শনিবার, ২৬ মার্চ, ২০২২

পুরুষপরীক্ষা ও বিদ্যাপতি প্রশ্নোত্তর

একাদশ শ্রেণী সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর সংস্কৃত প্রশ্নোত্তর সাজেশন class 11 Sanskrit question answer class xi class eleventh পুরুষপরীক্ষা ও বিদ্যাপতি প্রশ্নোত্তর purushpariksha obiddaypoti question answer


উত্তর : ‘ পুরুষপরীক্ষা ’ গ্রন্থটি কথাসাহিত্যের অংশবিশেষ । এটি হাস্যপরিহাসের এক অনবদ্য নিদর্শন । গ্রন্থের রচয়িতা বিদ্যাপতি । ইনি - ই পদাবলি রচনা করে ‘মৈথিল কোকিল ’ বা ‘ অভিনব জয়দেব ’ আখ্যা পান । যার পদাবলিতে মানবমনের অজস্র উচ্ছ্বাস  এবং অন্তঃস্থলশায়ী গভীর ভাবাবেগ চরমােৎকর্ষতা লাভ করেছে ,  তারই আর এক রচনায় তারল্য , এক হালকা চালের হাস্যকৌতুক , এক চটুল পরিহাস অবশ্যই বিস্ময়কর বলে মনে  হয় । তাঁর এই ভিন্নধর্মী রচনাগুলি দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় , তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ।
 রাজসভার পরিমণ্ডলে চটুল পরিহাস ও কৌতুকের উচ্ছ্বাসে গল্পের আসর জমাতে বিদ্যাপতি কম দক্ষ ছিলেন না । এর ফলেই পুরুষপরীক্ষার আবির্ভাব । এই গ্রন্থের কৌতুক , পরিহাস ও নীতি উপদেশ সংস্কৃত গল্পসাহিত্যের ভাণ্ডারে উপাদেয় বৈচিত্র্যের আস্বাদ দেয় । শুধু বালক -বালিকারা নয় , বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই গল্পগুলির মধ্যে মনােরঞ্জনের সামগ্রী পেয়ে চরিতার্থ হয় । বিদ্যপতি এই গ্রন্থটিতে নানা বর্ণের ও নানা গন্ধের বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ গল্প - পুষ্পের মালা গেঁথেছেন । গ্রন্থের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে  ‘ রাজা শিবসিংহের আদেশে বালক -বালিকাদের নীতি শিক্ষা এবং পুরস্ত্রীগণের হর্ষ ’ বিধানের জন্য তাঁর এই মনােরম কথাকাহিনি রচনার প্রয়াস । 
 
গ্রন্থের মূল কাহিনি —রাজকন্যার বিবাহের বয়স সমাগত । উপযুক্ত পাত্রের সন্ধানে রাজা উদবিগ্ন । এমন সময় এক বিজ্ঞ ব্রাহ্ণ রাজসভায় এসে উপস্থিত । আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে ব্রাত্মণ রাজার প্রস্তাবে বেশ গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করেন — তিনি তাঁর কন্যার জন্য পুরুষ পাত্র খুঁজছেন কি না। রাজা তাে স্তম্ভিত । তিনি তাঁর বক্রোক্তির তাৎপর্য বুঝতে পারলেন না । তিনি উত্তরে বললেন কন্যার পাত্র তাে পুরুষই হয়ে থাকে । এতে আবার প্রশ্ন করার কী আছে ? ব্রাত্মণ বললেন এই জগতে আকারে পুরুষ অনেকেই আছে । পুচ্ছরহিত পুরুষাকার পশুর অভাব নেই । কিন্তু পুরুষােচিত গুণেই মানুষ যথার্থ পুরুষপদবাচ্য হয় । তাই পুরুষপরীক্ষার প্রয়ােজন । পুরুষপরীক্ষার কষ্টিপাথরে পুরুষের গুণাগণ বিচার করা দরকার । এই প্রসঙ্গ ধরে বিদ্যাপতি ভালােমন্দ নানা চরিত্রের পুরুষের আলেখ্য উপহার দিয়েছেন । সুন্দর কৌতুকব্যঞ্জনায় গ্রন্থটির বিষয়বস্তু উপন্যস্ত ।দানবীর , দয়াবীর ,যুদ্ধবীর, সত্যবীর এরূপ বিবিধ গুণবান চরিত্রের কথা ,আবার চোর , অলস , কপট প্রভৃতি গুণহীন চরিত্রের কথা একের পর এক কাহিনির বিস্ময়কর সমাবেশে উপস্থাপিত হয়েছে ।


গ্রন্থটিতে ৫২ টি গল্প আছে , সবই মানুষের গল্প । অতএব , মনুষ্য সমাজের ঘটনার আকর্ষণীয়তা এতে সুস্পষ্ট । রাজকন্যার বর যাচাই করার জন্যই ‘ পুরুষপরীক্ষা’ পুস্তকটিতে দোষগুণের চরিত্রের নানা কৌতূহলােদ্দীপক চিত্র উদ্ভাসিত হয়েছে । 

সমাজের উচ্চ - নীচ, ছােটো -বড়াে, ভালাে -মন্দ , সাধু - চোর কোনাে কিছুই ভূয়ােদশী কবির পরীক্ষা -নিরীক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে পাশ কাটিয়ে যায়নি । সমাজের উচ্চ - নীচ সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি দরদি কবি বিদ্যাপতি সহানুভূতির স্পর্শ দিয়ে তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবনকাহিনিকে সরস ও সজীব করে তুলেছেন । নীতিশিক্ষা ও কৌতূহল সৃষ্টির আগ্রহে ভালােমন্দ বিচারের প্রয়ােজনীয়তা তিনি অবশ্যই স্বীকার করেছেন । উচ্চ আদর্শকেও তিনি উচ্চকণ্ঠেই ঘােষণা করেছেন । কিন্তু তথাকথিত মন্দলােকের সব কিছুই মন্দ নয় — সেই ধারণার পরিচয়ও তিনি দিয়েছেন । 

তিনি যে -একজন সার্থক কথাসাহিত্যিক সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহের অবকাশ নেই । ‘পুরুষপরীক্ষা ’ গ্রন্থটি এক ধরনের চটুল হাস্যরসের গ্রন্থ হলেও এর রচনায় কবির কৃতিত্ব অনস্বীকার্য ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন