বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা কোন কোন কাজে নিন্মুক্ত হত ? রোমে ক্রীতদাসদের জীবন কেমন ছিল ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer প্রাচীন রােমের ক্রীতদাসরা কোন কোন কাজে নিন্মুক্ত হত রোমে ক্রীতদাসদের জীবন কেমন ছিল prachin romer kritodasra kon kon kaje nimnukto hoto rome kritodasder jibon kemon chilo


উত্তর : প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস ব্যবস্থা সেখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিল । রােমের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর রাষ্ট্রেরও বিভিন্ন কাজ করত । 
গৃহকার্য : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজ করে দিত । পরিবারের রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি গৃহের যাবতীয় কাজ ক্রীতদাসদের করতে হত । ফলে প্রভুর পরিবারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসিতা বৃদ্ধি পেত ।  

কৃষি ও খামারের কাজ : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কৃষিকাজে নিযুক্ত থেকে খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করত । রােমান সাম্রাজ্যের শহরগুলি ক্রীতদাসদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল । 


ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ : ক্রীতদাসরা প্রভুর অনুপস্থিতিতে প্রভুর দোকান পরিচালনা করত , ক্ষৌরকর্ম করত,সুদে টাকা ধার দিত ইত্যাদি ।  


নির্মাণকার্য : ক্রীতদাসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সাধারণ গৃহ , অট্টালিকা , পাকা পয়ঃপ্রণালী , রাস্তাঘাট, মল্লভূমি বা ক্রীড়াক্ষেত্র, সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করা । এইসব পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি ক্রীতদাসরা সম্পন্ন করার ফলে রােম সুন্দরভাবে সেজে উঠেছিল । 
কর্মকারের কাজ : ক্রীতদাসরা কাঠ মিস্ত্রিএবং কামার হিসেবেও কাজ করত । তারা বিভিন্ন ভাঙা সামগ্রী, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি সারাই করত এবং ভেড়ার লােম পাকিয়ে বিভিন্ন বস্ত্র উৎপাদন করত ।  


সৈন্যবাহিনীতে কাজ : শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য বন্দি হয়ে রােমে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল । এরূপ ক্রীতদাসদের অনেককেই যােচ্ছা হিসেবে রােমান সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত । 


[         ]  অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ করা , প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে ক্রীতদাসদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল ।  


বিক্রি ও হত্যা : ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি । প্রভু ইচ্ছা করলে তাদের বাজারের পণ্যের মতাে বিক্রি করতে বা পশুর মতাে হত্যাও করতে পারত । 

শারীরিক নির্যাতন : ক্রীতদাসের মালিক তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দিয়ে বেশি কাজ করানাের উদ্দেশ্যে তার ওপর সর্বদা শারীরিক নির্যাতন চালাত । এর ফলে ক্রীতদাসের দেহে সারা বছরই ও কালচে দাগ হয়ে থাকত । 


শৃঙ্খলিত পশুর জীবন : ক্রীতদাসরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বাড়ির গৃহপালিত পশুর মতাে ক্রীতদাসের হাতে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত । 
 

পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ : কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ যুবতি ক্রীতদাসীদের পতিতালয়ে বিক্রি করে তাদের পতিতাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত । 

পালানাের চেষ্টার শাস্তি : কোনাে ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুক দিয়ে পেটানাে বা উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা দেওয়া হত । 

গ্ল্যাডিয়েটরের জীবন : রােমের নাগরিকদের আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে গ্ল্যাডিয়েটর নামের ক্রীতদাস যােদ্ধাদের ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়তে হত । অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু হত ।  


ক্রীতদাস পরিবারের দুর্ভোগ : ক্রীতদাসের পরিবারের সদস্যরাও প্রভুর দাসে পরিণত হত এবং তারাও একই ধরনের শাস্তি ও নির্যাতন ভােগ করত । 


উপসংহার : সর্বদা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার এসব ক্রীতদাসদের জীবন ছিল অন্ধকারে ঢাকা । তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রভূ ও ক্রীতদাসের ভালাে সম্পর্কও দেখা যেত ।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন