‘জ্ঞান কোথায় গেল ?’ —জ্ঞানের অভাব ‘ শিক্ষার সার্কাস ’ কবিতায় কীভাবে ব্যঞ্জিত হয়েছে ?
উত্তর : খ্যাতনামা কবি ও শিক্ষাবিদ আইয়াপ্পা পানিকর এদেশীয় শিক্ষার ছবি ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় চমৎকার এঁকেছেন । এদেশীয় শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্লাসের পর ক্লাস টপকে এগােতে থাকে । প্রথমের পর দ্বিতীয় , দ্বিতীয়ের পর তৃতীয় । এভাবে যেন সিঁড়ির ধাপ ভেঙে এক , দুই, তিন - এর পর চারে ওঠা । বিদ্যার্থীদের এ যেন ধাপ ভাঙার খেলা । কে কাকে পিছনে ফেলে এগােতে পারে যেন তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা । প্রাথমিক স্তরের সব শ্রেণি পার হওয়ার পরেও কিন্তু এগিয়ে চলা থামে না ।
[ ] অধ্যাপক পানিকর সব শিক্ষাকে একটি সার্কাস বলেছেন । সার্কাস হল ক্রীড়াচক্র । চক্রাকার বা বৃত্তাকার ক্রীড়াক্ষেত্রের চারদিকে গ্যালারিতে দর্শকেরা বসে খেলা দেখে । মাঝে খেলার জায়গায় খেলােয়াড়রা ঘােড়া প্রভৃতি জীবজন্তু ঘুরে ঘুরে খেলা দেখায় । প্রতিযােগিতা কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ থাকে খেলা দেখানাের মধ্যে । কে কাকে টপকে যাবে এ মরিয়াপনা খেলােয়াড়দের মধ্যে যেমন থাকে , তেমনি শিক্ষায় শ্রেণি টপকানাের মধ্যেও থাকে একই রকমের প্রতিযােগিতার জেদি মনােভাব । তাই কবি বলেছেন , ‘যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই ।’ ঠিকই । আমরা শ্রেণির পর শ্রেণি টপকে শিক্ষার উচ্চস্তরে পৌঁছে যাই । কত ডিগ্রি ডিপ্লোমা আমাদের ঝােলায় এসে যায় । কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যে শিক্ষা , তা কি শিক্ষার্থীপায় ?
[ ] দুঃখের কথা , আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানার্জনের ঘাটতি থেকে যায় বলেই কবির প্রশ্ন ‘জ্ঞান কোথায় গেল ?’ বর্তমান শিক্ষায় শংসাপত্র এক কাঁড়ি মেলে । কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানার্জন থাকে অধরা । কবি রূঢ় সত্য উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেননি । জ্ঞানার্জনের নামে এদেশীয় শিক্ষা এক প্রচণ্ড ধোঁকাবাজি । ডিগ্রির তকমা লাভের জন্য কী মরিয়াপনা চেষ্টা । কত কত টিউশন । প্যাকেজ ভিত্তিতে কত কত নােট গলাধঃকরণ করে পরীক্ষা বৈতরণি পার । ওই শুষ্ক বিচ্ছিন্ন শিক্ষায় জ্ঞান লাভের দিকটা থাকে উপেক্ষিত । প্রকৃত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যে শিক্ষা, সে শিক্ষা থাকে অবহেলিত ।
কোন মন্তব্য নেই