কালিদাসের মেঘদূতম নাটক গীতিকাব্যে যক্ষ কেন মেঘকে দূত হিসেবে নিয়ােগ করতে চাইল
উত্তর : ‘ মেঘদূতম্ কাব্যে প্রথমেই আমরা নায়ক বিরহী যক্ষের পরিচয় পাই । যক্ষরাজ কুবেরের সে ছিল এক অনুচর । তরুণ সে , গৃহে তার উদ্ভিন্নযৌবনা নববিবাহিত বধূ । তরুণী প্রিয়ার প্রথম প্রেমের আবেগে সে তখন অভিভূত । তৎকালীন মনের অবস্থা নিয়ে প্রভুর কাজে অবহিত থাকা কোনাে তরুণের পক্ষেই সম্ভবপর নয় । তাই যক্ষের কাজে প্রতিদিন ভুল হতে লাগল ।
অতঃপর যক্ষপতি রুষ্ট হয়ে এক বছরের জন্য তাকে অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে নির্বাসিত করলেন । অভিশপ্ত যক্ষ মনের দুঃখে রামগিরি আশ্রমে এসে বসবাস করতে লাগল । কিন্তু মন তার পড়ে রইল সেই সুদূর অলকায় , যেখানে তার পরানপ্রিয়া তার বিরহে একাকিনী নয়নাশ্রুজলে কালযাপন করছে । গুরু বিরহভার বক্ষে ধারণ করে গভীর মনস্তাপে তার দিন যেন আর কাটতে চাইছিল না । বেচারি প্রিয়ার জন্য ভেবে ভেবে একেবারে শীর্ণ হয়ে গেছে । তার হাতের বালা ঢিলে হয়ে কখন যে একগাছি বালা মণিবন্ধ থেকে খসে পড়েছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই । সে দিনের - পর -দিন রামগিরি শিখরে বসে উত্তরে অলকার পানে চেয়ে স্তব্ধ হয়ে মনে মনে শুধু তার প্রিয়তমার বিরহমলিন রূপ ধ্যান করছে । নিবিড়ঘন -ছায়াতরু-ঘেরা রামগিরি আশ্রম , সে এক রমণীয় পার্বত্যকুঞ্জ । তার প্রতিটি চূড়ায় শ্রীরামচন্দ্রের সুচারু পাদপদ্ম অঙ্কিত রয়েছে । প্রত্যেক গিরিনিঝরিণীটি স্নানার্থিণী জনকতনয়ার পবিত্র অঙ্গ স্পর্শে পুণ্যোদক হয়ে উঠেছে । প্রতি পদক্ষেপে রামগিরি বিরহব্যথাতুর যক্ষকে রাম -সীতার মিলনানন্দে অরণ্যবাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে অধিকতর আকুল করে তুলল ।
[ ] নিদারুণ বিরহ যন্ত্রণায় সে যতই কাতর হচ্ছে, ততই ভাবছে তার প্রেয়সী এই বিরহ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে তাে ? শাপান্তের পর ফিরে গিয়ে তাকে যক্ষ জীবিত দেখবে তাে ? সে উতলা হয়ে উঠল । যেভাবেই হােক প্রেয়সীকে নিজের কুশল সংবাদটুকু পাঠাতে সে বদ্ধপরিকর । এমন সময় আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে আকাশে মেঘের সঞ্চার দেখতে পেল ।মেঘ তাে পূর্ব থেকে উত্তরেই ভেসে চলেছে । তা হলে সে মেঘকেই বার্তাবহরূপে প্রেরণ করতে চাইল । একবারও ভেবে দেখল না মেঘ অচেতন । যে প্রেমােন্মত্ত, যে প্রণয়িণীর বিচ্ছেদে অতিব্যাকুল মিলনের , আকাঙ্ক্ষায় অধীর আত্মহারা , সে চেতন - অচেতনের ভেদাভেদ ভুলে যায় । “কামার্তা হি প্রকৃতিকৃপণাশ্চেতনাচেতনে্যু । ” সুতরাং , যক্ষ মেঘকেই দূতরূপে বরণ করতে স্থিরসংকল্প হয়ে নবপ্রস্ফুটিত কুটজ পুষ্পের অর্ঘ্য রচনা করে মেঘকে স্বাগত জানাল ।
কোন মন্তব্য নেই