শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথা উত্থানের পটভূমি লেখো ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer গুপ্তযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সামন্তপ্রথা উত্থানের পটভূমি লেখো guptoyuge bharotiyo upomohadeshe samantaprotha uthaner potobhumi lekho


উত্তর : গুপ্তযুগে, বিশেষ করে আদিমধ্যযুগে ভারতের কৃষকসমাজ ভূমির মালিকানা হারিয়ে প্রভুর জমিতে শ্রমদানে বাধ্য হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন । ড , যাদব দেখিয়েছেন যে, আদি মধ্যযুগে ‘হালকর’ ‘বদ্ধহল’ প্রভৃতি শব্দগুলি কৃষকের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে । এর থেকে তিনি অনুমান করেন যে, সে যুগে কৃষকরা নিজস্ব অধিকার হারিয়ে প্রভুর জমিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল । 
বাণিজ্যের অবনতি : সামন্ততন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কৃষি অর্থনীতির ওপর বেশি নির্ভরতা এবং বাণিজ্যের অবনতি । ড . রামশরণ শর্মা ও ড .যাদব দেখিয়েছেন যে ,গুপ্তযুগে অগ্রহার ব্যবস্থার বিকাশের ফলে স্বনির্ভর গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিই মুখ্য হয়ে ওঠে । রােমান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে রােমের সক্রিয় বাণিজ্যিক সম্পর্কও শেষ হয়ে যায় । ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় । 


নগরের অবক্ষয় : অগ্রহার প্রথাকে ভিত্তি করে গুপ্তযুগে উদ্ভূত নতুন ভূস্বামীরা কৃষি উৎপাদনে শ্রমের ওপর জোর দিলে শিল্প ও বাণিজ্য অবহেলিত হয় । ফলে নগরগুলির অবক্ষয় শুরু হয় । এসময় প্রাচীন নগরজীবনের অবক্ষয় এবং গ্রামজীবনের প্রসার সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।  


সম্রাট ও কৃষকের মধ্যবর্তী শাসকগােষ্ঠী : ড . কোশাম্বীর মতে , খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের মধ্যে ভারতে সম্রাট তার অধীনস্থ বিভিন্ন স্থানীয় শাসকদের নিজেদের এলাকায় রাজস্ব আদায় ,শাসন পরিচালনা , আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে কিছু কিছু অধিকার দেন । উর্ধ্বতন সম্রাট কর্তৃক স্থানীয় শাসকদের এরূপ অধিকারদানকে ড . কোশাম্বী ‘ওপর থেকে সামন্ততন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন । ড . কোশাম্বীর মতে , খ্রিস্টীয় সপ্তম অষ্টম শতক নাগাদ সম্রাট ও কৃষকের মধ্যবর্তী স্তরে নতুন ভূম্যধিকারী গােষ্ঠীর উত্থান ঘটে যারা কৃষকদের ওপর বলপ্রয়ােগ করে কৃষি উৎপাদনকে সচল রাখত । ড . কোশাম্বী একে ‘নীচু থেকে সামন্ততন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন । 

গুপ্তযুগে সামন্ততন্ত্রের উত্থানে অগ্রহার প্রথার ভূমিকা : ভারতে গুপ্তযুগে সম্রাট এবং বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্রাত্মণদের নিষ্কর জমি দান করতেন । দানগ্রহীতা স্বয়ং প্রাপ্ত জমি বা গ্রামের রাজস্ব আদায় , আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসন ও বিচারকার্য পরিচালনা প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ের অধিকারী হতেন । এটি ‘অগ্রহার’ বা ‘ব্ৰন্থদেয়’ প্রথা নামে পরিচিত । এই প্রথার দ্বারা জমির যাবতীয় অধিকার চলে যেত দানগ্রহীতা অর্থাৎ জমির প্রাপকের হাতে । জমির প্রাপক এই দানপ্রাপ্ত জমির যাবতীয় রাজস্ব আদায় ও ভােগ করতেন । এই জমিতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিচারকার্য পরিচালনা প্রভৃতি অধিকারও জমির প্রাপকের হাতে চলে যেত । দান প্রাপ্ত ভূমির ওপর অবস্থিত যাবতীয় সম্পদ , এমনকি ভূমির নীচে অবস্থিত খনিজ সম্পদেও জমির প্রাপকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হত । এভাবে ভূমিদান ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে স্থানীয় বিভিন্ন ভূস্বামীর আবির্ভাব ঘটে যা সামন্ততন্ত্রের ভিত্তি রচনা করে । 


উপসংহার : গুপ্তযুগে ভারতে যেসব সামন্ততান্ত্রিক উপাদান সক্রিয় হয়ে উঠেছিল সেগুলি পরিণামে সামন্ত প্রথার জন্ম দেয় । এ প্রসঙ্গে ‘অগ্রহার’ বা নিষ্কর জমিদান প্রথা গুপ্তযুগে সামন্তপ্রথা উদ্ভবের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন