেই গুণে গুণত্বজাতি থাকে । সেই গুণত্বজাতির প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয় , তাকেই বলা হয় সংযুক্ত সমবেত  সমবায় সন্নিকর্ষ । ঘট প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে ঘটের সঙ্গে চক্ষুর সংযােগ সন্নিকর্ষ হয় । আবার ঘটের সঙ্গে ঘটরূপের সমবায় সন্নিকর্ষ হয় । ঘটরূপের সঙ্গে রূপত্বজাতিরও সমবায় সন্নিকর্ষ হয় ৷ ফলত , এক্ষেত্রে সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয় । 
[ 4 ] সমবায় সন্নিকর্ষ : কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দ প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে সমবায় সন্নিকর্ষ সম্পন্ন হয় । কারণ , শব্দ হল ব্যোম বা আকাশের গুণ এবং কর্ণেন্দ্রিয় নিজেই আকাশরূপে গণ্য । গুণ ও গুণীর সম্বন্ধই হল সমবায় সন্নিকর্ষ । 


[ 5 ] সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ : শব্দের প্রত্যক্ষকালে ওই শব্দে আশ্রিত শব্দত্ব জাতিরও প্রত্যক্ষ হয় । কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা শব্দে শব্দত্ব জাতির প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয়, তাকেই বলা হয় সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ । 


[ 6 ] বিশেষণ -বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ : অভাব প্রত্যক্ষের ক্ষেত্রে যে সন্নিকর্ষ হয় , তাকে বলা হয় বিশেষণ -বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ । ভূতলে ঘটাভাবের ক্ষেত্রে ভূতল হল বিশেষ্য , আর ঘটের অভাব হল বিশেষণ । বিশেষ্য তথা ভূতলে , বিশেষণ তথা ঘটাভাবের প্রত্যক্ষই হল বিশেষণ বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ । 




মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২

জ্ঞানােৎপত্তি সংক্রান্ত দেকার্তের মতবাদটি আলােচনা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer জ্ঞানােৎপত্তি সংক্রান্ত দেকার্তের মতবাদটি আলােচনা করো ganoutpotti songkraanto dekater motonadti alochona koro


উত্তর :  বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে , বুদ্ধিই হল জ্ঞানের মৌল উৎস । বুদ্ধিকে জ্ঞানের মূল উৎসরূপে স্বীকার করে নিলেও , সমস্ত বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা দু -ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন— [ 1 ] চরমপন্থী ও [ 2 ] নরমপন্থী । চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । এ ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত । রেনে দেকার্ত আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনকরূপেও গণ্য ।

[         ] চরমপন্থী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক দেকার্ত মনে করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । কারণ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারা যে জ্ঞান পাওয়া যায় তা যথার্থ, সুনিশ্চিত , অনিবার্য ও সর্বজনীনরূপে গণ্য । দেকার্তের মতে ,ইন্দ্রিয় সংবেদনের দ্বারা কখনােই সার্বিক জ্ঞান লাভ সম্ভব নয় । বিশুদ্ধ বুদ্ধিই কেবলমাত্র আমাদের সার্বিক জ্ঞান প্রদান করতে পারে । 


[        ] দেকার্ত জ্ঞানের মাপকাঠি হিসেবে স্পষ্টতা , স্বচ্ছতা ও প্রাঞ্জলতার কথা উল্লেখ করেন । অর্থাৎ , তার মতে , জ্ঞানরূপে কোনাে বিষয়কে গণ্য হতে গেলে , তাকে স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জলরূপে গণ্য হতে হবে । আর এই ধরনের জ্ঞান কখনােই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় লাভ করা যায় না । কেবলমাত্র বিশুদ্ধ বুদ্ধিই এই ধরনের জ্ঞান প্রদান করতে পারে । তার মতে , গণিতের জ্ঞানই হল এরূপ আদর্শ জ্ঞান । কারণ , গণিতের জ্ঞানগুলি সংশয়াতীত এবং এগুলি স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জলরূপে গণ্য করা হয় । গণিতের সুনিশ্চিত জ্ঞানের মতাে দর্শনেও সুনিশ্চিত জ্ঞানলাভের আশায় দেকার্ত দর্শনতত্ত্বের ক্ষেত্রে গাণিতিক পদ্ধতির অনুসরণ করেন । 

[        ] দেকার্তের মতে , গণিতের ক্ষেত্রে কয়েকটি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করে অবরােহ পদ্ধতির সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি অবশ্যই সুনিশ্চিত ও সার্বিকরূপে গণ্য । তিনি তাই দাবি করেন যে , দর্শনের ক্ষেত্রেও যদি বুদ্ধিলব্ধ স্বতঃসিদ্ধ সহজাত ধারণার ওপর ভিত্তি করে অবরােহ পদ্ধতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ,তাহলে তাও নিশ্চিত ও সার্বিকরূপে গ্রাহ্য হবে । আর দর্শনের ক্ষেত্রে গাণিতিক ও অবরােহাত্মক পদ্ধতির প্রয়ােগ করতে হলে , অবশ্যই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে , কখনােই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ওপর নয় । 



[         ]  দর্শনের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত ও স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানলাভের জন্য দেকার্ত আরও একটি পদ্ধতির অনুসরণ করেছেন এবং তা হল সার্বিক সংশয় পদ্ধতি । এরূপ পদ্ধতি অনুসারে যথার্থ, সুনিশ্চিত ও সার্বিক জ্ঞান লাভের আশায় প্রচলিত সমস্ত জ্ঞানকেই সংশয় বা সন্দেহ করতে হয় । এরূপ সংশয় বা সন্দেহ করার মাধ্যমে তিনি এই সত্য অনুভব করেন যে , সমস্ত কিছুকে সংশয় করা গেলেও , সংশয়কে আর সন্দেহ করা যায় না । অথাৎ ,সংশয় যে আছে , তা প্রমাণিত । আর সংশয় থাকলেই সংশয়কর্তাও থাকবে এবং সেটাই হল নিশ্চিত জ্ঞান ।এভাবেই তিনি তার সংশয়াতীত যে সত্যমূলক বাক্যে উপনীত হয়েছেন ,তা হল— ‘আমি চিন্তা করি , অতএব আমি আছি’ । দেকার্তের দর্শনে এটিই হল বুদ্ধিলব্ধ প্রথম স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান । 

[        ] দেকার্তের চরমপন্থী বুদ্ধিবাদ মূলত কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম ও সহজাত ধারণার ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত । দেকার্ত দাবি করেন যে ,আমাদের কোনাে কোনাে ধারণা হল সহজাত এবং এই সহজাত ধারণার দ্বারাই যথার্থ ও সত্যজ্ঞান লাভ করা সম্ভব । কিন্তু যে সহজাত ধারণাকে তিনি জ্ঞানের মৌল ভিত্তিরূপে উল্লেখ করেছেন , সেগুলিকে প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক বিভিন্ন যুক্তি সহকারে অস্বীকার করেছেন । 





সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২

কার্যকারণ সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বা লৌকিক মত কি ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কার্যকারণ সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বা লৌকিক মত কি karjokaron sombondhe sadharon ba loukik mot ki


উত্তর : কার্যকারণ সম্বন্ধ বিষয়ে সাধারণ বা লৌকিক মত খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কার্যকারণ সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি আছে । আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই মূলত এরূপ মতবাদটি গড়ে উঠেছে । দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় লাভ করা সাধারণ মানুষের লৌকিক বিশ্বাসই হল এরূপ মতবাদের মৌল ভিত্তি । সে কারণেই কার্যকারণ সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের মতবাদকে লৌকিক মতবাদরূপে গণ্য করা হয় । কার্যকারণ সম্পর্কিত লৌকিক মতবাদের ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় ।
 

[        ] সমকালীন ও পারস্পরিক সম্বন্ধযুক্ত: লৌকিক মতে ,কারণ ও কার্য হল দুটি সমকালীন ঘটনা এবং একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । তাদের মতে , এই পার্থিব জগতে কোনাে ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয় । হঠাৎ বা দৈবাৎ কোনাে কিছুই ঘটতে পারে না । তাই একটি ঘটনা আর একটি ঘটনার কারণ বা কার্যরূপে গণ্য হয় । 


[        ] কারণের পরে কার্য : লৌকিক মতে , যে দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ পরিলক্ষিত হয়, তাদের মধ্যে আগে যে ঘটনাটি ঘটে , তাকেই বলা হয় কারণ । আর কারণের পরে যে ঘটনাটি ঘটে , তাকে বলা হয় কার্য ৷ তাই কারণকে কার্যের অগ্রগামীরূপে উল্লেখ করা হয় এবং কার্যকে কারণের অনুগামীরূপে দাবি করা হয় । 

[         ] কার্য উৎপাদনের শক্তি হিসেবে কারণ : ‘একটি ঘটনা আর -একটি ঘটনার কারণ ’ –এরূপ বলার অর্থই হল , কারণরূপ ঘটনাটির মধ্যে এমনই এক শক্তি থাকে , যার দ্বারা কার্যরূপ ঘটনাটির উৎপত্তি তথা আবির্ভাব সম্ভব হয় । সুতরাং , কারণরূপ শক্তির মূর্তপ্রকাশই হল কার্য ৷ একইভাবে , দুধের মধ্যে পুষ্টিসাধক ক্ষমতা নিহিত আছে বলেই আমরা দাবি করি , দুধ পান করলে দৈহিক পুষ্টি হয় ।অর্থাৎ , দুধই হল পুষ্টির কারণ । 



[         ] কার্যের উৎপাদকরূপে কারণ : যে ঘটনা অন্য একটি ঘটনাকে ঘটায় , তাকেই বলা হয় কারণ । আর যা ঘটিত বা উৎপন্ন হয় ,তাকেই বলা হয় কার্য । তাই কারণ হল কার্যের স্রষ্টা,আর কার্য হল কারণের সৃষ্টি । কারণ ও কার্যের মধ্যে তাই স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক বিদ্যমান । কুমাের যখন মাটির ঘট সৃষ্টি করে , তখন কুমােরকে বলা হয় কারণ , আর সৃষ্ট মাটির ঘটকে বলা হয় কার্য ৷ 


[         ] অনিবার্য বা আবশ্যিক সম্পর্ক : লৌকিক বিশ্বাস অনুযায়ী , কোনো কারণ উপস্থিত থাকলে তার কার্যও উপস্থিত হবে । অন্যভাবে বলা যায় কোনাে যে , কোনাে কার্য উৎপন্ন হলে তার পিছনে একটি কারণ  অবশ্যই থাকবে । অর্থাৎ , কারণ ও কার্যের মধ্যে একপ্রকার অনিবার্য  সম্বন্ধ বিদ্যমান ।সুতরাং , কারণ ও কার্য কখনােই বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না । এভাবেই ক - কে খ-এর কারণরূপে উল্লেখ করলে , বলতে হয় যে ক ঘটলে খ ঘটবেই ।