ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতিতে ইন্দো রোম বাণিজ্যের প্রভাব কী ছিল ? তৃতীয় নগরায়ণের কারণ কী ছিল ?
উত্তর : ইন্দো রােম বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছিল ভারত এবং রােম উভয় দেশের ওপরই । ভারত ও পাশ্চাত্য উভয় দেশই মূলত মৌর্যোত্তর যুগের সময়কালে বাণিজ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল ।
ভারতের ওপর
i) সমৃদ্ধশালী নগরের উদ্ভব : ইন্দো রােম অর্থাৎ ভারত রােম বাণিজ্যের সুবাদে সাতবাহন শাসনাধীন দাক্ষিণাত্যে ও কুষাণ শাসনাধীন উত্তর ভারতে বেশ কিছু সমৃদ্ধশালী নগরের উদ্ভব ঘটে । দক্ষিণ ভারতে উদ্ভব ঘটেছিল এমন কয়েকটি নগর হল অমরাবতী , পৈঠান , সােপারা , কাবেরীপত্তনম প্রভৃতি । উত্তর ভারতে উদ্ভব ঘটেছিল এমন কয়েকটি নগর হল - মথুরা , কৌশাম্বী ,বারাণসী ।
ii) শিল্পসংস্কৃতি : বাণিজ্যের ফলে রােমান শিল্প সংস্কৃতির দ্বারা ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতি প্রভাবিত হয় ।বিশেষত শিল্পের ওপর গ্রিক রােমান শিল্প ও স্থাপত্যশৈলীর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে । ফলে ভারতে গান্ধার শিল্প নামে এক নতুন শিল্পরীতির উদ্ভব ঘটে ।
রােমের ওপর
i) চিকিৎসাবিজ্ঞানে : রােম ভারত বাণিজ্যের সুবাদে রােমে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটে । ভারতীয়দের লতা গুল্মভিত্তিক ভেষজ চিকিৎসাজ্ঞানের পরিচয় লাভ করে রােমানরা ।
ii) মশলার ব্যবহার : রােম ভারত বাণিজ্যের সুবাদে রােমের বণিকরা দক্ষিণ ভারত থেকে মশলা কিনে দেশে নিয়ে যেত । রােমে ভারতীয় মশলার বিশেষ চাহিদা ছিল । ভারত থেকে বিভিন্ন প্রকারের মশলা রােমে রপ্তানি হওয়ার ফলে রােমানদের রন্ধনপ্রণালী এবং খাদ্য তৈরিতে উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন আসে ।
[ ] প্রাচীন ভারতে সর্বপ্রথম হরপ্পা সভ্যতার যুগে নগর সভ্যতার সূচনা হয় । দ্বিতীয় পর্যায়ে যােড়শ মহাজনপদের যুগে এবং তৃতীয় পর্যায়ে আদিমধ্যযুগে বহু নতুন নতুন নগরের উদ্ভব হয় । প্রাচীন ভারতে নগরের উদ্ভবের বিভিন্ন কারণ ছিল । যেমন
(১) গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গড়ে ওঠা : ড .রামশরণ শর্মার মতে , সামরিক ছাউনি , প্রশাসনিক কেন্দ্র, যাতায়াতের কেন্দ্র, শিল্পী ও কারিগরদের বসবাস প্রভৃতি স্থানে জনসমাগম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেখানে ক্রমে নগরের বিকাশ ঘটে ।
(২) ধর্মথনের আকর্ষণ : প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন ধর্মস্থানগুলিকে কেন্দ্র করে নগরজীবন প্রতিষ্ঠিত হয় । শ্রাবস্তী , বারাণসী , গয়া, রাজগৃহ , নালন্দা , পাটলিপুত্র প্রভৃতি স্থানগুলির সঙ্গে বুদ্ধের ধর্মপ্রচার ও নির্মাণের বিষয় যুক্ত হয়ে এগুলি জনপ্রিয় নগরে পরিণত হয় ।
(৩) কৃষি , বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশ : ড , কোশাম্বী ও ড . শর্মা দেখিয়েছেন যে , লােহার লাঙল ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে উদবৃত্ত উৎপাদন সম্ভব হয় । উদ্বৃত্ত কৃষি পণ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যাবসাবাণিজ্য ও কারিগরি শিল্পের সূচনা এবং এই কেন্দ্রগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেখানে নগরের উন্মেষের পটভূমি তৈরি হয় ।
(৪) রাজনৈতিক আধিপত্য : ঐতিহাসিক অমলানন্দ ঘােষ মনে করেন যে , রাজতন্ত্রের সূচনার পর রাজা তার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের উদ্বৃত্ত পণ্যের বড়াে অংশ দখল করে নেয় । এভাবেই গাঙ্গেয় উপত্যকায় রাজার রাজনৈতিক আধিপত্য বৃদ্ধিপায় । বিভিন্ন স্থানে রাজকীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় । এই কেন্দ্রগুলি ক্রমে নগরায়ণের পথ প্রশস্ত করে ।
কোন মন্তব্য নেই