স্বামী বিবেকানন্দের লেখা ‘সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার’ রচনাটির নামকরণ কতখানি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে , তা আলােচনা করাে ।
উত্তর : আলােচ্য প্রবন্ধটি স্বামী বিবেকানন্দের ‘পরিব্রাজক’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । স্বামীজি সংকলিত অংশটির নাম দিয়েছেন 'সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার’ । এখানে সংকলকগণ স্বামীজির দেওয়া নামই বহাল রেখেছেন । এখন প্রশ্ন হল প্রবন্ধটির নামকরণ যথাযথ ও সার্থক কিনা ।
‘ সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার ’ অধ্যায়টিতে আলােচ্য বিষয় দুটি সুস্পষ্ট ভাগে বিভক্ত । এক, হাঙর শিকারের বর্ণনা । দুই, সুয়েজ খালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস , তার রূপরেখা , ওই প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতের ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি । প্রবন্ধের ‘ হাঙ্গর শিকার ’ অংশ খুবই মনােগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক । সুয়েজের স্বচ্ছ জলে সাঁতার দিচ্ছে ছােটো বড়াে বিভিন্ন রকমের মাছ , সেই সঙ্গে হাঙরও । সেকেন্ড ক্লাসের জনৈক উৎসাহী ফৌজি একখানা প্রকাণ্ড বড়শি জোগাড় করে একতাল মাংসপিণ্ড বেঁধে ও এক কাঠের ফাতনা লাগিয়ে সুয়েজের জলে নামিয়ে দেন । স্বামীজির দেওয়া ‘বাঘা' নামের হাঙর বড়শি খুলে বাঘা পালিয়ে যায় । পরে ‘ থ্যাবড়ামুখাে ’ হাঙ্গর আসে এবং বড়শিতে গাঁথা হয়ে কাছির টানে ডেকের ওপর উঠে আসে । কড়িকাঠের প্রহারে তার প্রাণ যায় ।
প্রবন্ধের বাকি অংশে সুয়েজ খাল খনন, ওই প্রাসঙ্গিক আলােচনা ও সুয়েজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস , ভারতের প্রাচীন শিল্প ও বাণিজ্য প্রভৃতি আলােচিত হয়েছে । সুয়েজ খাল হল খাত স্থাপত্যের এক অদ্ভুত নিদর্শন । বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি ফার্ডিনেন্ড লেসেস্প সুয়েজ খাল খনন করেন । তুরস্ক সুলতানের প্রতিনিধি মিশর - খেদিব ইম্মায়েল ফরাসি অর্থের সাহায্যে ফরাসিদের পরামর্শ মতাে আধুনিকভাবে সুয়েজ খাত খনন করান । সুয়েজ খাল পথে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে জাহাজ যাতায়াত করে । সুয়েজের কর্তৃত্ব ফরাসিদের হাতে ন্যস্ত হলেও ইংরেজদের শেয়ার বেশি । তা সত্ত্বেও ফরাসিরাই কাজ করে । এটা রাজনৈতিক মীমাংসা ।
কাজেই প্রবন্ধটিতে ওপরের আলােচিত দুটি বিষয় ।সুয়েজ খালের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত ও সুয়েজ খালে অবস্থিত জাহাজ থেকে হাঙর শিকার । আর এই দুই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধটির নামকরণ হয়েছে । ‘ সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার ’ । সুতরাং নামকরণ হয়েছে যথাযথ ও সার্থক ।
কোন মন্তব্য নেই