রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

প্রসক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে ? কারণ ও কার্য বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালােচনা - সহ ব্যাখ্যা করাে ।

একাদশ শ্রেণী দর্শন প্রশ্নোত্তর xi class 11 philosophy Question answer প্রসক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে কারণ ও কার্য বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালােচনা সহ ব্যাখ্যা করাে prosokti sombondha kake bole karon o karjo bishoye prosokti totto somalochonasoho bakkha koro



উত্তর : কার্যকারণ সম্পর্কে বুদ্ধিবাদীদের অভিমতকে আবশ্যিক বা অবশ্যম্ভব মতবাদরূপে উল্লেখ করা হয় । এরূপ অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্যের ধারণাটি অনিবার্য বা আবশ্যিকতার কারণের ধারণা থেকে নিঃসৃত হয় । অর্থাৎ , কারণ ও কার্যের মধ্যে একপ্রকার আবশ্যিকতার সম্পর্ক আছে । কারণ ও কার্যের মধ্যে এই আবশ্যিকতার সম্বন্ধটি কীরূপ তা বােঝাতে গিয়েই প্রখ্যাত বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ইউয়িং কার্যকারণের সম্বন্ধের ক্ষেত্রে প্রসক্তি সম্বন্ধের বিষয়টিকে উল্লেখ করেছেন ।

[         ] কার্যকারণ বিষয়ে প্রসক্তি তত্ত্বের মূল বক্তব্য :  প্রসক্তি সম্বন্ধ হল এমনই একপ্রকার অনিবার্যতার কোনাে সম্বন্ধ যা একটি বৈধ অবরোহ অবরােহ যুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় । কারণ , যে কোনো বৈধ অবরােহ যুক্তির ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে , সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত হয় । সেক্ষেত্রে যুক্তিবাক্য এবং সম্বন্ধটি একপ্রকার আবশ্যিক গ্রাহ্য সম্বন্ধরূপে গণ্য । বৈধ অবরোহ যুক্তিতে যদি যুক্তিবাক্য গুলি সত্যরূপে গ্রাহ্য হয় তবে তা থেকে একটি সত্য সিদ্ধান্ত নিঃসৃত না হয়ে পারে না । অর্থাৎ যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় । এরূপ বিষয়ের কোনাে ব্যতিক্রম হতে পারে না । অনুরূপভাবে বলা যায় যে , কারণের ধারণাটি থেকেও অনিবার্যভাবে কার্যের ধারণাটি নিঃসৃত হয় । কার্য নামক ঘটনাটি আছে অথচ তা কোনাে কারণ থেকে নিঃসৃত নয় — এমনটি  কখনােই হতে পারে না । সুতরাং , কার্য ও কারণের সম্বন্ধটি হল প্রসক্তি সম্বন্ধের অনুরূপ । 

[        ] প্রসক্তি সম্বন্ধের মূল বক্তব্যকে আমরা যেভাবে উল্লেখ করতে পারি , তা হল – 


i . কারণ ও কার্য কখনােই দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ।

ii . এই দুটি ঘটনা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত । 

iii কারণের ধারণা থেকে কার্যের ধারণাটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় । অর্থাৎ এদের সম্বন্ধটি অনিবার্যতার সম্বন্ধ । 

iv . কারণ থেকে কার্যের নিঃসরণের বিষয়টি যুক্তিবাক্য এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের সঙ্গে তুলনীয় । কারণকে হেতুরূপে এবং কার্যকে তার ফল বা সিদ্ধান্তরূপে গণ্য করা হয় । 


v . কার্যকারণ সম্বন্ধের ধারণা হল একটি সহজাত ধারণা । এরূপ সহজাত ধারণা আমাদের আছে বলেই আমরা ধারণা দুটিকে পাশাপাশি রেখে তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করতে পারি । 

[         ]  প্রখ্যাত অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ডেভিড হিউমের আগে পর্যন্ত মতবাদটি বিশেষ কোনাে সমালােচনার মুখােমুখি আসেনি । কিন্তু হিউম তার অভিজ্ঞতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এরূপ মতবাদটির কঠোর সমালােচনা করেছেন । এ সম্পর্কে হিউমের অভিযােগগুলি হল—  


প্রথমত , কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কারণ ও কার্য নামক ঘটনা দুটিকে প্রত্যক্ষ করা যায় ঠিকই , কিন্তু তাদের মধ্যে যে প্রসক্তি বা অনিবার্যতার সম্বন্ধ আছে — তাকে কীভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় ? এরূপ বিষয়টি তাই কখনােই অভিজ্ঞতার নিরিখে গ্রাহ্য নয় ।  


দ্বিতীয়ত , কার্য ও কারণের মধ্যে যদি প্রসক্তি বা অনিবার্যতার সম্বন্ধ থেকেই থাকে তাহলে কারণ - কে বিশ্লেষণ করলে কার্য-র ধারণাটি পাওয়া যেত । কিন্তু কখনােই পাওয়া যায় না ৷ কারণ জলকে (কারণ )বিশ্লেষণ করলে আমরা তৃষ্ণা নিবারণের (কাৰ্য) বিষয়টিকে মােটেই পাই না । 

তৃতীয়ত , প্রসক্তিবাদীরা কার্যকারণের সম্বন্ধটিকে বৈধ অবরােহ যুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন — যা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয় । কারণ , কার্যকারণ সম্বন্ধে বিষয়টি হল অভিজ্ঞতালব্ধ আরােহ অনুমানের বিষয়, কখনােই অবরোহ অনুমানের বিষয় নয় । 


চতুর্থত , প্রসক্তিবাদীরা কারণ ও হেতুকে একই অর্থে প্রয়ােগ করেছেন । কিন্তু কারণ ও হেতু কখনোই একই অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে না । হেতু শব্দটি কারণ ছাড়াও , ‘যেহেতু’, ‘এজন্য’ প্রভৃতিকেও বোঝাতে পারে ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন