‘উনি আমাদের সব দলের শতদল পদ্ম’ - ‘উনি’ কে ? ‘ আমাদের ’ বলতে কাদের ? উক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে । তাঁকে ‘ শতদল ’ বলার কারণ কী ?
উত্তর : ‘উনি’ হলেন নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু' নাটকের যুনকদের একান্ত প্রাণের মানুষ দাদাঠাকুর । আমাদের বলতে যুনকদের ।
যুনক সম্প্রদায়ের মধ্যে দাদাঠাকুরের উপস্থিতি ঘটে । পঞ্চক মাঝে মাঝে অচলায়তনের ঘেরাটোপ টপকে যুনকপল্লিতে চলে আসে । সেই সূত্রে যুনকদের সঙ্গে পঞকের পরিচয় । যুনকদের সঙ্গে মেলামেশার ব্যাপারে পঞ্চক দোটানার মধ্যে রয়েছে । এই পরিস্থিতিতে যুনকদের মাঝে এসেছেন তাদের খুবই প্রিয় ও কাছের মানুষ দাদাঠাকুর । পঞ্চক যুনকদের মতাে ‘ দাদাঠাকুর ’ বলেই ডাক দেয় । ডাকে দাদাঠাকুর ‘ কী ভাই, পঞক যে !’ বলে সাড়া দেন । পঞ্চক স্পষ্টত দাদাঠাকুরকে বলে দাদাঠাকুর বলে যে , যুনকরা তাঁকে ডাকছে ‘দাদাঠাকুর’ বলে ডাকছে । সেজন্য তারও ডাকতে ইচ্ছে হল । সে যতই ভাবছে যুনকদের দলে মিশবে না, ততই আরও জড়িয়ে পড়ছে । এ কথা শুনে প্রথম যুনক বলে যে , দাদাঠাকুর কোনাে বিশেষ দলের নন । এই প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তির উপস্থাপনা ।
[ ] দাদাঠাকুর সব গােষ্ঠীর, সব সম্প্রদায়ের , সব দলের , সব মানুষের । তাই অচলায়তনে তিনি গুরু , যুনকদের তিনি দাদাঠাকুর , দর্ভকপল্লির মানুষজনের গোঁসাই । তাঁর উপস্থিতি সর্বত্র । তাঁর প্রেমপ্রীতি ভালােবাসা সর্বজনে । তিনি কারও বিশেষ নন , তিনি সর্বজনীন । তাই প্রথম যুনকের কথা হল ‘ দাদাঠাকুরকে নিয়ে আবার দল কীসের ?’ অর্থাৎ তিনি কোনাে বিশেষ দলভুক্ত নন । সে - সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তিনি । সব গােষ্ঠী সব সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের তিনি , সেজন্য শতদলভুক্ত । ‘শত ’, ‘সহস্র’ এগুলি বহুত্বজ্ঞাপক শব্দ । সেই অর্থে সর্বজনের । আবার পদ্মের অপর নাম শতদল । শত পাপড়িবিশিষ্ট । ‘ দল ’ অর্থে পাপড়ি । পদ্মের সৌরভ বা সুগন্ধ শত পাপড়ির মধ্যেই আবদ্ধ থাকে না , তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে । তা আমােদিত করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে । দাদাঠাকুরের প্রেমপ্রীতি, ভালােবাসা , তাঁর প্রাণের উদারতা , মুক্ত প্রাণের ব্যাপ্তি সর্বব্যাপী । জগন্ময় । তা পদ্মের সৌরভের সঙ্গে তুলনীয় ।
কোন মন্তব্য নেই