দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

প্রসক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে ? কারণ ও কার্য বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালােচনা - সহ ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer প্রসক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে কারণ ও কার্য বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালােচনা সহ ব্যাখ্যা করাে prosokti sombondha kake bole karon o karjo bishoye prosokti totto somalochonasoho bakkha koro



উত্তর : কার্যকারণ সম্পর্কে বুদ্ধিবাদীদের অভিমতকে আবশ্যিক বা অবশ্যম্ভব মতবাদরূপে উল্লেখ করা হয় । এরূপ অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্যের ধারণাটি অনিবার্য বা আবশ্যিকতার কারণের ধারণা থেকে নিঃসৃত হয় । অর্থাৎ , কারণ ও কার্যের মধ্যে একপ্রকার আবশ্যিকতার সম্পর্ক আছে । কারণ ও কার্যের মধ্যে এই আবশ্যিকতার সম্বন্ধটি কীরূপ তা বােঝাতে গিয়েই প্রখ্যাত বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ইউয়িং কার্যকারণের সম্বন্ধের ক্ষেত্রে প্রসক্তি সম্বন্ধের বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন ।

[         ] কার্যকারণ বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্বের মূল বক্তব্য :  প্রসক্তি সম্বন্ধ হল এমনই একপ্রকার অনিবার্যতার কোনাে সম্বন্ধ যা একটি বৈধ অবরোহ অবরােহ যুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় । কারণ , যে কোনো বৈধ অবরােহ যুক্তির ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে , সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয় । সেক্ষেত্রে যুক্তিবাক্য এবং সম্বন্ধটি একপ্রকার আবশ্যিক গ্রাহ্য সম্বন্ধরূপে গণ্য । বৈধ অবরোহ যুক্তিতে যদি যুক্তিবাক্য গুলি সত্যরূপে গ্রাহ্য হয় তবে তা থেকে একটি সত্য সিদ্ধান্ত নিঃসৃত না হয়ে পারে না । অর্থাৎ যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় । এরূপ বিষয়ের কোনাে ব্যতিক্রম হতে পারে না । অনুরূপভাবে বলা যায় যে , কারণের ধারণাটি থেকেও অনিবার্যভাবে কার্যের ধারণাটি নিঃসৃত হয় । কার্য নামক ঘটনাটি আছে অথচ তা কোনাে কারণ থেকে নিঃসৃত নয় — এমনটি  কখনােই হতে পারে না । সুতরাং , কার্য ও কারণের সম্বন্ধটি হল প্রসক্তি সম্বন্ধের অনুরূপ । 

[        ] প্রসক্তি সম্বন্ধের মূল বক্তব্যকে আমরা যেভাবে উল্লেখ করতে পারি , তা হল – 


i . কারণ ও কার্য কখনােই দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ।

ii . এই দুটি ঘটনা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত । 

iii কারণের ধারণা থেকে কার্যের ধারণাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় । অর্থাৎ এদের সম্বন্ধটি অনিবার্যতার সম্বন্ধ । 

iv . কারণ থেকে কার্যের নিঃসরণের বিষয়টি যুক্তিবাক্য এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের সঙ্গে তুলনীয় । কারণকে হেতুরূপে এবং কার্যকে তার ফল বা সিদ্ধান্তরূপে গণ্য করা হয় । 


v . কার্যকারণ সম্বন্ধের ধারণা হল একটি সহজাত ধারণা । এরূপ সহজাত ধারণা আমাদের আছে বলেই আমরা ধারণা দুটিকে পাশাপাশি রেখে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করতে পারি । 

[         ]  প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউমের আগে পর্যন্ত মতবাদটি বিশেষ কোনাে সমালােচনার মুখােমুখি আসেনি । কিন্তু হিউম তার অভিজ্ঞতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এরূপ মতবাদটির কঠোর সমালােচনা করেছেন । এ সম্পর্কে হিউমের অভিযােগগুলি হল—  


প্রথমত , কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কারণ ও কার্য নামক ঘটনা দুটিকে প্রত্যক্ষ করা যায় ঠিকই , কিন্তু তাদের মধ্যে যে প্রসক্তি বা অনিবার্যতার সম্বন্ধ আছে — তাকে কীভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় ? এরূপ বিষয়টি তাই কখনােই অভিজ্ঞতার নিরিখে গ্রাহ্য নয় ।  


দ্বিতীয়ত , কার্য ও কারণের মধ্যে যদি প্রসক্তি বা অনিবার্যতার সম্বন্ধ থেকেই থাকে তাহলে কারণ - কে বিশ্লেষণ করলে কার্য-র ধারণাটি পাওয়া যেত । কিন্তু কখনােই পাওয়া যায় না ৷ কারণ জলকে (কারণ )বিশ্লেষণ করলে আমরা তৃষ্ণা নিবারণের (কাৰ্য) বিষয়টিকে মােটেই পাই না । 

তৃতীয়ত , প্রসক্তিবাদীরা কার্যকারণের সম্বন্ধটিকে বৈধ অবরােহ যুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন — যা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয় । কারণ , কার্যকারণ সম্বন্ধে বিষয়টি হল অভিজ্ঞতালব্ধ আরােহ অনুমানের বিষয়, কখনােই অবরোহ অনুমানের বিষয় নয় । 


চতুর্থত , প্রসক্তিবাদীরা কারণ ও হেতুকে একই অর্থে প্রয়ােগ করেছেন । কিন্তু কারণ ও হেতু কখনোই একই অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে না । হেতু শব্দটি কারণ ছাড়াও , ‘যেহেতু’, ‘এজন্য’ প্রভৃতিকেও বোঝাতে পারে ।




শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২

আত্মগত ভাববাদের পরিপ্রেক্ষিতে বার্কলের মূল বক্তব্যটি কি ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer আত্মগত ভাববাদের পরিপ্রেক্ষিতে বার্কলের মূল বক্তব্যটি কি attmagoto vabbader poriprekkhite barkoler mul boktboti ki


উত্তর : বার্কলের মতে ,এই জগতে শুধুমাত্র জ্ঞাতার মন এবং মনের ধারণাই আছে । এর অতিরিক্ত আর কোনাে কিছুই নেই । আর ধারণাগুলি অবশ্যই জ্ঞাতার মননির্ভর । পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে এরূপ মতবাদই আত্মগত ভাববাদ নামে খ্যাত । আত্মগত ভাববাদের সপক্ষে বার্কলের মূল বক্তব্যগুলি হল— 

[        ] জ্ঞানের মৌল উৎস : ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাই হল আমাদের সমস্ত জ্ঞানের মৌল উৎস । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা -নিরপেক্ষভাবে কোনাে জ্ঞানই উৎসারিত  হতে পারে না । 


[        ] বস্তুর ধারণা বা বস্তুধর্ম: ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় আমরা যা জানতে পারি , তা হল বস্তুর ধারণা , কখনােই বস্তু নয় । বস্তু হল আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার বাইরের বিষয় । বস্তুর ধারণাকে সাধারণত বস্তু বা বস্তুধর্মরূপে উল্লেখ করা হয়। কারণ ,ধারণার মাধ্যমেই আমরা বস্তুকে জানি ।


[        ] জড়দ্রব্যের অস্তিত্ব অলীক : ধারণার পশ্চাতে যে অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় আধাররূপ জড়দ্রব্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়েছে , তা অবশ্যই এক যুক্তিহীন ও অবাস্তব ব্যাপার । 

[        ] মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যকে অস্বীকার : ধারণা গঠিত হয় মুখ্য ও গৌণ গুণের সমন্বয়ে । বার্কলে মুখ্য ও গৌণ গুণের পার্থক্যকে অস্বীকার করেছেন । তার মতে , মুখ্য ও গৌণ — এই উভয়প্রকার গুণই হল জ্ঞাতার মননির্ভর ।


[          ] অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর : বার্কলের আত্মগত ভাববাদের দাবি হল যে, আমাদের প্রত্যক্ষের ওপর কোনাে কিছুর অস্তিত্ব নির্ভরশীল হয় । তাঁর মূল তত্ত্বই হল অস্তিত্ব প্রত্যক্ষনির্ভর । 



[          ] একমাত্র অস্তিত্বশীল বিষয় হল ধারণা : শুধুমাত্র ধারণাই হল অস্তিত্বশীল বিষয় , কারণ এগুলিকে প্রত্যক্ষ করা যায় । ধারণা ছাড়া আর অন্য কোনাে কিছুই প্রত্যক্ষযােগ্য নয় এবং তাই সেগুলি অস্তিত্বশীলও নয় । 



[           ] জড়বস্তুর অনস্তিত্বশীলতা : এই জগতে শুধুমাত্র জ্ঞাতা, জ্ঞাতার মন ও তার ধারণাই আছে । জড়বস্তু বলে কোনাে কিছু নেই । 


[          ] অহংসর্বস্ববাদ : বার্কলের আত্মগত ভাববাদের অনিবার্য পরিণতি হল অহংসর্বস্ববাদ । কারণ , কেবলমাত্র আমার ( অহং ) এবং আমার ধারণা ছাড়া আর কোনাে কিছু স্বীকৃত হয়নি । অবশ্য এই অহংসর্বস্ববাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বার্কলে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করেছেন ।




শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২

কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ বিষয়ে হিউমের বক্তব্য উল্লেখ করাে । তার বক্তব্য কি সন্তোষজনক ?

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ বিষয়ে হিউমের বক্তব্য উল্লেখ করাে তার বক্তব্য কি সন্তোষজনক karon o karjer sombodho bishoye hiumer boktbo ullekh koro tar boktbo ki sontoshjonok


উত্তর : কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়ে বুদ্ধিবাদীদের বিপরীত এক মতবাদ প্রচার করেন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম ৷ বুদ্ধিবাদীদের মতে ,কার্য ও কারণের মধ্যে একপ্রকার অনিবার্যতার বা আবশ্যিকতার সম্বন্ধ আছে । কিন্তু অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম তা অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন —কার্যকারণের ধারণাটি হল অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় । আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এরূপ বিষয়টিকে পেয়ে থাকি । সুতরাং বলা যায় যে, বুদ্ধিবাদীদের মতবাদের বিরুদ্ধ বিষয়টির ওপর ভিত্তি করেই হিউমের মতবাদটি গড়ে উঠেছে । 

[         ] হিউমের মতবাদের মূল বিষয : কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে হিউমের মতবাদটির দুটি দিক দেখা যায় । এই দুটি দিকের একটি হল তার নঞর্থক দিক এবং অপরটি হল তার সদর্থক দিক । নঞর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , তিনি কার্যকারণ সম্পর্কিত বুদ্ধিবাদীদের অনিবার্য বা প্রসক্তি মতবাদকে খণ্ডন করেছেন । আর সদর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , হিউম তার কার্যকারণ সম্পর্কিত অভিমতটিকে সরাসরিভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন । 



[          ] হিউমের কার্যকারণ তত্ত্বের নঞর্থক দিক : হিউম তার কার্যকারণ তত্ত্বের নঞর্থক দিকে বুদ্ধিবাদীদের অনিবার্যতার সম্বন্ধটিকে নস্যাৎ করেছেন । তার মতে , বুদ্ধিবাদীরা কার্যকারণের ক্ষেত্রে যে অনিবার্যতার কথা বলেন , তা কখনােই আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না । আর ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় যা পাওয়া যায় না, তাকে কখনােই যথার্থ জ্ঞানরূপে গণ্য করা যায় না । তিনি বলেন — কার্য ও কারণের বিষয় দুটিকে আমাদের অভিজ্ঞতায় পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে যে আবশ্যিক সম্বন্ধ আছে , তাকে কখনােই অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না । সুতরাং , কার্য ও কারণের মধ্যে অনিবার্যতার সম্বন্ধটি নিরর্থক । 

[         ] হিউমের কার্যকারণ তত্ত্বের সদর্থক দিক : হিউম তার সদর্থক দিকের ক্ষেত্রে দাবি করেন যে , কার্য ও কারণ হল দুটি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা । এদের মধ্যে কোনাে সম্বন্ধই নেই । যদি বা থাকেও , তবে তা কখনােই অনিবার্যতার সম্বন্ধ নয় । আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দুটি ঘটনাকে পরপর ঘটতে দেখি । এদের মধ্যে প্রথমে যেটা ঘটে ,তা হল —কারণ এবং পরে যেটা ঘটে , তা হল কার্য । এই কারণ নামক ঘটনাটি হল কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা এবং কার্য নামক ঘটনাটি হল কারণের নিয়ত অনুবর্তী ঘটনা । এভাবেই আমরা ঘটনা দুটিকে বার বার ঘটতে দেখে আমাদের মনে একপ্রকার মানসিক প্রবণতার সৃষ্টি হয় যে ,একটি ঘটলে অপরটিও ঘটবে । এভাবেই হিউম দাবি করেন যে, কার্যকারণ সম্বন্ধ হল এক নিয়ত বা সতত পৌবাপর্য সম্বন্ধ । 

[         ] কার্যকারণ সম্পর্কিত হিউমের মতবাদও গ্রহণযােগ্য নয় । কারণ , দুটি ঘটনার মধ্যে নিয়মিত পৌর্বাপর্য বা সতত সংযােগ থাকলেই যে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকবে —এমন দাবি করা আদৌ সংগত নয় । আবার , হিউমের মতবাদটিকে যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয় ,তাহলে আমাদের কে স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয় যে ,যেহেতু দিন ও রাত পরপর ঘটে , সেহেতু এই দুটি ঘটনাও কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ । কিন্তু দিন ও রাত কোনােটিই কারও কারণ বা কার্য নয় । এই দুটি ঘটনাই হল অন্য একটি সার্বিক ঘটনা থেকে নিঃসৃত । এই দুটি ঘটনা তাই সহকার্যের সম্বন্ধে আবদ্ধ , কখনােই কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ নয় । সুতরাং , কার্যকারণ সম্পর্কিত হিউমের মতবাদটি কখনােই গ্রহণীয় হতে পারে না ।






বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২

জ্ঞানের উৎস ও স্বরূপ সম্পর্কে লকের মতবাদ সবিচার আলােচনা করাে ।

 

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer জ্ঞানের উৎস ও স্বরূপ সম্পর্কে লকের মতবাদ সবিচার আলােচনা করাে gganer utsoho o swarup somporke loker motobad sobichar alochona koro

উত্তর :  প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক জন লক হলেন একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক । তিনি বুদ্ধিবাদের বিরােধিতা করে দাবি করেন যে ,বুদ্ধি নয়, অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস । আর যে মতবাদ অনুযায়ী দাবি করা হয় —ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাই হল জ্ঞানের একমাত্র উৎস —সেই মতবাদকেই বলা হয় অভিজ্ঞতাবাদ । অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে সার্বিক ও নিশ্চিত জ্ঞান যে লাভ করা যায় — তা প্রথম প্রমাণ করেন বৈজ্ঞানিক নিউটন । কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, দার্শনিক লক পরবর্তীকালে এরূপ মতবাদটিকে একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদে ভূষিত করেছেন ।



[         ] লকের অভিমত : লক দাবি করেন যে ,আমাদের মনে এমন কিছুই নেই যা পূর্বে আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় ছিল না । সেকারণেই তিনি আমাদের মনে আগে থেকে থাকা সহজাত ধারণা এর বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন । বুদ্ধিবাদী দার্শনিক দেকার্ত জন্মের পূর্ব থেকে  আমাদের মনে সহজাত ধারণার বিষয়টিকে স্বীকার করে নিয়েছেন ৷ কিন্তু লক এরূপ বিষয়টিকে নস্যাৎ করেছেন । তিনি বলেন জন্মের সময়ে আমাদের মন থাকে এক অলিখিত সাদা কাগজের মতাে । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় আমাদের মনে নানারকম ধারণা মুদ্রিত হয় এবং আমরা এই ধারণার মাধ্যমেই পরােক্ষভাবে বস্তুজ্ঞান লাভ করে থাকি । 



[         ] লকের মতে জ্ঞানের স্বরূপ : লকের মতে , জ্ঞান হল ধারণাসমূহের মধ্যে মিল বা অমিল । এই ধারণা গঠিত হয় সরাসরিভাবে দেখা বস্তুর গুণের মাধ্যমে । লক দাবি করেন যে, আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় বৃদ্ধির দ্বারা সরাসরিভাবে যা প্রত্যক্ষ করি ,তা হল বস্তুর গুণ । এই গুণ হল দু প্রকারের — মুখ্যগুণ ও গৌণ গুণ । মুখ্য গুণ হল বস্তুর অবিচ্ছেদ্য গুণ ,আর গৌণ গুণ হল বস্তুর ওপর ব্যক্তিমনের বা জ্ঞাতার আরােপিত গুণ । এই উভয় প্রকার গুণ দিয়ে গঠিত হয় ধারণা । এই ধারণার মাধ্যমে বস্তুকে পরােক্ষে জানা যায় । ধারণাকে তাই বলা হয় বাহ্য বস্তুর প্রতিনিধি । সেকারণেই লকের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদকে বলা হয় প্রতিনিধিমূলক বস্তুবাদ বা প্রতিরূপী বস্তুবাদ । 



[          ] লকের বক্তব্যের সমালােচনা : লকের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ সূক্ষ্ম যুক্তিতর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও , তা কখনােই সমালােচনার উর্ধ্বে নয় । লকের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের বিরুদ্ধে তাই যে সমালােচনাগুলির উল্লেখ করা যায় , সেগুলি হল— 


i . শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব আরােপ করায় এবং বুদ্ধিবৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব না দেওয়ায় লকের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ একটি একপেশে মতবাদে পরিণত হয়েছে । কারণ , জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধিরও যে একটা গুরুত্বপূর্ণভূমিকা আছে — তা অস্বীকার করা যায় না । 


ii . দার্শনিক লক তার জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় বিশেষ বিশেষ বস্তুর ধারণার মাধ্যমে আরােহমূলক পদ্ধতিতে জ্ঞানের বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন । কিন্তু জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে আরােহমূলক পদ্ধতি ছাড়াও যে অবরােহমূলক পদ্ধতির ভূমিকা আছে — তা অস্বীকার করা যায় না । 



iii . বস্তু হল মূর্ত বিষয় , কিন্তু ধারণা হল অমূর্ত বিষয় । ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা মূর্ত বিষয়কেই দেখতে পারি , অমূর্ত বিষয়কে নয় । অথচ লক দাবি করেন যে , আমরা সরাসরিভাবে ধারণাকে প্রত্যক্ষ করেই পরােক্ষ বস্তুজ্ঞান লাভ করি । একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিসেবে লকের এরূপ মতটি কখনােই সমর্থনযােগ্য নয় ।




বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

কান্টের বিচারবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কান্টের বিচারবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও kanter bicharbader songkhipto biboron dao


উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদগুলির মধ্যে কান্টের বিচারবাদ হল একটি অন্যতম দার্শনিক মতবাদ । জ্ঞানের উৎপত্তির বিষয়ে কান্টের বিচারবাদের পূর্বে বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের পরিচয় পাওয়া যায় । কিন্তু এই দুটি মতবাদই হল চরমপন্থী ও একদেশদর্শী মতবাদরূপে গণ্য । জ্ঞানের উৎপত্তির বিষয়ের এই দুটি মতবাদ কখনােই সন্তোষজনক নয় । কারণ , বুদ্ধিবাদ শুধুমাত্র বুদ্ধিকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে স্বীকার করেছে এবং অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করেছে । অপরদিকে , অভিজ্ঞতাবাদ শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে উল্লেখ করেছে এবং বুদ্ধির ভূমিকাকে অস্বীকার করেছে ৷ ফলত এই দুটি জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদই নির্বিচারবাদে পরিণত হয়েছে । দার্শনিক কান্ট এই দুটি জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের সমন্বয় ঘটিয়ে বিচারবাদ এর সূচনা করেছেন । 

[          ] কান্টের জ্ঞানতাত্ত্বিক চিন্তাধারার তিনটি পর্যায় : কান্টের জ্ঞানােৎপত্তির চিন্তাধারায় বিকাশের ক্ষেত্রে মােটামুটি তিনটি পর্যায় পরিলক্ষিত হয় । প্রথম পর্যায়ে তিনি অধিবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রখ্যাত বুদ্ধিবাদী দার্শনিক লাইবনিজ ও ভলফের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন ৷ এই পর্যায়ের শেষের দিকে অবশ্য তিনি বুদ্ধিবাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন । দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের অভিজ্ঞতাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন । এই পর্যায়কে তিনি উপলব্ধি করতে সমর্থ হন যে, অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের প্রাথমিক উৎস । তিনি আরও উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, হিউমই তাকে বিচার -বিযুক্ত নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেছে । আর তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ে কান্ট বিশুদ্ধ বুদ্ধির বিচারমূলক দর্শন এর প্রবর্তন করেন । তার এরুপ প্রয়াসটি 1718 খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত Critique of Pure Reason গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয় । 

[         ] বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের সমন্বিত আকার হিসেবে বিচারবাদ : প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তার বিচারবাদে বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে এক সুচারু সমন্বয়সাধন করার চেষ্টা করেছেন । জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার অবদানকে তিনি নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে উভয়কেই জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্তরূপে উল্লেখ করেছেন । তিনি একান্ত নিরপেক্ষভাবে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার সামর্থ্য , শর্ত, সীমা ও সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয়ের আলােচনা করেই তার নিজস্ব মতবাদে উপনীত হয়েছেন । সেকারণেই জ্ঞানের , উৎপত্তি বিষয়ক কান্টের মতবাদকে বিচারবাদ রূপে গণ্য করা হয় । 

[          ] জ্ঞানের উপাদান ও আকার : কান্ট বিচারবিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে , জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধির একটা ভূমিকা আছে ঠিকই , কিন্তু সেটাই সব কিছু নয় । একইভাবে জ্ঞানের উৎপত্তি ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে ঠিকই , কিন্তু শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়  অভিজ্ঞতায় জ্ঞানের চরম ও পরম উৎসরূপে গণ্য হতে পারে না । বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা তাই উভয়েই একদেশদশী মতবাদ রূপে গণ্য । তিনি দাবি করেন যে , আমাদের জ্ঞান উৎসারিত হতে পারে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার এক সুচারু সমন্বয়ে । তার মতে ,ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা আমাদের জ্ঞানের উপাদান সরবরাহ করে , আর বুদ্ধি সেই সমস্ত উপাদানের ওপর আকার প্রয়ােগ করে জ্ঞানের সৃষ্টি করে । 

[          ] কান্টের সিদ্ধান্ত : কান্টের মতানুসারে , মানুষের মন বাইরে থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংবেদন গ্রহণ করে । এই সংবেদনগুলি পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন । কান্ট এগুলির নাম দিয়েছেন বিভিন্ন প্রকারের ইন্দ্রিয়ানুভূতি । এগুলিই হল জ্ঞানের মৌল উপাদান । এগুলিকে যেমনভাবে ইন্দ্রিয়ানুভবের মাধ্যমে পাওয়া যায়,ঠিক তেমনভাবে যদি গ্রহণ করা যায় ,তাহলে সেগুলির কোনাে অর্থ থাকে না । এর ফলে নিছক এগুলি কোনাে জ্ঞান দিতে পারে না । এর জন্য প্রয়ােজন হল আকার প্রদান । আর আমাদের বুদ্ধি বা প্রভাবই এরূপ কাজটি সম্পন্ন করে । সুতরাং , আকারবর্জিত উপাদান অন্ধ বা সুনির্দিষ্ট কোনােকিছুই নয়, আবার উপাদানবর্জিত আকারও নিছকই শূন্য ।