বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

কর্মযােগ বলতে কী বােঝ ? কর্মযােগ সম্পর্কিত বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনা ব্যাখ্যা করো ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কর্মযােগ বলতে কী বােঝ কর্মযােগ সম্পর্কিত বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনা ব্যাখ্যা করো karmayog bolte ki bojho karmayog somporkito bibekanonder darshonik vabna bakkha koro


উত্তর :  কর্মযােগ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ — কর্ম+যােগ = কর্মযােগ । কর্ম শব্দটি সংস্কৃত কৃ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন —যার অর্থ হল কোনাে কিছু করা । আর যােগ শব্দের অর্থ হল সুচিন্তিত, সুনিয়ন্ত্রিতও বিধিবদ্ধ বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে কর্ম করা । সুতরাং কর্মযােগ শব্দটির সামগ্রিক অর্থ হল সুনিয়ন্ত্রিত , সুচিন্তিত ও বিধিবদ্ধভাবে কোনাে কিছু করা । সহজ করে বলা যায় যে , কর্মের কৌশল তথা কর্মনৈপুণ্যই হল কর্মযােগ । প্রকৃতপক্ষে সমত্ব চেতনাই হল যােগ শব্দটির প্রকৃত অর্থ । লাভ -অলাভ ,জয় -পরাজয় প্রভৃতি সমস্ত কিছুকেই যদি সমান জ্ঞান করে কর্ম করা হয় তাকেই কর্মযােগ বলা হয় । গীতা , উপনিষদ , বেদান্ত দর্শনে কর্মযােগের এরূপ ধারণাটিই প্রতিফলিত হয়েছে । বেদান্তের অনুগামী হয়ে বিবেকানন্দও কর্মযােগের এই অর্থ বা ধারণাটিকেই গ্রহণ করেছেন । 

[ 1 ] কর্মে আত্মনিয়ােগ : বিবেকানন্দের মতে , প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই সত্ত্ব,রজঃ ও তমঃগুণ পরিলক্ষিত হয় । আর এই গুণের তারতম্যের জন্যও তাদের কর্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হয় । যখন আমাদের মধ্যে তমােগুণ প্রবল হয়ে ওঠে , তখন আমরা আলস্যপরায়ণ ও নিষ্কর্মা হয়ে পড়ি । আবার আমাদের মধ্যে যখন রজঃগুণের প্রাবল্য লক্ষিত হয় , তখন আমরা দারুণভাবে কর্মশীল হয়ে উঠি । আর আমাদের মধ্যে যখন সত্ত্বগুণের আধিক্য লক্ষিত হয়, তখন আমরা সমত্ববুদ্ধিসম্পন্নহয়ে ক্রিয়া করি এবং এর ফলে আমাদের মধ্যে একপ্রকার শান্তভাব বিরাজ করে । বিবেকানন্দ দাবি করেন যে ,সম্পূর্ণভাবে প্রশান্তি (শান্তভাব) লাভ করতে হলে মানুষকে কর্ম করতেই হবে । আলস্য ত্যাগ করে মানুষকে প্রকৃত অর্থেই কর্মবীর হতে হয় ।


 [ 2 ] শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির জাগরণ : বিবেকানন্দের মতে , সাধারণ লােক তাদের জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন প্রকার কর্ম সম্পাদন করে থাকে । এগুলি মূলত ঐহিক উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করে । এই সমস্ত কর্ম যে তুচ্ছ বা ছােটো তা নয় ।কিন্তু তিনি বলেছেন যে, পারত্রিক উদ্দেশ্যে কৃত  কর্মই হল শ্রেষ্ঠ । আধ্যাত্মিকতাই আমাদের জীবনে সকল প্রকার কর্ম প্রচেষ্টার মূলভিত্তি । আধ্যাত্মিক দিক থেকে যিনি সুস্থ ও সবল থাকেন তিনি ইচ্ছা করলে অন্যান্য দিকেও প্রভূত দক্ষ হতে পারেন ।   
 

[ 3 ] আত্মজ্ঞান লাভ : কর্মযােগে বিবেকানন্দ উল্লেখ করেছেন , কর্মের দ্বারাই মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় । মনুষ্যকৃত কর্মের ভালাে -মন্দ, পাপ পুণ্য এই উভয় দিকই বিদ্যমান । অর্থাৎ, কর্মের ক্ষেত্রে পরস্পর বিরুদ্ধ দিক পরিলক্ষিত হয় । কর্মনির্ধারিত - মানবজীবনে কখনােই কর্মকে এড়িয়ে চলা যায় না ।এই কর্মের জন্যই কর্মফলের বিষয়টি উত্থিত হয় । কর্মফল এক জীবনে সম্ভব না হলেও পরজন্মে সেই ফলভােগ বর্তায় । সেকারণেই মনুষ্যকর্মের সহযােগীর ভূমিকা গ্রহণ করে জন্মান্তরবাদ । জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যায় দুটি উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় —প্রথমত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব খর্ব হয় এবং দ্বিতীয়ত আত্মতত্ত্বের সঞ্জীবন হয় । আত্মতত্ত্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মা চিরন্তন , অমর ও জন্মমৃত্যুরহিত । জন্ম হল আত্মার শরীরধারণ আর মৃত্যু হল আত্মার শরীরমুক্তি । আমাদের সকল প্রকার কর্মের উৎসই হল শরীর , আবার কর্ম শরীরের মন্ত্র বা ধারকরূপে গণ্য । 

[ 4 ] কমই হল আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠশালা : বিবেকানন্দ বলেন যে, আমাদের সংসার জীবনের কর্মই হল আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাঠশালা । যদি কেবলমাত্র সাংসারিক লাভের জন্যই কাজ করা হয় , তবে তা আত্মার বন্ধনকেই বাড়িয়ে তােলে । কিন্তু যদি যথাযথ আত্মজ্ঞানের জন্য কর্ম করা হয় , তাহলে তা অদ্বৈত বেদান্তের মূল কথা — ‘অহং ব্রহ্লাস্মি’ বা ‘তত্ত্বমসি’ রূপ উপলব্ধির চরম উৎকর্ষতাকেই সূচিত করে । এখানেই স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযােগের উদ্দেশ্যটি নিহিত ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন