বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২

অর্থশাস্ত্রে রাজার ক্ষমতা , গুণাবলি এবং কার্যাবলি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে ?

একাদশ শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্নোত্তর xi class 11 history Question answer অর্থশাস্ত্রে রাজার ক্ষমতা গুণাবলি এবং কার্যাবলি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে arthoshastre rajar khomota gunaboli abong karjaboli somporke ki bola hoyeche


উত্তর :  কৌটিল্য তাঁর গ্রন্থে রাজাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে তুলে ধরেছেন । তার মতে , রাজাই হলেন রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ এবং পার্থিব জগতে চূড়ান্ত সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী । রাজার কর্তৃত্বকে উপেক্ষা বা অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই । তিনিই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু এবং সামরিক ও অসামরিক প্রশাসন , বিচারব্যবস্থা সবক্ষেত্রেই রাজার একাধিপত্য বিরাজমান । 

[        ] অবশ্য অর্থশাস্ত্রে রাজার ক্ষমতার ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরােপের কথাও বলা হয়েছে । বলা হয়েছে যে, রাজা রাষ্ট্র নয় , রাষ্ট্রের অংশ মাত্র । তাই শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি অন্যের সাহায্য গ্রহণ করবেন । অবশ্য রাজা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন । 

[         ] রাজার গুণাবলি : রাজকীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য রাজার কিছু গুণাবলির কথা অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে । এগুলি হল – 

i) উত্থান গুণ : অর্থশাস্ত্র মতে , উত্থান গুণ হল রাজার সেই গুণ , যার দ্বারা রাজা সর্বদা উৎসাহ ও উদ্যম সহকারে কাজে নিযুক্ত থাকবেন । 

ii) অভিগামিক গুণ : অভিগামিক গুণ হল ধর্মপরায়ণতা , ন্যায়পরায়ণতা , নম্রতা ,বিচক্ষণতা , শত্রু দমনে দক্ষতা প্রভৃতি । 

iii) প্রজ্ঞা গুণ : অর্থশাস্ত্রে প্রজ্ঞা গুণ বলতে যেসব গুণের কথা বলা হয়েছে , সেগুলি হল — প্রখর স্মৃতিশক্তি, দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা , যে কোনাে সমস্যার সঠিক বিশ্লেষণ করা প্রভৃতি । 

iv) ব্যক্তিগত গুণ : তীক্ষ্ণ মেধা , বাকপটুতা , সংকটে সংযম ও স্থিরতা । প্রভৃতি হল ব্যক্তিগত গুণ । 

[         ]  রাজার কার্যাবলি : কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে রাজার অবশ্য পালনীয় বিভিন্ন কার্যাবলির উল্লেখ করেছেন । যেমন— 

i) প্রজাকল্যাণ : অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে ,রাজা দেশে সুশাসন ও প্রজাকল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করবেন । তিনি প্রজাদের শিক্ষা , যােগ্যতা ও বুদ্ধির বিকাশে যত্নবান হবেন । তিনি বলেছেন , “ প্রজাসুখে সুখং রাজ্ঞঃ প্রজানাং চ হিতে হিতম ।”



ii) নিয়ােগ : রাজকার্য সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে রাজা বিভিন্ন মন্ত্রী, অমাত্য ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়ােগ করবেন । তিনি যােগ্যতার বিচার করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরােহিতকে নিয়ােগ করবেন । আবার দেশের ভেতরে ও বাইরে যাবতীয় ঘটনার খবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজা বহু সংখ্যক গুপ্তচর নিয়ােগ করবেন । 

iii) রাজস্ব আদায় : রাজার প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হল রাজকোশ । আর এই রাজকোশ সর্বদা পূর্ণ রাখতে রাজা রাজস্ব সংগ্রহ ও রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দেবেন । 

iv) সামরিক অভিযান : রাজার নিজ রাষ্ট্র যে কোনাে মুহূর্তে শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে । তাই শত্রু রাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিহত করতে শত্রুর বিরুদ্ধে রাজাকে সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে । 

v) বিচারের দায়িত্ব : অর্থশাস্ত্রে রাজাকে বিচার বিভাগের প্রধানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে । তাই রাজার একটি অন্যতম কাজ হল বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করা । 

উপসংহার : কৌটিল্য রাজার ক্ষমতা , কার্যাবলি ও গুণাবলি সম্পর্কে যেসব পরামর্শ দিয়ে গেছেন আধুনিক যুগেও তার গ্রহণযােগ্যতা কমেনি । বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও এই প্রাচীন পণ্ডিতের বক্তব্যগুলি শাসকের কার বেশ প্রাসঙ্গিক ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন