“ হে ভারতের শ্রমজীবী । ” — শ্রমজীবী সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের ধারণা ‘ সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার ’ অবলম্বনে লেখাে ।
উত্তর : ‘সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার’ প্রবন্ধে স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের প্রাচীন শিল্প ও বাণিজ্য আলােচনা প্রসঙ্গে ভারতের শ্রমজীবী মানুষ চাষাভূষা , তাঁতি- জোলাদের নীরব শ্রম ও প্রত্যাশাহীন অবদান সম্পর্কে তাঁর দরদি মনােভাবের পরিচয় রেখেছেন ।
স্বামীজি মনে করেন ভারতের কৃষি ও শিল্প সম্পদের যা কিছু, সবই ভারতের দীন -দুঃখী শ্রমজীবী হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলেই উৎপন্ন । এরা আবহমান কাল ধরে ওই শ্রমজাত সম্পদ উৎপন্ন করছে । আর তাতে শুধু ভারত নয় , বিশ্বের সভ্য দেশগুলি সম্পদে ও ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ হয়ে বলবান হয়েছে । দুঃখের কথা , তারা কিন্তু এ ঋণ ও অবদান স্বীকার করে না । উলটে ভারতের শ্রমজীবী মানুষগুলিকে নেটিভ বলে ঘৃণার চোখে দেখে । কিন্তু ভারতের শ্রমজীবী মানুষগুলি নিঃস্বার্থভাবে মুখ বুজে তাদের করণীয় কাজ আবহমান কাল ধরে করে চলেছে । তারা দেশে - বিদেশে সবার কাছে নিন্দিত, অবজ্ঞাত ও অনাদৃত । চির পদদলিত । এরা কেউ ধর্মবীর, কাব্যবীর , রণবীর নয় । এদের কেউ সুখ্যাতি করে না । কেউ গুণগান করে না । অথচ এরা অপার সহিষ্ণুতা , অনন্ত প্রীতি ও নির্ভীক কার্যকারিতার প্রতিমূর্তি । এরা ,নীরবে মুখ বুজে কাজ করে ঠিকই, কিন্তু কর্মজীবনে যে জীবন সংগ্রাম , সেই নিরিখে এদের বীরত্বই বা কম কীসের ? সবার অলক্ষ্যে ভারতের শ্রমজীবী মানুষ যেভাবে নিঃস্বার্থ মন নিয়ে কর্তব্যকর্ম করে চলেছে , তাতে তাদের চরিত্র মহান ও মহিমময় । মানুষের উন্নতি ও কল্যাণের জন্য তাদের যে আত্মত্যাগ , তা দেখে স্বামীজি তাদের প্রণাম জানিয়েছেন । তাঁর দরদি ও সশ্রদ্ধ চিত্তের প্রকাশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ।
কোন মন্তব্য নেই