‘কিন্তু পুঁতবাে কোথায় ? ফুল কি হবেই তাতে ?’ —উদ্ধৃতির উৎস লেখাে । প্রসঙ্গ উল্লেখসহ উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জয় গােস্বামীর লেখা ‘নুন’ কবিতা থেকে গৃহীত । উদ্ধৃত পঙক্তিটি কবিতার চতুর্থ স্তবকের প্রথম চরণ ।
[ ] কবিতার কথক হল জনৈক শ্রমজীবী নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ । এদেশীয় সমাজে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের অভাব - অনটন নিত্যসঙ্গী । তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় । তাদের চাওয়াপাওয়া ও প্রত্যাশা অতি সামান্য । তারা অল্পতে খুশি । সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন চালিয়ে নেয় । অসুখেবিসুখে ধারদেনা করে দিন চলে । দুঃখদারিদ্র্যের কষ্ট - যন্ত্রণা ভােলার জন্য রাত্রিতে দু-ভাই মিলে গাঁজার কলকেতে টান দেয় । সব দিন নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা নেই । সেজন্য যেদিন আয় হয় না সেদিন বাজার হয় না । আবার যেদিন হাতে বেশি কিছু টাকাপয়সা আসে , সেদিন বেহিসেবিপনা ঘাড়ে ভর করায় বাজার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় । শখ বা শৌখিনতার বশে বাড়ি ফেরার পথে গােলাপচারা কিনে ফেলে ।
[ ] গােলাপের চারা পুঁতে বাগান বানানাের শখ বড়ােলােকের শৌখিন বিলাস । সেজন্য প্রশস্ত জায়গা চাই । চারা লাগিয়ে নিয়মিত পরিচর্যার জন্য লােক ও সময় চাই । সেজন্য অর্থব্যয়ের দিকও আছে । গরিবের কুঁড়েটুকুই হয়তাে সম্বল । গােলাপ লাগানাের জন্য প্রয়ােজনীয় জায়গা নেই । সেজন্য গােলাপচারা কিনেও তার সংশয় দেখা যায় । ‘কিন্তু পুঁতবাে কোথায় ?’ হয়তাে পোতার মতাে একটু জায়গার ব্যবস্থা হলেও তার পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে তুলে তাতে ফুল ফোটানাে কি সম্ভব হবে ? তা নিয়েও তার মনে সংশয় । কিন্তু শখ , শৌখিনতা সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষ মাত্রেরই থাকে । অর্থবানেরা তা সার্থক করে তােলে । তার শখ ও বাসনাকে চরিতার্থ করতে পারে না দারিদ্র্যের রূঢ় বাস্তবতার কারণে ।
কোন মন্তব্য নেই