প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত ? মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল ?
উত্তর : প্রাচীন মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত —
যুদ্ধে বন্দি হওয়া : মিশরের ফ্যারাওরা বিভিন্ন দেশের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য ও সাধারণ নাগরিককে বন্দি করত । বন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত । বন্দিদের স্ত্রী এবং সন্তানরাও ক্রীতদাসে পরিণত হত ।
ঋণ পরিশােধে অক্ষমতা : কখনাে কখনাে ঋণের দায়ে বাধা পড়া ব্যক্তিটিকে ঋণদাতা ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারত ।
দারিদ্র্যের তাড়না : কেউ কেউ অত্যন্ত দারিদ্র্যের তাড়নায় নিজেদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত । কখনাে কখনাে দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদেরও ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত ।
স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ : কোনাে কোনাে নারী ক্রীতদাসী হিসেবে দেবমন্দিরে নিজেদের উৎসর্গ করত ।
অপহরণের মাধ্যমে : কখনাে কখনাে কোনাে পুরুষ বা মহিলাকে এবং মিশর ভ্রমণে আসা বিদেশিদের অপহরণ করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হত ।
জন্মসূত্রে : কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততি জন্মসূত্রে তাদের প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত ।
আইনভঙ্গ দ্বারা : মিশরের রাষ্ট্রীয় আইনভঙ্গকারীকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি হিসেবে ক্রীতদাসে পরিণত করা হত ।
[ ] প্রাচীন মিশরে দাস ব্যাবসা ততটা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি । ফ্যারাওদের যুগে মিশরে সম্ভবত কোনাে ক্রীতদাস বাজারের অস্তিত্ব ছিল না । তবে মিশরে নয়া রাজ্যের যুগ থেকে ক্রীতদাস ব্যাবসার গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
ক্রীতদাসের বাজারদর : মিশরে ক্রীতদাসের মূল্য ধনী পরিবারগুলির আয়ত্তের মধ্যেই থাকত । পুরুষ ক্রীতদাসদের চেয়ে মহিলা ক্রীতদাসীদের মূল্য বেশি হত ।
আন্তর্জাতিক ক্রীতদাস বাজার : মিশরের ক্রীতদাস ব্যবসা আন্তর্জাতিক চরিত্র লাভ করেছিল । বিশেষ গুণাগুণবিশিষ্ট ক্রীতদাসদের মিশর থেকে বিদেশেও চালান করা হত । বিদেশের বাজারে মিশরের ক্রীতদাসদের যথেষ্ট চাহিদা ও বাজারদর ছিল ।
ক্রীতদাসের চাহিদা : যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ উভয়ই বন্দি হত । তবে মিশরীয়রা শত্রুপক্ষের সাধারণ বন্দিদের চেয়ে সবল বন্দি সৈনিকদেরই বেশি পছন্দ করত । কারণ ,তারা অন্য ক্রীতদাসদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারত ।
ক্রীতদাস ব্যাবসায় লাভ : মিশরের ক্রীতদাস কেনাবেচা খুবই লাভজনক হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ীরা অনেকেই এই ব্যাবসার দিকে ঝুঁকেছিল ।
উপসংহার : মিশরের ক্রীতদাসরা সেদেশের ধনী প্রভুদের যাবতীয় কাজকর্ম করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত । এর ফলে মিশরে ক্রীতদাসদের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সেই চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সেদেশে দাস ব্যাবসার প্রচলন হয় ।
কোন মন্তব্য নেই