কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ বিষয়ে হিউমের বক্তব্য উল্লেখ করাে । তার বক্তব্য কি সন্তোষজনক ?
উত্তর : কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়ে বুদ্ধিবাদীদের বিপরীত এক মতবাদ প্রচার করেন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম ৷ বুদ্ধিবাদীদের মতে ,কার্য ও কারণের মধ্যে একপ্রকার অনিবার্যতার বা আবশ্যিকতার সম্বন্ধ আছে । কিন্তু অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউম তা অস্বীকার করেছেন । তিনি বলেন —কার্যকারণের ধারণাটি হল অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় । আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এরূপ বিষয়টিকে পেয়ে থাকি । সুতরাং বলা যায় যে, বুদ্ধিবাদীদের মতবাদের বিরুদ্ধ বিষয়টির ওপর ভিত্তি করেই হিউমের মতবাদটি গড়ে উঠেছে ।
[ ] হিউমের মতবাদের মূল বিষয : কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে হিউমের মতবাদটির দুটি দিক দেখা যায় । এই দুটি দিকের একটি হল তার নঞর্থক দিক এবং অপরটি হল তার সদর্থক দিক । নঞর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , তিনি কার্যকারণ সম্পর্কিত বুদ্ধিবাদীদের অনিবার্য বা প্রসক্তি মতবাদকে খণ্ডন করেছেন । আর সদর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , হিউম তার কার্যকারণ সম্পর্কিত অভিমতটিকে সরাসরিভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ।
[ ] হিউমের কার্যকারণ তত্ত্বের নঞর্থক দিক : হিউম তার কার্যকারণ তত্ত্বের নঞর্থক দিকে বুদ্ধিবাদীদের অনিবার্যতার সম্বন্ধটিকে নস্যাৎ করেছেন । তার মতে , বুদ্ধিবাদীরা কার্যকারণের ক্ষেত্রে যে অনিবার্যতার কথা বলেন , তা কখনােই আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না । আর ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় যা পাওয়া যায় না, তাকে কখনােই যথার্থ জ্ঞানরূপে গণ্য করা যায় না । তিনি বলেন — কার্য ও কারণের বিষয় দুটিকে আমাদের অভিজ্ঞতায় পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে যে আবশ্যিক সম্বন্ধ আছে , তাকে কখনােই অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না । সুতরাং , কার্য ও কারণের মধ্যে অনিবার্যতার সম্বন্ধটি নিরর্থক ।
[ ] হিউমের কার্যকারণ তত্ত্বের সদর্থক দিক : হিউম তার সদর্থক দিকের ক্ষেত্রে দাবি করেন যে , কার্য ও কারণ হল দুটি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা । এদের মধ্যে কোনাে সম্বন্ধই নেই । যদি বা থাকেও , তবে তা কখনােই অনিবার্যতার সম্বন্ধ নয় । আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দুটি ঘটনাকে পরপর ঘটতে দেখি । এদের মধ্যে প্রথমে যেটা ঘটে ,তা হল —কারণ এবং পরে যেটা ঘটে , তা হল কার্য । এই কারণ নামক ঘটনাটি হল কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা এবং কার্য নামক ঘটনাটি হল কারণের নিয়ত অনুবর্তী ঘটনা । এভাবেই আমরা ঘটনা দুটিকে বার বার ঘটতে দেখে আমাদের মনে একপ্রকার মানসিক প্রবণতার সৃষ্টি হয় যে ,একটি ঘটলে অপরটিও ঘটবে । এভাবেই হিউম দাবি করেন যে, কার্যকারণ সম্বন্ধ হল এক নিয়ত বা সতত পৌবাপর্য সম্বন্ধ ।
[ ] কার্যকারণ সম্পর্কিত হিউমের মতবাদও গ্রহণযােগ্য নয় । কারণ , দুটি ঘটনার মধ্যে নিয়মিত পৌর্বাপর্য বা সতত সংযােগ থাকলেই যে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকবে —এমন দাবি করা আদৌ সংগত নয় । আবার , হিউমের মতবাদটিকে যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয় ,তাহলে আমাদের কে স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয় যে ,যেহেতু দিন ও রাত পরপর ঘটে , সেহেতু এই দুটি ঘটনাও কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ । কিন্তু দিন ও রাত কোনােটিই কারও কারণ বা কার্য নয় । এই দুটি ঘটনাই হল অন্য একটি সার্বিক ঘটনা থেকে নিঃসৃত । এই দুটি ঘটনা তাই সহকার্যের সম্বন্ধে আবদ্ধ , কখনােই কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ নয় । সুতরাং , কার্যকারণ সম্পর্কিত হিউমের মতবাদটি কখনােই গ্রহণীয় হতে পারে না ।
কোন মন্তব্য নেই