‘ ও তার কর্তার ভূত ’ অবলম্বনে ভূতুড়ে জেলখানা ও কয়েদিদের বর্ণনা দাও ।
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘ কর্তার ভূত ' কথিকায় ভূতুড়ে জেলখানা ও তার কয়েদিদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ হয়েছে ।
ভূতুড়ে জেলখানার বৈশিষ্ট্য : ভূতশাসনতন্ত্রের অন্যতম বিষয় হল ভূতের শাসন । ভূতশাসনের অঙ্গীভূত হল ভূতুড়ে জেলখানা । ভূতের নায়েব হল ভূতুড়ে জেলখানার দারােগা । জেলখানার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা । জেলখানা মাত্রই শক্তপােক্ত ও সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা হয় । কিন্তু ভূতুড়ে জেলখানার দেয়ালের বৈশিষ্ট্য বিচিত্র । তা চোখে দেখা যায় না। সেজন্য দেয়াল ফুটো করে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না । উপায় ভাবা সম্ভবও হয় না ।
ভূতুড়ে জেলখানার কয়েদি : জেলখানার কয়েদিদের দিয়ে জেলখানার ঘানি নিরন্তর ঘােরানাে হয় । ঘানিও বিচিত্র । কয়েদির শ্রমজাত পেষণে এক ছটাক তেলও বেরােয় না, যা হাটে বেচে কিছু লভ্যাংশ মিলতে পারে । ঘানি ঘােরানাের ফলে যা ঘটে থাকে , তা হল প্রাণঘাতী কঠিন পরিশ্রমে কয়েদির শরীর থেকে তেজ বেরিয়ে যায় । এই তেজই হল শক্তি , কর্মোদ্যম , কর্মোদ্যোগ । মূলত মানুষের ওই শক্তিগুলি নষ্ট করে তাকে মৃতবৎ , জড়বৎ করে জীবন্ত অবস্থায় পরিণত করা ভূতশাসনতান্ত্রিক রীতির লক্ষ্য । শরীর থেকে তেজ বেরিয়ে গেলে মানুষ ঠান্ডা হয়ে যায় । তার প্রতিবাদ করার , আন্দোলন ও বিক্ষোভ করার ক্ষমতা থাকে না । তাতে ভূতশাসন হয় নিরুপদ্রব ও শান্ত, সবরকম ঝঞাটমুক্ত । কয়েদির ভবিষ্যৎ পােষা ভেড়ার মতাে ভূতের খোঁটায় বাঁধা থাকে ।
কোন মন্তব্য নেই