বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

কান্টের বিচারবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer কান্টের বিচারবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও kanter bicharbader songkhipto biboron dao


উত্তর : জ্ঞানের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদগুলির মধ্যে কান্টের বিচারবাদ হল একটি অন্যতম দার্শনিক মতবাদ । জ্ঞানের উৎপত্তির বিষয়ে কান্টের বিচারবাদের পূর্বে বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের পরিচয় পাওয়া যায় । কিন্তু এই দুটি মতবাদই হল চরমপন্থী ও একদেশদর্শী মতবাদরূপে গণ্য । জ্ঞানের উৎপত্তির বিষয়ের এই দুটি মতবাদ কখনােই সন্তোষজনক নয় । কারণ , বুদ্ধিবাদ শুধুমাত্র বুদ্ধিকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে স্বীকার করেছে এবং অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করেছে । অপরদিকে , অভিজ্ঞতাবাদ শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাকেই জ্ঞানের মৌল উৎসরূপে উল্লেখ করেছে এবং বুদ্ধির ভূমিকাকে অস্বীকার করেছে ৷ ফলত এই দুটি জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদই নির্বিচারবাদে পরিণত হয়েছে । দার্শনিক কান্ট এই দুটি জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত মতবাদের সমন্বয় ঘটিয়ে বিচারবাদ এর সূচনা করেছেন । 

[          ] কান্টের জ্ঞানতাত্ত্বিক চিন্তাধারার তিনটি পর্যায় : কান্টের জ্ঞানােৎপত্তির চিন্তাধারায় বিকাশের ক্ষেত্রে মােটামুটি তিনটি পর্যায় পরিলক্ষিত হয় । প্রথম পর্যায়ে তিনি অধিবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রখ্যাত বুদ্ধিবাদী দার্শনিক লাইবনিজ ও ভলফের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন ৷ এই পর্যায়ের শেষের দিকে অবশ্য তিনি বুদ্ধিবাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন । দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউমের অভিজ্ঞতাবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন । এই পর্যায়কে তিনি উপলব্ধি করতে সমর্থ হন যে, অভিজ্ঞতাই জ্ঞানের প্রাথমিক উৎস । তিনি আরও উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, হিউমই তাকে বিচার -বিযুক্ত নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেছে । আর তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ে কান্ট বিশুদ্ধ বুদ্ধির বিচারমূলক দর্শন এর প্রবর্তন করেন । তার এরুপ প্রয়াসটি 1718 খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত Critique of Pure Reason গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয় । 

[         ] বুদ্ধিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের সমন্বিত আকার হিসেবে বিচারবাদ : প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তার বিচারবাদে বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে এক সুচারু সমন্বয়সাধন করার চেষ্টা করেছেন । জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার অবদানকে তিনি নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে উভয়কেই জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে আবশ্যিক শর্তরূপে উল্লেখ করেছেন । তিনি একান্ত নিরপেক্ষভাবে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার সামর্থ্য , শর্ত, সীমা ও সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয়ের আলােচনা করেই তার নিজস্ব মতবাদে উপনীত হয়েছেন । সেকারণেই জ্ঞানের , উৎপত্তি বিষয়ক কান্টের মতবাদকে বিচারবাদ রূপে গণ্য করা হয় । 

[          ] জ্ঞানের উপাদান ও আকার : কান্ট বিচারবিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে , জ্ঞানের উৎপত্তির ক্ষেত্রে বুদ্ধির একটা ভূমিকা আছে ঠিকই , কিন্তু সেটাই সব কিছু নয় । একইভাবে জ্ঞানের উৎপত্তি ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে ঠিকই , কিন্তু শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়  অভিজ্ঞতায় জ্ঞানের চরম ও পরম উৎসরূপে গণ্য হতে পারে না । বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা তাই উভয়েই একদেশদশী মতবাদ রূপে গণ্য । তিনি দাবি করেন যে , আমাদের জ্ঞান উৎসারিত হতে পারে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার এক সুচারু সমন্বয়ে । তার মতে ,ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা আমাদের জ্ঞানের উপাদান সরবরাহ করে , আর বুদ্ধি সেই সমস্ত উপাদানের ওপর আকার প্রয়ােগ করে জ্ঞানের সৃষ্টি করে । 

[          ] কান্টের সিদ্ধান্ত : কান্টের মতানুসারে , মানুষের মন বাইরে থেকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংবেদন গ্রহণ করে । এই সংবেদনগুলি পারস্পরিকভাবে স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন । কান্ট এগুলির নাম দিয়েছেন বিভিন্ন প্রকারের ইন্দ্রিয়ানুভূতি । এগুলিই হল জ্ঞানের মৌল উপাদান । এগুলিকে যেমনভাবে ইন্দ্রিয়ানুভবের মাধ্যমে পাওয়া যায়,ঠিক তেমনভাবে যদি গ্রহণ করা যায় ,তাহলে সেগুলির কোনাে অর্থ থাকে না । এর ফলে নিছক এগুলি কোনাে জ্ঞান দিতে পারে না । এর জন্য প্রয়ােজন হল আকার প্রদান । আর আমাদের বুদ্ধি বা প্রভাবই এরূপ কাজটি সম্পন্ন করে । সুতরাং , আকারবর্জিত উপাদান অন্ধ বা সুনির্দিষ্ট কোনােকিছুই নয়, আবার উপাদানবর্জিত আকারও নিছকই শূন্য ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন