অর্থশাস্ত্রে রাজার ক্ষমতা , গুণাবলি এবং কার্যাবলি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ?
উত্তর : কৌটিল্য তাঁর গ্রন্থে রাজাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন । তার মতে , রাজাই হলেন রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ এবং পার্থিব জগতে চূড়ান্ত সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী । রাজার কর্তৃত্বকে উপেক্ষা বা অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই । তিনিই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু এবং সামরিক ও অসামরিক প্রশাসন , বিচারব্যবস্থা সবক্ষেত্রেই রাজার একাধিপত্য বিরাজমান ।
[ ] অবশ্য অর্থশাস্ত্রে রাজার ক্ষমতার ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরােপের কথাও বলা হয়েছে । বলা হয়েছে যে, রাজা রাষ্ট্র নয় , রাষ্ট্রের অংশ মাত্র । তাই শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি অন্যের সাহায্য গ্রহণ করবেন । অবশ্য রাজা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন ।
[ ] রাজার গুণাবলি : রাজকীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য রাজার কিছু গুণাবলির কথা অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে । এগুলি হল –
i) উত্থান গুণ : অর্থশাস্ত্র মতে , উত্থান গুণ হল রাজার সেই গুণ , যার দ্বারা রাজা সর্বদা উৎসাহ ও উদ্যম সহকারে কাজে নিযুক্ত থাকবেন ।
ii) অভিগামিক গুণ : অভিগামিক গুণ হল ধর্মপরায়ণতা , ন্যায়পরায়ণতা , নম্রতা ,বিচক্ষণতা , শত্রু দমনে দক্ষতা প্রভৃতি ।
iii) প্রজ্ঞা গুণ : অর্থশাস্ত্রে প্রজ্ঞা গুণ বলতে যেসব গুণের কথা বলা হয়েছে , সেগুলি হল — প্রখর স্মৃতিশক্তি, দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা , যে কোনাে সমস্যার সঠিক বিশ্লেষণ করা প্রভৃতি ।
iv) ব্যক্তিগত গুণ : তীক্ষ্ণ মেধা , বাকপটুতা , সংকটে সংযম ও স্থিরতা । প্রভৃতি হল ব্যক্তিগত গুণ ।
[ ] রাজার কার্যাবলি : কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে রাজার অবশ্য পালনীয় বিভিন্ন কার্যাবলির উল্লেখ করেছেন । যেমন—
i) প্রজাকল্যাণ : অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে ,রাজা দেশে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন । তিনি প্রজাদের শিক্ষা , যােগ্যতা ও বুদ্ধির বিকাশে যত্নবান হবেন । তিনি বলেছেন , “ প্রজাসুখে সুখং রাজ্ঞঃ প্রজানাং চ হিতে হিতম ।”
ii) নিয়ােগ : রাজকার্য সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে রাজা বিভিন্ন মন্ত্রী, অমাত্য ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়ােগ করবেন । তিনি যােগ্যতার বিচার করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরােহিতকে নিয়ােগ করবেন । আবার দেশের ভেতরে ও বাইরে যাবতীয় ঘটনার খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজা বহু সংখ্যক গুপ্তচর নিয়ােগ করবেন ।
iii) রাজস্ব আদায় : রাজার প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হল রাজকোশ । আর এই রাজকোশ সর্বদা পূর্ণ রাখতে রাজা রাজস্ব সংগ্রহ ও রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দেবেন ।
iv) সামরিক অভিযান : রাজার নিজ রাষ্ট্র যে কোনাে মুহূর্তে শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে । তাই শত্রু রাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিহত করতে শত্রুর বিরুদ্ধে রাজাকে সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে ।
v) বিচারের দায়িত্ব : অর্থশাস্ত্রে রাজাকে বিচার বিভাগের প্রধানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । তাই রাজার একটি অন্যতম কাজ হল বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করা ।
উপসংহার : কৌটিল্য রাজার ক্ষমতা , কার্যাবলি ও গুণাবলি সম্পর্কে যেসব পরামর্শ দিয়ে গেছেন আধুনিক যুগেও তার গ্রহণযােগ্যতা কমেনি । বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও এই প্রাচীন পণ্ডিতের বক্তব্যগুলি শাসকের কার বেশ প্রাসঙ্গিক ।
কোন মন্তব্য নেই