‘রাগ চড়ে মাথায় আমার , আমি তার মাথায় চড়ি’ - ‘আমার’ বলতে কার ? তার মাথায় রাগ চড়ে কেন ? ‘ আমি তার মাথায় চড়ি ’ - এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে ।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জয় গােস্বামীর লেখা ‘নুন’ কবিতার অংশবিশেষ । এখানে ‘আমার’ বলতে ‘নুন’ কবিতার কথক । যার জবানিতে বিষয় কথিত ।
[ ] ‘আমার’ মানুষটি একটি হতদরিদ্র শ্রমজীবী লােক । ‘দিন খাটে দিন খায়’ এমনি আর্থিক অবস্থা সংসারের । সংসারের এই দুঃখকষ্ট , অভাব -অনটন মুখ বুজে সয়ে নেয় । ফলাও করে বলে না । প্রতিবাদে সােচ্চার হয় না । কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তার ধারণা এভাবে দুঃখকষ্টের কথা বলে দুঃখের প্রতিকার হয় না । তার বক্তব্য ‘কী হবে দুঃখ করে ?’ আর সেজন্য যেটুকু উপায় করে তাতেই খুশি থাকে । সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন চললে তাতেই সন্তুষ্ট । ধারদেনা করে অসুখ - বিসুখ সামাল দেয় । অবশ্য গঞ্জিকার কলকেতে টান দেয় রাত্রিতে । কখনাে -সখনাে বাড়ি ফেরে মাঝরাতে । তখন ব্যঞ্জনহীন ঠান্ডা ভাতে নুনের সংস্থান না থাকায় ভাত বিস্বাদ হয় । একদিকে ভয়াবহ দারিদ্র্যের কশাঘাত । তার ওপর ক্ষুধার্ত পেটে বিস্বাদ ভাত গলা দিয়ে না নামায় রাগ মাথায় চড়ে । রাগ চড়ার কারণ হল এই ।
[ ] রাগ যখন সংযমের সীমা টপকে যায় , তখন দিকবিদিক জ্ঞান থাকে না । তখন মানুষের জ্ঞান, বােধবুদ্ধি , ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবিবেচনা সব লােপ পায় । মনুষ্যত্ব লােপ পেয়ে পশুত্ব প্রাধান্য পায় । হিতাহিত বােধের অস্তিত্বটুকুও থাকে না । রাগের থেকে বড়াে হয়ে দাঁড়ায় ক্রোধােন্মত্ত মানুষটির মনুষ্যত্বহীন পশুত্ব । হিতাহিত জ্ঞানহীন অন্ধ ক্রোধােন্মত্ততা । তা যেন রাগের মাথার ওপর ক্রোধােন্মত্ত মানুষটির চড়ে বসা । তার ফলও হাতেহাতে মেলে । বাপব্যাটায় বচসা হয় , ভাইয়ে ভাইয়ে কলহ বাধে । তাতে পাড়ার লােকের ঘুম ছুটিয়ে সারা পাড়া যেন মাথায় করে ।
কোন মন্তব্য নেই