ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইতিহাস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা কোন কোন কাজে নিন্মুক্ত হত ? রোমে ক্রীতদাসদের জীবন কেমন ছিল ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা কোন কোন কাজে নিন্মুক্ত হত রোমে ক্রীতদাসদের জীবন কেমন ছিল prachin romer kritodasra kon kon kaje nimnukto hoto rome kritodasder jibon kemon chilo


উত্তর : প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস ব্যবস্থা সেখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিল । রােমের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর রাষ্ট্রেরও বিভিন্ন কাজ করত । 
গৃহকার্য : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজ করে দিত । পরিবারের রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি গৃহের যাবতীয় কাজ ক্রীতদাসদের করতে হত । ফলে প্রভুর পরিবারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসিতা বৃদ্ধি পেত ।  

কৃষি ও খামারের কাজ : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কৃষিকাজে নিযুক্ত থেকে খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করত । রােমান সাম্রাজ্যের শহরগুলি ক্রীতদাসদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল । 


ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ : ক্রীতদাসরা প্রভুর অনুপস্থিতিতে প্রভুর দোকান পরিচালনা করত , ক্ষৌরকর্ম করত,সুদে টাকা ধার দিত ইত্যাদি ।  


নির্মাণকার্য : ক্রীতদাসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সাধারণ গৃহ , অট্টালিকা , পাকা পয়ঃপ্রণালী , রাস্তাঘাট, মল্লভূমি বা ক্রীড়াক্ষেত্র, সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করা । এইসব পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি ক্রীতদাসরা সম্পন্ন করার ফলে রােম সুন্দরভাবে সেজে উঠেছিল । 
কর্মকারের কাজ : ক্রীতদাসরা কাঠ মিস্ত্রিএবং কামার হিসেবেও কাজ করত । তারা বিভিন্ন ভাঙা সামগ্রী, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি সারাই করত এবং ভেড়ার লােম পাকিয়ে বিভিন্ন বস্ত্র উৎপাদন করত ।  


সৈন্যবাহিনীতে কাজ : শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য বন্দি হয়ে রােমে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল । এরূপ ক্রীতদাসদের অনেককেই যােচ্ছা হিসেবে রােমান সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত । 


[         ]  অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ করা , প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে ক্রীতদাসদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল ।  


বিক্রি ও হত্যা : ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি । প্রভু ইচ্ছা করলে তাদের বাজারের পণ্যের মতাে বিক্রি করতে বা পশুর মতাে হত্যাও করতে পারত । 

শারীরিক নির্যাতন : ক্রীতদাসের মালিক তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দিয়ে বেশি কাজ করানাের উদ্দেশ্যে তার ওপর সর্বদা শারীরিক নির্যাতন চালাত । এর ফলে ক্রীতদাসের দেহে সারা বছরই ও কালচে দাগ হয়ে থাকত । 


শৃঙ্খলিত পশুর জীবন : ক্রীতদাসরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বাড়ির গৃহপালিত পশুর মতাে ক্রীতদাসের হাতে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত । 
 

পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ : কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ যুবতি ক্রীতদাসীদের পতিতালয়ে বিক্রি করে তাদের পতিতাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত । 

পালানাের চেষ্টার শাস্তি : কোনাে ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুক দিয়ে পেটানাে বা উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা দেওয়া হত । 

গ্ল্যাডিয়েটরের জীবন : রােমের নাগরিকদের আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে গ্ল্যাডিয়েটর নামের ক্রীতদাস যােদ্ধাদের ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়তে হত । অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু হত ।  


ক্রীতদাস পরিবারের দুর্ভোগ : ক্রীতদাসের পরিবারের সদস্যরাও প্রভুর দাসে পরিণত হত এবং তারাও একই ধরনের শাস্তি ও নির্যাতন ভােগ করত । 


উপসংহার : সর্বদা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার এসব ক্রীতদাসদের জীবন ছিল অন্ধকারে ঢাকা । তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রভূ ও ক্রীতদাসের ভালাে সম্পর্কও দেখা যেত ।





বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলী উলেখ করাে ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্তপ্রভুদের প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলী উলেখ করাে modheyjuge europe samontoprobhuder prodhan khomota o karjaboli ullekh koro


উত্তর : সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ছিল নিম্নরূপ 

শাসনকার্য : বিভিন্ন স্তরের সামন্তপ্রভুরা ছিলেন তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের প্রধান শাসক । তাঁরা দুর্গ নির্মাণ করে সেখান থেকে এলাকাটির শাসন পরিচালনা করতেন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন । 
বিচারকার্য : সামন্তপ্রভুরা তাদের অধীনস্থ অঞ্চলের প্রজাদের যাবতীয় অন্যায়-অবিচার , বিবাদ -বিসংবাদের বিচার করতেন । প্রজাদের বিচার করার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকায় তিনি একটি বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করতেন । 

সংস্কারকার্য : সামন্তপ্রভু তার অধীনস্থ এলাকার রাস্তাঘাট , খাল সাঁকো প্রভৃতি নির্মাণ ও মেরামত করতেন । এ ছাড়া তিনি স্থানীয় এলাকায় বাজার বসাতেন , পশুচারণ ভূমি সৃষ্টিকরতেন । 

কর আদায় : সামন্তপ্রভু নিজ এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে কর বা খাজনা আদায় করতেন । ভূমিকর ,উৎপাদন কর , সম্পত্তি কর ( টাইলে ) সহ বিভিন্ন প্রকার কর তিনি আদায় করতেন । প্রভু প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন তার খামার বাড়িতে বা খাস জমিতে তার অধীনস্থ কৃষককে কর্ভি বা বেগার শ্রমদানে বাধ্য করতেন । কৃষকদের চার্চকে ‘টাইদ’ নামে ধর্মর্কর দিতে হত । 

অধীনস্থ সামন্তের আশ্রয় : ঊধ্বর্তন সামন্তপ্রভু তার অধীনস্থ বা অধস্তন সামন্তদের আশ্রয়দাতা এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করতেন । অধীনস্থ সামন্তের অকালমৃত্যু হলে মৃতের নাবালক পুত্রের অভিভাবকত্বও ঊধ্বর্তন সামন্তপ্রভু গ্রহণ করতেন এবং তার জমিদারি দেখাশােনা করতেন । 

সেনা সরবরাহ : সামন্তপ্রভুরা বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজের এলাকাকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তার ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভু বা রাজাকে সৈন্য ও প্রয়ােজনীয় সামরিক সাহায্য দিতেন । 

জমিদারি বাজেয়াপ্ত : উত্তরাধিকারী না রেখে কোনাে সামন্তের মৃত্যু হলে ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভু তার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করে সেখানে নতুন জমিদার নিযুক্ত করতেন । তা ছাড়া কোনাে সামন্ত তাঁর জমিদারি চালাতে ব্যর্থ হলে বা প্রভুর বিরােধিতা করলে ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভু সেই সামন্তের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করতে পারতেন । 


উপসংহার : সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের অগণিত কৃষক থেকে শুরু করে সম্রাট পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক পিরামিডাকার ক্রমােচ্চ স্তর সৃষ্টি হয়েছিল । এই স্তরবিন্যাসে ঊর্ধ্বতন সামন্তপ্রভুর ক্ষমতা প্রয়ােগের ভিত্তি ছিল তার প্রতি তার অধস্তন সামন্তের আনুগত্য প্রদর্শন ।






মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০২২

ভারতে সুলতানি আমলে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত ? সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কতটা ভূমিকা ছিল ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer ভারতে সুলতানি আমলে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কতটা ভূমিকা ছিল bharote sultani amole krittodasra kon kon kaje nijukto hoto sultani juger arthonoitite krittodas prothar kotota bhumika chilo

উত্তর : সুলতানি যুগে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত করা হত । 

গৃহকার্য : সুলতানি যুগে বেশিরভাগ দাস গৃহকার্যে নিযুক্ত হত । দাসরা গৃহের রান্নাবান্না,গৃহ পরিষ্কার রাখা , উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি কাজকর্ম করত ।  

হারেমের দেখভাল : কিছু কিছু দাস হারেমের ( অন্দরমহল ) দেখাশােনা করত । এদের বলা হত ‘খােজা’ । বিদেশ থেকেও ‘খােজা’ দাস আমদানি করা হত । 

কারিগরের কাজ : কিছু দাস সুদক্ষ কারিগর হিসেবে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শিল্পসামগ্রী উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত ছিল । অলংকার শিল্প, কাঠের আসবাবপত্র , গৃহস্থালির টুকিটাকি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে দাসরা নিযুক্ত হত । 


প্রশাসন পরিচালনার কাজ : সুলতানগণ বিশেষ যােগ্যতা সম্পন্ন দাসদের প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত করতেন । কোনাে কোনাে যােগ্যতাসম্পন্ন দাস তার প্রভুর মৃত্যুর পরে সুলতান হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছেন । এ প্রসঙ্গে কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিসের নাম উল্লেখ করা যায় । 

ধর্মীয় কাজ : কোনাে কোনাে দাসকে ধর্মীয় কাজে নিয়ােগ করা হত । ধর্মীয় কাজের প্রচার ,ধর্মীয় সেবাকার্য প্রভৃতিতে দাসরা নিযুক্ত থাকত ।  

[      ] মালিকের মনােরঞ্জনের কাজ : মালিকের সঙ্গদান এবং মনােরঞ্জনের জন্যও কোনাে কোনো দাস নিয়ােজিত হত । প্রভুর সঙ্গে ভ্রমণে বা শিকারে সঙ্গ দেওয়া , গৃহে সঙ্গদান প্রভৃতি কাজে তাদের নিযুক্ত করা হত । 



[           ] সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কিছু কিছু প্রভাব পড়েছিল ।

কৃষির বিকাশে : সুলতানি আমলে কৃষিক্ষেত্রে প্রচুর ক্রীতদাস নিযুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল । ফলে কৃষি উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল । 


প্রযুক্তির উন্নতিতে : ক্রীতদাসদের প্রচেষ্টায় কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কারিগরি শিল্প — উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটেছিল । 
শাসকদের সম্পত্তি বৃদ্ধিতে : সুলতানি আমলে শাসকরা তাদের খাসজমিতে ক্রীতদাসদের নিয়ােগ করে উৎপাদন কার্য সচল রাখত । ক্রীতদাসদের শ্রমের ফসল হিসেবে শাসকদের হাতে প্রচুর সম্পদ সঞ্চিত হয়েছিল ।


সুলভ শ্রমিকের জোগানের ক্ষেত্রে : ভারতের মতাে বিশাল দেশে উৎপাদন কার্য অব্যাহত রাখার জন্য কৃষি , কারিগরি শিল্প, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিতে সস্তায় সহজলভ্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন ছিল ।  

দাসব্যাবসায় অর্থাগমে : পশ্চিম এশিয়ায় উচ্চমূল্যে ভারতীয় ক্রীতদাস বিক্রি হত । এর ফলে বৈদেশিক অর্থ ভারতে এলে দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছিল । 
উপসংহার : নাইবুয়র লিখেছেন যে,“ সুলতানি যুগের কঠোর ও ব্যাপক দাসপ্রথা সামাজিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করেছিল ।” দীর্ঘদিন ধরে পরাধীন দাস হিসেবে জীবন কাটানাের ফলে তাদের স্বভাব রুক্ষ ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে ।






সোমবার, ১১ জুলাই, ২০২২

প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত ? মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল prachin mishore ki ki upaye kritodas srishti hoto mishorer kritodas babsha kemon chilo

উত্তর : প্রাচীন মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত —  
যুদ্ধে বন্দি হওয়া : মিশরের ফ্যারাওরা বিভিন্ন দেশের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য ও সাধারণ নাগরিককে বন্দি করত । বন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত । বন্দিদের স্ত্রী এবং সন্তানরাও ক্রীতদাসে পরিণত হত । 


ঋণ পরিশােধে অক্ষমতা : কখনাে কখনাে ঋণের দায়ে বাধা পড়া ব্যক্তিটিকে ঋণদাতা ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারত । 


দারিদ্র্যের তাড়না : কেউ কেউ অত্যন্ত দারিদ্র্যের তাড়নায় নিজেদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত । কখনাে কখনাে দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদেরও ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত । 

স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ : কোনাে কোনাে নারী ক্রীতদাসী হিসেবে দেবমন্দিরে নিজেদের উৎসর্গ করত ।
অপহরণের মাধ্যমে : কখনাে কখনাে কোনাে পুরুষ বা মহিলাকে এবং মিশর ভ্রমণে আসা বিদেশিদের অপহরণ করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হত । 


জন্মসূত্রে : কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততি জন্মসূত্রে তাদের প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত ।  

আইনভঙ্গ দ্বারা : মিশরের রাষ্ট্রীয় আইনভঙ্গকারীকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি হিসেবে ক্রীতদাসে পরিণত করা হত । 

[        ] প্রাচীন মিশরে দাস ব্যাবসা ততটা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি । ফ্যারাওদের যুগে মিশরে সম্ভবত কোনাে ক্রীতদাস বাজারের অস্তিত্ব ছিল না । তবে মিশরে নয়া রাজ্যের যুগ থেকে ক্রীতদাস ব্যাবসার গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে । 


ক্রীতদাসের বাজারদর : মিশরে ক্রীতদাসের মূল্য ধনী পরিবারগুলির আয়ত্তের মধ্যেই থাকত । পুরুষ ক্রীতদাসদের চেয়ে মহিলা ক্রীতদাসীদের মূল্য বেশি হত ।

আন্তর্জাতিক ক্রীতদাস বাজার : মিশরের ক্রীতদাস ব্যবসা আন্তর্জাতিক চরিত্র লাভ করেছিল । বিশেষ গুণাগুণবিশিষ্ট ক্রীতদাসদের মিশর থেকে বিদেশেও চালান করা হত । বিদেশের বাজারে মিশরের ক্রীতদাসদের যথেষ্ট চাহিদা ও বাজারদর ছিল ।  


ক্রীতদাসের চাহিদা : যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ উভয়ই বন্দি হত । তবে মিশরীয়রা শত্রুপক্ষের সাধারণ বন্দিদের চেয়ে সবল বন্দি সৈনিকদেরই বেশি পছন্দ করত । কারণ ,তারা অন্য ক্রীতদাসদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারত । 

ক্রীতদাস ব্যাবসায় লাভ : মিশরের ক্রীতদাস কেনাবেচা খুবই লাভজনক হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ীরা অনেকেই এই ব্যাবসার দিকে ঝুঁকেছিল । 


উপসংহার : মিশরের ক্রীতদাসরা সেদেশের ধনী প্রভুদের যাবতীয় কাজকর্ম করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত । এর ফলে মিশরে ক্রীতদাসদের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সেই চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সেদেশে দাস ব্যাবসার প্রচলন হয় ।




রবিবার, ১০ জুলাই, ২০২২

আকবর কেন মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন ? এর গুরুত্ব কি ছিল ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer আকবর কেন মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন এর গুরুত্ব কি ছিল akbar keno monosbodari protha proborton koren ar gurutto ki chilo


উত্তর :  মনসবদারি প্রথা প্রবর্তনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ  
রাজকর্মচারী সংগঠন : আকবরের রাজত্বের আগে মােগল রাজকর্মচারীদের সংগঠিত করার কোনাে উদ্যোগ গ্রহণকরা হয়নি । তাই সিংহাসনে বসে আকবর মােগল সামরিক ও অসামরিক কর্মচারীদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করেন । 

সামরিক বাহিনীর ত্রুটি : মনসবদারি ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে মােগল সামরিক বাহিনীতে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল । আকবর মনসবদারি প্রথা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এইসব ত্রুটি দূর করতে চেয়েছিলেন । 

তুর্কে আফগান যুগের অনুপ্রেরণা : অধ্যাপক আবদুল আজিজ মনে করেন যে , আকবর তুর্কো আফগান যুগের সামরিক ব্যবস্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মনসবদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন । তাঁর মতে , তুর্কো আফগান যুগে ‘দশমিক ব্যবস্থা’ অনুযায়ী যে সামরিক বাহিনী গড়ে উঠে ছিল তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আকবর মনসবদারি ব্যবস্থার প্রচলন করেন । 

জায়গিরদারদের দুর্নীতি : আকবরের পূর্বে প্রচলিত জায়গিরদারি ব্যবস্থায় যে সংখ্যক সৈন্য রাখার শর্ত থাকত জায়গিরদাররা বহু ক্ষেত্রেই । তা রাখতেন না। আবার যুদ্ধের সময় তারা সম্রাটকে বৃদ্ধ ও অকর্মণ্য ঘােড়া সরবরাহ করতেন । সুলতানি আমলের শেষদিকে জায়গিরদারি ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক হয়ে  যাওয়ায় নিজ নিজ এলাকায় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । ফলে তাদের এই প্রবণতা আরও বাড়ে । জায়গিরদারদের এইসব দুর্নীতি রােধ করার জন্য আকবর মনসবদারি প্রথা চালু করেন । 


সরকারি আয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টা : জায়গিরদারি ব্যাপক প্রথার প্রসারের ফলে সম্রাটের ‘খালিসা’ জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে সরকারি আয় কমে যায় । এই অবস্থায় খালিসা জমিকে আর জায়গির জমিতে পরিণত না করে মনসবদারি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে আকবর সরকারি আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করেন ।  

রাজকীয় সেবার ঐতিহ্য : বলা যেতে পারে ,আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি প্রথা শাসককে সেবার ঐতিহ্যেরই অনুসরণ । সিংহাসনে বসে ভারতব্যাপী সাম্রাজ্য গঠনের পর আকবর রাজকীয় সেবার ঐতিহ্য গঠনের যে ব্যাপক কর্মসূচি নেন , তারই অঙ্গ হিসেবে তিনি ভারতবর্ষে মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলেন । 
প্রশাসনিক কাঠামাে গঠন : আকবর কর্তৃক মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলার পিছনে এক প্রশাসনিক কাঠামাে নির্মাণের প্রয়াস ছিল । সামরিক ও অসামরিক উভয় পদের ক্ষেত্রেই মনসবদার পদটি যুক্ত করে তিনি এক নতুন ধরনের প্রশাসনিক কাঠামাে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন । 


[          ] মােগল প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে আকবর যে মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলেন তা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণছিল । যেমন— 

সম্রাটের শক্তিবৃদ্ধি : আকবর ও তার পরবর্তী সম্রাটগণ মনসবদারি প্রথার সাহায্যে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তােলেন । মনসবদাররা সম্রাটের প্রিয় পাত্র হওয়ায় সম্রাটের প্রতি তারা আনুগত্য জানান এবং সর্বশক্তি দিয়ে সম্রাটের হাত শক্ত করেন । 

অভিজাতদের আধিপত্য ধ্বংস : মনসবদারি প্রথার ফলে মােগল প্রশাসনে বিদেশি অভিজাত শ্রেণি,যথা —উজবেগি ,আফগানি ,ইরানি ও তুরানিদের আধিপত্য নষ্ট হয় । পাশাপাশি জাতিভিত্তিক  প্রথা চালু হওয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন জাতি কর্তৃক সম্রাটের বিরােধিতার পথ বন্ধ হয় । 


শক্তিশালী প্রশাসন গঠন : মােগল প্রশাসন মনসবদারি পদ বংশানুক্রমিক ছিল না । ফলে যােগ্য ব্যক্তির পদ লাভ করার সুযােগ ছিল ,যা শক্তিশালী প্রশাসন গঠনে সহায়তা করে ।  


সামন্ত প্রথার উত্থানে বাধা : মনসবদার পদে বংশানুক্রমিকভাবে নিয়ােগের ব্যবস্থা না থাকার ফলে সামন্ত প্রথার আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা ছিল না । এককথায় , মনসবদারি প্রথা ছিল ‘একের মধ্যে অনেক’ যা কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছিল ।