উত্তর : প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস ব্যবস্থা সেখানকার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত ছিল । রােমের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর রাষ্ট্রেরও বিভিন্ন কাজ করত ।
গৃহকার্য : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজ করে দিত । পরিবারের রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা প্রভৃতি গৃহের যাবতীয় কাজ ক্রীতদাসদের করতে হত । ফলে প্রভুর পরিবারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসিতা বৃদ্ধি পেত ।
কৃষি ও খামারের কাজ : ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর কৃষিকাজে নিযুক্ত থেকে খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করত । রােমান সাম্রাজ্যের শহরগুলি ক্রীতদাসদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল ।
ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজ : ক্রীতদাসরা প্রভুর অনুপস্থিতিতে প্রভুর দোকান পরিচালনা করত , ক্ষৌরকর্ম করত,সুদে টাকা ধার দিত ইত্যাদি ।
নির্মাণকার্য : ক্রীতদাসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সাধারণ গৃহ , অট্টালিকা , পাকা পয়ঃপ্রণালী , রাস্তাঘাট, মল্লভূমি বা ক্রীড়াক্ষেত্র, সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করা । এইসব পরিশ্রমসাধ্য কাজগুলি ক্রীতদাসরা সম্পন্ন করার ফলে রােম সুন্দরভাবে সেজে উঠেছিল ।
কর্মকারের কাজ : ক্রীতদাসরা কাঠ মিস্ত্রিএবং কামার হিসেবেও কাজ করত । তারা বিভিন্ন ভাঙা সামগ্রী, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি সারাই করত এবং ভেড়ার লােম পাকিয়ে বিভিন্ন বস্ত্র উৎপাদন করত ।
সৈন্যবাহিনীতে কাজ : শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য বন্দি হয়ে রােমে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল । এরূপ ক্রীতদাসদের অনেককেই যােচ্ছা হিসেবে রােমান সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত ।
[ ] অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ করা , প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে ক্রীতদাসদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল ।
বিক্রি ও হত্যা : ক্রীতদাসরা ছিল তাদের প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি । প্রভু ইচ্ছা করলে তাদের বাজারের পণ্যের মতাে বিক্রি করতে বা পশুর মতাে হত্যাও করতে পারত ।
শারীরিক নির্যাতন : ক্রীতদাসের মালিক তার অধীনস্থ ক্রীতদাসকে দিয়ে বেশি কাজ করানাের উদ্দেশ্যে তার ওপর সর্বদা শারীরিক নির্যাতন চালাত । এর ফলে ক্রীতদাসের দেহে সারা বছরই ও কালচে দাগ হয়ে থাকত ।
শৃঙ্খলিত পশুর জীবন : ক্রীতদাসরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বাড়ির গৃহপালিত পশুর মতাে ক্রীতদাসের হাতে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত ।
পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ : কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে প্রভুরা তাদের অধীনস্থ যুবতি ক্রীতদাসীদের পতিতালয়ে বিক্রি করে তাদের পতিতাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত ।
পালানাের চেষ্টার শাস্তি : কোনাে ক্রীতদাস পালানাের চেষ্টা করলে তাকে চাবুক দিয়ে পেটানাে বা উত্তপ্ত লােহার ছ্যাকা দেওয়া হত ।
গ্ল্যাডিয়েটরের জীবন : রােমের নাগরিকদের আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে গ্ল্যাডিয়েটর নামের ক্রীতদাস যােদ্ধাদের ক্ষুধার্ত হিংস্র পশুর সঙ্গে লড়তে হত । অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্ল্যাডিয়েটরদের মৃত্যু হত ।
ক্রীতদাস পরিবারের দুর্ভোগ : ক্রীতদাসের পরিবারের সদস্যরাও প্রভুর দাসে পরিণত হত এবং তারাও একই ধরনের শাস্তি ও নির্যাতন ভােগ করত ।
উপসংহার : সর্বদা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার এসব ক্রীতদাসদের জীবন ছিল অন্ধকারে ঢাকা । তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রভূ ও ক্রীতদাসের ভালাে সম্পর্কও দেখা যেত ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন