সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২

বৈদিক যুগের বর্ণপ্রথার উদ্ভবের পটভূমি ও কারণ উল্লেখ করো ।

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer বৈদিক যুগের বর্ণপ্রথার উদ্ভবের পটভূমি ও কারণ উল্লেখ করো broidikyuger bornoprothar udvober potobhumi o karon ullekh koro


উত্তর :  আর্যরা যখন ভারতে আসে তখন তাদের সমাজে কোনােরূপ বর্ণব্যবস্থার অঞলে ছিল না । তারা ভারতে নিজেদের ‘সপ্তসিন্ধু’ অস্তিত্ব অঞ্চলে স্থায়ীভাবে নিজেদের বসতি স্থাপন করলেও ক্রমে তাদের বসতি অঞ্চল প্রসারিত হলে তাদের সঙ্গে ভারতীয় অনার্যদের দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ।
বর্ণভেদপ্রথা বিষয়ক ধারণা : আর্যদের গায়ের রং ছিল ফরসা এবং অনার্যদের ছিল কালাে । এই ব্যবধানকে স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে আর্যরা সমাজজীবনে বিভিন্ন পেশা বা বৃত্তি অনুসারে বিভিন্ন গােষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে । এভাবে বৈদিক সমাজে বর্ণভেদ প্রথার উত্থান ঘটে । তাই ইতিহাসবিদ রাপসন বলেছেন যে, আর্য সমাজে ‘বর্ণ’ শব্দটি গায়ের রং বােঝাতেই ব্যবহৃত হত । আর্যরা ভারতীয় কৃষ্ণাঙ্গদের অনার্য বা দস্যু বলত । তারা নিজেদের বর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সামাজিক রীতিনীতি , বিবাহ প্রভৃতি সম্পর্ক নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল । 


চতুর্বর্ণের উৎপত্তি : ঋগবেদের দশম মণ্ডলের পুরুষসুক্তে একটি শ্লোকে বলা হয়েছে যে ,আদি পুরুষ ব্ৰত্মারমুখমণ্ডল থেকে ব্রাত্মণ, বাহুদ্বয় থেকে ক্ষত্রিয়,উরুদেশ থেকে বৈশ্য ও চরণযুগল থেকে শূদ্রের উৎপত্তি হয়েছে । এভাবে আর্য সমাজে ব্রাক্ষ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র—এই চারটি বর্ণের  সৃষ্টির কথা জানা যায় ।

[        ] ঋবৈদিক যুগে আর্য সমাজে বর্ণ প্রথার উদ্ভব ঘটে । পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে এই বর্ণপ্রথার তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে । ঐতিহাসিকদের মতে , আর্য সমাজে বর্ণভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটার বিভিন্ন কারণ ছিল । এই কারণগুলি হল  


i) অনার্যদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা : গৌরবর্ণ ও দীর্ঘকায় আর্যদের চোখে খর্বকায় ও কৃয়বর্ণ অনার্যরা ছিল হীন বা নিকৃষ্ট । ক্রমে কৃষ্ণকায় অনার্যদের সঙ্গে গৌরবর্ণ আর্যদের সহাবস্থানের ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক রীতিনীতির সংমিশ্রণ ঘটতে থাকে । সেই কারণেই অনার্যদের থেকে নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য আর্যরা তাদের সমাজে বর্ণভেদ প্রথা চালু করার প্রয়ােজন বােধ করে ।  

ii) শ্রমবিভাজনের প্রয়ােজন : আর্যদের বসতির ক্রমশ প্রসার ঘটতে থাকলে কোনাে একজন আর্য পুরুষের পক্ষে জীবন জীবিকার প্রয়ােজনীয় সব কাজ করে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না । যে সারাদিন যুদ্ধের কাজে নিযুক্ত থাকত তার পক্ষে কৃষি বা বাণিজ্যের কাজ করা সম্ভব ছিল না । এভাবে প্রয়ােজনের তাগিদে আর্য সমাজে শ্রমবিভাজনের সূচনা হয় এবং এক একজন ব্যক্তি বংশানুক্রমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি পেশা বা বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে । এভাবে বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে সামাজিক ভেদাভেদ আরও বৃদ্ধি পায় । আর্যদের মধ্যে এভাবে ব্রাত্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য নামে তিনটি শ্রেণির সৃষ্টি হয় । অনার্যরা শূদ্রবলে পরিচিত হয় ।

উপসংহার : বর্ণভেদ প্রথার শুরু হওয়ার পর আর্য সমাজের এই প্রথায় আরও নানা পরিবর্তন ঘটে । পরবর্তীকালে বর্ণ বা জাতিভেদপ্রথায় কঠোরতা বৃদ্ধি পায় । কিন্তু তা সত্ত্বেও বৈদিক সমাজের চারটি বর্ণের মধ্যে নানা ধরনের সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় । 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন