সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎকারের ঘটনা বিবৃত করাে

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত প্রশ্নোত্তর সাজেশন class 11 Sanskrit question answer class xi class eleventh শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথের প্রথম সাক্ষাৎকারের ঘটনা বিবৃত করাে sriramkrishner songe norendronather prothom sakkhatkaarer ghotona bibrito koro

উত্তর : শ্রী যতীন্দ্রবিমলচৌধুরী বিরচিত ‘ভারতবিবেক’ নাট্যাংশে শ্রীরামকৃয়দেব কলিকাতার সিমুলিয়া অঞ্চলে গিয়েছেন গৃহীভক্ত সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের গৃহে । সঙ্গে আছেন ভক্তবৃন্দ ।সেদিন ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের এক মধুর সন্ধ্যা । সন্ধ্যা সাত ঘটিকা । শ্রীরামকৃষ্ণ সাধক — জগজ্জননী ভবতারিণীর পূজারী । ভবতারিণীই তাঁর ধ্যান - জ্ঞান । শয়নে -স্বপনে -নিদ্রায়-জাগরণে তিনি শ্রীশ্রীমাতার পুণ্য স্মরণে তন্ময় । সুরেন্দ্রনাথের গৃহেও সেই ভাবােদয় । তিনি মাতৃকাস্তুতি শােনার জন্য ব্যাকুল । তিনি সুরেন্দ্রনাথকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে ,তাঁরই ( সুরেন্দ্রের) প্রতিবেশী নরেন্দ্রনাথ নামে এক তরুণ গায়ক আছেন । তিনি দত্তকুলােদ্ভব, অধ্যয়নরত এবং ব্রাহ্বসমাজের সঙ্গে যুক্ত । তরুণ হলেও তিনি সত্যই সংগীতনিপুণ । নরেন্দ্রের নাম শােনামাত্র শ্রীরামকৃষ্ণদেব ব্যাকুল হয়ে পড়লেন ।নরেন্দ্র অর্থাৎ নরশ্রেষ্ঠ । শ্রীরামকৃষ্ণ যে তাঁর হৃদয়রাজ্যে একজন যথাযােগ্য , সর্বলােকবরেণ্য উত্তরসাধককে খুঁজে বেড়াচ্ছেন , এই কি সেই জটাজুটধারী ! জগতের কল্যাণকারী ! মন্দাকিনীর কলকলধারায় সুস্নাত শিবশংকর — যাঁর অপেক্ষায় শ্রীশ্রীঠাকুর (রামকৃষ্ণদেব ) দিন গুনছেন — যাঁর পথ চেয়ে অধীর আগ্রহে সময় কাটাচ্ছেন ? শ্রীরামকৃয় অধীর হয়ে উঠলেন ওই যুবকটিকে দেখার জন্য , তাঁর সুমধুর কণ্ঠে মাতৃস্তুতি শােনার জন্য শ্রীরামকৃষ্ণের আগ্রহাতিশয্যে সুরেন্দ্রনাথ তাঁকে আনার জন্য সত্বর যাত্রা করলেন এবং নরেন্দ্র সমভিব্যাহারে প্রত্যাবর্তন করলেন ।


শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ঘটল নরেন্দ্রনাথের । হল মণিকাঞ্চনযােগ । উভয়ে উভয়কে প্রত্যক্ষ করলেন । প্রথম দর্শনেই নরেন্দ্রনাথকে কিছুটা পর্যাকুল দেখা গেল । শ্রীরামকৃষ্ণ সেই কোমলকুঞ্চিতকেশী , সুসজ্জশিরস্ক ,ইন্দীবরতুল্য আকৰ্ণবিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট যুবকের প্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন । নরেন্দ্রনাথেরও মন সন্দিগ্ধ হলেও তার মন যেন তাকে বলে দিচ্ছে ইনিই তাঁর হৃদয়ানন্দকারী   স্নিগ্ধ-সুন্দর চন্দ্র । উভয়েই উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট । শ্রীরামকৃষ্ণের হৃদয়তটিনী নরেন্দ্ররূপ সাগরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে । সে -গতি অবাধ - অপ্রতিরােধ্য । নরেন্দ্রনাথেরও তদ্রুপ অবস্থা । তিনি নিজেকে সংযত করতে পারছেন না । তাঁরও হৃদয়চকোর শ্রীরামকৃষ্ণরূপ পূর্ণশশীর আনন্দরশ্মি আশা মিটিয়ে পান করছে । নরেন্দ্রের চোখে শ্রীরামকৃষ্ণ কোটি সূর্যসমপ্রভ কোটি চন্দ্র সুশীতল । চুম্বক যেমন লােহাকে আকর্ষণ করে  শ্রীরামকৃষ্ণও তেমনি নরেন্দ্রকে আকর্ষণ করছেন ।

তথাপি নরেন্দ্র নব্য শিক্ষায় শিক্ষিত । তিনি সম্বিত ফিরে পেলেন । অবলম্বন করলেন মানসিক দৃঢ়তা । মানবশরীরে ভাগবতসত্তা তিনি আরােপ করার ব্যাপারে অবিশ্বাসী । মানুষ ভগবান হতে পারে না । ভগবানও মানুষ হয়ে আসেন না । ক্ষণিকের চিত্তচাঞ্চল্যের জন্য তিনি নিজেকে ধিক্কার দিলেন । ধিক্কার দিলেন তাঁর অধীত বিদ্যাকে । শ্রীরামকৃষ্ণের মন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে , এই ব্যঢ়োরস্ক, করিকরনিন্দিত ভুজযুগধারী , আয়তনয়ন এই যুবকই তাঁর কাঙ্ক্ষিত উত্তরসাধক । মা ভবতারিণী সুযােগ্য সন্তানকেই তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন । 

অতঃপর চিত্তবিনােদনের জন্য তিনি নরেন্দ্রকে গান গাইতে অনুরােধ করলে নরেন্দ্র গান শুরু করলেন । গানের বিষয়বস্তু শ্মশানবাসিনী , নৃমুণ্ডমালিনী , শক্তিস্বরূপিনী শ্যামা । নরেন্দ্রের কণ্ঠ মধুবর্ষী, ভাষা ভক্তিরসাপ্লুত । শ্রীরামকৃষ্ণ অভিভূত । মা ভবতারিণীর কাছে তাঁর পুনরায় প্রার্থনা এই যুবকই যেন তাঁর , উত্তরসাধক হয় , যে হবে সর্বজনবরেণ্য এবং দেশের কালিমা দূর করতে সক্ষম ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন