শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২

‘সামন্ততন্ত্র’ বলতে কী বােঝ ? ভারতের সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer সামন্ততন্ত্র বলতে কী বােঝ ভারতের সামন্তপ্রথার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো samantatonro bolte ki bojho bharoter samantaprothar boishisto ullekh koro

উত্তর : ইংরেজি ‘ফিউডালিজম’ কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘সামন্ততন্ত্র’ বা ‘সামন্তপ্রথা’ । ‘ফিউডালিজম’ কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ  ‘ফিওডালিস’ এবং ফরাসি শব্দ ‘ফেডালিতে থেকে । সামন্ততন্ত্র বলতে কী বােঝায় তা বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ।

সাধারণ অর্থ : সাধারণভাবে সামন্ততন্ত্র বলতে এক বিশেষ ধরনের শাসনতান্ত্রিক কাঠামাে বােঝায় যেখানে কেন্দ্রীর শক্তির অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির বিকাশ ঘটে এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরিবর্তে স্থানীয় ভূস্বামীদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে । অন্যভাবে বলা যায় ,ভূমি মালিকানা ও ভূমি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক বিশেষ আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাই হল সামন্ততন্ত্র । 


বােলাভিয়ের - এর অভিমত : বােলাঁভিয়ের এর মতে , “সামন্ততন্ত্র হল সার্বভৌম অধিকারের বিভাজন যেখানে প্রশাসনকে খণ্ডিত ও বিকেন্দ্রীভূত করে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা , স্বাধীনতা ও সম্পত্তির সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয় ।” 


কার্ল মার্কসের অভিমত : কার্ল মার্কসের মতে , “স্বাধীনতাহীন শ্রমজীবী মানুষের দ্বারা বৃহৎ ভূসম্পত্তিতে কৃষি ও হস্তশিল্পজাত পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করার ব্যবস্থাই হল সামন্তব্যবস্থা ।”

পি ভি মায়ার্স - এর অভিমত : পি ভি মায়ার্স-এর মতে , সামন্ততন্ত্র হল এক বিশেষ সমাজ ও সরকার -পরিচালনা ব্যবস্থা যা বিশেষভাবে অনুশীলিত এক ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার ওপর ভিত্তিকরে গড়ে উঠেছে , যেটি মধ্যযুগের শেষ পর্বে ইউরােপে বিকাশ লাভ করেছিল এবং যা একাদশ , দ্বাদশ ও ত্রয়ােদশ শতকে ইউরােপে বিরাজ করছিল । 

এ কে নাজমুল করিম -এর অভিমত : অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে , “সামন্তপ্রথা বলতে এমন একটি সমাজ ও সংস্কৃতিকে বােঝায় যেখানে ভূমিই হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি ।”  


[           ] প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইউরােপে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামাে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে ।ইউরােপের কাঠামাের মতাে না হলেও প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ভারতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন । ভারতে সামন্তপ্রথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় । যেমন 

স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামজীবন : সামন্ততান্ত্রিক সমাজের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম্যজীবন । অর্থাৎ গ্রামে বসবাসকারী সকলের প্রয়ােজনীয় সামগ্রী গ্রামেই উৎপাদিত হত । ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের যুগে এদেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম জীবনের অস্তিত্ব ছিল ।


নগরায়ণের অভাব : কৃষি উৎপাদনের জন্য গ্রাম,কৃষক , খামারবাড়ি প্রভৃতি অপরিহার্য । নগরের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার সামন্ততন্ত্রের বিরােধী । ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের যুগেও গ্রামগুলির বিকাশ ঘটে এবং   নগরায়ণের বিকাশ ব্যাহত হয় । 

কৃষিভিত্তিক সমাজ : ভারতীয় সামন্তপ্রথায় সমাজ ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক । সমাজের নিম্নস্তরের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল । কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে দেশের গােটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হত । দেশে শিল্প ও বাণিজ্য ছিল গৌণ । শিল্প ও বাণিজ্য যেটুকু ছিল তা মূলত কৃষিপ্রসূত । 

ভূমি ও মানুষের সম্পর্ক : ভারতীয় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যবস্থার মূল উপকরণ ছিল ভূমি । ভূমিকে কেন্দ্র করেই সমগ্র কৃষিকাজ চলত । তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভূমির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল । 

জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার অভাব : জমিতে কৃষক উৎপাদকের কাজে নিযুক্ত থাকলেও সেই জমিতে কৃষকের ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না । জমির প্রকৃত মালিক ছিল ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভু এবং চূড়ান্ত মালিক ছিল রাষ্ট্র ।

সেচ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ : কৃষিকাজের জন্য কৃষকের জমিতে জলসেচের প্রয়ােজন ছিল । ভারতীয় সামন্ততন্ত্রে এই সেচ ব্যবস্থায় কৃষকের ব্যক্তিগত অধিকার ছিল না । তা রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত । 

প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব : ভারতীয় সামন্ততন্ত্রে কৃষিজমির মালিকানা ছিল সামন্তপ্রভুর হাতে । তাই উৎপাদন ব্যবস্থা তথা সমগ্র অর্থনৈতিক কাঠামােতে স্বাভাবিকভাবেই প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । 

উপসংহার : প্রাচীন ভারতে গুপ্তযুগে ভারতের সামন্ততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করে । তবে ভারতীয় সামন্ততন্ত্র কখনােই ইউরােপের সামন্ততন্ত্রের মতাে তীব্র ছিল না ।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন