আকবর কেন মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন ? এর গুরুত্ব কি ছিল ?
উত্তর : মনসবদারি প্রথা প্রবর্তনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ
রাজকর্মচারী সংগঠন : আকবরের রাজত্বের আগে মােগল রাজকর্মচারীদের সংগঠিত করার কোনাে উদ্যোগ গ্রহণকরা হয়নি । তাই সিংহাসনে বসে আকবর মােগল সামরিক ও অসামরিক কর্মচারীদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করেন ।
সামরিক বাহিনীর ত্রুটি : মনসবদারি ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে মােগল সামরিক বাহিনীতে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল । আকবর মনসবদারি প্রথা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এইসব ত্রুটি দূর করতে চেয়েছিলেন ।
তুর্কে আফগান যুগের অনুপ্রেরণা : অধ্যাপক আবদুল আজিজ মনে করেন যে , আকবর তুর্কো আফগান যুগের সামরিক ব্যবস্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মনসবদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন । তাঁর মতে , তুর্কো আফগান যুগে ‘দশমিক ব্যবস্থা’ অনুযায়ী যে সামরিক বাহিনী গড়ে উঠে ছিল তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আকবর মনসবদারি ব্যবস্থার প্রচলন করেন ।
জায়গিরদারদের দুর্নীতি : আকবরের পূর্বে প্রচলিত জায়গিরদারি ব্যবস্থায় যে সংখ্যক সৈন্য রাখার শর্ত থাকত জায়গিরদাররা বহু ক্ষেত্রেই । তা রাখতেন না। আবার যুদ্ধের সময় তারা সম্রাটকে বৃদ্ধ ও অকর্মণ্য ঘােড়া সরবরাহ করতেন । সুলতানি আমলের শেষদিকে জায়গিরদারি ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক হয়ে যাওয়ায় নিজ নিজ এলাকায় তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । ফলে তাদের এই প্রবণতা আরও বাড়ে । জায়গিরদারদের এইসব দুর্নীতি রােধ করার জন্য আকবর মনসবদারি প্রথা চালু করেন ।
সরকারি আয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টা : জায়গিরদারি ব্যাপক প্রথার প্রসারের ফলে সম্রাটের ‘খালিসা’ জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে সরকারি আয় কমে যায় । এই অবস্থায় খালিসা জমিকে আর জায়গির জমিতে পরিণত না করে মনসবদারি ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে আকবর সরকারি আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করেন ।
রাজকীয় সেবার ঐতিহ্য : বলা যেতে পারে ,আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি প্রথা শাসককে সেবার ঐতিহ্যেরই অনুসরণ । সিংহাসনে বসে ভারতব্যাপী সাম্রাজ্য গঠনের পর আকবর রাজকীয় সেবার ঐতিহ্য গঠনের যে ব্যাপক কর্মসূচি নেন , তারই অঙ্গ হিসেবে তিনি ভারতবর্ষে মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলেন ।
প্রশাসনিক কাঠামাে গঠন : আকবর কর্তৃক মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলার পিছনে এক প্রশাসনিক কাঠামাে নির্মাণের প্রয়াস ছিল । সামরিক ও অসামরিক উভয় পদের ক্ষেত্রেই মনসবদার পদটি যুক্ত করে তিনি এক নতুন ধরনের প্রশাসনিক কাঠামাে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ।
[ ] মােগল প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে আকবর যে মনসবদারি ব্যবস্থা গড়ে তােলেন তা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণছিল । যেমন—
সম্রাটের শক্তিবৃদ্ধি : আকবর ও তার পরবর্তী সম্রাটগণ মনসবদারি প্রথার সাহায্যে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তােলেন । মনসবদাররা সম্রাটের প্রিয় পাত্র হওয়ায় সম্রাটের প্রতি তারা আনুগত্য জানান এবং সর্বশক্তি দিয়ে সম্রাটের হাত শক্ত করেন ।
অভিজাতদের আধিপত্য ধ্বংস : মনসবদারি প্রথার ফলে মােগল প্রশাসনে বিদেশি অভিজাত শ্রেণি,যথা —উজবেগি ,আফগানি ,ইরানি ও তুরানিদের আধিপত্য নষ্ট হয় । পাশাপাশি জাতিভিত্তিক প্রথা চালু হওয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন জাতি কর্তৃক সম্রাটের বিরােধিতার পথ বন্ধ হয় ।
শক্তিশালী প্রশাসন গঠন : মােগল প্রশাসন মনসবদারি পদ বংশানুক্রমিক ছিল না । ফলে যােগ্য ব্যক্তির পদ লাভ করার সুযােগ ছিল ,যা শক্তিশালী প্রশাসন গঠনে সহায়তা করে ।
সামন্ত প্রথার উত্থানে বাধা : মনসবদার পদে বংশানুক্রমিকভাবে নিয়ােগের ব্যবস্থা না থাকার ফলে সামন্ত প্রথার আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা ছিল না । এককথায় , মনসবদারি প্রথা ছিল ‘একের মধ্যে অনেক’ যা কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছিল ।
কোন মন্তব্য নেই