মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২

জ্ঞানােৎপত্তি সংক্রান্ত দেকার্তের মতবাদটি আলােচনা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer জ্ঞানােৎপত্তি সংক্রান্ত দেকার্তের মতবাদটি আলােচনা করো ganoutpotti songkraanto dekater motonadti alochona koro


উত্তর :  বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে , বুদ্ধিই হল জ্ঞানের মৌল উৎস । বুদ্ধিকে জ্ঞানের মূল উৎসরূপে স্বীকার করে নিলেও , সমস্ত বুদ্ধিবাদী দার্শনিকরা দু -ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন— [ 1 ] চরমপন্থী ও [ 2 ] নরমপন্থী । চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের মূল বক্তব্য এই যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । এ ছাড়া জ্ঞানের আর দ্বিতীয় কোনাে উৎস নেই । চরমপন্থী বুদ্ধিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত । রেনে দেকার্ত আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনকরূপেও গণ্য ।

[         ] চরমপন্থী বুদ্ধিবাদী দার্শনিক দেকার্ত মনে করেন যে , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । কারণ , বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারা যে জ্ঞান পাওয়া যায় তা যথার্থ, সুনিশ্চিত , অনিবার্য ও সর্বজনীনরূপে গণ্য । দেকার্তের মতে ,ইন্দ্রিয় সংবেদনের দ্বারা কখনােই সার্বিক জ্ঞান লাভ সম্ভব নয় । বিশুদ্ধ বুদ্ধিই কেবলমাত্র আমাদের সার্বিক জ্ঞান প্রদান করতে পারে । 


[        ] দেকার্ত জ্ঞানের মাপকাঠি হিসেবে স্পষ্টতা , স্বচ্ছতা ও প্রাঞ্জলতার কথা উল্লেখ করেন । অর্থাৎ , তার মতে , জ্ঞানরূপে কোনাে বিষয়কে গণ্য হতে গেলে , তাকে স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জলরূপে গণ্য হতে হবে । আর এই ধরনের জ্ঞান কখনােই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় লাভ করা যায় না । কেবলমাত্র বিশুদ্ধ বুদ্ধিই এই ধরনের জ্ঞান প্রদান করতে পারে । তার মতে , গণিতের জ্ঞানই হল এরূপ আদর্শ জ্ঞান । কারণ , গণিতের জ্ঞানগুলি সংশয়াতীত এবং এগুলি স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জলরূপে গণ্য করা হয় । গণিতের সুনিশ্চিত জ্ঞানের মতাে দর্শনেও সুনিশ্চিত জ্ঞানলাভের আশায় দেকার্ত দর্শনতত্ত্বের ক্ষেত্রে গাণিতিক পদ্ধতির অনুসরণ করেন । 

[        ] দেকার্তের মতে , গণিতের ক্ষেত্রে কয়েকটি স্বতঃসিদ্ধ সূত্রের ওপর নির্ভর করে অবরােহ পদ্ধতির সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি অবশ্যই সুনিশ্চিত ও সার্বিকরূপে গণ্য । তিনি তাই দাবি করেন যে , দর্শনের ক্ষেত্রেও যদি বুদ্ধিলব্ধ স্বতঃসিদ্ধ সহজাত ধারণার ওপর ভিত্তি করে অবরােহ পদ্ধতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ,তাহলে তাও নিশ্চিত ও সার্বিকরূপে গ্রাহ্য হবে । আর দর্শনের ক্ষেত্রে গাণিতিক ও অবরােহাত্মক পদ্ধতির প্রয়ােগ করতে হলে , অবশ্যই বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে , কখনােই ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ওপর নয় । 



[         ]  দর্শনের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত ও স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানলাভের জন্য দেকার্ত আরও একটি পদ্ধতির অনুসরণ করেছেন এবং তা হল সার্বিক সংশয় পদ্ধতি । এরূপ পদ্ধতি অনুসারে যথার্থ, সুনিশ্চিত ও সার্বিক জ্ঞান লাভের আশায় প্রচলিত সমস্ত জ্ঞানকেই সংশয় বা সন্দেহ করতে হয় । এরূপ সংশয় বা সন্দেহ করার মাধ্যমে তিনি এই সত্য অনুভব করেন যে , সমস্ত কিছুকে সংশয় করা গেলেও , সংশয়কে আর সন্দেহ করা যায় না । অথাৎ ,সংশয় যে আছে , তা প্রমাণিত । আর সংশয় থাকলেই সংশয়কর্তাও থাকবে এবং সেটাই হল নিশ্চিত জ্ঞান ।এভাবেই তিনি তার সংশয়াতীত যে সত্যমূলক বাক্যে উপনীত হয়েছেন ,তা হল— ‘আমি চিন্তা করি , অতএব আমি আছি’ । দেকার্তের দর্শনে এটিই হল বুদ্ধিলব্ধ প্রথম স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান । 

[        ] দেকার্তের চরমপন্থী বুদ্ধিবাদ মূলত কতকগুলি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম ও সহজাত ধারণার ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত । দেকার্ত দাবি করেন যে ,আমাদের কোনাে কোনাে ধারণা হল সহজাত এবং এই সহজাত ধারণার দ্বারাই যথার্থ ও সত্যজ্ঞান লাভ করা সম্ভব । কিন্তু যে সহজাত ধারণাকে তিনি জ্ঞানের মৌল ভিত্তিরূপে উল্লেখ করেছেন , সেগুলিকে প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লক বিভিন্ন যুক্তি সহকারে অস্বীকার করেছেন । 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন