ভারতে সুলতানি আমলে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত ? সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কতটা ভূমিকা ছিল ?
উত্তর : সুলতানি যুগে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত করা হত ।
গৃহকার্য : সুলতানি যুগে বেশিরভাগ দাস গৃহকার্যে নিযুক্ত হত । দাসরা গৃহের রান্নাবান্না,গৃহ পরিষ্কার রাখা , উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি কাজকর্ম করত ।
হারেমের দেখভাল : কিছু কিছু দাস হারেমের ( অন্দরমহল ) দেখাশােনা করত । এদের বলা হত ‘খােজা’ । বিদেশ থেকেও ‘খােজা’ দাস আমদানি করা হত ।
কারিগরের কাজ : কিছু দাস সুদক্ষ কারিগর হিসেবে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শিল্পসামগ্রী উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত ছিল । অলংকার শিল্প, কাঠের আসবাবপত্র , গৃহস্থালির টুকিটাকি প্রভৃতি প্রস্তুতিতে দাসরা নিযুক্ত হত ।
প্রশাসন পরিচালনার কাজ : সুলতানগণ বিশেষ যােগ্যতা সম্পন্ন দাসদের প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত করতেন । কোনাে কোনাে যােগ্যতাসম্পন্ন দাস তার প্রভুর মৃত্যুর পরে সুলতান হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছেন । এ প্রসঙ্গে কুতুবউদ্দিন আইবক ও ইলতুৎমিসের নাম উল্লেখ করা যায় ।
ধর্মীয় কাজ : কোনাে কোনাে দাসকে ধর্মীয় কাজে নিয়ােগ করা হত । ধর্মীয় কাজের প্রচার ,ধর্মীয় সেবাকার্য প্রভৃতিতে দাসরা নিযুক্ত থাকত ।
[ ] মালিকের মনােরঞ্জনের কাজ : মালিকের সঙ্গদান এবং মনােরঞ্জনের জন্যও কোনাে কোনো দাস নিয়ােজিত হত । প্রভুর সঙ্গে ভ্রমণে বা শিকারে সঙ্গ দেওয়া , গৃহে সঙ্গদান প্রভৃতি কাজে তাদের নিযুক্ত করা হত ।
[ ] সুলতানি যুগের অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার কিছু কিছু প্রভাব পড়েছিল ।
কৃষির বিকাশে : সুলতানি আমলে কৃষিক্ষেত্রে প্রচুর ক্রীতদাস নিযুক্ত হয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল । ফলে কৃষি উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল ।
প্রযুক্তির উন্নতিতে : ক্রীতদাসদের প্রচেষ্টায় কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কারিগরি শিল্প — উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি ঘটেছিল ।
শাসকদের সম্পত্তি বৃদ্ধিতে : সুলতানি আমলে শাসকরা তাদের খাসজমিতে ক্রীতদাসদের নিয়ােগ করে উৎপাদন কার্য সচল রাখত । ক্রীতদাসদের শ্রমের ফসল হিসেবে শাসকদের হাতে প্রচুর সম্পদ সঞ্চিত হয়েছিল ।
সুলভ শ্রমিকের জোগানের ক্ষেত্রে : ভারতের মতাে বিশাল দেশে উৎপাদন কার্য অব্যাহত রাখার জন্য কৃষি , কারিগরি শিল্প, বন্দর প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিতে সস্তায় সহজলভ্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন ছিল ।
দাসব্যাবসায় অর্থাগমে : পশ্চিম এশিয়ায় উচ্চমূল্যে ভারতীয় ক্রীতদাস বিক্রি হত । এর ফলে বৈদেশিক অর্থ ভারতে এলে দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছিল ।
উপসংহার : নাইবুয়র লিখেছেন যে,“ সুলতানি যুগের কঠোর ও ব্যাপক দাসপ্রথা সামাজিক অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করেছিল ।” দীর্ঘদিন ধরে পরাধীন দাস হিসেবে জীবন কাটানাের ফলে তাদের স্বভাব রুক্ষ ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে ।
কোন মন্তব্য নেই