‘ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর / আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে ।’ –সপ্রসঙ্গ উদ্ধৃতির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করাে ।
উত্তর : লালন ফকির ছিলেন বাউল সাধক । ‘ বাড়ির কাছে আরশিনগর’ হল তাঁর এক অতি জনপ্রিয় বাউল সংগীত । ওই গান থেকে প্রশ্নোধৃত চরণ দুটি গৃহীত ।
মনের মানুষকে দেখার বাসনা ভক্তসাধক বাউল লালনের । কিন্তু কেমন করে তিনি সে-গাঁয়ে যাবেন ।ভক্ত বাউলের নিরুপায় অসহায়তা প্রকাশিত । তবে তার মনের মানুব তাে তাঁর নিকটতম পড়শি । সেই পড়শির কথা তিনি কী আর বলবেন । তাঁর হাত - পা-কাঁধ -মাথা কিছুই নেই । তিনি মুহূর্তের জন্য শূন্যে থাকেন , আবার মুহূর্তের জন্য জলে ভাসেন ।
‘ শূন্য ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ খালি ’, ‘ ফাঁকা ’ । লালনের বাউল গানের ব্যবহৃত হয়েছে ‘আকাশ ’ বা ‘গগন ’ অর্থে । লালন তাঁর মনের মানুষকে মুহূর্তের জন্য দেখেছেন নিঃসীম শূন্যে অর্থাৎ গগনে । ‘ নীর ’- এর আক্ষরিক অর্থ ‘জল’ । লালন যে পড়শির কথা বলেছেন তিনি পঞ্চভূতে মাটি , জল , বাতাস , আগুন ও আকাশ সর্বত্র বিরাজমান । সেজন্য মুহূর্তের জন্য তাঁকে লালন দেখেন জলে ভাসমান ।
সাধক লালনের পড়শিই হলেন তাঁর আরাধ্য মনের মানুষ । তিনি তাঁর কী বা ব্যাখ্যা করবেন । হাত পা -কাঁধ -মাথা — দেহের এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়েই তাে শরীর । এসবের কিছুই তার নেই । তিনি বিদেহী । নিরাকার । পড়শি যদি ‘ চিৎ ’ বা ‘ আত্মা ’ হন , তাহলে তাে নিরাকার বটেই । তবে মনের মতাে পড়শিকে পেয়ে লালন তাঁর সঙ্গে খেলছেন লুকোচুরি । তারই ফাঁকে ভাবতন্ময় অবস্থায় তিনি সাধকের চোখে দৃশ্যমান হচ্ছেন চকিতে । ফলে সাধক তাঁকে কখনও দেখছেন শূন্যে, আবার কখনও দেখছেন জলে ভাসমান । কিন্তু সবই ক্ষণকালের চকিত দর্শন ।
কোন মন্তব্য নেই